নবীজির বিলাদত দিবস (জন্মদিবস) কে বিকৃতকারী মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা আসলে কেমন ছিলো ?


সহিহ হাদীসের বর্ণিত আছে নবীজির বিলাদত দিবস হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ (সূত্র:https://goo.gl/MWAefG)। কিন্তু এরপরও কিছু লোক মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা’র রেফারেন্স দিয়ে দাবি করে নবীজির বিলাদত নাকি ৯ই রবিউল আউয়াল। এক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রেখেছে দুটি বই-
১) ব্রিটিশদের থেকে ডিলিট উপাধি প্রাপ্ত সুলাইমান নদভীর লেখা ‘সীরাতুন্নবী’ নামক গ্রন্থ।

২) কট্টর আহলে হাদীস সাফিউর রহমান মুবারকপুরীর লেখা ‘আর-রাহীকুল মাকতুম’, ইংরেজী বইটির নাম The Sealed Nectar।
উভয় বইয়ে মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশার রেফারেন্স দিয়ে সহিহ হাদীসকে স্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে ১২ তারিখ নয় নবীজির বিলাদত ৯ তারিখ।
এখন কথা হচ্ছে মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা আসলে কেমন ছিলো ? সে কি ঈমানদার ছিলো, নাকি নাস্তিক ছিলো ? আসুন জেনে নেই-

উইকিতে কথিত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমুদ পাশা সম্পর্কে রয়েছে, মাহমুদ পাশা আল ফালাকি (1815-1885) ছিল উনবিংশ শতাব্দীর একজন মিশরীয় জ্যোতির্বিদ। সে ছিল Egyptian Renaissance বা মিশরীয় রেনেসার একজন মূল ব্যক্তি। সে ফ্রান্সের বৃত্তি নিয়ে গবেষণা ও পড়াশোনা চালিয়েছিল।
http://en.wikipedia.org/wiki/User:Dave_Light/Al-Faliki
এই মিশরীয় রেনেসাঁকে আরবীতে বলা হয় ‘আল-নাহদা’। ১৮০০-১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময়টিতে এই কথিত ‘মিশরীয় রেনেসা’ সংঘটিত হয়। উইকিতে আল নাহদার মূল ব্যক্তি বলা হয়েছে ‘রিফা আল তাহতাবী’ (Rifa'a el-Tahtawi) নামক ব্যক্তিকে। তার সম্পর্কে উইকিতে রয়েছে যে, তাকেও ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল। সে মিশরে এসে প্রচার চালায় যে, মুসলমানদেরকে অবশ্যই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
রিফা আল তাহতাবী ছাড়াও এই ‘আল-নাহদা’র আরেক মূল ব্যক্তি ছিল ‘বুরতুস আল বুসতানী’। সে মুসলমানও ছিল না, ছিল এক লেবানিজ ম্যারেনাইট খ্রিস্টান।
এই প্রত্যেকটি দলিল পাবেন উইকির এই লিঙ্কে:http://en.wikipedia.org/wiki/Al-Nahda
অর্থাৎ মিশরীয় রেনেসাঁ সংশ্লিষ্টরা ফ্রান্সপন্থী ছিল। ফ্রান্সের বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করে তারা মুসলিম মূল্যবোধ মুছে দিয়ে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চালু করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল খ্রিস্টান, এমনকি উইকির উপরোক্ত লিঙ্ক অনুযায়ী শিয়ারাও তাদের মধ্যে ছিল।
আরেকটি বিষয় বলতে হয়। তা হলো, তারা ছিল প্রাচীন মিশরের ফেরাউনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিশরীয় রেনেসার সাথে জড়িত এক ভাস্কর্যশিল্পী মাহমূদ মোখতার বানিয়েছিল Egypt's Renaissance বা ‘মিশরের নবজাগরণ’ নামক এক মূর্তি, যা ছিল ফেরাউন ও স্ফিংসের জোড়া ভাস্কর্য। অর্থাৎ মিশরীয় রেনেসা ছিল ফেরাউনের যুগে ফিরে যাওয়ার চেতনা ধারী।
http://en.wikipedia.org/wiki/Mahmoud_Mokhtar
বিষয়টি আমাদের দেশের তথাকথিত ‘সুশীল সমাজে’র সাথে তুলনীয়। এরা বিদেশে কাফিরের দেশে বৃত্তি পেয়ে সেদেশে পড়াশোনা করে। পড়াশোনা শেষে এদেশে ফিরে তারা কাফিরদের এজেন্ট হিসেবে কাফিরদের সংস্কৃতির পক্ষে প্রচার চালায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে মেয়েদের মধ্যে ইউরোপীয় স্টাইলে পোষাক পরার খুব চল দেখা যায়। আর কামাল আতাতুর্কের ব্যাপারে তো সবাই জানে। এ সবেরই সূচনা হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর ‘আল-নাহদা’ থেকেই।
অর্থাৎ উনবিংশ শতাব্দীর মিশরের এক নাস্তিক ‘জ্যোতির্বিদ’ নবীজির বিলাদত দিবসকে বিকৃত করে বই রচনা করেছে। কিন্তু বর্তমান জামানায় সহীহ হাদীস শরীফ
তো রয়েছেই, পাশাপাশি ইসলামী ভাবাপন্ন জোতির্বিদরাও প্রমাণ করেছেন নবীজির বিলাদত দিবস হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল (http://goo.gl/j5C5y7)।
কিন্তু এরপরও সেগুলো বাদ দিয়ে ফেরাউনপন্থী এক ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর বক্তব্য চৌক্কা মৌলভীদের কাছে দলিল হয়ে গেল !! আশ্চর্য !!!