বাতিলপন্থীরা বলে থাকে মীলাদ বা মীলাদুন্নবী শব্দের ব্যবহার নাকি কুরআন শরীফ হাদীস শরীফে কোথাও নাই। এটা নাকি মনগড়া এবং নতুন উদ্ধাবিত শব্দ। তাহলে আসুন দেখা যাক মীলাদ ও মীলাদুন্নবী শব্দ কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে আছে কিনাঃ
মিলাদ শব্দটির মূল অক্ষর হচ্ছে و + ل + د) ولد) । আমরা দেখব কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে মূল অক্ষরে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কিনা।
কোরআন শরীফে মীলাদ শব্দের প্রমানঃ
وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
আর শান্তি বর্ষিত হোক আমার উপরে যে দিন আমার জন্ম হয়েছিলো, আর যে দিন আমি ইন্তেকাল করবো । আর যে দিন আমাকে পুররুত্থিত করা হবে জীবিত অবস্থায় । (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
অনুরূপ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিজের বক্তব্য উল্লেখ করে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : “আমার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন আমি বিলাদতী শান প্রকাশ করি, যেদিন আমি বিছালী শান প্রকাশ করবো এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
আমরা দেখলাম কুরআন মাজীদে মূল অক্ষরে وَلَدَتُ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে; যার অর্থ আমি জন্ম গ্রহণ করেছি । এ শব্দটি প্রমাণ করে মিলাদের মূল অস্তিত্ব কুরআন শরীফে বিদ্যমান ।
হাদীস শরীফে মীলাদ শব্দের প্রমানঃ
আসুন দেখা যাক, কুরআন শলীফের পাশাপাশি হাদীস শরীফে এ শব্দটির ব্যবহার হয়েছে কিনা । ছিয়া ছিত্তার অন্যতম কিতাব, জামে তিরমিযী শরীফে ميلاد ‘মিলাদ’ (জন্মের সময়) শব্দটি নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ব্যবহার করেছেন । যেমনঃ
১) নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম সাল সম্পর্কে হযরত কায়স ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ
عَنِ الْمُطَّلِبِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَخْرَمَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: “وُلِدْتُ أَنَا وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ. وَسَأَلَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ قُبَاثَ بْنَ أَشْيَمَ أَخَا بَنِي يَعْمَرَ بْنِ لَيْثٍ أَأَنْتَ أَكْبَرُ أَمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْبَرُ مِنِّي وَأَنَا أَقْدَمُ مِنْهُ فِي الْمِيلادِ وُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ. رواه الترمذي وقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لا نَعْرِفُهُ إِلا مِنْ حَدِيثِ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَقَ.
অর্থাৎ আমি ও রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুজনেই “হাতীর বছরে” জন্মগ্রহণ করেছি । হযরত উসমান বিন আফফান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কুবাস বিন আশিয়ামকে প্রশ্ন করেনঃ আপনি বড় না রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড় ? তিনি উত্তরে বলেনঃ রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে বড়, আর আমি উনার পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছি ।
দলীলঃ তিরমিযি, আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা (২৭৯ হিঃ), আস সুনান, , (প্রকাশনা- বৈরুত, দারু ইহ্য়ায়িত তুরাসিল আরাবী, হাদিস নং ৩৬১৯
২) হাদীস শরীফে আমরা আরও দেখতে পাই নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
ما من مولود الا يولد على الفطرة অর্থাৎ প্রত্যেক শিশু তার স্বভাবের উপর জন্মলাভ করে ।
দলীলঃ বুখারী শরীফ খন্ড-১, পৃষ্টা- ১৪, হাদিস নম্বর ১৩৫৮,
মুসলিম শরীফ, আস সহীহ হাদীস নং ৬৯২৬
সূতরাং দেখা হাদীস শরীফে “মাওলুদ” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
৩) বিশুদ্ধ হাদীস শরীফে এসেছে,
سءل رسول صلي عليه و سلم عن صوم الاثنين فقال فيه ولدت وفيه انزل علي وحي
অর্থ: হযরত আবু কাতাদা আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হল, তখন নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, এদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা কুরআন শরীফ নাজিল হয়েছে।”
দলীল –
√সহীহ মুসলিম,হাদীছ শরীফ নং-২৮০৭
√সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ শরীফ নং-২৪২৮
√ সুনানে বায়হাকী [কুবরা], হাদীছ শরীফ নং-৮২১৭
√ সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীছ শরীফ নং-২১১৭
√ মুসনাদে আবি আওয়ানা, হাদীছ শরীফ নং-২৯২৬
√ মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ শরীফ নং-২২৫৫০ !
৪) হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণ স্ব স্ব কিতাবে মিলাদ শব্দটি ব্যবহার করেছেনঃ
বিখ্যাত মুহাদ্দিস আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা তিরমিজী রহমতুল্লাহি আলাইহি (হিজরী ২৭৯) তার বিখ্যাত কিতাব জামে তিরমিযীর ২য় খণ্ডের ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম রচনা করেছেন যার নাম দিয়েছেন-
باب ما جاء فى ميلاد النبى صلى الله عليه وسلم অর্থাৎ যা রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম সম্পর্কে এসেছে । এখানে তিনি ‘মিলাদুন্নবী’ শব্দটি রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মবৃত্তান্ত বুঝাতে ব্যবহার করেছেন ।
অনুরূপভাবে ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৪৫৮ হিঃ) তার বিখ্যাত সিরাত সংক্রান্ত হাদিসের কিতাব ‘দালায়েলুন নবুওয়ত” নামক কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৯ পৃষ্ঠায় ابواب ميلاد رسول الله শীর্ষক একটি অধ্যায় এনেছেন, যেখানে স্পষ্ট মীলাদে রসূল শব্দটি উল্লেখ করেছেন । যেখানে তিনি রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনবৃত্তান্ত আলোচনা করেছেন ।
সূতরাং কুরআন শরীফ , হাদীস শরীফ ও হাদীস শরীফে ইমামদের স্পষ্ট দলীল দ্বারাই মীলাদ ও মীলাদুন্নবীর প্রমান পাওয়া গেলো। সুবহানাল্লাহ।