বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীরা বলে বেড়ায়, নবীজীর যুগে কেউ মীলাদুন্নবী পালন করে নাই। তাই এটা বিদয়াত। কিন্তু মজার কথা কি জানেন?
স্বয়ং নবীজী নিজেই মীলাদুন্নবী নিয়মিত পালন করেছেন। এবং শুকরিয়া স্বরূপ রোজা রেখেছেন। হযরত আবু কাতাদা আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, এদিন আমি বিলাদত (জন্ম) শরীফ লাভ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা কুরআন শরীফ নাজিল হয়েছে।”
[দলীলঃ সহীহ মুসলিম,হাদীছ শরীফ নং-২৮০৭,সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ শরীফ নং-২৪২৮,সুনানে বায়হাকী [কুবরা], হাদীছ শরীফ নং-৮২১৭,সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীছ শরীফ নং-২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা, হাদীছ শরীফ নং-২৯২৬,মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ শরীফ নং-২২৫৫০]
নবীজি মদিনা জীবনে বকরী জবেহ করে ফকির-মিসকিনদের মাঝে তা বন্টন করে দিয়ে নিজের আগমন দিবস পালন করেছেন। ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী তাঁর ‘আল হাবিলুল’ নামক কিতাবের মিলাদ অধ্যায়ে এ সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হয়ত মনে করতে পারেন যে, তিনি নিজের আকিকা করেছেন। তাই আল্লামা সুয়ূতী বলেন, ‘আকিকা দু’বার করা হয় না। (তাঁর আকিকা তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব একবার করেছিলেন) সুতরাং তাঁর বকরী জবেহ করা ছিল এ জন্য যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত করে পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি এ কাজকে তাঁর উম্মতের জন্য শরীয়ত সম্মত করে দিয়েছেন।
[দলীলঃ √ ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম সুয়ুতী আল হাবিলুল ফাতোয়া ১ম
খন্ড ১৯৬ পৃষ্ঠা। √ ইমাম সুয়ুতী হুসনুন মাকাসিদ ফি আমালিল মওলিদ
৬৫ পৃষ্ঠা, √ ইমাম নাবহানী (রহ) হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন ২৩৭
পৃষ্ঠা।]
উপরোক্ত হাদীস শরীফ থেকে বুঝা গেলো স্বয়ং রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে নিজের বিলাদত শরীফ দিন নির্ধারণ করে শুকরিয়া আদায় করতেন । অর্থাৎ নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন। এখন জন্ম বা আগমনের দিন পালন যদি বিদয়াত হয় বা খৃষ্টানদের রীতি হয় তবে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন নিজে নিজের মীলাদুন্নবী পালন করলেন?
তাহলে চিন্তার বিষয়, নবীজী যদি নিজের মীলাদুন্নবী পালন করেন তবে উম্মত হয়ে আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য কি হওয়া উচিত ?
-আমাদের কি নবীজীর আগমন দিবসে শুকরিয়া আদায় করা দরকার না ?
- আমাদের কি খুশি হওয়া উচিত না ?
- আমাদের কি শুকরিয়া আদায় করে সলাত সালাম পাঠ করা উচিন না ?
একটা জিনিস চিন্তা করুন, নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কি দরকার ছিলো নিজের আগমন দিবস পালন করা? উদ্দেশ্যে হচ্ছে আমাদের শিক্ষা দেয়া। যাতে করে আমরা এই দিন উদযাপন করে এই মহান নিয়ামত লাভ করতে পারি। আল্লাহ পাক বলেন, " তোমারা নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করো , তোমাদের নিয়ামত বৃদ্ধি করে দেয়া হবে।"
শুধু তাই নয় , আল্লাহ পাক আরো বলেন, " আমার বিশেষ দিন সমূহ স্বরন করো। "
( সূরা ইব্রাহীম ৫)
এখন আপনারাই ভেবে বলুন, নবীজীর আগমনের দিন কি বিশেষ দিন নয়? বিশেষ না হলে কেন তিনি নিজেই পালন করলেন?
যদি বিশেষ দিনই হয় তবে বর্তমানে মুসলমানরা শরীয়ত সম্মতভাবে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করলে কেন বিদয়াত বিদয়াত বলে চিৎকার করা হয়?