আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হল নিয়ামতের ওপর খুশি উদযাপন করা। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-
قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
অর্থ- ‘(হে রাসুল) আপনি বলুন, (সবকিছু) আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তারা (মুসলমান) যেন খুশি উদযাপন করে। তারা যা সঞ্চয় করছে তা থেকে এটিই শ্রেষ্ঠতর।’
এ আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন খুশি উদযাপনের দুটি উপকরণ সাব্যস্ত করেছেন। একটি হল (فضل) আর অপরটি হল (رحمة)।
এতদুভয়ের মর্ম কী- এর ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত তাফসির বিশারদ -
১.
- আল্লামা মাহমূদ আলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি ,
- ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
- ইমাম আবু হাইয়ান আনদালূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্ব-স্ব তাফসীর গ্রন্থে তাফসিরকারকদের শিরোমণি হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এখানে (فضل) দ্বারা জ্ঞান এবং (رحمة) দ্বারা হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝানো উদ্দেশ্য।
২. আল্লামা ইবনু জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
ان فضل الله العلم ورحمته محمد صلى الله عليه وسلم رواه الضحاك
অর্থাৎ- ‘নিশ্চয় আল্লাহর ‘ফদ্বল’ হল জ্ঞান আর ‘রহমত’ হল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
যা ইমাম দাহ্হাক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন।
৩. আল্লামা তাবরিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লিখিত আয়াতের অর্থ করতে গিয়ে বলেন-
فافرحوا بفضل الله عليكم ورحمته لكم بإنزال هذا القرآن وإرسال محمد إليكم فانكم تحصلون بهما نعيما دائما مقيما هو خير لكم من هذه الدنيا الفانية
অর্থাৎ-‘তোমাদের প্রতি হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করে এবং কুরআন অবতীর্ণ করে আল্লাহ তায়ালা তোমদের ওপর যে দয়া ও করুণা করেছেন, তাতে তোমরা খুশি উদযাপন কর। কেননা উভয়ের (ফদল ও রহমত) মাধ্যমে নিশ্চয় তোমরা চিরস্থায়ী নিয়ামত অর্জন করবে, যা এ নশ্বর পৃথিবী থেকে তোমাদের জন্য অধিকতর শ্রেয়।’
৪. ইমাম বাক্বির রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রখ্যাত মুফাসসির হযরত ক্বাতাদাহ্ এবং হযরত মুজাহিদ রনদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা প্রমুখ থেকে বর্ণনা করেন যে-
(فضل الله) দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে।
উল্লিখিত আয়াতে ‘রহমত’ দ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা বুঝানো হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
কারণ আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেছেন-
رحمة للعالمين وما أرسلناك إلا ‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।’
৫. প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা মাহমূদ আলূসী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখের মতে ‘রহমত’ হল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি নাম।এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। এতে কারো দ্বিমত নেই।
তাই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
ولقد من الله على المؤمنين إذ بعث فيهم رسولا من أنفسهم
অর্থাৎ- ‘আল্লাহ মুমিনদের ওপর অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের নিকটি রাসূল প্রেরণ করেছেন।’
সুতরাং বুঝা গেল যে, রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য বড় অনুগ্রহ ও নিয়ামত। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ বড় অনুগ্রহ তথা রাসূলুল্লাহকে পাবার ওপর খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনাকে পাবার দিন হল ‘মিলাদুন্নবী’ এবং ‘মিলাদুন্নবী’ কে কেন্দ্র করে খুশি উদযাপন করাই হল ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ যা পালন করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন।
অতএব কুরআনের আয়াত থেকে প্রমাণিত হল যে রাসূলের জন্ম উপলে খুশি উদযাপন করা আল্লাহর নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। খুশি উদযাপনের েেত্র সকল বৈধ পন্থা গ্রহণ করা শরিয়ত সম্মত।