১. কুরআন শরীফে মীলাদের অস্তিত্ব:
১ম আয়াত: আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ ফরমান-
ياايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين قد بفضل الله وبرحمته فبذلك فليرحوا هوخير مما يجمعون
" হে মানবকুল; তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের ব্যধির নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। হে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি বলুন: আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার দয়ায় সুতরাং, এতে তাদের আনন্দিত হওয়া উচিৎ। এটিই উত্তম সে সমুদ্বয় থেকে যা তারা সঞ্চয় করেছে।
- সূরা ইউনুছ ৫৭ ,৫৮
অত্র আয়াতে কারিমায় فضل الله ورحمة الله এর জন্য আনন্দ প্রকাশ করতে বলা হয়েছে এবং এটি সমস্ত আমলের চেয়ে ভাল বলা হয়েছে এখন বিচার্য এই যে, فضل ورحمة দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
হাফেজে হাদীস আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্বনন্দিত তাফসীর الدر المنثور এর মাঝে একই সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন-
المرار بفضل الله العلم ورحمته محمد صلى الله عليه وسلم قال تعالى وما ارسلناك الارحمة للعالمين روح المعانى
তে আল্লামা নিছারুদ্দীন মামমুদ আলুসী ঐরূপ বর্ণনা করেছেন, তাফসীরের বর্ণনায় স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তোমরা মহামূল্যবান সম্পদ পেয়েছ এ জন্য ঈদ পালন কর বা খুশি উদ্যাপন কর।
২য় আয়াত:
واذكروا نعمت الله عليكم اذ كنتم اعداء فالف بين فلوبكم
"আর তোমরা সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদেরকে আল্লাহ দান করেছেন।
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত- ১০৩) আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে যত নিয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে সর্বোত্তম নিয়ামত হলো হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
হযরত ওমর আলাইহিস সালাম ঘোষণা করেছেন -
عن ابن عباس رض الله عنهما الذين بدلوا نعمة الله كفرا؟ قال هم والله كفار قريش قال عمرو هم قريش ومحمد صلى الله عليه وسلم نعمة الله
আয়াতে “যা” বলতে মক্কার কুরাইশ কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে আর نعمة الله দ্বারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুঝানো হয়েছে।
(বুখারী ২/২৫৬)
ঈদের মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপন করা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ।
যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم
" তোমরা আল্লাহর কথা মান্য কর এবং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা সৎ শাসক তথা ইমাম, মুজতাহিদ সৎ শাসক শরীয়তের আইনজ্ঞ মাজহারের ইমামগণ, তরীকতের ইমামগণ তাদের আনগত্য কর।"মূলত: আল্লাহর হাবীব আল্লাহর মহান নেয়ামত।
ইরশাদ হচ্ছে- وان تعدوا نعمة الله لاتحصوها
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত সাহল বিন সাদ তাসতুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, এখানে نعمت الله দ্বারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য।
আরো ইরশাদ হচ্ছে-
واشكروا نعمت الله ان كنتم اياه تعبدون
অত্র আয়াতের নিয়ামতের শুকরিয়ার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন মিলাদ ও কিয়াম উদ্যাপন করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয়। সুতরাং এটা আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে মহান ইবাদতে পরিণত। এটা ইবাদতে বিদয়াত নয়। যদিও বাতিল ফিরকার ধর্মে বেদয়াত বলা হয়।
২. হাদীসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মদিনে রোজা রাখা:
عن ابى قتادة الانصارى رض انه صلى الله عليه وسلم سئل عن صيام يوم الاثنين قال ذلك ولدت فيه وانزلت فيه (رواه سلم مصنف ابى شيبة)
হযরত আবু কাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সোমবার শরিফে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, এদিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার প্রতি নবুয়াত উত্তীর্ণ হয়েছে।
- মুসলিম শরীফ ৩৬৪ পৃ.
- মুসনাদে আবি শায়রা
৩. সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন উনাদের মধ্যে ঈদে মীলাদুন্নবী উদ্যাপনঃ
যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতো ফযীলত তাহলে সাহাবায়ে কেরামগণ কেন পালন করেন নাই?
জবাবে বলব, আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি سبل الهدى فى مولد المصطفى কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করেন-
عن ابن عباس رض انه كان يحدث ذات يوم فى بينه وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون يحمدون الله ويصلون عليه فإذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم حلت لكم شفاعتى
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, একদা তিনি নিজঘরে সমবেত সাহাবীগণকে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের ঘটনা সমূহ শুনাচ্ছিলেন, এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহর হামদ পাঠ করছিলেন। এমতাবস্থায় হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন এবং উনাদের অবস্থা দেখে বললেন" আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।"
উক্ত কিতাবে আরো আছে-
عن ابى درداء رض انه مع النبى صلى الله عليه وسلم انى بيت اعمر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلعم لابنائه وعشرته ويقول هذا اليوم فقال عليه السلام ان الله فتح لكم ابواب الرحمة والملائكة كهم يستفران الله من فعل فعلك نيل نجاتك (التنوير مولدو التوفير)
হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আবু আমের আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাসায় উপস্থিত হয়ে দেখলেন, তিনি তার সন্তানাদী, আত্মীয়-স্বজন, জাতি-গোষ্ঠী, পাড়া প্রতিবেশীদেরকে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, এই দিন, এই দিন অর্থাৎ এই দিনে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার আগমন করেছেন। এতদর্শনে ও শ্রবণে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন," নিশ্চয় আল্লাহ পাক তার রহমতের দরজা আপনাদের জন্য খুলে দিয়েছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনাদের জন্য ক্ষমা চাচ্ছন এবং বলছেন যে আপনাদের মত এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মত তারাও নাজাত পাবেন।"
এ হাদীস দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হলো, সাহাবায়ে কেরামদের যুগে নবীর মিলাদ-জীবনী বৃত্তান্ত আলোচনা হতো। আর সাহাবায়ে কিরাম যা করেননি তাই বিদআত হতে পারেনা।
যেমন হাদীস সংকলন, কুরআন কারীমের হরকত যুক্ত করণ, নাহু সরফ, ইত্যাদির জ্ঞান অর্জন সব কিছুই এমন আমল যা সাহাবায়ে কিরাম করেননি। তাই তা বিদআত হতে পারে না হলেও তা উত্তম বিদআত।