পবিত্র
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ধারাবাহিক পোষ্ট সমূহে এ
পর্বে হাদীসের আলোকে আলোচনা করা হবে। মিলাদের ব্যবহারিক-অভিধানিক অর্থ জানা
প্রয়োজন। অভিধানে মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মের সময় কাল এবং ব্যবহারিক অর্থ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের খুশিতে উনার মুযেজা, বৈশিষ্ট্য, জীবনী প্রভৃতি বয়াণ করা। অগণিত হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা যায়, রাসুলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু-গণ রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মীলাদ বা জন্ম বৃত্তান্তের
আলোচনা করেছেন। রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে স্বীয় মীলাদ বা জন্ম
দিবস পালন করেছেন। নিম্নে কিছু নমুনা উপস্থিত করলাম।
১. عَنْ اَبِى قَتَدَةَ الاَنْصاَرِى رَضِى الله عَنهُ اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سءل عَنْ صَوْمِ يَوْم الاِ ثْنَيْنِ قَلَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيْهِ بُعِثْتُ اَوْاُنْزِلَ عَلَىَّ فِيْهِ-
অর্থাৎ
হযরত আবু কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্নিত রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামার
দরবারে আরজ করা হলো তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরে
নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেন, এই দিনে আমি জন্ম গ্রহন করেছি, এই দিনেই আমি প্রেরিত হয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয়।
·
সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা,
·
মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ:,
·
মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ:,
·
হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:]
এ ছাড়াও
অন্য হাদিস হতে প্রমাণিত স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের
জন্মের খুশির উদ্দেশ্যে ছাগল যবাহ করেছিলেন। বিরোধী সম্প্রদায়ের নেতারা বলে থাকে
এই হাদীসগুলোকে নাকি আমরা মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষে
দলীল হিসেবে পেশ করি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে আমরা নই, বরং
আগেরকার যুগের খ্যতিমান আলেমগণ মিলাদের পক্ষে দলীল হিসেবে প্রয়োগ করেছিলেন।
·
৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল হাবিলুল ফাতোয়া ১ম
খন্ড ১৯৬ পৃঃ,
·
মিলাদুন্নবী হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষে উনার রচিত
স্বীয় কিতাব হুস্নুল মাকাসিদ ফি আমালিল মোলিদ ৬৫ পৃঃ,
·
ইমাম নাব হানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন ২৩৭ পৃঃ ইত্যাদি
গ্রন্থসমূহ] তাহলে বোঝা গেল মিলাদ শরীফ পালন করা সুরা ইউনুসের অনুগ্রহ ও রহমত বলতে কি কোরআন শরীফ বুঝায় নাকি
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুন্নাত।
২.
প্রশিদ্ধ হাদিসে বণির্ত হযরত উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম বণর্না
করেছেন যে, রসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু
আনহু আমার নিকট নিজ নিজ মিলাদ শরীফের বণর্না করেছেন (ইমাম বায়হাকী এই বণর্না কে
হাসান বলেছেন)।
·
আল যামুল কাবীর লিত তাবরাণী ১ম খন্ড ৫৮ পৃঃ,
·
মযমাঊল যাওয়াঈদ ৯ম খন্ড ৬৩ পৃঃ
৩. হুযুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের মিলাদ বণর্না করে বলেন অবশ্যই আমি
আল্লাহর নিকট খতামুন নাবিয়্যিন মনোনিত হয়েছি ওই সময় যে সময় হযরত আদম আলাইহিস সালাম
মাটি ও পানীতে মিশ্রিত অবস্থায় ছিল। আমি তোমাদের কে আবার প্রাথমিক অবস্থার খবর
দিচ্ছি-আমি হচ্ছি হযরত আদম আলাইহিস সালামের দুয়া ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের খুশির
বার্তা এবং আমার মাতার স্বপ্ন যা তিনি আমার জন্মের সময় দেখেছিলেন যে উনার মধ্য হতে
একটি নুর নিগর্ত হয়েছে যার দ্বারা শাম দেশের বহু মহল রওশন হয়ে গেছে ।
·
মিশকাতুল মাসাবিহ ৫১৩ পৃঃ,
·
তারিখে মাদিনা ও দামাশক – ইবনে আশাকির ১ম খণ্ড ১৬৮ পৃঃ,
·
কানযুল উম্মাল ১১খন্ড১৭৩ পৃঃ,
·
মুসনাদে ইমাম আহমদ ৪ খন্ড ১৬১ পৃ,
·
আল মুজমাল ক্বাদির ১৮ খন্ড ২৫৩ পৃঃ,
·
মুসনাদ আফযার হাদিস নং ২৩৬৫,
·
তাফসির দুররে মান্সুর ১ম খন্ড ৩৩৪ পৃঃ,
·
মাওয়ারেদুল জাম্মান ১ খন্ড ৫১২ পৃঃ,
·
সহী ইবনে হাব্বান ৯ম খন্ড ১০৬ পৃঃ,
·
আল মুস্তাদ্রাক লিল হাকিম ৩য় খণ্ড ২৭ পৃঃ ,
·
আল বেদায়া অয়ান নেহায়া ২য় খণ্ড ৩২১ পৃঃ,
·
মাযমাউল যাওয়ায়েদ ৮ম খন্ড ৪০৯ পৃ প্রভৃতি]
৪. হুযুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর চাচা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আসলেন। কারণ তিনি যেন হুযুর করীম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশ বুনিয়াদ সম্পর্কে বিরুপ কিছু মন্তব্য শুনেছেন। [তা
হুযুর করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে অবহিত করেন] তখন হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বর শরীফ এর উপর আরোহণ করেন। (বরকতময় ভাষণ
দেওয়ার উদ্দেশ্যে), অতঃপর তিনি সাহাবা কেরামগণের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি কে?” উত্তরে উনারা বলেন, “আপনি
আল্লাহর রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”। তখন হুযুর আকরাম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, “আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল
মুত্তালিব আলাইহিস সালাম পুত্র মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মানব-দানব সবই সৃষ্টি
করেন। এতে আমাকে উত্তম পক্ষের (অর্থাৎ মানবজাতি) মধ্যে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তাদের
(মানবজাতি)-কে দু’সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেন (অর্থাৎ আরবীয় ও
অনারবীয়) এতেও আমাকে উত্তম সম্প্রদায়ে (আরবী) সৃষ্টি করেন। অতঃপর আরব জাতিকে
অনেক গোত্রে বিভক্ত করেন। আর আমাকে গোত্রের দিক দিয়ে উত্তম গোত্রে (কোরাইশ)
সৃষ্টি করেন। তারপর তাদেরকে (কোরাইশ) বিভিন্ন উপগোত্রে ভাগ করেন। আর আমাকে
উপগোত্রের দিক দিয়ে উত্তম উপগোত্রে (বনী হাশেম) সৃষ্টি করেন। সুতরাং আমি তাদের
মধ্যে সত্তাগত, বংশগত ও গোত্রগত দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ।
·
তিরমিযী, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা নং-২০১;
·
মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং-৫১৩]
·
অন্য সূত্রে বর্ণীত এই সম্পর্কিত আরও হাদীসের
জন্য দেখুন জামে তীরমিযী ২য় খন্ড ২০১ পৃঃ,
·
মুসনাদে ইমাম আহমদ ১ম খন্ড ৯ পৃঃ,
·
দালায়েলুল নবুওত বায়হাকী ১ম খন্ড ১৬৯ পৃ,
·
কানযুল উম্মাল ২য় খন্ড ১৭৫ পৃঃ]
উপরের
হাদীসসমূহই হল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম বৃত্তান্ত
সম্পর্কিত হাদীস। আর এই হাদীসের বিষয়বস্তুই মূলত মিলাদে আলোচনা করা হয়। আমরা এসব
আলোচনা করলেই বিরোধী সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের ‘ভন্ড’, ‘বিদ’আতি’ ইত্যাদি খেতাবে ভূষিত করে। আমাদের খুব জানতে ইচ্ছা হয় স্বয়ং হুযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবীগণ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন
জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করতেন তখন এই সম্প্রদায়ের নেতারা কি ফতওয়া দিবে? অগণিত হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা যায়, রাসুলে
করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-গণ
রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মীলাদ বা জন্ম বৃত্তান্তের আলোচনা
করেছেন।