নব উদ্ভাবিত বিদয়াত বলে পরিত্যাগ করার জন্য বলা হচ্ছেনা কেনো?


দিন তারিখ ঘোষণা করে বাংলাদেশে ‘বিশ্ব ইজতেমা’ নামক একটি তাবলীগী সমাবেশ করে। যাকে তারা ইসলামের অন্যতম ফরয ভিত্তি হজ্জের সাথেও তুলনা দিয়ে থাকে। তারা ইসলামের নামে এই তাবলীগ শুরু করেছে কিছুকাল আগে। অপরদিকে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৪০০ বৎসর ধরেই পালিত হচ্ছে। এছাড়া তাদের তাবলীগী ইজতেমার কথা ইসলামী শরীয়তের কোথাও উল্লেখ নেই। তাহলে এটাকে নব উদ্ভাবিত বিদয়াত বলে পরিত্যাগ করার জন্য বলা হচ্ছেনা কেনো?

(২) ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর আমন্ত্রণে কা’বা শরীফ-এর তৎকালীন ইমাম পাকিস্তানে আসে। তার পিছনে জুমুয়ার নামায পড়ার জন্য পাকিস্তানের বড় স্টেডিয়ামে সবাইকে জমায়েত করা হয়। এরূপ ভ্রমণে কা’বা শরীফ-এর ইমাম অন্যান্য দেশেও যেয়ে থাকে। কিন্তু কথা হলো- কা’বা শরীফ-এর ইমামের পিছনে জুমুয়ার নামায পড়ার জন্য জামে মসজিদ ত্যাগ করে স্টেডিয়ামে এভাবে জামায়াত করার কথা বা জুমুয়ার নামায পড়া শরীয়তের কোথাও কি জায়িয রয়েছে? আর জায়িয না থাকলে এটাকে কেনো বিদয়াত বলে ফতওয়া দেয়া হলো না?


(৩) ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার ১০০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকল আলিম-উলামা, ত্বলিবে ইলম নামধারীদের মাঝখানে এনে প্রধান অতিথি হিসেবে বসানো হলো কাট্টা মুশরিক বেগানা মহিলা ইন্দিরা গান্ধীকে। এছাড়া ইসলামের ইতিহাসে মসজিদে কুবা অথবা মসজিদে নববী শরীফ প্রতিষ্ঠার কোনো বার্ষিকী উদযাপনের ইতিহাস পাওয়া যায়না। উলামাদের সম্মেলনে কোনো মুশরিক তাও আবার মহিলা দ্বারা ওয়াজ-নছীহত করানোর কথা কি ইসলামী শরীয়তের কোথাও রয়েছে? কোনো মহল থেকেই এটাকে বিদয়াত বলে নিন্দা জানানো হলোনা কেনো?

(৪) কয়েক বৎসর যাবৎ ইংল্যান্ডে সউদীদের প্রভাবিত আহলে হাদীছ পার্টি “তাওহীদ ও সুন্নাহ” নামে কনফারেন্স করে। সেখানে কা’বা শরীফ-এর ইমামসহ অনেক মাওলানাদেরকে দাওয়াত দেয়া হয়। অথচ ইসলামী শরীয়তের কোথাও এভাবে “তাওহীদ ও সুন্নাহ” নামে কনফারেন্স করা এবং এতে বয়ান করার জন্য হারাম ছবি তুলে বিদেশ যাওয়ার কথা বলা হয়নি। যারা সব সময় বিদয়াত বিদয়াত বলে চিৎকার করে তারা এমন কনফারেন্সকে বিদয়াত বলতে নারাজ কেনো?

(৫) সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ বিরোধী মাওলানারা বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে যেমন ‘আল কুদুস’ দিবস পালনের নামে র‌্যালীসহ মিছিল করে, বিভিন্ন রঙ বেরঙের ব্যানার ফেস্টুন বহন করে। আলিম-উলামা নামধারীরা সেখানে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়। এভাবে প্রতি বছর ‘আল কুদুস’ দিবস পালনের নামে এমন প্রদর্শনী করার কথা ইসলামী শরীয়তের কোথায় বলা হয়েছে? কিংবা খায়রুল করুনে কি এর অস্তিত্ব ছিলো? তাহলে কেনো এটাকে বিদয়াত বলে গণ্য করা হচ্ছেনা?

(৬) ১৯৭০ সালের হারাম গণতন্ত্র ভিত্তিক নির্বাচনের দিনকে জামাতে মওদুদী গং প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলো “ইয়াওমে শওকতে ইসলাম”। অথচ মুসলমানদের দ্বীনের জন্য প্রতিটি দিনই হচ্ছে “ইয়াওমে শওকতে ইসলাম”। ইসলামী শরীয়তের কোথাও নির্দিষ্ট করে একটি দিনকে “ইয়াওমে শওকতে ইসলাম” হিসেবে বলা হয়নি। সউদীদের খাছ বন্ধু বলেই কি জামাতে মওদুদীদের এমন ঘোষণাকে বিদয়াত বলা হলোনা?

(৭) প্রতি বৎসর সউদীরা ‘ইয়াওমুল ওয়াতানি” নামে নির্দিষ্ট একটি দিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে। বিভিন্ন মিডিয়াতে এ উপলক্ষে বিশেষ প্রোগ্রাম প্রচার করা হয়। সেদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মানুষ কোনোদিন শুনেনি যে, আজ পর্যন্ত সউদী মৌলুভীরা এভাবে একটি দিন জাতীয় দিবস পালন করাকে বিদয়াত বলেছে। ইসলামী ইতিহাসে মদীনা শরীফ-এ ইসলামী খিলাফত কায়িম হলেও ‘ইয়াওমুল ওয়াতানি” নামে কোনো দিবস পালনের রেওয়াজ চালু করা হয়নি। তাহলে সউদীদের এ দিবসকে বিদয়াত বলে ফতওয়া দেয়া হচ্ছেনা কেনো?

(৮) কয়েক বৎসর ধরে সউদী বাদশাহ আব্দুল্লাহ কাফির মুশরিক হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইহুদীসহ বিভিন্ন বিজাতি-বিধর্মীদেরকে নিয়ে আন্তঃধর্ম সম্মেলন করে যাচ্ছে। সেখানে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমেশে আন্তরিক মুহব্বতের সাথে চলার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। ইসলামী শরীয়তের কোথাও কি মু’মিন মুসলমানদের জন্য বিধর্মী-বিজাতিদের সাথে মিল মুহব্বত করে, আন্তঃধর্ম সম্মেলন করে চলার জন্য বলা হয়েছে? সউদী উচ্ছিষ্টভোগী মৌলুভীরা এতে অংশগ্রহণ করে বলেই কি এটাকে বিদয়াত হারাম বলে বর্জন করা হচ্ছেনা?

(৯) নর্থ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ওহাবী বিদয়াতীদের বিভিন্ন সংগঠন যেমন-ওঝঘঅ, ওঈঘঅ, ঈঅওজ সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান বাৎসরিক কনভেনশনের আয়োজন করে। সেখানে বয়ান শুনতে হলে টিকিট করতে হয়। এভাবে কনভেনশনের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করে ইসলামী কথাবার্তা শুনানোর পদ্ধতি ইসলামী শরীয়তের কোথাও বর্ণিত নেই। অতএব, এটাকে বিদয়াত বলে পরিত্যাগ করা হবেনা কেনো?
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট