হাদীস শরীফকে জাল বলার পরিণতি

বর্তমানে এক শ্রেনীর মানুষের আর্বিভাব হয়েছে, এদের বিন্দুমাত্র যোগ্যতা না থাকার পরও বিভিন্ন হাদীস শরীফ সমূহকে জাল, মওযু ,মুনকার ইত্যাদি বলে থাকে। অথচ এধরনের কথা বলার পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে সেটা কল্পনারও বাইরে। এ বিষয়ে একটা মশহুর ঘটনা রয়েছে।
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احتجم يوم الا ربعاء ويوم السبت فاصابه برص.
অর্থঃ- হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি বুধবার ও শনিবার শিঙ্গা লাগাবে, তার শ্বেতকুষ্ঠ রোগ হবে।”

হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে,
النهى عن قص الاظفار يوم الاربع فانه يورث البرص.
অর্থঃ- “বুধবার দিনে নখসমূহ কাটা যাবেনা, নিশ্চয়ই ওটা শ্বেতকুষ্ঠ হওয়ার কারণ।”

বুধবার ও শনিবার দিনে শিঙ্গা লাগানো জঈফ হাদীসের দ্বারা নিষেধ আছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احتجم يوم الاربعاء ويوم السبت فاصابه برص.
অর্থঃ- হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি বুধবার ও শনিবারে শিঙ্গা লাগাবে তার শ্বেত কুষ্ঠ রোগ হবে।”
হাদীস শরীফটার সনদ দুর্বল। আর এ কারনে একজন আলেম হাদীস শরীফটার আমলে কিছুটা শিথিলতা প্রকাশ করেন, ফলশ্রুতিতে যা ঘটলো এ প্রসঙ্গে ইমাম জাালুদ্দীন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লালী ও তা’আক্কুবাত কিতাবে মসনদুল ফিরদাউসে দায়লামী শরীফ হইতে নকল করেছেন,
سمعت ابى يقول سمعت ابا عمرو محمد بن جعفر بن مطر النيشافورى قال قلت يوما ان هذاء الحديث ليس بصحيح فافتصدث يوم الاربعاء فاصابن البرص فرأيت رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم فى النبوم فشكوت اليه حالى فقال اياك والا ستهائة بحديثى فقلت بست يا رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم فا نتبهت وقد عافانى الله تعالى وذالك عنى.
অর্থঃ- আমি আমার পিতার নিকট শুনেছি, তিনি আবু ওমর মুহম্মদ জাফর নিশাপুরীকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন- আমি একদিন খেয়াল করলাম হাদীসখানা সহীহ্ নয়। তাই জরুরতবশতঃ বুধবার দিন আমি শিঙ্গা লাগালাম, অতঃপর আমার শ্বেত কুষ্ঠ হয়ে গেল। এরপর স্বপে¦ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে আমি আমার অবস্থা সম্পর্কে অভিযোগ করলাম। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সাবধান! আমার হাদীসকে হালকা মনে কর না (হাদীস যদিও জঈফ হয়েছে রাবীর কারণে, তথাপিও আমার নামের সাথে সম্পর্কযুক্ত)।” অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল আমি তওবা করিতেছি (আমার অপরাধ হয়েছে। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষমা করে দিলেন) অতঃপর আমি ঘুম থেকে জেগে দেখি আল্লাহ্ পাক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং উক্ত রোগের চিহ্ন মাত্র আমার শরীরে নেই। হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আরবাইন কিতাবেও এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
আল্লামা তাহতাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাশিয়ায়ে দুররে মুখতারে বলেন, হাদীস শরীফে আছে,
النهى عن قص الاظفار يوم الاربعاء فائه يورث البرص.
অর্থঃ- হাদীস শরীফে বুধবার দিন নখ কাটা নিষেধ করা হয়েছে। নিশ্চয়ই এতে শ্বেত কুষ্ঠ হয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফফাজী মিসরী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি নাসিমুর রিয়াজ ফি শরহে ইমাম কাজী আয়াজ কিতাবে বলেন,
قص الاظفار وتقليمها سنة وورد النهى عنه فى يوم الاربعاء وانة يورث البرص وحكى بعض العلماء انه فعله قنهى عنه فقال لم يثبت هذا الله فلحقه البرص من ساعته فراى النبى صل عليه وسلم فى منامه فشكى اليه فقال له الم بسمع نهى عنه فقال لم يصح عندى فقال صلى الله عليه وسلم يكفيك انه سمع ثم مسح بدنه بيده الشر يفة فذهب مابه فتاب عن مخالفة ماسمع.
অর্থঃ- নখ কাটা বা ছোট করা সুন্নত। তবে হাদীস শরীফে বুধবার নখ কাটা নিষেধ করা হয়েছে, কেননা কাটিলে শ্বেত কুষ্ঠ হয়। বর্ণিত আছে কোন একজন আলেম (ইমাম ইবনুল হজ্ব মক্কী মালেকী রহমতুল্লাহি আলাইহি) বুধবার দিন নখ কাটলে তাঁকে হাদীস শরীফের বরাত দিয়ে নিষেধ করা হলো। তিনি বলেন, ইহা সহীহ্ হাদীস বলে প্রমাণিত নয়। অতঃপর তাঁর শ্বেত কুষ্ঠ হয়ে গেল। তিনি স্বপে¦ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে অভিযোগ করলেন। তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেন, “তুমি কি এ সম্পর্কে আমার নিষেধ বাণী শুননি?” তিনি বলেন, এই হাদীস আমার নিকট সহীহ্ হিসাবে পৌঁছেনি। তারপর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ ছিল যে, তুমি শুনেছ এই হাদীস আমার নাম মোবারকের সাথে সম্পর্কযুক্ত।” আর হাত মোবারক দ্বারা তাঁর শরীর মসেহ্ করে দিলেন।
তৎক্ষণাৎ সেই রোগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। তৎপর তিনি তওবা করলেন যে, জীবনে আর কখনো হাদীস শরীফের বিরোধিতা করবনা।”
উপরোক্ত দু’খানা হাদীস শরীফ দ্বারা এ কথাই বুঝা গেল যে, হাদীস শরীফের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব আরোপ না করলে ভয়ংকর পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। এখানে আরো উল্লেখ্য যে শরহে আক্বায়েদে নফসী ও অন্যান্য আক্বায়েদের কিতাবের বর্ণনা মোতাবেক হাদীস শরীফের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা প্রদর্শন করা কুফরী।
দলীলঃ দায়লামী শরীফ, লালী, তায়াক্কুবাত, হাশিয়ায়ে দূররে মুখতার, নাসিমুর রিয়াজ ইত্যাদি
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট