হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকালীন সময়ের ঘটনাসমুহ
রহমতুল্লিল আলামীন, মুখতাছারুস্ সীরাত, ইবনে হিশাম, বায়হাক্বী, তিবরানী, খাসায়েসুল কুবরা, ইবনে ইসহাক, আন নিয়ামাতুল কুবরা প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে বর্ণনা পাওয়া যায় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যমীনে আগমণ মূহুর্তে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক স্বীয় খুশীর নিদর্শন স্বরূপ অভূতপূর্ব কুদরতী ঘটনার সমাহার ঘটিয়েছেন।
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম বলেন, “আর আমি দেখতে লাগলাম, দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট জনেরা আমার নিকট দলে দলে আসছেন। আমি আমার গৃহের দিকে তাকালাম, এখানে নানান ভাষায় বৈচিত্রপূর্ণ দূর্বোধ্য কথা আমি শুনতে পেলাম। এসব কথা বর্তায় সুরিয়ানী ভাষার কথাগুলো বেশী মনে হচ্ছিল। হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম বলেন, আমি সেসময় লক্ষ্য করলাম, দলে দলে ফেরেশতাগণ আমার ডানে-বামে উড়ছেন। তখন মহান আল্লাহ্ পাক হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামকে আদেশ করলেন, হে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম! রুহ সমূহকে পবিত্র শরাবের পাত্রের নিকট শ্রেণীবদ্ধ কর। হে রিদওয়ান! জান্নাতের নবোদভিন্না যুবতীগণকে নতুন সাজে সজ্জিত কর, আর পবিত্র মেশকের সুগন্ধি ছড়িয়ে দাও। সারা মাখলুকাতের যিনি মহান ব্যক্তিত্ব সেই মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আবির্ভাব উপলক্ষ্যে।
হে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম! বিছিয়ে দাও নৈকট্য ও মিলনের জায়নামায সেই মহান ব্যক্তিত্বের জন্য যিনি অধিকারী নূরের, উচ্চ মর্যাদার এবং মহা মিলনের। হে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম! দোযখের রক্ষক ফিরিশতা মালিক আলাইহিস সালামকে আদেশ কর যেন সে দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে। হে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম! জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক ফিরিশতা রিদওয়ান আলাইহিস সালামকে বলো, যেন সে জান্নাতের দরওয়াজা সমূহ উন্মুক্ত করে। হে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম! রিদওয়ানের পোশাক (এর অনুরূপ পোশাক) পরিধান কর। হে জিব্রাইল আলাইহিস সাল্লাম! যমিনের বুকে গমণ কর সুসজ্জিত হয়ে, কাছের ও দূরের সকল ফিরিশতা সহকারে। হে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম! আসমান-যমীনের চার পাশে ঘোষণা দাও, সময় ঘনিয়ে এসেছে মুহিব ও মাহবুবের মিলনের, তালিব ও মাতলুবের সাক্ষাতের অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর সহিত উনার হাবীবে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যে মি’রাজ হবে তার সময় নিকটবর্তী হল, উনার আবির্ভাবের মাধ্যমে।”
“অতঃপর হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম হুকুম বর্ণনা করলেন যেমনটি আল্লাহ্ জাল্লাজালালুহু আদেশ করলেন। এক জামাত ফিরিশতাকে মক্কার পাহাড়ে দায়িত্ব দিলেন। তাঁরা হারাম শরীফের দিকে নজর রাখলেন। তাদের পাখা সমূহ যেন সুগন্ধিযুক্ত সাদা মেঘের টুকরা। তখন পাখিসমূহ তাসবীহ্ করতে লাগল এবং উম্মুক্ত প্রান্তরে বনের পশুগুলো সহানুভূতির ডাক আশার ডাক দিতে লাগল। এসব কিছুই সেই মহান মালিক জলীল জাব্বার আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন-এর আদেশ মুতাবিক হল।”
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম বলেন, “অতঃপর আল্লাহ্ পাক আমার চোখের পর্দা অপসারিত করলেন। আমি দেখতে পেলাম শাম দেশের বসরা নগরীর প্রাসাদ সমূহ। আর আমি দেখলাম তিনটি পতাকা। একটি পতাকা পূর্ব প্রান্তে, আরেকটি পতাকা পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কা’বা শরীফের ছাদে।”
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম বলেন, “আমি যখন এ অবস্থায় উপনীত তখন আমি দেখলাম, আমি পাখিদের একটি দলে যে পাখিদের চক্ষুগুলো স্বর্ণাভ ডানাগুলো বৈচিত্রময় রঙবেরঙের ফুলের মত। সেগুলো আমার কক্ষে প্রবেশ করল। মনিমুক্তার মত। এরপর উক্ত পাখিগুলো আল্লাহ্ পাক এর ছানা-ছিফত করতে লাগল আমার চার পাশে। আমি উম্মিলিত রইলাম এ অবস্থায় ঘন্টার পর ঘন্টা। আর ফিরিশতাগণ আমার নিকট দলে দলে আসতে লাগলেন। আর তাদের হাতে ছিল আগরদান-স্বর্ণাভ রৌপ্য নির্মিত। আর তারা সুগন্ধি ধুম্র ছড়াচ্ছিল। সেই সাথে তারা উচ্চ কন্ঠে সম্মানিত রসূলের প্রতি, মর্যাদাবান হাবীবের প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠ করছিল। তাদের কন্ঠে সৌজন্যতার ও মহানুভবাতার ভাব স্পষ্ট ছিল।”
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম বলেন, “চন্দ্র আমার মাথার উপর চলে এল তাবু মাথার উপর থাকার মত। আর তারকারাজি আমার মাথার উপর সুদৃশ্য মোমবাতির ন্যায়। সে অবস্থায় আমার নিকট ছিল দুধের ন্যায় শুভ্র সুগন্ধিময় পাণীয়। যা ছিল চিনি ও মধুর চেয়ে মিষ্ট এবং বরফের চেয়ে বেশি ঠান্ডা। তখন আমার খুব পিপাসা লেগেছিল। আমি গ্রহণ করলাম ও পান করলাম। এর চেয়ে অধিক কোন সুপেয় পানীয় আগে পান করিনি। ইহা থেকে আমাতে প্রকাশ পেল মহিমান্বিত নূরের ছ্বটা।”
পাঠক! এরা শয়তানের অনুচর বলেই ঠাহর করতে পারেনি যে মহান আল্লাহ্ পাক ব্যতীত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম উপলক্ষ্যে যমীনে হাক্বীক্বীভাবে যিনি ঈদ করেছিলেন, খুশী প্রকাশ করেছিলেন তিনি হলেন উনার দাদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম।
“সিরাতে ইবনে হিশাম” গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে, “জন্মের পর হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম-এর কাছে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সংবাদ পৌছানো হলে তিনি খুব খুশী হলেন এবং অত্যন্ত খুশীর সাথে উনাকে কা’বা শরীফে নিয়ে আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন এবং দোয়া করলেন।
হযরত আবুল হাকাম তানুখী বর্ণনা করেন, “কুরাঈশরা তাদের কোন শিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে হাঁড়িতে দেয়ার জন্য মহিলাদের হাতে সোপর্দ করা হতো। (তারা ঐ শিশুকে এক রাত হাঁড়ির নিচে রাখতো) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মলাভ করলে উনাকেও ঐ উদ্দেশ্যে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম মহিলাদের হাতে সোপর্দ করেন। সকালে সবাই দেখলো, হাঁড়ি দ্বিখন্ডিত হয়ে আছে এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’চোখ মুবারক মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন।
মহিলারা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম-এর কাছে এসে বললো, “এমন শিশু আমরা কখনও দেখিনি। উনার উপরের হাঁড়ি ভেঙে গেছে। দেখলাম, উনি আকাশের দিকে চোখ মুবারক মেলে তাকিয়ে আছেন।”
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম বললেন, “তোমরা উনাকে দেখে রেখো। উনার থেকে আমি মঙ্গলই আশা করি।”
সাত দিনের দিন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম পশু জবেহ্ করে কুরাঈশদের দাওয়াত করলেন। আহার শেষে কুরাঈশরা জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আব্দুল মুত্তালিব (আলাইহিস সালাম)! শিশুর নাম কি রাখলেন?” তিনি বললেন, “মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।” তারা বললো, “গোত্রীয় ধরণের নাম রাখলেন না কেন?” হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম বললেন, “আমি চাই আকাশে আল্লাহ্ পাক আর যমীনে মানব জাতি সকলেই উনার প্রশংসা করুক।” (পবিত্র বায়হাক্বী শরীফ)
পাঠক! আলোচ্য বর্ণনায় দেখা যায়, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বত জেনে চলমান রীতির বাইরে উনার নাম মুবারক ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেখে, জন্মের সাথে সাথে আনন্দ প্রকাশ করেছেন, পবিত্র কা’বা শরীফে তাওয়াফ করে শুকরিয়া পালন করেছেন এবং আনন্দ তথা খুশী স্বরূপ পশু জবেহ করে কুরাঈশদের দাওয়াত করে খাইয়েছেন।
সুতরাং এক্ষেত্রে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম মুবারকের উপর খুশী তথা ঈদ প্রকাশ করলেন সেক্ষেত্রে এটা কি ‘মুত্তালিবী ঈদ’ বলে সাব্যস্ত হয়না? আর স্বয়ং খোদা পাকই যেখানে ঈদ পালন করেছেন সুতরাং সেখানে একে কি ‘খোদায়ী ঈদ’ বলেই সাব্যস্ত করতে হয়না?
সুতরাং ‘খোদায়ী ঈদ’ নয়, ‘মুত্তালিবী ঈদ’ নয়- লাহাবের দিকে দৃষ্টি দিয়ে ‘লাহাবী ঈদ’ বলতে খারিজী, ওহাবী, জামাতী, ইলিয়াসী তাবলীগ জামাত, দেওবন্দী, বিদয়াতীদের অন্তরে এত খায়েশ জাগে কেন?
মূলতঃ মহান আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নয় বরং আবু লাহাবের মুহব্বত তাদের অন্তরে পরিপূর্ণ বলেই তারা একে ‘লাহাবী ঈদ’ বলতে পেরেছে।
হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা-এর কাছে একবার কিছু লোক এসে দুনিয়া সম্পর্কে খুব বিষোদগার করতে লাগলো। হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা তাদেরকে বললেন, “দেখ, তোমাদের অন্তরে নিশ্চয়ই দুনিয়ার প্রতি খুব বেশী মুহব্বত রয়েছে। নইলে তোমরা এত দুনিয়ার কথা বলতেনা। আরবীতে প্রবাদ রয়েছে, “পাত্রে আছে যা, ঢাললে পড়বে তা।”
তদ্রুপ খারিজী, ওহাবী, জামাতী, ইলিয়াসী তাবলীগ জামাত, দেওবন্দী বিদয়াতী গং এর অন্তরে লাহাবী খাছলত পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীয়তের খিলাফ, ছবি তোলা, লংমার্চ, হরতাল, ব্লাসফেমী, মৌলবাদ, নির্বাচন ইত্যাদি করা তারই প্রমাণ। আর এমন হারাম জিনিসকে হালাল করতে, এসব বিদয়াতকে প্রচলন করতে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম তথা আগমণ। সুতরাং এই স্পর্শকাতর বিষয়টিতেই যদি মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তোলা যায় তবে তাদের যাবতীয় শয়তানী এমনিতেই সহজ হয়ে যায়। অর্থাৎ মূলই যদি ঝরে পড়ে তবে তার শাখা-প্রশাখা কিভাবে দৃশ্যমান থাকে? শয়তানের একান্ত অনুচর হিসেবে খারিজী, ওহাবী, জামাতী, দেওবন্দী, বিদয়াতী গং আজকে সেই কাজটিই করতে চাচ্ছে।
শয়তানের একান্ত অনুচর বলেই তাদের মনে এই শয়তানী খেয়াল চেপেছে। কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমণে শয়তান যেভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে তা কোনদিনও তার জন্য উপশম হবার নয়।
হযরত উরওয়া সূত্রে হযরত ইবনে আসাকির বর্ণনা করেন, “ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল, যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নাফায়েল, উবায়দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ, উসমান ইবনে হুয়াইরিস প্রমুখ কুরাঈশ নেতা এক রাতে তাদের দেবমূর্তীর কাছে জমায়েত হলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন, প্রতিমাটি উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। ঘটনাটি তারা খারাপ মনে করে প্রতিমাটি সোজা করে দাঁড়া করিয়ে দিলেন। পরক্ষণেই আবার সেটি সজোরে মাটিতে আছড়ে পড়লো। আবার তারা এটাকে সোজা করে দিলেন। কিন্তু আবারও এটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। উসমান ইবনে হুয়াইরিস বললেন, “অবশ্যই কিছু একটা ঘটেছে।”
তারপর তারা আবার প্রতিমাটি সোজা করে দিল। তখন তার ভিতর থেকে আওয়াজ এলো, “এ প্রতিমা ধ্বংস হয়ে গেছে। সকল প্রতিমাই তাঁর আগমণে ভূমিসাৎ হয়ে গেছে। এটা হয়েছে সেই শিশুর আগমণের কারণে যাঁর নূরে সমগ্র জাহান আলোময় হয়ে গেছে। তাঁর ভয়ে রাজা-বাদশাহদের অন্তর কেঁপে উঠেছে। পারসিকদের প্রজ্বলিত অগ্নিকুন্ড নিভে গেছে। পারস্য সম্রাট মর্মযাতনায় নিপতিত হয়েছে। গণকদের জ্বিনেরা উধাও হয়েছে। এখন আর তাদেরকে সত্য-মিথ্যা খবর জানাতে কেউ আসবে না। হে বনু কুসাই! ভ্রান্ত পথ ত্যাগ কর এবং আসল সত্যের শীতল ছায়ায় আশ্রয় নাও।” (খাসায়েসুল কুবরা)
আসমা বিনতে আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল এবং ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল বলেছেন, “মক্বা থেকে আবরাহার বিতাড়িত হওয়ার পর একবার আমরা আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশীর দরবারে গেলাম। নাজ্জাশী বললেন, “হে কুরাঈশগণ! সত্য করে বলো, তোমাদের মাঝে এমন কোন শিশু জন্মগ্রহণ করেছেন কি যাঁর পিতা তাঁর বলি দেয়ার ইচ্ছা করেছিলেন। তারপর বিকল্প হিসেবে লটারি করে অনেক উট কুরবানী করে তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল?” আমরা বললাম, হ্যাঁ, এরূপ শিশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন।” সম্রাট জিজ্ঞাসা করলো, “তিনি পরে কি করেছেন তোমরা জান?” আমরা বললাম, “তিনি আমিনা নাম্নী এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন এবং তাঁকে গর্ভবতী রেখে ইন্তিকাল করেছেন।” নাজ্জাশী জিজ্ঞাসা করলো, “গর্ভের ঐ শিশু জন্ম নিয়েছেন কি? এর জাওয়াবে ওয়ারাকা বললেন, আমি এক রাতে মূর্তির কাছে অবস্থান করছিলাম। সেটির ভিতর থেকে আওয়াজ শুনলাম, নবী জন্মলাভ করেছেন। সম্রাটেরা লাঞ্ছিত হয়েছে। ভ্রষ্টতার অন্ধকার বিদূরিত হয়েছে এবং শিরক খতম হয়ে গেছে।” এরপর প্রতিমাটি উপুড় হয়ে আছড়ে পড়লো।”
এর মাঝে যায়েদ বললো, “হে সম্রাট! আমার কাছেও এ ধরণের সংবাদ আছে। সে রাতে আমি স্বপ্নে আবূ কুরাঈশ পাহাড়ে পৌছে এক ব্যক্তিকে আকাশ থেকে নামতে দেখি। তার দুটি পাখা ছিল সবুজ রংয়ের। কিছু সময় সে পাহাড়ে অবস্থান করে মক্কা শরীফে এলো এবং বলতে লাগলো, “শয়তান লাঞ্ছিত হয়েছে, মূর্তিপূজা খতম হয়ে গেছে, ‘আমীন’ জন্মলাভ করেছেন।”
মূলতঃ এই লাঞ্ছিত শয়তানই আবার নতুন করে সওয়ার হয়েছে তার বর্তমান অনুসারী ওহাবী, খারিজী, জামাতী, ইলিয়াসী তাবলীগ জামাত, দেওবন্দী বিদয়াতী গং এর উপর। লাঞ্ছিত শয়তানের অনুসারীদের লাঞ্ছনার মূল কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমণ তথা জন্মের উপর খুশী হওয়ার মূল্যবোধকেই তারা লাহাবী ঈদ বলে। ঈদ-ই-মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা মূলতঃ খোদায়ী ঈদ, যা মুত্তালিবী ঈদ, যা আউলিয়া-ই-কিরাম-এর ঈদ, যা মাখলুকাতের ঈদ, যা সকল ঈদের ঈদ তাকে অবমূল্যায়ণ করতে চায়। যা কাট্টা কুফরী।