সৌদিআরব থেকে প্রকাশিত মুফতে আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লা বিন বায কর্তৃক লিখিত وجوب لزوم السنة والحزر من البدعة
নামক ক্ষুদ্র পুস্তিকার অনুবাদক মোহাম্মদ রকীবুদ্দিন আহমদ হুসাইন। বাংলা ভাষায় বইটির নামকরণ করা হয়েছে ‘সুন্নাতে রাসুল আকড়ে ধরা এবং বিদআত থেকে সতর্ক থাকা অপরিহার্য’ বইটি দেশ-বিদেশে বিশেষ করে হজ্ব মৌসুমে হাজী সাহেবানদের নিকট বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে।
লেখক বইটির বিভিন্ন স্থানে মিলাদুন্নবী মাহফিলের বিরূপ সমালোচনা করেছে এবং ইহাকে নাজায়েজ ও জঘন্যতম বিদআত বলে আখ্যায়িত করেছে। এতে ধর্মপ্রাণ নবীপ্রেমিক মুসলমান পাঠকদের অন্তরে কঠোরভাবে আঘাত হেনেছে।
উক্ত বইয়ের -
২য় পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কারো জন্ম উৎসব পালন করা জায়েজ নয়। বরং তা বারণ করা অবশ্যই কর্তব্য। কেননা এটি ধর্মে নবপ্রবর্তিত একটি বিদআত।
৯ম পৃষ্ঠায় লিখা রয়েছে- ধর্মের সাথে মিলাদ মাহফিল বা যাবতীয় জন্মবার্ষিকী পালনের কোন সম্পর্ক নেই। বরং যে বিদআতসমুহ থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষেধ ও সতর্ক করেছেন এটি সেগুলোরই অন্তর্ভুক্ত।
এই বক্তব্যের স্বপক্ষে দলিল হিসেবে উক্ত বইয়ের ২য় ও ৩য় পৃষ্ঠায় চারখানা হাদীসের অনুবাদও পেশ করা হয়েছে। নিম্নে তা প্রদত্ত হল।
প্রথম হাদীস - তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন- আমাদের এই ধর্মে যে কেউ নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে তা প্রত্যাখান হবে।
দিতীয় হাদীস - নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কেউ যদি এমন কাজ করে যা আমাদের এই ধর্মে নেই তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।
তৃতীয় হাদীস - নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার পরবর্তী
খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত পালন করবে। আর তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করবে। সাবধান কখনো ধর্মে নব প্রবর্তিত কোন বিষয় গ্রহণ করবে না। কেননা প্রত্যেক নব পবর্তিত বিষয়ই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই পথভ্রষ্ঠতা।
চতুর্থ হাদীস - রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুময়ার দিন খুৎবায় বলতেন, নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম হেদায়াত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের হেদায়াত। সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া নব প্রবর্তিত বিষয় বিদআত এবং এরূপ প্রতিটি বিদআতই পথভ্রষ্টতা।
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা মুফতি বায বুঝাতে চেয়েছে, মিলাদুন্নবীর মাহফিল একটি নব আবিষ্কৃত বিদআত এবং সকল প্রকার বিদআতই ভ্রষ্টতা। ইসলাম ধর্মে এর কোন স্থান নেই। তার এই মনগড়া বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে দলিল হিসেবে উপরিলিখিত চারখানা হাদিস শরীফ উল্লেখ করেছে। অথচ মিলাদ শরীফ পাঠ করা যে, সুন্নাত নতুন কিছু নয় বরং নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়েকেরাম এর যুগ থেকে চলে আসছে তার বহু প্রমাণ রয়েছে।
দলিলভিত্তিক জবাব-
বিদআতের আভিধানিক ও শরয়ী অর্থ -
বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য লোগাতের কিতাব ও বিভিন্ন মু’তাবর কিতাবসমূহে বিদআত শব্দের আভিধানিক ও শরয়ী অর্থ সম্পর্কে যা উল্লেখ রয়েছে, তা নিম্নরূপ-
লোগাতে আলমনজিদের ২৯ পৃষ্ঠায় রয়েছে-
البدعة: ج بدع : مااحدث على غير مثال سبق
অর্থাৎ বিদআত এমনসব নতুন কাজ, যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই।
অনুরূপ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখিত মিশকাত শরীফের শরাহ ‘মিরকাত’ নামক কিতাবের আল এ’তেসাম বিল কিতাব ’ওয়াসসুন্নাহ’ শীর্ষক অধ্যায়ে মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর উক্তি উল্লেখ করে বলেন-
قال النووى البدعة كل شيئ عمل على غير مثل سبق وفى الشرع احدث مالم يكن فى عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ এমন সব কাজ করা বিদআত যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। শরীয়তের ক্ষেত্রে বিদআত হচ্ছে ঐ সকল কাজের সূচনা করা যা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল না।
আলকামুসুল মুহিত ৯০৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে-
(البدعة) با لكسر: الحدث فى الدين بعد الاكمال او مااستحدث بعد النبى صلى الله عليه وسلم من الاهواء والاعمال০
অর্থ- বিদআত হাল দ্বীনের পূর্ণতার পর দ্বীনের মধ্যে নতুন কোন কিছু উদ্ভব হওয়া অথবা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর খায়েশাত ও আমল সম্পর্কিত কোন কিছুর নতুন উৎপত্তি।
আল্লামা ইমাম রাগেব ইস্পাহানী বিদআত শব্দের অর্থ লিখেছেন-
انشاء صنعة بلا احتذاء واقتداء০
অর্থাৎ পূর্ব নমুনা না দেখে এবং অন্য কিছুর অনুকরণ অনুসরণ না করেই কোন কার্য নতুনভাবে আবিষ্কার করা।
আর দ্বীন বা ধর্মের ক্ষেত্রে যে বিদআত তার সংজ্ঞা লিখেছেন-
والبدعة فى المذهب ايراد قول لم يستن قائلها وفاعلها فيه بصاحب الشريعة واماثلها المتقدمة واصولها المتقنة (مفردات)
অর্থাৎ ‘মাজহাব বা দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত হচ্ছে এমন কোন কিছু উপস্থাপন করা, যার প্রতি আক্বীদাপোষণকারী ও এমন আমলের অনুসারী
লোক সাহেবে শরীয়ত বা শরীয়ত প্রবর্তক দ্বারা অনুমোদন পায় নাই। অর্থাৎ যে আক্বীদা ও আমল সুন্নাতে রাসুলের পরিপন্থি) এবং যা পুর্বসূরী (উম্মতের) মধ্যে কোন মিছাল বা নমুনা নেই এমনকি ইহার কোন উজ্জ্বল ভিত্তিও নেই।’
উপরোক্ত এবারতের মর্মে স্পষ্ঠভাবে প্রতীয়মান হল যে, বিদআত প্রথমত দুই প্রকার-
(১) বিদআত ফিল এ’তেক্বাদ বা আক্বীদাগত বিদআত।
(২) বিদআত ফিল আ‘মাল বা আমলী বিদআত।
উল্লেখ্য যে প্রত্যেক আক্বীদাগত বিদআতই গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা যার পরিণাম জাহান্নাম।
বিদআতি বলতে আক্বীদাগত বিদআতকেই বুঝানো হয়ে থাকে। যে বিদআতের ব্যাপারে অধিক সতর্ক করা হয়েছে, তা আক্বীদাগত বিদআতের েেত্রই প্রযোজ্য।
‘দুররূল মুখতার’ নামক কিতাবের সালাত অধ্যায়ের ইমামত শীর্ষক আলোচনায় রয়েছে-
ومبتدع اى صاحب بدعة وهى اعتقاد خلاف المعروف عن الرسول০
অর্থাৎ ‘বিদআত হচ্ছে সে আক্বীদাপোষণকারী, যে আক্বীদা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, তার খেলাফ বা ব্যতিক্রম আক্বীদা পোষণ করা।’
এ প্রসঙ্গে হাফিজুল হাদীস আল্লামা ইবনে হজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লিখিত ‘ফতহুল বারী শরহে বুখারী’ নামক কিতাবের ৪র্থ জিলদের ২৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
البدعة اصلها مااحدث على غير مثال سابق وتطلق فى الشرع فى مقابل السنة فتكون مذمومة والتحقيق انها ان كانت مما تندرج تحت مستحسن فى الشرع فهى حسنة وان كانت مما تندرج تحت مستقبح فى الشرع فهى مستقبحة والافهى من قسم المباح وقد تنقسم الى الاحكام الخمسة০(فتح البارى شرح بخارى)
অর্থাৎ বিদআত বলা হয় এমন নতুন উদ্ভাবিত আক্বীদা ও আমলকে যা পূর্ব সুরীদের মধ্যে কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না।
শরীয়তের পরিভাষায় সুন্নাতের বিপরীত আক্বীদা ও আমলকে বিদআত বলা হয়। অতএব সুন্নাতের পরিপন্থি বা সুন্নাত ধ্বংসকারী আক্বীদা ও আমল অবশ্যই নিন্দনীয় হবে।
প্রকৃতপক্ষে বিদআতের তাহকিক বা বিশ্লেষণ হলো- বিদআত যদি কোন শরীয়ত সম্মত ভাল কাজের মধ্যে গণ্য হয় (বরং সুন্নাতের সহায়ক হয় ধ্বংসকারী না হয়) তবে তা বিদআতে হাসানা বা ভাল বিদআত বলে গণ্য হবে। আর যদি তা শরীয়তের দৃষ্টিতে খারাপ ও জঘন্য কাজ হয়, (অর্থাৎ এ বিদআত প্রচলনে একটা সুন্নাত উৎখাত হয়ে পড়ে এবং সুন্নাতের জায়গায় এ জঘন্য বিদআত স্থান লাভ করে) তবে তা বিদআতে মুসতাক্ববিহা বা জঘন্য বিদআত বলে গণ্য হবে।
আর যদি এ বিদআত শরীয়তের দৃষ্টিতে উত্তম অথবা জঘন্যতম উভয়ের মধ্যে কোনটাই না হয় তবে তা মুবাহ বা বৈধ বিদআত এবং বিদআতের হুকুমসমূহ পাঁচভাগে বিভক্ত। (তার বিস্তারিত আলোচনা পরে বয়ান করা হবে)
উল্লেখ্য যে, আক্বীদাগত বিদআতের কোন প্রকারভেদ নাই বরং আক্বীদাগত প্রত্যেকটি বিদআতই গোমরাহী, যার পরিণাম জাহান্নাম, যে আক্বীদাগত বিদআতের দরুণ ৭২ দলের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুরূপ সহীহ বুখারী শরীফের সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী হানাফী (রঃ) ‘উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী’ নামক কিতাবে বিদআতের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ সম্পর্কে লিখেন-
البدعة فى الاصل احدث امر لم يكن فى زمن رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم البدعة على نوعين ان كانت مما يندرج تحت مستحسن فى الشرع فهو بدعة حسنة وان كانت مما يندرج تحت مستقبح فى الشرع فهى بدعة مستقبحة০
অর্থাৎ বিদআত মূলত এমন কাজ, যা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানার পরে আবিষ্কার হয়েছে।
বিদআত দুই প্রকার-
(১) বিদআতে হাসানা।
(২) বিদআতে মুসতাক্ববিহা।
(১) বিদআতে হাসানা- বিদআত যদি শরীয়তসম্মত কোন ভাল কাজের মধ্যে গণ্য হয়, তবে তা বিদআতে হাসানা বা উত্তম বিদআত বলে বিবেচিত হবে।
(২) বিদআতে মুসতাক্ববিহা- আর যদি শরীয়তের দৃষ্টিতে মন্দ বা খারাপ কাজ হয় তবে তা বিদআতে মুসতাক্ববিহা বা মন্দ বিদআত বলে গণ্য করা হবে।
নবম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়ুতী (রাঃ) ‘আলহাভী লিল ফতোয়া’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ১৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
روى البيهقى باسناده فى مناقب الشافعى عن الشافعى قال المحدثات من الامور ضربان احدهما مااحدث مما يخالف كتابا وسنة او اثرا او اجماعا فهذه البدعة الضلالة والثانى مااحدث من الخير لاخلاف فيه لواحد من هذا وهذه محدثة غير مذمومة০
অর্থাৎ ‘ইমাম বায়হাকী নিজ সনদে ইমাম শাফী (রঃ) এর শানে ইমাম শাফী (রঃ) থেকে বর্ণনা করে ইমাম শাফী বলেন ধর্মীয় ব্যাপারে নতুন আবিষ্কার দু প্রকার-
প্রথমত- সেসব নব আবিষ্কার যা কোরআন, সুন্নাহ, আছার এবং ইজমার পরিপন্থি বা খেলাফ এগুলো বিদআতে দালালা বা পথ ভ্রান্ত বিদআত।
তৃতীয়ত- সে সকল ভাল প্রচলন, যা কোরআন সুন্নাহ ও ইজমার খেলাফ নয়, তা নিন্দনীয় বিদআতের মধ্যে গণ্য নয়।’
সুপ্রসিদ্ধ আরবি অভিধান ‘আল মিছবাহুল মুনির, নামক কিতাবের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
(بدعة) وهى اسم من (الابتداع) كالرفعة من الارتفاع ثم غلب استعمالها فيما هو نقص فى الدين او زيادة لكن قد يكون بعضها غير مكروه فيسمى بدعة مباحة وهو مصلحة يندفع بها مفسدة০
অর্থাৎ ‘বিদআত ইহা الابتداع (আলইবতেদা) এর ইসিম যেমন রিফয়াত শব্দটি الارتفاع (আল ইরতেফা) এর ইসিম।
তারপর বিদআতের ব্যবহার এমন কাজের প্রতি প্রাধান্য লাভ করল, যা দ্বীনের তিসাধনকারী অথবা দ্বীনের মধ্যে অতিরিক্ত সংযোজনকারী হিসেবে গণ্য হয়।
উপরোন্তু কতেক বিদআত রয়েছে যা মাকরূহ বা দোষণীয় নয়, যার নামকরণ করা হয়েছে বিদআতে মুবাহা অর্থাৎ বৈধ বিদআত, ইহা অনেক সময় মুসলাহা বা নেক কাজে পরিণত হয়ে থাকে, যা দ্বারা মাফসাদা (শরীয়তে তিকর বস্তু) দূরীভূত হয়ে যায়। অর্থাৎ শরীয়তের বিশিষ্ট আলেমগণ যাকে বিদআতে হাসানা নামে অভিহিত করে থাকেন।’
উপরিলিখিত বিদআতের আভিধানিক ও শরয়ী অর্থের পর্যালোচনা দ্বারা স্পষ্ঠভাবে প্রতীয়মান হল-
বিদআতে শরয়ী প্রথমত দুই প্রকার-
(১) বিদআত ফিল এ’তেকাদ বা আক্বাঈদী বিদআত।
(২) বিদআত ফিল আমল বা আমল সংক্রান্ত বিদআত।
আক্বাঈদী সকল বিদআতই মন্দ ও গোমরাহী, যার কোন প্রকারভেদ নাই। শরীয়তে এর উপরই কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে, যেমন খারেজী, রাফেজী, ওহাবী ইত্যাদি আক্বীদা পোষণ করা।
বিদআত ফিল আমল আবার দুইভাগে বিভক্ত-
(১) বিদআতে সাইয়া- ঐ সকল আমল যা সুন্নাতে রাসূলের পরিপন্থি বা সুন্নাত ধ্বংসকারী।
(ক) যে নতুন আমল বা কাজ দ্বারা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্বাদাহ রহিত হয়, তাকে বিদআতে মাকরুহে তানজিহি বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
(খ) আর যদি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ রহিত হয়, তবে বিদআতে মাকরুহে তাহরিমী।
(গ) উপরোন্তু যে বিদআতের দ্বারা ওয়াজিব রহিত হয় অর্থাৎ ওয়াজিব বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবে ইহা বিদআতে হারাম। বা মাকরুহে তাহরিমী বলা হয়ে থাকে।
(২) বিদআতে হাসানা- ঐ সকল আমল যা সুন্নাতে রাসূলের পরিপন্থি নয়, সুন্নাতে রাসুলের ধ্বংসকারী ও নয়, বরং সুন্নাতে রাসুলের সাহায্যকারী ও সহায়ক।
বিদআতে হাসানা তিন প্রকার- (১) বিদআতে মুবাহা বা জায়েয- ঐ সকল নতুন কাজ যা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয় এবং তা পালন করার মধ্যে কোন সওয়াবও নেই, গুনাহও নেই, যেমন ভাল ভাল খানাপিনার ব্যাপারে উদারতা প্রদর্শন করা।
(২) বিদআতে ম্স্তুাহাব- এমন নতুন কাজ প্রবর্তন করা, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয় বরং দ্বীনের কল্যাণে সাধিত হয়, যেমন দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা, মুসাফিরখানা প্রতিষ্ঠা ও বর্তমান প্রচলিত মিলাদ শরীফের মাহফিলের আয়োজন করা। প্রকারান্তরে মিলাদ শরীফের আলোচনা মূলত সুন্নাতরূপে প্রমাণিত, যা পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
(৩) বিদআতে ওয়াজিব- যেমন, হক্ব প্রতিষ্ঠায় কোরআন সুন্নাহভিত্তিক দলিল পেশ করা, কোরআন সুন্নাহকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য ইলমে নাহু বা আরবি গ্রামার শিক্ষা করা ইত্যাদি।
সারকথা হলো এই বিদআত তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে-
(১) ঐ সকল নতুন কাজ যা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে সূচিত হয়েছে।
(২) সুন্নাতের পরিপন্থি নতুন কাজ যা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করে। (৩) ঐ সব বদ আক্বীদাসমূহ যা পরবর্তীকালে আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রথম অর্থে ব্যবহৃত বিদআত দুই প্রকার ।
(ক) বিদআতে হাসানা।
(খ) বিদআতে সাইয়া।
দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহৃত সকল বিদআতই সাইয়া যেসব ওলামায়ে কেরাম প্রত্যেক বিদআতকে সাইয়া বলেছেন, উহা দ্বিতীয় অর্থের বিদআত এবং হাদীস শরীফে বর্ণিত-
كل بدعة ضلالةপ্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী ইহা তৃতীয় অর্থের বিদআত অর্থাৎ আক্বীদাগত বিদআতই বুঝানো হয়েছে।
অতএব বিদআত সংক্রান্ত হাদীসসমূহ ও ওলামায়ে কেরামের উক্তিসমূহ কোন বিরোধ নেই।
চারখানা হাদীস শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা
মুফতি বায সাহেব মিলাদুন্নবী উদযাপন বর্জনীয় বিদআত ও নাজায়েজ প্রমাণ করতে গিয়ে যে চারখানা হাদিস শরীফ উল্লেখ করেছেন নিম্নে তার ব্যাখ্যাসহ তার দাবি খণ্ডন করা হল-
তার উল্লেখিত প্রথম ও দ্বিতীয় হাদিসদ্বয়ের মর্মার্থ প্রায় একই ধরণের। হাদিস শরীফখানা হল এই-
عن عائشة رضى الله عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احدث فى امرنا هذا ما ليس منه فهو رد০ (متفق عليه)
অর্থাৎ ‘হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যে, যে ব্যক্তি আমাদের এই ধর্মে এমন কোন নতুন কিছু প্রচলন করল যা ধর্মের মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)’
উপরোক্ত হাদীসে বর্ণিত ما ليس منه (যা ধর্মের মধ্যে নেই) এর ভাবার্থ হলো যা ধর্মের বিপরীত ও ধর্মের পরিবর্তনকারী। যেমন আল্লামা শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী (রাঃ) ‘আশআতুল লোময়াত’ কিতাবের এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেন
ومراد جيزى است كه مخالف ومغير ان باشد
অর্থ হাদিস শরীফ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে, যা ধর্মের বিপরীত ও ধর্ম পরিবর্তনকারী।
শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী (রঃ) এর উপরোক্ত ব্যাখ্যা হাদিসসম্মত বটে। নিম্নে হাদিস শরীফ পেশ করা হল মিশকাত শরীফের ‘হাউজ ও শাফায়াত’ অধ্যায়ে সাহাল বিন সায়াদ থেকে বর্ণিত, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন কিয়ামতে হাউজে কাউসারে আমি তোমাদের অগ্রগামী হব, যে আমার নিকট যাবে সে তা পান করবে, যে উহা পান করবে সে কখনো পিপাসিত হবে না, ঐ দিন আমার নিকট অনেক দল উপস্থিত হবে, আমি তাদেরকে চিনব এবং তাঁরাও আমাকে চিনবে, তারপর তাঁদের আমার মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে, আমি তখন বলব তারা আমার উম্মত তখন বলা হবে।
انك لا تدرى مااحدثوا بعدك فاقول سحقا سحقا لمن غير بعدى০ (متفق عليه)
অর্থাৎ আপানার কি খেয়াল নেই? আপনার পরে তাঁরা বিদআতে লিপ্ত سحقا سحقا لمن غير بعدى
হয়েছে, তখন আমি বলব
ধিক ধিক তাদের জন্য যারা আমার পরে সুন্নাতকে পরিবর্তন করেছে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদিস শরীফে আল্লাহর হাবীব বিদআতের সংজ্ঞা বয়ান করতে গিয়ে এরশাদ করেন لمن غير بعدى
যারা আমার পরে দ্বীনকে পরিবর্তন করে দিয়েছে অর্থাৎ এমন আক্বীদা বা এমন নতুন কাজের প্রবর্তন করেছে যা দ্বীন সুন্নাত পরিবর্তনকারী।
উপরোক্ত হাদিস শরীফ দ্বারা ষ্পষ্ঠভাবে প্রমাণিত হলো দ্বীনের পরিবর্তনকারী আক্বীদা ও সুন্নাত পরিবর্তনকারী আমলকেই বর্জনীয় বিদআত বলা হয়। সুতরাং হাদিস শরীফে উল্লেখিত
من احدث فى امرنا هذا ماليس منه فهو رد
হাদিস দ্বারা মীলাদুন্নবী উদযাপন করা, নিন্দনীয় বা বর্জনীয়। বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। কারণ প্রচলিত মিলাদ শরীফের মাহফিলের আয়োজন শরীয়তসম্মত পন্থায় করা হয়ে থাকে। যেমন মিলাদ মাহফিলের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। দরূদ শরীফ পাঠ করা হয়। দ্বীনের জরুরি মাসয়ালা মাসায়েল আলোচনা করা হয়। তারপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেলাদত শরীফ বা পবিত্র জন্ম সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ বয়ান করা হয়। পাশাপাশি দাঁড়ানো অবস্থায় আল্লাহর হাবিবকে সালাত ও সালাম দেয়া হয়, যা কোরআনে পাকে নির্দেশিত আছে, তা ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রকারান্তরে মিলাদুন্নবী উদযাপন করায় ধর্মের কোন পরিবর্তন বা কোন সুন্নাতের পরিবর্তন হচ্ছে না, বরং ধর্মের সহায়কই হচ্ছে।
মুফতি বায সাহেব উল্লেখিত হাদিস শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করে, মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠানকে নাজায়েয ও বর্জনীয় বিদআত বলেছেন এটা তার নিজস্ব মতবাদ বৈ কিছুই নয়। ইসলাম কারও ব্যক্তি মতবাদ সমর্থন করে না।
তাঁর (মুফতি বায সাহেবের) দলিল স্বরূপ উল্লেখিত তৃতীয় হাদীস-
عن العرباض بن سارية فعليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ
واياكم ومحدثات الامور فان كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة رواه احمد وابو داود والترمذى وابن ماجه)
অর্থাৎ ‘হযরত ইরবাজ বিন সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়িয়ে ধর, প্রমাণ হিসেবে উহার (আমার ও খোলাফাদের সুন্নাতের) উপর নির্ভর করবে এবং উহাকে দৃঢ়ভাবে ধরে থাকবে।
অতএব তোমরা বেঁচে থাকবে ধর্মে নতুন আবিস্কৃত বিষয় থেকে। কেননা প্রত্যেক নতুন আবি®কৃত বিষয় হচ্ছে বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। (আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজী)’
চতুর্থ হাদীস-
عن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اما بعد فان خير الحديث كتاب الله وخير الهدى هدى محمد وشر الامور محدثتها وكل بدعة ضلالة০ (متفق عليه)
অর্থ ‘হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তারপর নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হচ্ছে আল্লাহর বাণী এবং সর্বোত্তম হেদায়ত হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার হেদায়ত। সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে মুহদাসাত বা ধর্মে নতুন আবিষ্কার এবং প্রত্যেক নতুন আবিষ্কার বা বিদআতই গোমরাহী।’
(বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত শরীফ ৩০ পৃষ্ঠা)
উল্লেখিত দু’খানা হাদিসে
محدثات الامور ও شر الامور محدثاتها
দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নতুন প্রবর্তিত বিষয়সমূহ। এর দ্বারা এ সকল বাতিল আক্বীদাসমূহ অথবা ঐ সমস্ত সুন্নাত ধ্বংসকারী মন্দ আমলসমূহকে বুঝানো হয়েছে যা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পরে ধর্মের মধ্যে আবিষ্কার করা হয়েছে।
শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে-
(১) সকল নব প্রবর্তিত বাতিল আক্বীদা যাকে বিদআতে এ’তেকাদী বলা হয়। এ’তেকাদী বিদআত প্রত্যেকটিই গোমরাহী যার পরিণাম জাহান্নাম।
যে সমস্ত হাদিসে বিদআত প্রবর্তনের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে এবং উম্মতকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে, এ’তেকাদী বিদআতের ক্ষেত্রেই অধিক প্রযোজ্য।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর হতে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, আল্লাহর হাবিব এরশাদ করেন-
وتفترق امتى على ثلث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله قال ماانا عليه واصحابى০ (رواه الترمذى০ مشكوة شريف ص৩০)
অর্থাৎ ‘আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে এবং একদল ব্যতীত বাকী সবদলই জাহান্নামী হবে, এ কথা শুনে সাহাবায়েকেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে নাজাতপ্রাপ্ত দল কোনটি? আল্লাহর হাবিব উত্তরে বললেন
ماانا عليه واصحابى আমি এবং আমার সাহাবীগণ যে আক্বীদার উপর রয়েছি। (সে দলই নাজাতপ্রাপ্ত অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত)’
উপরোল্লিখিত হাদিস শরীফে ৭২ দলই বিদআতী, বদ আক্বীদার কারণেই গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয়ে জাহান্নামী হয়েছে। যেমন রাফেজী, খারেজী, মু’তাজিলা ইত্যাদি বিদআতী ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত।
(২) ঐ সকল নব প্রবর্তন আমল, যা কোরআন সুন্নাহ ও ইজমার পরিপন্থি, যেগুলো রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আবিস্কৃত।
পূর্বে উল্লেখিত হাদিসদ্বয়কে যদি দ্বিতীয় অর্থে নেয়া হয় (অর্থাৎ সুন্নাতের বিপরীত বা সুন্নাত ধ্বংসকারী আমলসমূহ) তবে আমলের েেত্র সে গোমরাহ হবে, ফাসিক ফিল আমল বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু এ আমলী বিদআতের কারণে তাকে বিদআতী বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। অবশ্যই কবীরা গুনাহের কারণে তাকে ফাসিক বলা যাবে।
এ প্রসঙ্গে হযরত বেলাল বিন হারেস মুজানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
من احيا سنة من سنتى قد اميتت بعدى فان له من الاجر مثل اجور من عمل بها من غير ان ينقص من اجورهم شيئا ومن ابتدع بدعة ضلالة لايرضاها الله و رسوله كان عليه من الاثم مثل اثام من عمل بها لاينقص ذلك من اوزارهم شيئا০ (رواه الترمذى ورواه ابن ماجه عن كثير بن عبد الله بن عمر وعن ابيه عن جده)
অর্থাৎ ‘আল্লাহর হাবিব বলেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতসমূহের এমন কোন সুন্নাত জিন্দা করবে যা আমার পর মুর্দা বা উঠে গেছে। সে সকল লোকের এমন সওয়াব রয়েছে যারা তা আমল করবে, তারা সে পরিমাণ
সওয়াবের অধিকারী হবে তদসমূদয় তাঁর আমল নামায় লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে। অথচ অনুসরণকারীদেরও ছোয়াবের কোন অংশ কম করা হবে না।
পান্তরে যে ব্যক্তি কোন বিদআতে দালালা বা গোমরাহ বিদআত আবিষ্কার করবে। যার প্রতি আল্লাহ ও রাসূল রাজী নন তাঁর জন্য, সে সকল লোকের গুনাহের পরিমাণ গুনাহ রয়েছে যারা এর উপর (গোমরাহ বিদআতের উপর) আমল করবে। অথচ তাদের (অনুসরণকারীদের) গুনাহের কোন অংশ কম করা হবে না।
উপরোক্ত হাদিস শরীফ দ্বারা স্পষ্ঠভাবে প্রতীয়মান হলো যে, বিদআতে দালালা অর্থাৎ যে সকল বিদআত প্রচলনের দ্বারা সুন্নাতে রাসূল বিলুপ্ত হয় এবং সুন্নাতের স্থানে বিদআত প্রতিষ্ঠিত হয়, এমন মন্দ আমলী বিদআতের দরুণ যদিও আমলকারীকে বিদআতী বলে আখ্যায়িত করা যাবে না কিন্তু শক্ত গুনাহগার বা ফাসিক বলে অভিহিত করা যাবে।
মিশকাত শরীফের কিতাবুল ইলিম অধ্যায়ে হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غير ان ينقص من اجورهم شيى০ الحديث
অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ইসলামে কোন উত্তম তরীকা বা নিয়ম পদ্ধতি বের করবে, তার আমলনামায় উহার সওয়াব লিপিবদ্ধ হবে, তারপর তার অনুসরণে যারা তা আমল করবে, তারা যে পরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হবে, সে সকল সওয়াব তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে। অথচ অনুসরণকারীদেরও সওয়াবের কোন অংশ কম করা হবে না।’ সুতরাং স্পষ্ঠভাবে প্রতীয়মান হল যে, ইসলামে কোন ভাল কাজের প্রচলন করা সওয়াবের কাজ, যে কাজ কোরআন সুন্নাহসম্মত। যেমন বুখারী শরীফ জিলদে আউয়াল ২২৭ পৃষ্ঠায় আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল কারী বর্ণনা করেন- আমি হযরত ওমর (রাঃ) এর সাথে রমজান
মাসের একরাতে মসজিদে গেলাম। সেখানে লোকেরা বিচ্ছিন্ন ও বিপ্তিভাবে একা একা (তারাবীর) নামায পড়ছে। আবার কোথাও একজন নামায পড়ছে, আর তার সঙ্গে পড়ছে কিছু লোক। তখন হযরত ওমর (রাঃ) বললেন- আমি মনে করছি এ সব নামাযিকে একজন ক্বারীর পিছনে একত্রে নামায পড়তে দিলে খুবই ভাল হত। পরে তিনি তাই করার ফয়সলা করেন এবং হযরত উবাই ইবনে কায়াবের ইমামতিতে জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। এ সময় এক রাতে আবার ওমর ফারুকের সাথে আমিও বের হলাম। তখন দেখলাম লোকেরা একজন ইমামের পিছনে