কাদের কাছে আমরা ইসলামকে বর্গা দিয়েছি ?


কিছুদিন আগে রাজশাহী জেলায় একটি স্কুলের নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলো তার ছাত্ররা। স্কুলটির নাম হচ্ছে ‘মাদ্রাসা স্কুল’। ঐ স্কুলের সকল ছাত্র রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে বলেছিলো- স্কুলের নামের থেকে ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি বাদ দেওয়া হোক (http://goo.gl/DPjBMI)। উল্লেখ্য মসজিদ হচ্ছে আল্লাহ’র ঘর, আর মাদ্রাসা হচ্ছে নবীজির ঘর। অথচ আমাদের জন্য লজ্জাজনক পরিস্থিতি হচ্ছে- আমাদের স্কুল ছাত্ররা ঐ ‘মাদ্রাসা’ শব্দখানি আর পছন্দ করছে না।
কিন্তু কেন ?

মাদ্রাসা শব্দের এই অপমানের জন্য আমরাই কিন্তু দায়ি। একজন বাবা-মা’র যদি দুটি সন্তান থাকে, তাদের একজন যদি মেধাবী স্টুডেন্ট হয় এবং অন্যজন যদি অমনযোগী স্টুডেন্ট হয়, তবে দেখা যাবে- মেধাবী সন্তানকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানোর নিয়তে স্কুলে ভর্তি করে। অপরদিকে অমনযোগী ও দুষ্টু সন্তানটি দেওয়া হয় মাদ্রাসায় পড়তে। আরো সহজ ভাষায় বলতে- খুব দরিদ্র ও থাকা খাওয়ার সমস্যা না হলে মাদ্রাসায় ছাত্র দেওয়া হয় না। কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগলেও বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোর অধিকাংশ চিত্র দেখলে আপনি তা অস্বীকার করতে পারবেন না।
কথাগুলো হয়ত অপ্রিয় সত্য, কিন্তু তারপরও সত্য আমরা যতই না দেখার ভান করি, সত্য কখন লুকিয়ে থাকে না। সেই সত্য কিন্তু আপনার সামনেই প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান হচ্ছে।
আপনি নিজেই একটু চিন্তা করে দেখুন, কুরআন শরীফ হচ্ছে স্বয়ং ‍সৃষ্টিকর্তার বাণী এবং হাদীস শরীফ হচ্ছে স্বয়ং রাসূল পাকের বাণী। এই বাণীগুলোর উপর স্ট্যাডি করার জন্য কত শক্তিশালী জ্ঞান ও বুদ্ধির অধিকারী হওয়ার দরকার ছিলো। পৃথিবীর তাবৎ মেধাবী স্টুডেন্টদের ভর্তি হতে হতো মাদ্রাসায়, এবং যাদের জ্ঞান তুলনামূলক কম তারা ভর্তি হতো স্কুল কলেজে। কারণ সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান বুঝার জন্য যে মেধা-বুদ্ধির দরকার, মানুষের তৈরী বই-পত্র পড়তে সে জ্ঞান দরকার হয় না।
কিছুদিন আগে একজন এফসিএমএ (ফেলো অব পোস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টিং) এর সাথে কথা হচ্ছিলো। তিনি প্রায় নিদ্বিধায় বললেন- “যারা পাতলা ডাল খায় তাদের বুদ্ধি আর কতদূর হবে ?”। বিষয়টি অবশ্য তিনি অবজ্ঞা করে বলেননি, বলেছেন হতাশা থেকে। যে ছাত্রটি দরিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে, পেটের ক্ষুধা থেকে রক্ষা পেতে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে, সেই ছাত্রটি যখন আপনার মসজিদের ইমাম (নেতা) হয়ে আসবে তখন সে আপনাকে কতটুকু শিক্ষা দিতে পারবে ? আর নিজেও যখন জানেন, আপনার মসজিদে ইমাম (নেতা) কোন ধরনের তখন আপনিও তার থেকে কতটুকু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন, তাকে কতটুকু মাণ্য করতে পারবেন। ঐ ইমাম যখন জানবে, তার মসজিদ কমিটির মেম্বারের দাড়ি নেই, যখন জানবে তার মসজিদ কমিটির মেম্বার সুদ খায়, তখন ঐ ইমাম তো দাড়ি আর সুদের বিরুদ্ধে খুতবায় ওয়াজ করতে পারবে না, কারণ যদি ঐ ওয়াজ করলে তার চাকুরী চলে যায়, যদি তার খাওয়া-পড়ায় টান পরে। বিষয়টি দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতি বছর মাদ্রাসাগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ আলেম (পাশ করার পরে টাইটেল, প্রকৃত আলেম নয়) বের হচ্ছে, কিন্তু সমাজে দুর্নীতি, সুদ-ঘুষ আর অপকর্ম কমছে না।
আমি আবার বলছি, বিষয়গুলো কিন্তু বাস্তব, যা আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটছে। কিন্তু আমরা কাকের মত চোখ বন্ধ করে থাকি। কাক যেমন খাদ্য লুকানোর সময় চোখ বন্ধ করে ভাবে -আমিও দেখি নাই, আর কেউ দেখে নাই, আমাদের অবস্থাও হয়েছে এখন ঠিক তেমন।
বিষয়গুলো এই কারণেই আলোচনা করলাম, আপনি যখন আপনার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি মসজিদের ঐ ইমাম-খতিবের উপর ছেড়ে দিলেন, তখন আপনার অনন্তকালের জান্নাত লাভের উপায় মানে ‘ইসলাম ধর্ম’ কতটুকু সুরিক্ষত ! শুধু সুরক্ষিত বিষয়টি নয়, একটি জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে পবিত্র কুরআন-হাদীস থেকে তার সমাধান দেওয়া এবং জাতিকে ইমাম (নেতা) হিসেবে টেনে নেওয়ার যোগ্যতা কতটুকু ? কুরআন হাদীস থেকে ব্যাপক গবেষণা করে মুসলিম জাতিকে সমুজ্জল করার যোগ্যতা তার কতটুকু ?
আমি আমার বলছি, এই দোষ আমি মাদ্রাসার ছাত্রদের দিচ্ছি না, এ দোষ আমার-আপনার। এ দোষ আমাদের সমাজের। ব্রিটিশরা আসার আগে মুসলমানদের ঘরে ঘরে ছিলো মাদ্রাসা-মক্তব। সবাই মোল্লা-মুন্সি হতে পারলে গর্ববোধ করতো, সমাজে ছিলো তাদের অঢেল প্রভাব। কিন্তু ব্রিটিশরা এসে এমন সিস্টেম চালু করে দিলো, মাদ্রাসা শিক্ষাকে এমনভাবে ভাগ করে দিলো যে, একদল মাদ্রাসা ছাত্র দাড়ি মোছ কেটে ইংরেজ চাকুরী পাওয়ার জন্য চেষ্টা করবে, আরেকদল মাদ্রাসা ছাত্র ফ্রি-থাকা খাওয়ার জন্য মাদ্রাসায় পড়বে। তারা এমন সিস্টেম করলো যেন মোল্লা-মুন্সি শব্দগুলো আভিজাত্য হারি ফেললো।
সত্যিই মুসলিম জাতি এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে আজ।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট