বছরের প্রায় অর্ধেক দিনই মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈদ বা খুশির দিন।

 ‘ইবনে মাযাহ ও মুয়াত্তা শরীফ’-এ , হযরত উবাইদ ইবনে সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে মুরসাল হিসেবে বর্ণিত। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন জুমুয়ার দিনে ইরশাদ করেন, হে মুসলমানগণ! এই যে জুমুয়ার দিন, এ দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
 ‘তিরমিযী শরীফ’-এর উদ্ধৃতি , “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম’ এ আয়াত শরীফটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিলো সে বলে উঠলো, ‘যদি এই আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ‘ঈদের দিন বলে ঘোষণা করতাম।’ এটা শুনে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন এক সাথে দু’ঈদ ছিল- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন।” অর্থাৎ পুনরায় ঈদ ঘোষণা করতে হবে না। কেননা ঈদের দিনেই এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।




 ‘বুখারী, মুসলিম, মিশকাত শরীফ’-এর উদ্ধৃতি, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “রোযাদারের জন্য দুটি খুশি রয়েছে। একটি তার ফিতর বা ইফতারে সময় এবং অপরটি তার রব তায়ালা উনার সাথে সাক্ষাতের সময়।” এ হাদীছ শরীফ-এ রোযাদারের জন্য দুটি খুশি বা ঈদের কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে তার ইন্তিকালের পর আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাতের সময়। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তার ফিতর বা ইফতারের সময়। আর ফিত্র বা ইফতার হচ্ছে দু’প্রকার (১) কুবরা, (২) ছুগরা। কুবরা হচ্ছে ঈদুল ফিতর যা হাদীছ শরীফ দ্বারা ঈদের দিন হিসেবে প্রমাণিত। আর ছুগরা হচ্ছে রোযাদার প্রতিদিন মাগরিবের সময় করে থাকে। এটা প্রতি বছরে ২৯ দিন অথবা ৩০ দিন হয়ে থাকে।

ইফতারীয়ে ছুগরা ফরয রোযা হিসেবে বছরে ২৯ বা ৩০ দিন। আর সুন্নত রোযা হিসেবে কমপক্ষে মুহররম মাসে ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ ২টি এবং তার সাথে আরো ১টি মোট ৩টি, শাওয়াল মাসে ৬টি, যিলহজ্জ মাসে ১ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯টি এবং অন্যান্য মাসসমূহে ৩টি করে ২৪টি; সর্বমোট ৪২দিন। অর্থাৎ ৪২টি ঈদ।
 হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “প্রত্যেক মু’মিনের জন্য প্রতি মাসে চারটি ঈদ অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে।”

হাদীছ শরীফ-এ মু’মিনের জন্য প্রতি মাসে ৪টি বা ৫টি ঈদের কথা বলা হয়েছে। কারণ, প্রতি মাসে সোমবার শরীফ ৪টি বা ৫টি হয়ে থাকে। আর শুক্রবারও প্রতি মাসে ৪টি বা ৫টি হয়ে থাকে। অর্থাৎ ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর- এ দুটিই নয়, আরো অনেক ঈদ রয়েছে। কাজেই, শুক্রবার মু’মিনদের ঈদের দিন। আরবী বা চন্দ্র বছর অনুযায়ী এক বছরে প্রায় ৫০টি শুক্রবার হয়ে থাকে। সে হিসেবে এ ৫০টি দিনও মু’মিনদের জন্য ঈদের দিন। আবার সোমবার শরীফ দিনও মু’মিনদের ঈদের দিন। চন্দ্র বছর অনুযায়ী এক বছরে প্রায় ৫০টি সোমবার শরীফ হয়ে থাকে। সে হিসেবে এ ৫০টি দিনই মু’মিনদের জন্য ঈদের দিন। আর আরবী বছরে ১২টি মাসের মধ্যে একটি মাস হচ্ছে রমাদ্বান শরীফ। যা ২৯ বা ৩০ দিনে হয়ে থাকে। এবং এ ২৯ বা ৩০ দিন রোযাদার মু’মিনের জন্য খুশির দিন বা ঈদের দিন। সুন্নত রোযার ৪২ দিন খুশির বা ঈদের দিন। মু’মিনের জন্য আরাফার দিন ঈদের দিন বা খুশির দিন। ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফই সবচেয়ে বড় ঈদের দিন বা খুশির দিন।
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ দ্বারা যেভাবে দু’ঈদ ছাবিত হয়েছে বা রয়েছে ঠিক একইভাবে অন্যান্য ঈদ এবং ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম ও সাইয়্যিদে ঈদে আকবর হিসেবে ছাবিত বা প্রমাণিত হয়েছে।
মু’মিনের জন্য সর্বমোট ঈদের দিন বা খুশির দিন হলো- শুক্রবার ৫০ দিন, সোমবার ৫০ দিন, আরাফার ১ দিন, ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ১ দিন, ঈদুল ফিত্র ১ দিন, ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ৩ দিন, ফরয রোযার ২৯ বা ৩০ দিন, সুন্নত রোযার ৪২ দিন সর্বমোট ১৭৭ বা ১৭৮ দিন। অর্থাৎ বছরের প্রায় অর্ধেক দিনই মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈদ বা খুশির দিন। সুবহানাল্লাহ!
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট