মিলাদ-ক্বিয়াম সমস্ত নবি-রাসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত

এ পৃথিবীতে যত নেয়ামত রয়েছে বা এসেছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে রাসুলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম। আল্লাহর এ নেয়ামত ও নুগ্রহকে কেন্দ্র করে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মীলাদ বা জন্ম তথা দুনিয়ায় শুভাগমনের কথা আলোচনা করেছেন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নিজে। এর পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও আনন্দ করার নির্দিশও তিনি নিজে দিয়েছেন।
 যেমনঃ 
  • ১. নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট তোমাদের থেকে এমন একজন রাসূল এসেছেন যাঁর নিকট তোমাদের দুঃখ-কষ্ট দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী এবং মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়াময়। [সূরা তাওবা ১১৮] 
  • ২. হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম  মহান আল্লাহ তা’আলা এর দরবারে ফারিয়াদ জানান, “ওহে আল্লাহ পাক তাঁদের মধ্যে তাঁদের হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি আপনার বাণীসমূহ তাঁদেরকে পাঠ করে শুনাবেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিয়ে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনিও অতিশয় পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী” [সূরা বাকারা ১২৯] 

এখানে দেখা যায় হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম  রাসূলুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাবের ৪ হাজার বছর পূর্বেই মুনাজাত আকারে তাঁর আবির্ভাব, তাঁর সারা জীবনের কর্ম চাঞ্চল্য ও মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধির ক্ষমতার বর্ণনা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিলাদের সারাংশ পাঠ করেছেন এবং এই মুনাজাত বা মিলাদ দন্ডায়মান অবস্থায়ই করেছেন। 
ইবন তায়্যিমিয়ার ছাত্র ইমাম ইবন কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ 'আল-বিদায়্যা ওয়ান নিহায়্যা' তে লিখেছেন "উক্ত দোয়া করার সময় ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান অবস্থায় ছিলেন"। [আল-বিদায়্যা ওয়ান নিহায়্যা, ২য় খন্ড, পৃ ২৬১] 
এখান থেকে খুব সহজেই বুঝা যায়, বর্তমানে মিলাদ শারীফে রাসূল পাকের আগমনের যে বর্ণনা দেয়া হয় তা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম  এর দোয়ার সামান্য অংশ মাত্র। সুতরাং আমাদের মিলাদ শারীফ পাঠ ও কিয়াম করা প্রকৃতপক্ষে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর সুন্নাতি তরিকা। 
  • ৩. যখন ঈসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাইলকে বললেন, আমি আল্লাহ এর রাসূল হিসেবে তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি। তার সঙ্গে আমার সাথে যে তাওরাত এসেছে তার প্রতি আমার সমর্থন রয়েছে এবং আমার পর যে রাসূল আসবেন তার নাম হবে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । ঐ রাসূলের সুসংবা নিয়ে তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি। আর যখন সে রাসূল তাদের নিকট দলীলসমূহ সহকারে আসলেন, তখন তারা বলতে লাগল এটা প্রকাশ্য যাদু। [সূরা ছফ ৬] 

হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম  এর ভাষণ দন্ডায়মান অবস্থায় হত। আর এটাই ভাষণের সাধারণ রীতিও বটে। ইমাম ইবন কাসীর রহমতুল্লাহি আলআইহি  তাঁর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ 'আল-বিদায়্যা ওয়ান নিহায়্যা' তে উল্লেখ করেন "ঈসা আলাইহিস সালাম দন্ডায়মান অবস্থায় (কিয়াম) অবস্থায় তাঁর উম্মাতহাওয়ারীদেরকে নবীজীর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বক্তৃতা করেছিলেন"। [আল-বিদায়্যা ওয়ান নিহায়্যা, ২য় খন্ড, পৃ ২৬১]
 সুতরাং মিলাদ ও কিয়াম হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর সুন্নাত এবং তা নবী যুগের ৫৭০ বছর পূর্ব হতেই।
 ৪. নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে মহান ‘নূর’ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ষ্পষ্ট কিতাব (আল কুর’আন) এসেছে। [সূরা মায়িদা ১৫] 
৫. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমস্ত নবী তথা হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত যত নবী দুনিয়ায় আগমণ করেছেন, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি মজলিস বা সভা করেছেন। এই মজলিসে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর আলাইহিমুস সালাম উপস্থিত ছিলেন। শুধুমাত্র তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর বিলাদাত, শান ও মান অন্যান্য নবীগণের সামনে তুলে ধরে মীলাদ বা দুনিয়ায় আগমনের বাণী শোনানো রাসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সকল নবী আলাইহিমুস সালাম এর পক্ষ থেকে ঈমান গ্রহণের পক্ষ নিয়ার জন্য। 
  • ৪.আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেই ঘটনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন - "স্মরণ করুন যখন আল্লাহ নবীগণের নিকট থেকে এমর্মে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমি আপনাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করব। তারপর তোমাদের নিকট তাশরীফ আনবেন রাসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  । যিনি আপনাদের কিতাবগুলো সত্যায়ন করবেন। তখন আপনারা নিশ্চয়ই তাঁর উপর ঈমান আনবেন এবং নিশ্ছয়ই তাঁকে সাহায্য করবেন। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করলেন, আপনারা কি স্বীকার করলেন এবং এ সম্পর্কে আমার গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করলেন? সবাই আরজ করলেন, আমরা স্বীকার করলাম। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করলেন, আপনারা একে অপরের উপরের সাক্ষী হয়ে যান। আমি নিজেও আপনাদের সাক্ষীদের মধ্যে রইলাম। সুতরাং যে কেউ এরপর ফিরে যাবেন, তবে তিনি ফাসিক"। [সূরা আল ইমরান ৮১, ৮২] 

উপরে উল্লিখিত আয়াতসমূহের মাধ্যমে মিলাদুন্নাবী বা রাসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর দুনিয়ায় শুভাগমনের কথা তথা মিলাদের আলোচনা করা হয়েছে। বস্তুত নবীজীর সম্মানে এটাই ছিল সর্ব প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং এর উদ্যোক্তা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে। সমস্ত নবীগণ খোদার দরবারে দন্ডায়মান থেকে মিলাদ শুনেছিলেন এবং কিয়াম করেছিলেন। কেননা খোদার দরবারে বসার কোনো অবকাশ নেই। পরিবেশটি ছিল খুবই আদবের। মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা এবং কিয়ামকারীগণ ছিলেন আম্বিয়ায়ে কিরাম।