আলমে আরওয়াতে সমস্থ নবী রাসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদে মিলাদে হাবীবি পালন

পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিহাস অতি প্রাচীন। পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। রোজে আজলে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামকে নিয়ে আল্লাহ পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়োজন করেছিলেন | নবীগণের মহাসম্মেলন ডেকে পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়োজক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। সকল নবীগন ছিলেন শ্রোতা। ঐ মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত, শান ও মান অন্যান্য নবীগণের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে তাঁর উপর ঈমান আনয়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা | 


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, ছানা-ছিফত, প্রশংসা তথা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সর্বপ্রথম ঈদ পালন করেছেন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন তিনি স্বয়ং নিজে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য (নুবুওওয়াত ও রিসালতের হাক্বীক্বী ফায়িজ দেয়ার জন্য) আখিরী রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ববিষয়ে উনার খিদমত করবেন (উনার পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামউপলক্ষে ঈদ পালন করবেন)। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে উনারা সকলে বললেন, হ্যাঁ- আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করে নিলাম (অর্থাৎ আমরা যমীনে গিয়ে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ পালন করবো)। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন: আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম। তবে জেনে রাখুন, যারা এই ওয়াদাকৃত বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে (যারা পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ পালন করবে না বা এর বিরোধিতা করবে) তারা চরম পর্যায়ের ফাসিক (ও কাফির) হয়ে যাবে।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ৮১-৮২)
কোরআন মাজিদের ৩য় পারার (সুরা আল-ইমরানের ৮১-৮২ নং আয়াতের) মধ্যে আল্লাহ তায়ালা ঐ পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের কথা উল্লেখ করেছেন। নবীজীর সম্মানে এটাই ছিল প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের উদ্যোক্তা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। সুতরাং মিলাদ মাহফিল আনুষ্ঠান হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত বা তরিকা। ঐ মজলিসে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম ও উপস্থিত ছিলেন। ঐ মজলিসে স্বয়ং আল্লাহ নবীজীর শুধু আবির্ভাব বা মিলাদের উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। সিরাতুন্নবীর উপর কোন আলোচনা সে দিন হয়নি। সমস্ত নবীগন খোদার দরবারে দন্ডায়মান থেকে মিলাদ শুনেছেন এবং কিয়াম করেছেন। কেননা খোদার দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই,পরিবেশটি ছিল আদবের। মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ এবং কিয়াম কারীগন ছিলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম। এই মিলাদ ও কিয়াম কোরআনের " ইকতেদা উন নস " দ্বারা প্রমানিত হলো। 
উল্লেখ্য, যে কোরআন মজিদের "নস" চার প্রকার যথা : 
(১)ইবারত , 
(২)দালালত , 
(৩) ইশারা ও 
(৪) ইকতিদ্বা | উক্ত চার প্রকার দ্বারাই দলিল সাবেত হয়। ( নুরূল আনওয়ার দেখুন ) 

উল্লেখিত আয়াতের মধ্যেঃ 
১/ (ইবারতের) দ্বারা প্রমানিত হয়েছে "অঙ্গীকার" 
২/ (দালালাতের) দারা "নবীগনের মাহফিল" 
৩/ (ইশারার) দারা "মিলাদের বা আবির্ভাবের" এবং
৪/ (ইকতিদার) দ্বারা "কিয়ামের" প্রমানিত হয়েছে | সুতরাং পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল কিয়াম নবীগনের সম্মিলিত সুন্নাত ও ইজামায়ে আম্বিয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত | 

উক্ত দুটি আয়াতে মধ্যে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ব্যাপারে ১০ টি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে । যথাঃ 
১ । এই ঐতিহসিক পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মেলনের ঘটনাবলীর প্রতি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দৃষ্টি আকর্ষণ | যেহেতু নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সময়ে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন | 
২। আল্লাহ কর্তৃক অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামের নিকট থেকে নবীজীর শানে অঙ্গীকার আদায় | 
৩। নবীগনের রাজত্বকালে এই মহান নবীর আগমন হলে তাঁর উপর ঈমান আনতে হবে ।
৪। তাঁর আগমন হবে অন্যান্য নবীগণের সত্যতার দলীল স্বরূপ ।
৫। ঐ সময়ে নবীগণের নবুয়্যত স্থগিত রেখে- নবীজীর উপর ঈমান আনয়ন করতে হবে ।
৬। নবীজীকে সর্বাবস্থায় পূর্ণ সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার আদায় | জীবনের বিনিময়ে এই সাহায্য হতে হবে নিঃশর্তভাবে ।
৭। নবীগনের স্বীকৃতি প্রদান।
৮। পরস্পর সাক্ষী হওয়া। 
৯। সকলের উপরে আল্লাহ নিজেই সাক্ষী | 
১০। ওয়াদা ভঙ্গের পরিনাম - নাফরমান ও কাফের। 

এ আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মাখলূকাতের জন্য পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করাকে ফরয করে দিয়েছেন। মূলকথা হলো- খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই সর্বপ্রথম পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেন। পাশাপাশি বান্দা-বান্দীদেরকেও পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার নির্দেশ প্রদান করেন। তাই বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করা মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার বিরোধিতা করা। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ ঈমান নষ্ট হয়ে জাহান্নামী হওয়ার কারণ।