নিম্নে কিছু নমুনা উপস্থিত করলাম -
১. হাদীস শাস্ত্রের প্রখ্যাত ইমাম আবু ঈসা মুহম্মদ তিরমিযী রহমতুল্লাহে আলাইহি তার সংকলিত সুনানে তিরমিযী শরীফে “মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” শিরোনামে একটি অধ্যায় প্রণয়ন করেছেন এবং এতে হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম তারিখ নিয়ে আলোচনা সম্বলিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হল---
হযরত মোত্তালিব বিন আবদুল্লাহ আপন দাদা হযরত কায়েছ বিন মোখরামা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- আমি ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আমুল ফীল’ অর্থাৎ- বাদশাহ আবরাহার হস্তি বাহিনীর উপর আল্লাহর গজব নাযিল হওয়ার বছর জন্মগ্রহণ করেছি। হযরত ওসমান বিন আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বনি ইয়ামার ইবেন লাইস-এর ভাই কুবাছ ইবনে আশইয়ামকে বলেন, আপনি বড় না রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? তখন তিনি বলেন, রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে আমার চেয়ে অনেক বড়। আর আমি জন্ম সুত্রে রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আগে মাত্র। (তিরমিযী শরীফ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং-২০৩ )
আলোচ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল সাহবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-গণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম কাহিনী নিয়ে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করতেন।
২. শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেন- সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
"আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন "
• মাদারেজুন নবুওয়াত (উর্দু) ২য় খন্ড, পৃষ্ঠ নং-১
৩. হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই রাসুলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- “মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আমার জন্য একটি বিশেষ মর্যাদা হলো, আমি খতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি। তাই আমার লজ্জাস্থান অন্য কেউ দেখেনি।
• মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া,
• শরহে জুরকানী ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-২৩২
৪. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- “একদা তিনি কিছু লোক নিয়ে স্বীয় গৃহে হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্মের ঘটনা বর্ণনা করে আনন্দ উৎসব করছিলেন এবং তার প্রশংসাবলী আলোচনা করছিলেন। এমন সময় নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে তাশরীফ আনেন এবং তা দেখে এরশাদ করেন- “তোমাদের জন্য কেয়ামত দিবসে আমার শাফায়াত বৈধ হয়ে গেল”। (অর্থাৎ সমবেত হয়ে আমার জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনার ফলে তোমাদের জন্য কিয়ামত দিবসে আমার সুপারিশ নিশ্চিত হয়ে গেল)।
• আত তানবীর ফিল মাওলিদিল বাশীরিন্নাযীর তথ্যসুত্র মীলাদ ও কিয়ামের বিধান, পৃষ্ঠা নং-১০,
• হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৫ ।
৫. হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত-“ একদা তিনি হুযুর করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আমের আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর ঘরে গিয়েছিলেন। তখন হযরত আমের আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সন্তানদের ও তার স্বগোত্রীয় লোকদের সাথে নিয়ে হুযুর করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করছিলেন এবং বলছিলেন- “এ দিনটি, এ দিনটি” তখন হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- (হে আমের আনসারী !) নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আপনাদের জন্য রহমতের দরজা সমূহ খুলে দিয়েছেন। আর ফিরিশতাগণ আপনাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করছে। তাছাড়া যারা আপনার মত আমার জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে (মীলাদ মাহফিল করবে) তারা আপনার মতোই নাজাত লাভ করবে।
• আত্তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীরিন্নাযীর তথ্যসূত্র হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৫।
আলোচ্য হাদীস দুটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ বা জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করতেন এবং তা নিজ সন্তানদের ও স্বগোত্রীয়দের শিক্ষা দিতেন।
৬. হযরত কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন, রাসুলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সোমবার রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তার উত্তরে রাসুলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইহা এমন একটি দিন যেদিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং যেদিন আমার ওপর কোরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছে”। কিতাবের মধ্যে বাইনাছছতর বা দুই লাইনের মধ্যখানে লেখা রয়েছে- “আমি এ দু’নেয়ামতের শোকরিয়া হিসেবে সোমবার রোযা রাখি”।
• মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং-১৭৯;
• মুসলিম শরীফ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৩৬৮
আলোচ্য হাদীস শরীফের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ বা দুনিয়ায় শুভাগমন উপলক্ষ্যে শরীয়তের আলোকে বৈধ পন্থায় শোকরিয়া হিসেবে যে কোন উৎসব বা আনন্দ অনুষ্ঠান (ওয়াজ-মাহফিল, মেহমানদারি, নফল ইবাদত বন্দেগী, দান-সদকাহ ও জশনে জুলুসের আয়োজন করা ইত্যাদি) উদযাপন করা বৈধ এবং সুন্নাতে রাসুল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
আর মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়ায় শুভাগমনের শোকরিয়া হিসেবে খুশি হয়ে কোন উৎসব বা অনুষ্ঠান পালন করার নামই হলো পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুনিয়ায় শুভাগমনের শোকরিয়া হিসেবে খুশি বা আনন্দ অনুষ্ঠান। এখন যারা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করে তারা কি উপরের হাদীস সমূহ পাঠ করেনি ??? পাঠ করে থাকলে কিভাবে তারা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করাকে হারাম, শিরক ও বিদআত ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে মুসলিম সমাজে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করলো ???