দেওবন্দী , হেফাজতিদের গরু , হেফাজত নেতা জুনায়েদ বাবু নগরীর ঈদে মিলাদুননবী নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব!!!
দেওবন্দী/কাওমী/হেফাজতিদের গুরু জুনায়েদ বাবু নগরী তার মিলাদ বিরোধী লিখায় শায়েখ আব্দুল আযীয দেহলবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কে একজন মিলাদ বিরোধী হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে লিখে –
১. “ হযরত শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি কে জিজ্ঞাসা করা হয়, রবীউল আউয়াল মাসে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে এর সাওয়াব রাসলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহে পৌঁছানো, তেমনি মুহাররম মাসে হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য আহলে বাইতের ঈসালে সাওয়াব উদ্দেশ্যে খানাপিনার আয়োজন করা কি জায়েয? উত্তরে তিনি বলেন, “নিজের আমলের সাওয়াব কোন বুযুর্গ ব্যক্তিকে বখশিশ করার ইখতিয়ার মানুষের আছে। তবে এর জন্য কোন মাস বা দিন-কাল নির্দিষ্ট করা বিদ্আত।“ (ফাতওয়ায়ে আযীযী-১৭৬)।
২. তিনি ‘তুহ্ফায়ে ইসনা আশারিয়া’ নামক গ্রন্থে মীলাদ উদযাপনকে শিয়াদের মুহাররম উদযাপনের সাথে তুলনা করে বলেন, “শিয়াদের সাদৃশ্য অবলম্বন থেকে দরে থাকা আবশ্যক।” (মাহনামায়ে দারুল উলূম, জানুয়ারী সংখ্যা, ১৯৮৯ইং)
উপরের এই কথাগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। বর্তমান দেওবন্দীরা শায়েখ আব্দুল আযীয দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি কে মিলাদ বিরোধী হিসেবে প্রচার করে মিথ্যা উক্তি প্রচার করলে কি হবে? দেওবন্দীদের অতীতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য আলেম মাওলানা হাফিজ মুহাম্মদ আব্দুল হক এলাহাবাদী মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর স্বরচিত বিখ্যাত কিতাব “আদ-দুরুল মুনাজ্জাম ফি হুকুমে আমলে মাওলাদিন নাবীয়্যিল আযম” গ্রন্থে শায়েখ আব্দুল আযীয দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর সঠিক মন্তব্যই তুলে ধরেছেন এভাবে
“শায়েখ আব্দুল আযীয দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুহররাম মাসের অনুষ্ঠান মরসিয়াখানি (শোক গাথা পাঠ) সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির জিজ্ঞাসার উত্তরে বললেন, সারা বছরের মধ্যে এ ফকীরের (আমার) বাড়িতে দুটি মজলিস অনুষ্ঠিত হয়। একটি হচ্ছে মিলাদ শরীফের আলোচনা অনুষ্ঠান, আর অপরটি হচ্ছে শাহাদাতে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর আলোচনা। প্রথম মজলিসে আশুরার দিন চারশত বা পাঁচশন এবং প্রায় এক হাজার লোকের সমাগম হয়। সে মজলিসে দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়। আমিও সে মজলিসে উপস্থিত হয়ে বসি। আর হযরত হাসনাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে হাদীসে যেসব ফযিলত বর্ণিত হয়েছে মজলিসে তাও বর্ণনা করা হয়। আর হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর সাথীদের শাহাদাত লাভের ফযীলত সম্পর্কেও কিছু কিছু হাদীস বর্ণনা করা হয়। আর তাঁদের হত্যাকারীদের খারাপ পরিণত সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। এ উপলক্ষে জীন-পরী থেকে হযরত ইউম্মে সালমা ও অন্যান্য সাহাবীগণ যে শোক গাঁথা শুনেছেন তারও কিছু কিছু আবৃতি করা হয়। হযরত ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ অন্যান্য সাহাবীগণ যে বিস্ময়কর অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছেন তাও আলোচনা করা হয়। আর হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, এ হৃদয় বিদারক ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন তাও আলোচনা করা হয়। এরপর কুর’আন মাজিদ খতম করা হয় এবং পাঁচটি আয়াত পাঠ করে উপস্থিত লোকদের রূহের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করা হয়। এর মাঝে কোনো ব্যক্তি সুললিত কন্ঠে সালাম পাঠ করলে অথবা (মরসিয়াহ) শোক গাঁথা পাঠ করলে উপস্থিত লোকদের ও ফকীরদের মনটি কোমল হয়ে মহব্বতের আলোকে আবেগে নয়ন যুগল অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে। এবং কান্নায় অস্থির হয়ে যায়। এ ধরণের আরও অনেক পূণ্যময় কাজ করা হয়। অতএব এ কাজগুলো যদি বানোয়াট ও শরীয়ত বিরোধী কাজ হত তাহলে এ ফকীরের তা বৈধ হত না। এবং আদৌ তা সমর্থন করতাম না।এখন আসুন মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠানের আলোচনায়। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ লোকজন পূর্ব আভাস মাফিক আমার বাড়িতে এসে জমা হয় এবং দুরূদ শরীফ পাঠে তারা মশগুল হয়। আর এ ফকীরও দুরূদ শারীফ পাঠে তাদের সাথে শামিল হয়। প্রথমত হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফযিলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহের কিছু কিছু বর্ণনা করা হয়। এরপর হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মবৃত্তান্ত ঘটনাবলী। তাঁর দেহ অবয়বের গঠন আকৃতি, দুগ্ধপান কালীন কিছু অবস্থা ও ঘটনাবলীসহ কিছু কিছু হাদীসও বর্ণনা করা হয়। এরপর উপস্থিত লোকদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী এবং ফাতিহার নিয়তে শিরনী ও মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া পুরনো দস্তর অনুযায়ী সব শেষে হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চুল মুবারক সকলকে দেখানো হয়।”
[সূত্রঃ আদ-দুরুল মুনাজ্জাম ফি হুকুমে আমলে মাওলাদিন নাবীয়্যিল আযম, পৃঃ ২০৯-২১১]