আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা আল আম্বিয়া-এর ১০৭ নম্বর আয়াত পাক-এ ইরশাদ ফরমান-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি অবশ্যই আপনাকে সারা আলমের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।”
হে কায়িনাতবাসী! ঈমানদার বান্দা-উম্মাহ তো ইবলিসের মতো রহমতশূন্য গযবপ্রাপ্ত বিভ্রান্ত হতে পারে না। তাই রহমতুীল্লিল আলামীন হিসেবে যিনি প্রেরিত হয়েছেন তথা তাশরীফ এনেছেন উনার আগমন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে তারা সদা উন্মুখ। কারণ দুনিয়ার যেকোনো মানুষই কোনো বিষয়ে রহমতপ্রাপ্ত হলেই সেটাতে ইচ্ছা-অনিচ্ছাই খুশি প্রকাশ করে। তাহলে যিনি সারা আলমের জন্য রহমত উনাকে পেয়ে, উনার মুবারক তাশরীফ-এ আমরা ঈমানদার বান্দা-উম্মাহ হিসেবে কেনো ঈদ তথা খুশি প্রকাশ করবো না?
আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা আল আহযাব-এর ৫৬ নম্বর আয়াত পাক-এ ইরশাদ ফরমান-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে দুরূদ শরীফ তথা ছানা-ছিফত পাঠ করেন। হে ঈমানদার বান্দাগণ! তোমরাও উনার শান মুবারক-এ দুরূদ শরীফ ও ছানা-ছিফত করো এবং সালামের মতো সালাম দাও অর্থাৎ পরিপূর্ণ আদবসহকারে উনার প্রতি সালাম পেশ করো।”
হে জিন-ইনসান! এই আয়াত শরীফ-এর তাফসীর বির রায় করতে গিয়ে একথা বলা বা লিখা কখনোই জায়িয হবেনা যে, ফেরেশতারা নবীর জন্য রহমত পাঠায় আর মু’মিনরা যাতে নবীর জন্য রহমতের তরে দোয়া করে। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! মূলত যিনি সারা আলমের জন্যই রহমত বলে স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত ঘোষণা করেছেন উনার জন্য ফেরেশতারা আবার কিসের রহমত পাঠাবে? বান্দা তথা উম্মাহরা দোয়া করে উনাকে আবার কিসের রহমত দিবে? তাহলে কি তিনি ফেরেশতা বা উম্মতের মুহতাজ? নাঊযুবিল্লাহ! বরং ফেরেশতা হোক আর উম্মত হোক কুল-কায়িনাতই সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি তামাম আলমের রহমত উনার দয়া, দোয়া, ক্ষমা, শাফায়াত ইত্যাদি পাওয়ার জন্য সর্বাবস্থায় মুহতাজ তথা মুখাপেক্ষী। আর এ কারণেই উম্মাহ তথা সারা কায়িনাত উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ বিশেষ ছানা-ছিফত, দুরূদ ও সালাম-এর মাহফিল আয়োজন করে।
আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা হুদ-এর ১২০ নম্বর আয়াত পাক-এ ইরশাদ ফরমান-
وَكُـلاًّ نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاء الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ
অর্থ: “আমি সমস্ত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সবকিছুই আপনাকে অবহিত করেছি; যাতে ঈমানদার বান্দাগণের ঈমান আরো মজবুত তথা দৃঢ় হয়।”
হে মু’মিন মুসলমানগণ! এই আয়াত শরীফ থেকে কি একথা প্রমাণিত হয়না যে, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সীরত-ছূরত জীবনী মুবারক আলোচনা করার মাঝে, শুনার মাঝে ঈমানদার বান্দাগণের ঈমান আরো মজবুত-দৃঢ় হয়। তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান সীরত-ছূরত মুবারক অজুদ পাক নিয়ে আনন্দ খুশি প্রকাশ করে উম্মাহ কিংবা সারা কায়িনাতবাসী ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল করলে সেটা কেনো ঈমান মজবুতির কারণ হবেনা? মূলত যারা বেঈমান ও যাদের ঈমান যায় যায় অবস্থা তারাই এ উপলক্ষে খুশি তথা ঈদ উদযাপন করেনা।
আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা সাবা-এর ২৮ নম্বর আয়াত পাক-এ ইরশাদ ফরমান-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
“হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি অবশ্যই আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না বা বুঝে না।”
হে জিন-ইনসান! কারো নিকট যদি কেউ কোনো সুসংবাদ নিয়ে আগমন করেন এতে কি সে খুশি হয়, না নারাজ হয়? অবশ্যই খুশি হয়। তাহলে যিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদের বার্তা নিয়ে যাবতীয় খারাবী থেকে সতর্ক করতে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন সেই মহান দিন-তারিখ স্মরণে কেনো মানবজাতি ঈদ তথা খুশি প্রকাশ করবে না?
আয়াতে পাক-এ এরপর আল্লাহ পাক তিনি বলেন যে, “অধিকাংশ মানুষই তা জানে না বা বুঝে না।” সত্যিই সুস্পষ্ট কিতাবে আল্লাহ পাক তিনি সুস্পষ্টভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান সম্পর্কে জানানোর পরও অধিকাংশ মানুষ তা বুঝে না। তাহলে জানার পরও তারা কেনো বুঝেনা? নাকি বুঝার চেষ্টা করেনা? নাকি তাদের দিলে মহর পড়ে গেছে? ইবলিস যেমন সবকিছু জেনে-শুনেও অবাধ্য হয়ে গেছে তদ্রƒপ এরাও কি পবিত্র কুরআন শরীফ পড়ে জেনেও এর আমল থেকে বিরত রয়েছে এবং উম্মাহকে-বান্দাকে বিরত রাখার জন্য যাবতীয় অপচেষ্টা করে যাচ্ছে? জাররা পরিমাণ ঈমানও যার মধ্যে রয়েছে সে তো অবশ্যই উপরোক্ত দলীল থেকে একটি মাত্র দলীল পেলেও সন্তুষ্টি আনন্দচিত্তে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ আগমন উপলক্ষে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করবে নিঃসন্দেহে।