কওমী- ওহাবী -হেফাযতি-তাবলীগি- দেওবন্দি গুরুদের কাছে মিলাদ ক্বিয়ামের প্রমান !!!



১.মালানা আশ্রাফ আলী দৃষ্টিতে মিলাদঃ
মালানা আশ্রাফ আলী থানভি  হল দেওবন্দি কওমি ও তাব্লিগিদের মুরুব্বী। তার রচিত একটি বই “তাবলীগ”দেওবন্দি কাওমি মাদ্রাসাতে পরানো হয়। উক্ত বইয়ের ৩৫ পৃষ্ঠায় আছে-
“এভাবে কিয়াম করাকে আমরা অবৈধ বলিনা বরং কথাও রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা কালে দাঁড়িয়ে যায়, আবার কখনো তার দুগ্ধ পানের ঘটনা বলার সময়, আবার কখনও মিরাজুন্নাবির আলোকপাত কালে, এমনিভাবে কোন কোন খাস মাহফিলে ৩-৪ বারও কিয়াম করে থাকেন। তবে এরূপ মিলাদে কিয়াম করাকে কে নিষেধ করবে (অর্থাৎ নিষেধ করার নয়)?”


মালানা আশ্রাফ আলী কোন এক আলোচনা সভায় বলেছিলে- “প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের বেপারে সাধকদের অনুস্রিত আমল কে আমি ভিত্তিহিন মনে করিনা। শাফেয়ী মাযহাবের মুযতাহিদ বা গবেষক ফিকাহ শাস্ত্রবিদদের অভিমত উহাই। আল্লামা ইমাম শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার প্রনিত কিতাবের “মুসাফাহা বা’দাস সালাত” অধ্যায়ে শায়েখ আবু জাকারিয়্যা মহিউদ্দিন এর অনুরুপ অভিমত বলে বর্ণনা করেছেন। কাজেই যেসব সুফিয়ায়ে কেরাম বিশুদ্ধ পন্থায় মিলাদ মাহফিল করেন, তাদের বেপারে আপত্তিমুলক খারাপ ধারনা না করা ই উচিত। (মাযালিসে হাকিমুল উম্মত, রচনায়- মুফতে মুহাম্মদ শফি)।“

মালানা আশ্রাফ আলী থানভি, মালানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, মালানা কাসেম নানুতুবি প্রমুখ দেওবন্দি বড় বড় আলেমদের পীর ছিলেন হাজী এমদাদুল্লা মুহাযের মাক্কি রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মিলাদ কিয়াম এর পক্ষে ছিলেন। যখন অনেকে উনাকে বেদাতি বলে ফতওয়া দিতে লাগলো তখন মালানা আশ্রাফ আলী থানভি নিজের পীর এর পক্ষে কলম ধরল।  বলল-
“হযরত হাজী এমদাদুল্লা মুহাযের মাক্কি রহমতুল্লাহি আলাইহি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর অবিকল আকিদায় বিশ্বাসী ছিলেন। (বিশেষ করে) উনার এসব আমল তথা প্রচলিত মিলাদ ও কিয়াম অনুষ্ঠানে যোগদান, বক্তব্য ও লিখনির মাধ্যমে তা সমর্থন করা কোন ভ্রান্ত আকীদা বা শিয়া ধর্মের অনুকরন ছিলনা। বরং এহেন মহৎ আমলগুলো যেহেতু মূলত ববৈধ, তাই তিনি বৈধ কাজকে পুন্যময় মনে করে নিজে করতেন এবং অপরকে করতে উৎসাহ যোগাতেন। (এমদাদে ফতোয়া)।“

মালানা আশ্রাফ আলী থানভি উক্ত বইয়ের ৩৮ পৃষ্ঠায় আরও বলে- “আমাদের আলেমগন প্রচলিত মিলাদ কিয়াম নিয়ে অনেক ঝগড়া বিভেদে লিপ্ত হয়েছে। এতদসত্তেও আমরা মিলাদ ও কিয়াম কে বৈধ বা ‘পুন্যময় আমল’ মনে করি। যেহেতু ইহা বৈধ পন্থাই আদায় করার সুযোগ আছে সেহেতু এমতাবস্থায় বিরোধী দলের এত বাড়াবাড়ি মতে এ ঠিক নয়। প্রকৃত পক্ষে মক্কা ও মদিনা শরিফ এর হক্কানি রব্বানি উলামা মাশায়েখের অনুকরন ই আমাদের যথেষ্ট। অর্থাৎ হেরেমাইন শারিফাইন এ মিলাদ কিয়াম হতো, তাদের অনুকরন আমরা ও করব। অবশ্য কিয়ামের সময় নুরনবীর জন্মের খেয়াল না করা উচিত। এ কথাও চির সত্য যে, যদি মীলাদ মজলিসে হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হতে পারেন, এমন বিশ্বাস স্থাপন এ কোন দোষ নাই। কারন জড় জগত স্থান ও কাল হতে মুক্ত নয়। তবে রুহানি জগত স্থান কাল হতে শম্পুর্ন মুক্ত বিধাই নবী কারিম রাউফুর রাহিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম মিলাদ মাহফিলে হাজির হওয়া মোটেই অসম্ভব নয়।“

২.“আকায়েদে উলামায়ে দেওবন্দ” কিতাবে মিলাদের হুকুমঃ
“আকায়েদে উলামায়ে দেওবন্দ” কিতাবের ১৯ পৃষ্ঠায় মিলাদের ব্যপারে নিন্মের ফতোয়া আসেঃ
‘আমরা (দেওবন্দি উলামাগন) মিলাদ মাহফিলে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামএর জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করাকে অস্বীকার করিনা বরং নাজায়েজ বস্তু জা উহার সহিত যক্ত হয়েছে, উহাকে অস্বীকার করি। হ্যাঁ, যদি কোন মিলাদ মাহফিলে মন্দ উপসর্গ বর্জিত হয়, তবে আমরা কি এ কথা কখন বলতে পারি যে, মিলাদ শরিফের বর্ণনা নাজায়েজ ও বিদাত ! এহেন মন্দ কথা কোন মুসলমানের প্রতি কিভাবে ধারনা করা যেতে পারে??
উক্ত কিতাবের ৪১ পৃষ্ঠায় আর উল্লেখ আছে- মিশর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত আলেম শাইখুল উলামা সেলিম সাহেব বলেন যে, হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামএর জন্ম কাহিনি বর্ণনার সময় কিয়াম অস্বীকার করা এবং হুযুরের জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করাকে পৌত্তলিক এবং রাফেযিগনের সহিত তুলনা করা আর ইহার সমালোচনা করা একজন ইমানদারের কাজ হতে পারে না। কেননা, পূর্ববর্তী ইমামগণ অই মিলাদের কিয়াম হুযুরের শান-মান ও মর্যাদার উদ্দেশে মুস্তাহসান মনে করেছেন এবং ইহা এমন একটি কাজ, যার মদ্ধে খারাপ বা নিন্দনীয় বলতে কিছু নাই।“ (আকায়েদে উলামায়ে দেওবন্দ, রচনায়-মাও.খলিল আহমদ সাহারানপুরী দেওবন্দি)

৩.মালানা রশিদ আহমদ গাংগুহির উস্তাদের দৃষ্টিতে মিলাদঃ
মালানা রশিদ আহমদ গাংগুহির উস্তাদ প্রখ্যাত আলেম মালানা শাহ আহমদ সাইদ হানাফি তাঁর ‘মালফুযাত’ এ বলছে-
“মিলাদ শরিফ পাঠ করা এবং রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামএর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা কালে কিয়াম বা দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব।“ (মাকামাতে সাইদিয়া ওয়া মাকামাতে আহমাদিয়া)

৪. দেউবন্দি উলামাদের পীর সাহেবের দৃষ্টিতে মিলাদঃ
বিশিষ্ট দেউবন্দি উলামাদের (কাসেম নানুতুবি, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, .মাহ্মুদুল হাসান দেওবন্দি, .আশ্রাফালি থানভি...প্রমুখ) পীর সাহেবের নাম হল হাযি এমদাদুল্লা মুহাজের মাক্কি রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি এই উপমহাদেশে একজন যোগ্য দীনের মুবাল্লেগ হিসেবে পরিচিত এবং পীরে কামেল ও আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন। তিনি তাঁর লিখিত কিতাব “ফায়সালায়ে হাফতে মাসায়েল” কিতাবের মধ্যে মিলাদ নিয়ে একটি অধ্যায় লিখেছেন। সেখানের এক জায়গায় তিনি বলেছেন-
“আমার নীতি হচ্ছে আমি মিলাদ মাহফিলে যোগদান করি বরং এটাকে বরকতের উসিলা মনে করে আমি নিজেই প্রতি বছর এর আয়োজন করে থাকি এবং কিয়ামে আনন্দ ও তৃপ্তি পেয়ে থাকি।“

বিজ্ঞ পাঠক মহল এইবার আপনারাই বিচার করুন, তারা যাদেরকে অনুসরণ করে, সেখানকার শীর্ষ স্থানীয় বুজুর্গগণ মিলাদের পক্ষে ফতওয়া দিয়ে গেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজ তারা সেটাকে নাযায়েয বিদাত শিরিক বলে ফতওয়া দিচ্ছে। তাহলে তারা যাদেরকে ইমাম হিসেবে মানে তাদের বেলায় কি বলবে?? আসলে তারা মিথ্যাচার করছে। তাদের বক্তব্য বা ফতোয়া থেকে এটাই বুঝাযায় যে তাদের অন্তরে নবী বিদ্বেষী আছে। তাই আসুন আমরা সত্যকে জানি, কার কথা না শুনে যাচাই বাছাই করে নেই। আল্লাহ আমাদের শুবুদ্ধি দান করুন।