নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দায়িমীভাবেই পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন


পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে- 
عن حضرت عفان رحمة الله عليه عن حضرت سعيد بن مينا رحمة الله عليه عن حضرت جابر و حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول .
অর্থ: “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হয়েছিল।” (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ মুতাবিক পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।


আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت أبي قتادة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم‏‏ سئل عن صوم يوم الاثنين فقال‏ ‏ذلك يوم ولدت فيه، ويوم بعثت أو أنزل علي فيه‏.
অর্থ: “হযরত ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হয়ে ইরশাদ মুবারক করেন, এদিন আমি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এদিন আমার নুবুওওয়াতী শান মুবারক প্রকাশ করা হয়েছে অথবা এদিন আমার প্রতি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করা হয়েছে। (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ফাদ্বায়িল)
উপরোক্ত রোযা রাখার পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট, তাহলো-
১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তো উদযাপন করেছেন, বরং প্রতি সপ্তাহের ইছনাইনিল আযীম শরীফও পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হিসেবে উদযাপন করেছেন।
২. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস পালন করেছেন, সে হিসেবে-
* প্রতি সপ্তাহে ১ দিন,
* প্রতি মাসে কমপক্ষে ৪ দিন,
* প্রতি বছরে কমপক্ষে ৫০ দিন,
সুতরাং দুনিয়াবী পুরো হায়াত মুবারক-এ কমপক্ষে ৫০ ী ৬৩ = ৩১৫০ দিন পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উদযাপন করেছেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সৃষ্টিই হয়েছেন নবী হিসেবে এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ميسرة الفجر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نبيا وادم بين الروح والـجسد.
অর্থ: “হযরত মাইসারাতুল ফজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তখনও নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম তিনি রূহ ও জিসিমে ছিলেন।” (তারীখে বুখারী, মুসনাদে আহমদ, আলহাবী, ইত্তেহাফুচ্ছদাত, তাযকেরাতুল মাউজুয়াত, কানযুল উম্মাল/৩১৯১৭, দায়লামী/৪৮৫৫, ত্ববরানী, আবূ নঈম, মিশকাত)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم متى وجبت لك النبوة قال وادم بين الروح والـجسد.
অর্থ: “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, (একদা) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কখন থেকে নবী? উত্তরে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম তিনি রূহ ও জিসিম মুবারক-এ ছিলেন, তখন থেকেই আমি নবী।” (তিরমিযী, মিশকাত/৫১১)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ হতে যেহেতু প্রমাণিত যে, তিনি সৃষ্টিই হয়েছেন নবী হিসেবে, তাই উনার শিশুকাল, যৌবনকাল কিংবা বৃদ্ধকাল বলে কিছুই নেই বরং তিনি সর্বাবস্থায়ই নবী ছিলেন এবং যমীনে তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর থেকেই উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস পালন করেছেন।
এছাড়াও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আওলাদ, ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, গাউছুল আ’যম হযরত আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, সে দিনটি ছিল পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের প্রথম দিন। আর তাই তিনি সেদিনই রোযা রেখেছেন।
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন সম্মানিত আওলাদ, একজন সম্মানিত উম্মত যদি বিলাদত শরীফ দিবসে রোযা রাখতে পারেন, তাহলে যিনি সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সমস্ত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি শরীয়ত প্রণেতা তিনি উম্মতকে তা’লীম প্রদানের উদ্দেশ্যে যমীনে তাশরীফ মুবারক নেয়ার সময় থেকেই পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস পালন করেছেন, এটাই স্বাভাবিক।
৩. আরো সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উপলক্ষে প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ দিবসে রোযা রেখেছেন, সেহেতু তিনি সর্বদা পরবর্তী ইছনাইনিল আযীম শরীফ আগমনের জন্য অপেক্ষা করেছেন। অর্থাৎ মাঝে মাঝে তিনি সারাজীবনই উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উদযাপন করেছেন।
৪. এছাড়াও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশ দিবস উপলক্ষেও রোযা রেখেছেন। তাই এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোনো বিশেষ দিবস স্মরণে রেখে উক্ত দিবস উদযাপন করাও সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্দেশ মুবারক। যেমনটি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَذَكِّرْ‌هُم بِاَيَّامِ اللهِ ۚ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ‌ شَكُوْرٍ.
অর্থ: “তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার দিবসসমূহ স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই উক্ত দিবসসমূহের মধ্যে প্রত্যেক ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ বান্দা-বান্দী উনাদের জন্যে নিদর্শনাবলী তথা ইবরত-নছীহত গ্রহণের বিষয় রয়েছে।” (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
সুতরাং যারা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ (পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালনে বিরোধিতা করে তারা মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বিরোধী এবং মুরতাদ।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট