ভুল ব্যাখ্যা করে মুসলিম জাতিকে আজ পিছিয়ে রাখলো কে ?
ইউরোপ-আমেরিকায় গেলে একটা জিনিস টের পাবেন। খ্রিস্টানরা তাদের নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকেে কতটা ভালোবাসে। ২৫শে ডিসেম্বরকে তারা জাকজমকভাবে পালন করে ক্রিসমাস হিসেবে। এই একটি দিনকে পূজি করে তারা সারা বছর যা ইনকাম করে তার সবটাই খরচ করে ফেলে। সব পন্যে ছাড় দেয়, মানুষ খাওয়ায়, সবাইকে গিফট দেয় । পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়ে চলে তাদের উৎসব উৎসব অনুষ্ঠান । সবকিছুতে থাকে তাদের নবীর প্রচার প্রসার। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছু সাজায়। এমন কোন যায়গা থাকে না, যেখানে ক্রিসমাসের প্রচার প্রসার থাকে নেই। তাদের প্রচার প্রসার মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে অন্য ধর্মাবলম্বীর মানুষ তাদের উৎসব দেখে আকৃষ্ট হয়। ঐ দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানায়, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ।
অথচ এটাই ঐতিহাসিক সত্য, খ্রিস্টানরা আগে ক্রিসমাসকে এভাবে পালন করতে জানতো না। বরং খোদ পোপ পর্যন্ত ক্রিসমাস পালনকে নিষিদ্ধ বলতো। ১৯শ’ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত তাদের ক্রিসমাস পালনের তেমন অস্তিত্ব ছিলো না। ১৯শ’ শতাব্দীতে চালর্স ডিকেন্স ‘এ ক্রিসমাস ক্যারল’ নামক উপন্যাস লিখে ক্রিসমাস খ্রিস্টানদের মধ্যে প্রচারে জোর ভূমিকা রাখে। তখন থেকেই খ্রিস্টানদের মধ্যে ক্রিসমাস জোর পালন শুরু হয়। কারণ খ্রিস্টানরা তখন দেখতো, মুসলমানরা তাদের নবীজির জন্য ঈদে মীলাদুন নবী কত যাকজমকভাবে পালন করে, ঘরবাড়ি সাজায়, মানুষ খাদ্য খাওয়ায়, উৎসব করে। মূলতঃ মুসলমানদের দেখেই খ্রিস্টানরা ক্রিসমাস পালন শিখে।
এ সম্পর্কে বিখ্যাত হাদীস শরীফ বিশারদ, লক্ষাধিক হাদীস শরীফের হাফিজ,বিখ্যাত মুহাদ্দিস , বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা কারক, হাফিজে হাদীস, আল্লামা ইমাম কুস্তালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আজ থেকে ৫শ’ বছর আগে বর্ননা করেন–
`হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাদত শরীফের মাসে মুসলিম মিল্লাত সর্বদা মাহফিল অনুষ্ঠিত করে আসছে, আনন্দের সাথে খাওয়া- দাওয়া তৈরী করছে এবং খাওয়ার দাওয়াত করে আসছে ! এই মহান রাতে তারা বিভিন্ন রকমের দান খয়রাত এবং আনন্দ প্রকাশ করে থাকে, এবং ভালো কাজ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধিই করে আসছে | তারা বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে মীলাদ শরীফ পড়ে আসছে | যার বরকতে তাদের উপর আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ বরাবরই হচ্ছে |’ (দলীল- √ মাওয়াহেবুল লাদুনীয়া ১ম খন্ড ২৭ পৃষ্ঠা ! মিসর থেকে প্রকাশিত!)
অর্থাৎ মুসলমানদের থেকে নিজ নবীকে নিয়ে খুশি প্রকাশ করতে শেখে খ্রিস্টানরা। সত্যিই বলতে ঐ একটি দিনকে টার্গেট করেই খ্রিস্টান আজ একত্র হতে পেরেছে এবং আবির্ভূত হয়েছে পরাশক্তি রূপে। কিন্তু এ বিষয়টি হওয়ার কথা ছিলো মুসলমানরদের। মুসলমানরাই আখেরী নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে একত্র হওয়ার সবচেয়ে বেশি হক্বদার। কিন্তু দুঃখের বিষয় একদল চোক্কা মৌলভী আজ মিথ্যা ফতওয়া দিয়ে মুসলমানদের এ আমল থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। ‘নবীজিকে পাওয়ার জন্য খুশি করতে হবে’ এত স্বাভাবিক একটি বিষয়কে বিদাত, হারাম টাইপের ভ্রান্ত ফতওয়া দিয়ে মুসলিম জাতিকে খণ্ড বিখণ্ড করে করেছে। আর খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার কারণেই মুসলিম জাতি এত দূর্বল। খেয়াল করলে দেখবেন- আজ যারা ঈদে মীলাদুন নবীর বিরুদ্ধে বলে তাদের আবির্ভাব মাত্র ৩০-৪০ বছর আগে। আমাদের বাপ-দাদা সবাই ঈদে মীলাদুন নবী পালন করেছে, তখন কেউ এর বিরুদ্ধে বলেনি। তখন কেউ এ দিবসের বিরুদ্ধে বলেনি। নব্য দলটিই নব্য ফতওয়া দিয়ে ঈদে মীলাদুন নবী পালনের বিরুদ্ধে বলে মানুষকে দ্বিধাবিভক্ত করছে। মুলতঃ কাফিরদের এজেন্ট হয়ে মুসলিম জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করাই তাদের কাজ।
আল্লাহ তায়ালা এ সকল কাফির দালাল চৌক্কা মৌলভীদের থেকে মুসলিম জাতিকে হেফাজত করুন। আমিন।