আজকাল কিছু লোক বলে থাকে- হাদীস গ্রন্থের মধ্যে শুধু বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ মানি। বাকি গ্রন্থগুলো মানি না। যারা্ এ ধরনের বলে করে থাকে, তারা আসলে আমাদের প্রিয় নবীজির হাদীসগুলো লুকিয়ে ফেলতে চায়। কারণ -
একটু ভেবে দেখুন- বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ হচ্ছে দুটি হাদীস সংকলন গ্রন্থ। মানে ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি নামক দুইজন উম্মত নবীজির কিছু হাদীস সংকলন করেছেন। কিন্তু এরমানে এই নয়, এই দুই উম্মত যে হাদীসগুলো সংকলন করেছেন শুধু সেগুলোই মানতে হবে এবং বাকিগুলো মানা যাবে না। কুরআন পাকে বলা আছে নবীজিকে মানতে হবে, কিন্তু বলা নাই শুধু বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসগুলো মানতে হবে। হাদীস শরীফে একথা বলা নাই- শুধু বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি যে হাদীসগুলো সংকলন করেছেন, শুধু তাই মানতে হবে। এটা ঠিক কোন হাদীসখানা সহিহ সেটা যাচাই করা উচিত। কিন্তু শুধু বুখারী-মুসলিম মানবেন, বাকিগুলো মানবেন না, এটা মূর্খতা এবং যারা এ তত্ত্ব আপনাকে শিখিয়েছে,তাদের উদ্দেশ্যও ভালো নয়, তাদের উদ্দেশ্য নবীজির মহামূল্যবান হাদীসগুলো লুকিয়ে ফেলা।
একটু হিসেব করে দেখুন---
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে আগমন হতে শুরু করে বিদায় গ্রহণ পর্যন্ত অর্থাৎ ৬৩ বছর পর্যন্ত যত কথা, কাজ, সম্মতি প্রকাশ করেছেন সবই পবিত্র হাদীস শরীফের অন্তর্গত। কিন্তু উছুল অনুযায়ী যদি ৪০ বছর বয়স মুবারক থেকে ৬৩ বছর মুবারক পর্যন্ত ২৩ বছরও যদি ধরি, এই ২৩ বছরে যত কথা, কাজ, সম্মতি প্রদান করেছেন সবই হাদীস শরীফ।
অংক করে দেখুন,
২৩×৩৬৫= ৮৩৯৫ দিন।
আবার, ৮৩৯৫×২৪= ২০১৪৮০ ঘন্টা।
আবার, ২০১৪৮০×৬০= ১২০৮৮৮০০ মিনিট।
অর্থাৎ এই ১ কোটি ২০ লক্ষ মিনিটের মধ্যে নবীজি চলা-ফেলা-উঠা-বসা-কথা-বার্তায়
-যত কথা বলেছেন,
-যত কাজ করেছেন
- যত কাজে সম্মতি দিয়েছেন, সবগুলোই পবিত্র হাদীসের অন্তর্ভূক্ত। পাশাপাশি সাহাবীগণ, তাবেয়ী, তাবে-তাবেইনগণের কথা-কাজ ও সম্মতিও হাদীসের অন্তর্ভূক্ত। সে হিসেব করলে নবীজির হাদীস সংখ্যা কত হতে পারে ? অবশ্যই লক্ষ লক্ষ। কিন্তু বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে সব মিলিয়ে হাদীস সংখ্যা মাত্র ১০-১১ হাজার। তারমানে আপনি যদি বলেন- “শুধু বুখারী-মুসলিম মানি, বাকিগুলো মানেন না”, এর অর্থ দাড়াচ্ছে- আপনি নবীজির অধিকাংশ কথা অস্বীকার করছেন, আর নবীজির একটি কথা অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে কাফির বা গোমরাহ হওয়া। না্উযুবিল্লাহ।
এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি নিজেই বলেছেন- “বুখারী শরীফের (হাদীস সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার) বাইরে আমার এক লক্ষ সহীহ হাদীস মুখস্ত রয়েছে।” (সূত্র: ইবনে হাজর আসকালানী (রহ) হাদয়ুস সারী পৃ: ৭, ইমাম যাহাবী সিয়ারু আলামিন নুবালা পৃ ১২/৪০২)
অর্থাৎ বুখারী-মুসলিম শরীফের বাইরে অসংখ্য সহিহ হাদীস রয়েছে। তাই বুখারী-মুসলিম ব্যতিত কিছু মানি না এটা গোমরাহমূলক কথা ছাড়া কিছু নয়।