আর মীলাদ মাহফিলে উক্ত বাদশাহ্ প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করতেন। এ টাকা-পয়সা খরচ করাকে তারা অপচয় সাব্যস্ত করে তাঁকে ফাসিক বলে যা অবশ্যই অগ্রহণীয় ও নিন্দনীয়।
দানশীলতার ফযীলত
------------------------
অথচ মহান আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দান-খয়রাত করা সম্পর্কে অনেক তাকিদ করেছেন। সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি আমার নিকট উহুদ পরিমাণ স্বর্ণও থাকে তবে আমি তখনিই সন্তুষ্ট হবো যখন তিনদিন অতিবাহিত না হতেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়; এর সামান্য পরিমাণ ব্যতীত যা আমি আমার দেনার জন্য রাখি।” (পবিত্র বুখারী শরীফ)
“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখনই আল্লাহ্ পাক-এর বান্দাগণ ভোরে উঠে, আকাশ হতে দু’জন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তাঁদের একজন বলেন, আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি দানশীলকে প্রতিদান দিন এবং অপরজন বলেন, আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি কৃপণকে সর্বনাশ করুন।” (পবিত্র বুখারী শরীফ ও পবিত্র মুসলিম শরীফ)
“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ পাক বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান করো, আমি তোমাকে দান করবো।” (পবিত্র বুখারী শরীফ ও পবিত্র মুসলিম শরীফ)
“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দানশীল ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর নিকটে, বেহেশতেরও নিকটে, মানুষেরও নিকটে অথচ দোযখ থেকে দূরে এবং কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক হতে দূরে, বেহেশত হতেও দূরে, মানুষ হতেও দূরে অথচ দোযখের নিকটে। নিশ্চয়ই মূর্খ দানশীল কৃপণ আবেদ অপেক্ষা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট অধিক প্রিয়।” (পবিত্র তিরমিযী শরীফ)
“হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এ দু’টি স্বভাব কোন মু’মিনের মধ্যে এক সাথে হতে পারেনা-কৃপণতা ও খারাপ আচরণ। (পবিত্র তিরমিযী শরীফ)
“হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বেহেশতে প্রবেশ করবেনা-প্রতারক, কৃপণ এবং যে ব্যক্তি দান করে খোঁটা দেয়।” (পবিত্র তিরমিযী শরীফ)
“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দানশীলতা বেহেশতের একটি বৃক্ষস্বরূপ। যে ব্যক্তি দানশীল সে যেন তার একটি শাখা ধরেছে আর শাখা তাকে ছাড়বে না; যে পর্যন্ত না তাকে বেহেশতে পৌছিয়ে দেয়। এবং কৃপণতা হচ্ছে দোযখের একটি বৃক্ষ। যে ব্যক্তি কৃপণ সে যেন তার একটি শাখা ধরেছে আর শাখা তাকে ছাড়বে না; যে পর্যন্ত না তাকে দোযখে পৌছিয়ে দেয়।” (পবিত্র বায়হাক্বী শুয়াবুল ঈমান শরীফ)
আর খাছ করে মহান আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত ও মীলাদ মাহফিল উপলক্ষ্যে খরচ করা মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির কারণ।
মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, “যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তারা যেন আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে সন্তুষ্ট করে। তাঁরাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার।” (পবিত্র সূরা তওবা/৬২)
পবিত্র হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لايومن احدكم حتى اكون احب اليه من
والده وولده والناس اجمعين.
অর্থঃ- “তোমাদের কেউ মু’মিনে কামিল হতে পারবেনা যতক্ষণ না সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি এবং অন্যান্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশী মুহব্বত করবে।”
অপর এক পবিত্র হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من ماله ونفسه
অর্থঃ- “তার মাল ও জান হতেও যতক্ষণ পর্যন্ত বেশী মুহব্বত না করবে।”
এর বাস্তব উদাহরণ হযরত ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ রেখে গেছেন। যেমন, আফযালুন্ নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একবার রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আল্লাহ্ পাক-এর রাস্তায় দান-খয়রাত করার জন্য নির্দেশ দিলেন। (সৌভাগ্যবশতঃ) সে সময় আমার কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ ছিলো। তখন আমি (মনে মনে) বললাম, (দানের প্রতিযোগিতায়) যদি আমি কোন দিন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উপর জয়ী হতে পারি তবে আজকের দিনেই জয়ী হবো। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, অতঃপর আমি আমার সমস্ত মালের অর্ধেক নিয়ে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি আপনার পরিবার-পরিজনের জন্য কি (পরিমাণ) রেখে এসেছেন? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে যা কিছু ছিলো তিনি সমূদয় নিয়ে উপস্থিত হলেন। এবার রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! পরিবার-পরিজনের জন্য আপনি কি রেখে এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রেখে এসেছি। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তখন আমি (মনে মনে) বললাম, আর আমি কখনও কোন ব্যাপারে তাঁর উপর জয়ী হতে পারবো না।” (পবিত্র তিরমিযী শরীফ, পবিত্র আবূ দাউদ শরীফ ও পবিত্র মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীস শরীফ থেকে জানা গেল যে, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজের ও পরিবারের জন্য কোন কিছু অবশিষ্ট না রেখে তাঁর সবকিছু মহান আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য দান করে দিয়েছেন; এবং মহান আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এ দান সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করেছেন এবং বে-মেছাল দানের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে কোন ব্যক্তি আমাদের প্রতি যেই কোন প্রকারের ইহসান করেছে আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইহসান ব্যতীত। তিনি আমাদের প্রতি যে ইহসান করেছেন তার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালাই ক্বিয়ামতের দিন তাঁকে প্রদান করবেন। আর কারো ধন-সম্পদ আমাকে ততখানি উপকৃত করেনি যতখানি উপকৃত করেছে হযরত আবু বকর ছিদ্দীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ধন-সম্পদ। আর আমি যদি আল্লাহ্ পাক-ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। জেনে রেখ! নিশ্চয়ই (তোমাদের সঙ্গী) অর্থাৎ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহু তায়ালার বন্ধু।” (পবিত্র তিরমিযী শরীফ)
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর সমস্ত মাল-আসবাব ব্যয় করার কারণে যদি বলা হয় যে, তিনি অপচয় করেছেন (নাউযুবিল্লাহ্) তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা কাট্টা কুফরী হবে এবং এরূপ কুফরী আমলকারী অবশ্যই মুসলমান থেকে খারিজ, কাট্টা মুরতাদ ও কাফিরের অন্তর্ভূক্ত।
হযরত উসমান যু্ন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দান করা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, খলীফাতু রসূলিল্লাহ্, খলীফাতুল মুললিমীন, আফযালুন্ না’ছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফত কালে একবার পবিত্র মদীনা শরীফে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। বাইতুল মালেও কোন খাদ্য নেই। ঠিক সেই মুহুর্তে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর একটি বাণিজ্য কাফেলা এক হাজার উট বোঝাই করা খাদ্য নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে উপস্থিত হল। ব্যবসায়ী লোকজন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট আসতে লাগলো খাদ্য কিনে নেয়ার জন্য। কেউ স্বাভাবিক দামে, কেউ দ্বিগুণ দামে, কেউ তিন গুণ, চার গুণ দামেও খাদ্য কেনার জন্য প্রস্তুত। তবুও তিনি তাদের নিকট খাদ্য দিতে রজি হলেন না। তিনি বললেন, আমার এ খাদ্য নিতে হলে কমপক্ষে দশগুণ মূল্য দিতে হবে। কারণ তোমাদের আগে একজন আমাকে দশগুণ মূল্য দেয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। তখন তারা বললো, আমাদের আগে কে এত অধিক মূল্য খাদ্যদ্রব্য খরিদ করার কথা বললো। পবিত্র মদীনা শরীফে তো আমরাই বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা আরো আলোচনা করলো যে, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পূর্বে তো কখনো বেশী মূ্ল্যের জন্য দর কষাকষি করেননি। তবে আজকে কেন করছেন ইত্যাদি। এরপর ব্যবসায়ীরা বললো, ঠিক আছে, যে আপনাকে বেশী মূল্য দেয় তাকেই আপনি মাল দিয়ে দিন। হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে খবর পাঠালেন যে, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর সমস্ত খাদ্য দ্রব্য অর্থাৎ এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য যা সিরিয়া থেকে এসেছে তা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির জন্য দান করে দিলেন। (সুবহানাল্লাহ্) তখন খলীফার তরফ থেকে সমস্ত খাদ্যগুলো পবিত্র মদীনা শরীফে বন্টন করে দেয়া হয় এবং তাতে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে যায়।
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেদিন এই দান করলেন সে রাতে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবুজ রং-এর খুব দামী পোশাক পরিধান করতঃ বোরাকে আরোহণ করে কোথাও যাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি জান না, আজ হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফবাসীকে এক হাজার উট বোঝাই খাদ্য যে দান করেছেন যার কারণে মদীনা শরীফের দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেছে? তাই তাঁর দানে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক আজকে বেহেশতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেছেন। আমি সেই মেহমানদারীতে শরীক হওয়ার জন্য যাচ্ছি।” (সুবহানাল্