একটা ছেলের সাথে পরিচয় হলো কিছুদিন আগে, অদ্ভূত সব আচার-আচরণ। ভাবেসাবে বুঝায় নিজে খুব পাক্কা মুসলিম, নামাজ বলে না, ছালাহ বলে, রোজা বলে না, সাওম বলে। হাদীস বলে না, হাদীথ বলে।
শুরুতে খুব ভালো মনে হলেও কিছু কিছু খটকা ঠেকলো। দেখি মাথায় টুপি পরে না, বলে কি না টুপি পরা জরুরী না, না পরলেও চলে। এমনকি নামাজের সময়ও টুপি পরে না। এরপর দেখি নামাজের সময় হাত জানি কিভাবে বাধে, বুকের মধ্যে মেয়েদের মত করে। আরও অবাক হই নামাজের মধ্যে পা রাখার সিস্টেম দেখে। দেখি এক পা আমার পায়ের উপর তুলে দিয়েছে। যাই হোক, তার যে অদ্ভূত আচরণ দেখে অবাক হলাম, তা হলো- সে যোহরের ওয়াক্তে (দুপুর ৩:৩০) আছরের নামাজ পরে। আমি তাকে অনেক বুঝালাম, কিন্তু সে মানতে নারাজ। বললো- না এখনই আছরের ওয়াক্ত।
এরপর তার সাথে ইসলাম নিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম। তার কথা শুনে আরো তাজ্জব হয়ে গেলাম। সে বললো- আরে আপনারা যে ইসলাম পালন করেন, তার সবটাই বিদাহ। সব ইসলামের নতুন সৃষ্টি। এগুলো পালন করা যাবে না। বিদাহ মানেই পরিত্যাজ্য।
আমি তাকে অনেক হাদীস বললাম। সে শুনে সাথে সাথে বললো- সব জাল হাদিস। আমি বললাম- বাপরে বাপ, ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে বিরাট মুহাদ্দিস, হাদীসখানা না জানলেও সেটা শুনেই বলে দিচ্ছে জাল (পরে বুঝেছি তার মতের সাথে না মিললেই জাল হয়)। এরপর সে সিরিয়ালে সব আমলগুলোকে বিদাত, আর হাদীসগুলো জাল বলে দাবি করতে থাকলো।
আমি খুব খেয়াল করে তার কথাগুলো লক্ষ্য করতে থাকলাম, মাথা থেকে পা পর্যন্ত লক্ষ্য করলাম। দেখলাম, সে একটু পর পর সেলফি তুলছে, আর ফেসবুকে আপলোড করছে। আমি টুক করে তাকে একটা প্রশ্ন করলাম-
“আচ্ছা, ধরে নিলাম- শবে বরাত, ঈদে মীলাদুন নবী, আশুরার রোজা সব বিদাত, যদিও এগুলোর বিপক্ষে কিছু বলা ছিলো না, আপনার দৃষ্টিতে এগুলো নতুন সৃষ্টি। কিন্তু প্রাণীর ছবি তোলা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে, সহিহ হাদীসে কি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলা হয়েছে?”
সে বললো- না সহিহ হাদীসে প্রাণীর ছবির বিরুদ্ধে কিছু বলা নাই। যদি বলা থাকতো তবে আমাদের বড় বড় শায়েখ, মুফতি ও ইসলামী চিন্তাবিদরা কখন ছবি তুলতে পারতো না। ছবি তোলা আসলে মুস্তাহাব।
আমি তখন সেল্ফ থেকে বুখারী শরীফের একটি খণ্ড নিয়ে আসলাম, এবং তাকে দেখালাম-
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০)
হাদীস খানা সে খুব মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলো। আমি তাকে বললাম-
“তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন বা ইলম গ্রহণ করছো তাকে লক্ষ্য করো অর্থাৎ যাচাই বাছাই করো যে, তার আক্বীদা শুদ্ধ আছে কিনা, আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ আছে কিনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এরপর বললাম- যে নিজেই হাদীস শরীফে সরাসরি নিষেধকৃত বিষয়গুলো মানে না, সে আপনাকে ওমুক বিদাত, তমুক বিদাত এগুলো শিক্ষা দেয় কিভাবে ? আর ঈদে মীলাদুন নবী, শবে বরাতে মানুষ মসজিদে ইবাদত বন্দেগি করে, দুরুদ-সালাম পরে, মানুষকে মেহমানদারি করে। এগুলো তো হারাম নয়। একজন মানুষ যখন ইচ্ছা তখন এ বিষয়গুলো আমল করতে পারে। এর উপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কেন এসব ভ্রান্ত ফতওয়া দিয়ে মানুষকে আমল থেকে দূরে সরানো হচ্ছে। হ্যা আপনি মানুষকে শরীয়ত বুঝাতে চান, খুব ভালো কথা। যেগুলো সরাসরি হারাম, শিরকী গুনাহ (যেমন: ছবি) সেগুলো সম্পর্কে নিষেধ করুন। সেটা নিষেধ না করে আমলের মধ্যে কেন বাধা দিচ্ছেন। এরপর আমি তাকে আয়াতখানা শুনলাম-
“যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় জালেম আর কে হতে পারে? (সূরা বাকারা:১১৪)
এরপর তাকে বললাম, আগে নিজে হারাম সম্পর্কে জানুন এবং হারামগুলো থেকে বিরত থাকুন। এরপর মানুষকে হারাম থেকে বিরত থাকতে বলুন, ইবাদত বন্দেগি থেকে নয়। মনে রাখবেন- ইবাদতের মধ্যে ‘বিদাত’ গন্ধ পাওয়া দুরারোগ্য ব্যাধিরই লক্ষণ।
ছেলেটি আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো......