নবীজির প্রতি ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করার বিরোধীরা মুসলমান নয়

মুসলমানদের ইসলাম বিরোধী চেতনা আর রসূল বিদ্বেষী মনোভাব দেখলে আফসোস হয়। তারা তাদের নিজস্ব চিন্তা-ধারণাকে এতোটাই প্রাধান্য দেয় যে সরাসরি কোরআন-হাদিস পর্যন্ত অস্বীকার করে বসে। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং যেখানে তাঁর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বান্দাদেরকে প্রশংসা, দরুদ, ছলাত, সালাম পেশ করতে বলেন, তাঁকে রহমত হিসেবে, হেদায়েত দানকারী হিসেবে, সুসংসবাদাতা হিসেবে পেয়ে খুশি প্রকাশ করতে বললেন সেখানে মুসলমান দাবীকরে কীভাবে মানুষ এসব হুকুম অস্বীকার করে? যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে বা অস্বীকার করে তারা কি মুসলমান নাকি স্পষ্ট অস্বীকারকারী (কাফির)?

ঈদে মীলাদুন্নবী পালন নিয়ে কোরআন পাকে স্পষ্ট দলিল আছে, এর ব্যাখ্যার জন্য হাদীসে যাওয়ার দরকার নাই।

১নং দলিল:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন নসিহতকারী, অন্তরের পরিশুদ্ধতাদানকারী, হেদায়েত দানকারী ও ঈমানদারদের জন্য রহমত দানকারী।
হে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তারা যে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে ‘ফযল ও রহমত’ পেয়েছে সে জন্য তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। নিশ্চয় তাদের এ খুশি প্রকাশ করাটা তাদের সমস্ত সঞ্চয়ের থেকে উত্তম। (সূরা ইউনুস শরীফ : ৫৭-৫৮)
২নং দলিল:
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍنٍ
অর্থ: “আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (সুরা আলে ইমরান ১৬৪)
আবার সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থ: “আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।” ( সুরা আল আম্বিয়া, ১০৭)
৩নং দলিল:
اِنَّ اللهَ وَمَلٰئِكَتَه يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِىّ. يٰاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلّمُوْا تَسْلِيْمًا.
অর্থ : “নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা নবী পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত পাঠ করেন। হে মু’মিনগণ! তোমরাও তোমাদের নবীজীর প্রতি ছলাত পাঠ করো এবং সালাম প্রেরণ কর প্রেরণ করার মতো।” (সূরা আহযাব: ৫৬)
আমরা জানি, আল্লাহর কোনো আমল করেন না কিন্তু তিনি এই আয়াতে আল্লাহ নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি উনার হাবীব অর্থাৎ আমাদের নবীজীর উপর ছলাত (দরুদ) পড়েন এবং বান্দাদেরকেও বলছেন দরুদ পড়ার জন্য, শুধু তাই নয় পড়ার মতো পড়তে বলছেন অর্থাৎ রসমী রেওয়াজ নয় বরং মহব্বত দিয়ে, খুলুসিয়তের সাথে এবং আদবের সাথে।
অর্থাৎ সূরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াত, সূরা আল ইহরানের ১৬৪ নং আয়াত এবং সূরা আম্বিয়ার ১০৭ আয়াত গুলো থেকে পাওয়া যায়---
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন নসিহতকারী, হেদায়েতদানকারী, অন্তরের পরিশুদ্ধতাদানকারী এবং রতমত। তাই উনাকে পাওয়ার জন্য খুশি প্রকাশ করাটা মহান আল্লাহ তায়ার নির্দেশ এবং সব চাইতে ফজিলতপূর্ণ আমল।
এছাড়াও সূরা আহযাব-এর ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজেই জানালেন, স্বয়ং তিনি নিজেই উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ছলাত (দরুদ) পাঠ করেন এবং বান্দাদেরকেও হুকুম করলেন অত্যন্ত আদবের সাথে পাঠ করতে।
তাহলে এতো স্পষ্ট আয়াত কোরআন পাকে থাকার পরেও যারা নবীজীর শান মান অস্বীকার করে, নবীজীকে পেয়ে খুশি প্রকাশ তথা ঈদে মীলাদুন্নবী পালনে অস্বীকার করে তারা কি আদৌ মুসলমান? নাকি অস্বীকাকারী (কাফির)?