আজকে গুগুল ডট কমে (https://www.google.com) ঢুকলে দেখবেন একটি কার্টুন। যেখানে দেখা যাচ্ছে, আঠারো শতকের জার্মান সুরকার লুডউইগ ভ্যান বিটোভেনের প্রতিকৃতি। বিটোভেনের ব্যাপটিজমের (খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নেওয়ার অনুষ্ঠান) ২৪৫তম বার্ষিকীতে তার প্রতি সম্মান জানিয়ে নতুন এ কার্টুনটি প্রকাশ করেছে টেক জায়ান্ট গুগল। জন্মতারিখ নিশ্চিতভাবে জানা না থাকায় ১৭ ডিসেম্বর বিটোভেনের ব্যাপটিজমের দিনটিকেই বিশ্বজুড়ে উদযাপন করা হয়। উল্লেখ্য গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে এ দিবস পরিচিতির সিস্টেমটিকে বলে গুগল ডুডল। কোন নির্দিষ্ট দিবসে গুগল ডুডল ঐ দিনকে স্মরণ করে একটি প্রতিকৃতি প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য দিবস পরিচিতির এ রীতি কাফির-মুশরিকদের কাছে আগে কখনই ছিলো না। অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিবসকে স্মরণ করতে হবে এ তত্ত্বটি আসলে মুসলমানদের। কারণ পবিত্র কুরআন পাকে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আপনি উম্মতগণকে বিশেষ দিনসমূহ স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই এতে ধৈর্যশীল ও শোকরগুযার বান্দাদের জন্য রয়েছে ইবরত ও নছীহত।” (সূরা ইব্রাহীম : ০৫)
আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সা্ল্লামের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখতে পারবো, তিনি ইতিহাস থেকে বিভিন্ন দিন স্মরণ করেছেন এবং সেসব দিবস পালন করেছেন। যেমন-
১) তিনি জুমুয়ার দিনটিকে পালন করেছেন। তিনি বলেছেন- "তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে, জুমুয়ার দিন। এদিনে আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এদিনেই তিনি ওফাত বা ইন্তেকাল লাভ করেন! [সহীহ নাসায়ী শরীফ -জুমুয়ার অধ্যায়]
২) তিনি সোমবারকে পালন করেছেন। হযরত আবু কাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, এদিন আমি বিলাদত (জন্ম) শরীফ লাভ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা কুরআন শরীফ নাজিল হয়েছে।” [দলীলঃ সহীহ মুসলিম,হাদীছ শরীফ নং-২৮০৭,সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ শরীফ নং-২৪২৮,সুনানে বায়হাকী [কুবরা], হাদীছ শরীফ নং-৮২১৭,সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীছ শরীফ নং-২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা, হাদীছ শরীফ নং-২৯২৬,মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ শরীফ নং-২২৫৫০]
শবে বরাত, আশুরা, শবে ক্বদর এ রকম বহু দিবস পালনের বিষয় আমরা ইসলামে দেখতে পাই।
দেখা যাচ্ছে, বিশেষ দিনসমূহ স্মরণ করার শিক্ষা মুসলমানদের নিকট দেয়া থাকলেও, মুসলমানরা আজ বিশেষ দিনগুলো পালন করে না। কিন্তু কাফির-মুশরিকরা যেহেতু কুরআন শরীফ রিসার্চ করে, তাই তারা মুসলমানদের ভালো ভালো জিনিসগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। সেখান থেকেই তারা পায়, বিশেষ দিনগুলো উদযাপন করার রীতি বা স্মরণ করার রীতি। এটা আপনাকে মানতেই হবে, প্রত্যেকটি বিশেষ দিনের মধ্যে রয়েছে একটি বিশেষ দীক্ষা। ঐ দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটির জীবনী পর্যালোচনা, তার জীবনী থেকে নির্যাস গ্রহণ এবং তার মতাদর্শে নতুনভাবে ভাবতে শেখা। দেখুন, আজকে গুগল কি কৌশলে সবার মধ্যে বিটোভেনের তত্ত্ব বিশেষ করে খ্রিস্টবাদের তত্ত্ব প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে। মুসলমানরাও বিটোভেনের তত্ত্বের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। না্উযুবিল্লাহ।
কিন্তু অবাক করার মত বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম নামধারী একটি বিশেষ গো্ত্র বের হয়েছে, যারা মুসলমানদের এ দিবসগুলো পালন বাধা দিচ্ছে, বিদআত, হারাম নানান ভ্রান্ত ফতওয়া দিয়ে মুসলমানদের ঐতিহ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। অথচ ঐ দিনকে উপলক্ষ করে মুসলিমরা যদি ঐ বিশেষ দিন, ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আলোচনা করতো, তবে তারা ইতিহাস ও ঐতিহ্যে দৃঢ় থাকতে পারতো। কিন্তু মুসলমানদের নানান ভ্রান্ত ফতওয়ার কারণে মুসলমানরা আজ নিজ দিবসগুলো পালন করতে পারছে না। পালন করতে পারছে না ঈদে মীলাদুন্নবী, শবে বরাত, শবে মিরাজ। এ বদলে তারা উদযাপন করছে কাফিরদের ভ্যালেন্টাইন ডে, থার্টি ফাস্ট নাইট, পহেলা বৈশাখ, হ্যালোইন দিবসের মত বিভিন্ন কুফরী দিবস। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, একটি গ্লাস কখন খালি থাকতে পারে না। তাকে যখন পানি দ্বারা পূরণ না করবেন, তখন সে অবশ্যই বাতাস দ্বারা পূর্ণ হবেই হবে। ঠিক সেভাবেই কু-ফতোয়া দিয়ে, ইসলামী বরকতপূর্ণ দিবস উদযাপনের পথ বন্ধ করে দিয়ে মুসলিম জাতিকে অভ্যস্ত করা হচ্ছে কাফির-মুশরিকদের হারাম দিবস উদযাপনে। সত্যি বলতে বর্তমান মুসলিম জাতির পতনের অন্যতম কারণ এটাই।