মুফতে আমীনি ও শায়খুল হদস এর গুরু মৌলভী শামছুল হক ফরিদপুরীর ঈদে মিলাদুন্নবি পালন


মৌলভী শামছুল হক ফরিদপুরী যাকে মুজাহিদে আযম, বাহরুল উলুম হিসেবে কিয়াম বিরোধীরা এক বাক্যে স্বীকার করে । সে একদিকে মৌলভী আশরাফ আলী থানবীর অন্যতম খলিফা, অন্যদিকে একাধারে ১৮ বছর পর্যন্ত জামাতে ইসলামীকে নৈতিকভাবে সমর্থন করে আসছিল । পরবর্তীতে সে জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর লিখিত ‘খেলাফত ও মুলুকিয়ত’ বইখানা পড়ে অবাক হয়ে যায় । সাথে সাথে  বলে- অত্র বই খ্রীস্টান পাদ্রীদের ইসলাম বিরোধীদের মূল গ্রন্থ সমূহেরই বহিঃপ্রকাশ “। মওদুদীর উক্ত বইয়ে হযরত ওসমান যুন নূরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সহ নবীর সাহাবীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষারোপ, অপবাদ ও সমালোচনার সমাহার ।


‘খেলাফত ও মুলুকিয়াত’ বইটির প্রণেতা মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদার প্রতিবাদে সে “ভুল সংশোধন” নামক একটি পুস্তক প্রকাশ করে । তাছাড়া সেঅনেক বই পুস্তিকা রচনা করেছে, তন্মধ্যে “তাছাউফ তত্ত্ব” পুস্তকটি সর্বসাধারণের নিকট সমাদৃত । উক্ত পুস্তকটির প্রথম অধ্যায়ে প্রশ্নোত্তর আকারে সর্বমোট ৭টি প্রশ্নের মধ্যে ৬ষ্ঠ তম প্রশ্নটি “মৌলুদ শরীফ ও কিয়াম” সম্পর্কিত । যেখানে সে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছে- “অধিকহারে যিকরে রাসুলের মাহফিল আয়োজন করা এবং তথায় কিয়াম করা উত্তম আদব; আর এর বিপরীতে বেআদবী বলে ফতোয়া দিয়েছে”


নিম্নে তার ফতোয়া প্রশ্নাকারে প্রদত্ত হলো---


প্রশ্নঃ “ মৌলুদ শরীফ পড়া নিয়ে এবং মৌলুদ শরীফ পড়ার মধ্যে কিয়াম করা নিয়া অনেক মতবিরোধ; এমন কি অনেক দলাদলি-বলাবলি পর্যন্ত হইতেছে । এ ব্যাপারে আসল জিনিসটা কি ? সে সেম্পর্কে আপনার ইলমের তাহকীক অনুযায়ী আপনার মতামত কি ? জানাইয়া আমাদিগকে সুখী করিবেন । আশা করি ইহাতে সমাজের গন্ডগোল বা ভুল বুঝাবুঝি দূর হইবে “ 
উত্তরঃ “ কুপ্রথা বড়ই খারাপ জিনিস, সুপ্রথা ভাল জিনিস । কুপ্রথা অর্থ খারাপ রসম । সুপ্রথা হল ভাল প্রথা, ভাল রসম । ব্যাপক রীতিকে প্রথা বলে । প্রথা ও রসম এবং সুন্নাত ও শরীয়তের মধ্যে পার্থক্য এই যে, প্রথা ও রসমের মূলে কোন সত্য ও হাকীকত থাকে না, কিন্তু সুন্নাত ও শরীয়তের মূলে সত্য ও হাক্বীকত আছে । অবশ্য সকলের হয়ত এ সত্যটি এবং হাকীকতটি জানা নাও থাকতে পারে । তদ্রুপ জানা না থাকিলে জানিয়া লওয়া উচিত এবং যেটা শুধু রসম ও কুপ্রথা, যাহার মূলে কোন সত্য বা হাকীকত নেই, সেটাকে পরিত্যাগ করা উচিত । মৌলুদ শরীফ সম্পর্কে তিনটি শব্দ ব্যাবহার হইয়া থাকে মৌলুদ শরীফ, মীলাদ শরীফ এবং মাওলীদ শরীফ । ‘মৌলূদ’ অর্থ বাচ্চা, যে বাচ্চা সদ্য জন্মগ্রহণ করিয়াছে । যখন ইহার সঙ্গে সম্মানের জন্য ‘শরীফ’ শব্দ যোগ করা হয় তখন অর্থ হয় যে, রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । ‘মীলাদ’ শব্দের অর্থ জন্মের সময় এবং ‘মাওলীদ’ শব্দের অর্থ জন্মের স্থান । সাধারণতঃ সম্মানিত বাচ্চা বলতে আমরা রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝি, সেইজন্য মৌলুদ শরীফের বয়ান শুনিতে আমরা ভালবাসি । কারণ হযরত রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়া গিয়াছেন--- “মাতা-পিতা হইতে, ছেলে মেয়ে হইতে সমস্ত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমস্ত মানুষ হইতে তোমরা যে যাবত আমাকে অধিক ভাল না বাসিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কেহই পূর্ণ মু’মিন হইতে পারিবে না” । (মুসলিম শরীফ) সর্বাপেক্ষা বেশী যখন ভালবাসিতে হইবে, এটা যখন ফরয, তখন সর্বাপেক্ষা বেশী উনার এবং দানরাশি স্মরণ করিতে হইবে । উনার গুণাবলী মহৎ চরিত্রাবলী আলোচনা করিতে হইবে । উনার জীবনী, উনার জীবনের কীর্তি ও কার্যাবলী পড়িতে হইবে । যেমন আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলিয়াছেন--- অর্থাৎ “হে মুমিনগণ ! তোমরা অনেক বেশী করিয়া আল্লাহকে স্মরণ কর” । আল্লাহর যিকির খুব বেশি করিয়া কর । এই আদেশের কারণেই যিকরুল্লাহ্র মজলিস হইয়া থাকে এবং একা একা ও যথাসম্ভব প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তিই আল্লাহর যিকির যে যত বেশী পারে করিয়া থাকে, এইরুপে “যিকিরে রাসূল” ও খুব বেশি করিয়া করা দরকার । এই জন্যই যাহারা খাটি আলিম তালিবে ইলম এবং খাটি আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গ তাহারা সব সময়ই দরুদ শরীফ পড়িতে থাকেন । হাদীস শরীফ পড়িতে, পড়াইতে এবং মুতালিয়া করিতে থাকেন । কারণ হাদীসের কিতাব সবই হযরত রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী ও জীবনের কার্যাবলীর বর্ণনা । মৌলুদ শরীফের আসল উদ্দেশ্য হযরত রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উনার গুণাবলী কার্যাবলীকে সর্বাধিক স্মরণ করা, সেই কাজের তাহারা অধিকাংশ সময় লিপ্ত থাকেন । হযরত রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বাধিক মুহাব্বত করা এবং তা’যীম করা ফরয । বাকী রহিল কিয়ামের কথা । কিয়াম জিনিসটা আসলে ফিকহের অন্তর্ভুক্ত নহে । ইহা তাছাউফের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ মুহাব্বত বাড়ানোর উদ্দেশ্যে হযরত রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারিফের ক্বাসিদা(প্রশংসামূলক কবিতা) পড়া হয় । তাহা দ্বারা মুহাব্বত বাড়ে এবং লোক মুহাব্বতের জোশে খাড়া হইয়া যায় । মুহাব্বতের জোশে খাড়া হইলে ইহাকে বিদআত বলা যায় না । তাছাড়া হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম করার সময় বসিয়া বসিয়া সালাম করা শরীফ তবীয়তের লোকের কাছে বড়ই বেয়াদপী লাগে । সেই জন্য রওযা শরীফের সামনে নিজেকে হাযির ধ্যান করিয়া খাড়া হইয়া সালাম করাতে কোনই দোষ হইতে পারে না । যেমন মদীনা শরীফের রওযা শরীফের সামনে সালাম করার সময় সকলেই দাড়াইয়া সালাম করিয়া থাকেন । তরীকতের মজলিসে সেই রুপ যদি এক জনের হাল গালিব হইয়া দাড়াইয়া পড়ে; তবে তরীকতের অনুসারে সকলেরই দাড়াইয়া যাওয়া উচিত । এই রুপ যিকিরে রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মজলিসেও মুহব্বতের জোশে একজন দাড়াইয়া গেলে সকলেরই দাড়াইয়া যাওয়া উচিত । অর্থাৎ ইহা একটি উত্তম আদব । ইহার বিপরীতে বেয়াদবি । মোট কথা এই যে, আল্লাহর ও রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহব্বত বাড়াইতে হইবে । সে জন্যে যিকরুল্লাহর মজলিসের, যিকরে রাসুলের মজলিসের সংখ্যা ও পরিমাণ যত বাড়ানো যাইবে ততই ইহ-পরকালের মঙ্গল হইবে । খবরদার ! কেহ বেয়াদবীর মধ্যে পতিত হইয়া নিজের রুহানী ক্ষতির মধ্যে ও পার্থিব ক্ষতির মধ্যে পড়িবেন না ।“

• তাছাউফ তত্ত্ব, কৃতঃ মৌলভী শামসুল হক ফরিদপুরী, ৩৯-৪২ পৃষ্ঠা

পরিতাপের বিষয় মৌলভী শামছুল হক ফরিদপুরীর মৃত্যুর পর নিজের গড়া “জামেয়া বোরহানীয়া আরাবীয়া লালবাগ” প্রতিষ্ঠানটিতে একবারের জন্য মীলাদ কিয়াম তো হয়নি বরং উক্ত মাদরাসার সাবেক পরিচালক মুফতে ফজলুল হক কমিনী মীলাদ কিয়ামকারীদেরকে অমুসলমান বলে ফতোয়া দিয়েছিল । এমনকি সে ফতোয়া জারি করেছিল- যারা মীলাদ-কিয়াম করেন তাদেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন না করার জন্য, যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল । আমিনীর লাগামহীন মনগড়া ফতোয়া অনুযায়ী মীলাদ কিয়ামের ঘোর সমর্থক শামছুল হক ফরিদপুরীকে মুসলমানদের কাতারে রাখবেন কি না ? যদি না রাখেন, তবে তার কবরকে বিধর্মীদের গোরস্থানে স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন আছে কিনা ? তা মুসলিম জনতা আমিনীগংদের কাছে জানতে চায় । 

অন্য দিকে মৌলভী শামছুল হক ফরিদপুরীর হাতে গড়া ছাত্র (যে শাইখুল হাদীস নামে একটি মহলে পরিচিত ছিল) মৌলভী আজিজুল হক তার ওস্তাদের অনুসরণে জীবনে একবারও মীলাদ ও কিয়ামের অনুষ্ঠান করেনি বিদআতী হওয়ার ভয়ে । অথচ বিধর্মীদের সৃষ্ট “লং মার্চ” নামে কর্মসূচী ঘোষণা ও তা পালন ইসলামের কোন যুগে ছিলনা; তা সত্ত্বেও পালন করেছে ১৯৯০ সালে ।