১. আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর পুর্বে ওমর বিন মুল্লা মুহম্মদ মউসুলি রহমতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসকে নিয়মিতভাবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জারী রাখার প্রচলন চালু করেন । উনার অনুসরনে ইসলামের অমর সিপাহসালার সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বোনজামাই আরবলের বাদশাহ মালিক আবু সাঈদ মুজাফফর আল দীন (১১৫৪- ১২৩২ খৃঃ) রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবি অনুষ্ঠান পালন প্রচলন করেন ।(তাঁরা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম করেছেন কিন্তু তাঁর পুর্ব থেকেও ঈদে মিলাদুন্নবি পালন হত ) ইবনে খালকান আরবালি শাফেয়ী উক্ত অনুষ্ঠানের সাক্ষী।
'তারিখ-ই-মারাত আয জামান'' এর মতে ঐ অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরছ করা হত । হিজরি ৭ম শতকের শুরুতে সে যুগের বিখ্যাত ওলামা ও প্রসিদ্ধ ফোজালাগণের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব আবুল খাত্তাব উমর বিন হাসান দাওহিয়া ক্বলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মিলাদুন্নবির উপর একটি বই লিখেন যার নাম দেন ‘আত-তানভির ফি মাওলিদিল সিরাজ আন নাজির। তিনি বাদশাহকে এই বই উপহার প্রদান করেন। তিনি নিজে গ্রন্থখানা পাঠ করে বাদশাহকে শুনান। বাদশাহ প্রীত হয়ে তাঁকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন।“
শুধু আরবলের বাদশাহ মিশরের সুলতান ও ইহা উদযাপন করতেন। এ দিবসে উনারা হাজার হাজার স্বর্নমুদ্রা ব্যয় করতেন। যার সাক্ষী হলে ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি( আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর পুর্বে) । সুলতান আবু হামু মুসা তালামসানী এবং পুর্বেকার আন্দালুস ও আকসার শাসকেরা ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করতেন। আবদুল্লাহ তন্সী সুম্মা তালামসানী এ উদযাপনের উপর বিস্তারিত একটি বই লিখেছেন যার নাম দিয়েছেন “ রাহ আল আরওয়াহ “
রেফারেন্স –
১. সুবুল আল হুদা ওয়ার রিশাদ ফি সিরাহ খায়ের আল-ইবাদ – মুহব্বদ বিন আলী ইউসুফ দামিশকি
২. আদ – দূরর আল – মুনাজ্জাম ফি হুকমী মাওলিদিন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
৩. আনওয়ার আস সাতিয়া ১৩০৭ হিজরি , পৃ ২৬১ ,
৪. ওয়াফইয়াতুদ দায়ান আনবা আবনাউজ জামান, কায়রো থেকে প্রকাশিত
৫. আল্লামা মুহম্মদ রাজা মিস্রীর “ মুহাম্মদুর রসুলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম , লাহোর থেকে প্রকাশিত , পৃ ৩৩
২.আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগে, হাফিযে হাদীছ আবুল ফয়েয হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১১১৬-১২০১ খৃঃ) তিনি লিখেন,
لازال اهل الحرمين الشريفين والمصر واليمن والشام وسائر بلاد العرب من المشرق والمغرب يحتفلون بمجلس مولد النبى صلى الله عليه وسلم ويفرحون بقدوم هلال ربيع الاول ويغتسلون ويلبسون الثياب الفاخرة ويتزينون بأنواع الزينة ويتطيبون ويكتحلون ويأتون بالسرور فى هذه الايام ويبذلون على الناس بما كان عندهم من المضروب والاجناس ويهتمون اهتماما بليغا على السماع والقراعة لمولد النبى صلى الله عليه وسلم وينالون بذالك اجرا جزيلا وفوزا عظيما.
অর্থ: “হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান (পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার) এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, হাতের সম্পদ টাকা পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক ছাওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন।তারা ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করে করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্থি , জীবিকার মানোন্নয়ন , শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও তাদের সাফল্য লাভ হয়েছে তা প্রকাশ করতেন।”
রেফারেন্সঃ
১.শেখ ইসমাইল হাক্কি লিখিত তাফসীর রুহুল বয়ান ভলিউম ৯ , পৃষ্ঠা ৫৬
২. মিলাদুল উরুস – উর্দু “বয়ান-ই-মিলাদুননবী”, পৃ ৩৪-৩৫ , লাহোর প্রকাশিত
৩. আদ দুররুল মুনাজ্জাম,পৃ ১০০-১০১
৪. আল মিলাদুননবী, পৃ ৫৮
https://goo.gl/GYZik1