পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফের ৫৭-৫৮ নম্বর আয়াত শরীফের অনুবাদ নীচে যেভাবে আছে সেভাবে দেবার পর আমার এক বন্ধু ফোনে আর অপর একজন কমেন্টসে জানায় এখানে নাকি “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনার পরিবর্তে “ কুরআন শরীফ” কে বোঝানো হয়েছে। তারা কয়েকটি তাফসীরে তাই দেখতে পেয়েছে। তাই এই বিষয়ে তাফসীর থেকে নয় বরং পবিত্র কুরআন শরীফ থেকেই দলীল দিচ্ছি। প্রথমে আসুন দেখে নেই আমরা কি অর্থ দিয়েছিলাম যা আসলে সঠিক।
يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مما يجمعون .
অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন মহান নছীহতকারী, অন্তরের শিফাদানকারী, মহান হিদায়েত দানকারী ও খাছভাবে ঈমানদারদের জন্য আমভাবে সমস্ত কায়িনাতের জন্য মহান রহমত দানকারী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।
হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার ফযল ও রহমত অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে তোমাদের উচিত খুশি প্রকাশ করা। উনার মুবারক শানে এ খুশি প্রকাশ করাই হচ্ছে তোমাদের জীবনের সমস্ত আমল থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম।।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
এবারে আসুন অনলাইনে কি অনুবাদ পাওয়া যায় তা দেখে নেইঃ
প্রথম অংশঃ হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। [সুরা ইউনুস: ৫৭]
قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
দ্বিতীয় অংশঃ বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছ। [সুরা ইউনুস: ৫৮]
তাহলে আসুন “অন্তরের রোগের নিরাময়” করবেন কুরআন শরীফ না “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” এ বিষয়ে আল্লাহ পাক কি বলেন-
মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ-
لَقَدْ مَنَّ اللّهُ عَلَى الْمُؤمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُّبِينٍ
আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।
এখানে স্পস্ট উল্লেখ করা হল আল্লাহ পাক অনুগ্রহ করে যে নবী পাঠিয়েছেন তিনি পরিশোধন করবেন। তাহলে “অন্তরের রোগের নিরাময়” করবেন কুরআন শরীফ নয় বরং “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”।
আবার আসুন “রহমত মুসলমানদের জন্য” এখানে রহমত বলতে আসলে কি “কুরআন শরীফ” বোঝানো হয়েছে নাকি হুযুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে বোঝানো হয়েছে ? আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।
স্পস্ট জবাব। তিনি রহমত হিসেবেই এসেছেন। সুবহানাআল্লাহ।
তারপর যখন এই অনুবাদ দেয়া হল যে “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার ফযল ও রহমত অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে তোমাদের উচিত খুশি প্রকাশ করা। উনার মুবারক শানে এ খুশি প্রকাশ করাই হচ্ছে তোমাদের জীবনের সমস্ত আমল থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। “ সুবহানাল্লাহ!” তখন অনেকের তা বুঝতে কস্ট হয়ে গেলো। তাহলে আসুন এ বিষয়ে অনলাইনে অন্য আয়াত শরীফের অনুবাদে কি পাওয়া যায় তা দেখিঃ -
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। [সুরা ফাতাহ: ৮]
لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
যাতে তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর। [সুরা ফাতাহ: ৯]
এখানে কাকে সম্মান করতে বলা হয়েছে ? এখানে আল্লাহ পাক এবং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও সম্মান করার কথা বলা হয়েছে। বরং অন্য আয়াত শরীফে বলা হয়েছে আল্লাহ ও উনার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠান। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠাও।
দরুদ ও সালাম পাঠানো হচ্ছে উত্তম সম্মান দেবার একটি পদ্ধতি। কিন্তু তারপরেও মানুষ বুঝবেনা এবং এই নিয়ে কথা বলতে থাকবেই । তারও কারণ আছে এবং আল্লাহ পাক তা তিনি স্পস্টই জানিয়ে দিয়েছেন ।
আল্লাহ পাক আরও ইরশাদ করেনঃ-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
এটাই সত্য। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মান সম্পর্কে মানুষ আসলেই জানে না।