সমস্ত সৃষ্টি জগতের মূল যিনি

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, শাফেউল মুজনেবীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত কায়িনাত বা সৃষ্টি জগতের মূল উৎস। তিনি আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার সকল নিয়ামতের উৎস। উনার সন্তুষ্টি ব্যতিত আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। উনাকে যে ব্যক্তি মুহব্বত করে আল্লাহ পাকে তাকে মুহব্বত করেন। আর উনাকে মুহব্বত না করে কারো পক্ষে মু’মিন হওয়া কষ্মিন কালেও সম্ভব নয়।
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-

لا يؤمن احدكم حتي اكون احب اليه من والده ووالده والناس اجمعين وفي رواية من ماله و نفسه
অর্থ : তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান সন্তুতি, এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা বেশি মুহব্বত না করবে। অন্য বর্নায় এসেছে, তার ধন সম্পদ এবং জীবনের চাইতে বেশি মুহব্বত না করবে।”
দলীল-
√ বুখারী শরীফ ১/৭-কিতাবুল ঈমান- হাদীস নম্বর ১৪ এবং ১৫!
এ সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই বুঝা গেলো, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবকিছুর চাইতে বেশি মুহব্বত করাই হচ্ছে ঈমান।
আর নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে উনার আগমন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করাটাই হচ্ছে ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য।
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেন স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই, খুশি প্রকাশ করে সকল ফিরিশতা আলাইহিস সালাম , এক কথায় সমস্ত সৃষ্টি জগৎ।
আর উনার আগমনে নাখুশি বা নারাজী প্রকাশ করেছি ইবলিশ।
আর বর্তমানেও সেই ইবলিশের দোশরর দের খুশি পালন করা দেখলে কষ্ট লাগে।
এবার আসুন আমরা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টা কি সেটা বুঝার চেষ্টা করি।
মূলত ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা ।আর “মীলীদ ও ” নবী” দুইটি শব্দ একত্রে মিলিয়ে হয় মীলাদুন্নবী।” মীলাদের” তিনটি শব্দ রয়েছে – ميلاد মীলাদ, مولد মাওলিদ, مولود মাওলূদ।
মীলাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে, জন্মের সময় , মাওলিদ শব্দের অর্থ হচ্ছে জন্মের স্থান, আর মাওলূদ শব্দের অর্থ হচ্ছে সদ্যপ্রসূত সন্তান।
আর النبي শব্দের দ্বারা বুঝায় হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে।
অর্থাৎ, আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থে ميلاد النبي বা ” মীলাদুন্নবী” বলতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকেই বুঝায়।
আর পারিভাষিক বা ব্যাবহারিক অর্থে,মীলাদুন্নবী বলতে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার ছানা- সিফাত আলোচনা করা, উনার প্রতি সালাত সালাম পাঠ করা, এবং উনার পবিত্রতম জীবনী মুবারকের সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনা বুঝানো হয় !
সুবহানাল্লাহ !
এবার দেখুন আল্লাহ উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন প্রসঙ্গে মু’মিন মুসলমানদের কি আদেশ করেছেন!
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
قال بفضل الله و برحمته فبذالك فليفرحوا هو خيرمما يجمعون
অর্থ : হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি উম্মাহকে বলে দিন , মহান আল্লাহ পাক অনুগ্রহ ও রহমত( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রেরন করেছেন , সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এ খুশি প্রকাশ করাটা সবচাইতে উত্তম, যা তারা সঞ্চয় করে রাখে !”
দলীল-
√ সূরা ইউনূছ ৫৮
উক্ত আয়াত শরীফে তাফসিরে বিখ্যাত মুফাসসির, সমগ্র মাদ্রাসায় যাঁর তাফসীর পড়ানো হয়, হাফিযে হাদীস, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন–
عن ابن عباس رضي الله تعال عنهما قال في الاية فضل الله العلم و رحمته محمد صلي الله عليه و سلم قال الله تعالي وما ارسلناك الا رحمة للعلمين
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসিরে এখানে আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বলতে ” ইলিম” বুঝানো হয়েছে। আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে ” হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনাকে। যেমন, আল্লাহ পাক বলেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি।”
দলীল-
√ তাফসীরে দূররুল মানছুর – ১০ নং সূরা – ১১ পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮ আয়াত।
√ তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী।
√ তাফসীরে কবীর।
দেখুন, উক্ত আয়াতের তাফসীরে ” রহমত” মানে কিন্তু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে।
আর এ তাফসীর যিনি করেছেন তিনি হচ্ছেন, রঈসূল মুফাসসিরিন ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু।
যাঁর সম্পর্কে বুখারী শরীফে বর্নিত আছে – নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেছেন আয় আল্লাহ পাক উনাকে কুরআন শরীফের ইলিম এবং হেকমত দান করুন !”
কুরআন শরীফের তাফসীরে সবচাইতে জ্ঞনী ব্যক্তিত্ব ইবনে আব্বাস তিনিই বলতেছেন উক্ত আয়াতের ” রহমত” হচ্ছেন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তাহলে আয়াত শরীফের অর্থ কি দাঁড়াচ্ছে ?
অর্থ দাড়াচ্ছে, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ এবং রহমত হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের কারনে খুশি বা ঈদ পালন করো !”
সুবহানাল্লাহ্ !!
তাহলে দেখা যাচ্ছে ঈদ পালন করাটা আল্লাহ পাক উনারই আদেশ।
আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।
যেমন সকল ফিক্বাহের কিতাবে আছে-
الامر للوجوب
অর্থাৎ, আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় !
দলীল-
√ বাদায়েউস সানায়ে
দেখুন, আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-
اقيموا الصلوة
অর্থ : তোমরা নামাজ আদায় করো।”
কুরআন শরীফের এই নির্দেশ সূচক বাক্য দ্বারা নামাদ ফরজ হয়েছে।
তদ্রুপ সূরা ইউনূছের ৫৮ আয়াতের فليفرحوا বা খুশি প্রকাশ করো বা ঈদ পালন করো এটা আদেশ সূচক বাক্য।
এ আদেশের দ্বারাই খুশি প্রকাশ করা বা ঈদ পালন করা ফরজ ও ওয়াজিব প্রমানিত হয় !
সুবহানাল্লাহ্ !
সুতরাং ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা আল্লাহ পাক উনার আদেশ !
প্রমান হলো !