ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আবু লাহাব ।

সহীহ বুখারী শরিফে রয়েছে-
فلما مات ابو لهب أريه بعض أهله شر حاله قال له : ماذا لقيت قال ابو لهب لم الق بعدكم غير أني سقيت في هذه بعتاقي ثوبية

  • অর্থাৎ ‘আবু লাহাবের মৃত্যুর পর হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বপ্ন দেখানো হল যে, সে খারাপ অবস্থায় আছে। স্বপ্নদ্রষ্টা তাকে বললেন , তোমার কী অবস্থা? আবু লাহাব বলল, আমি অত্যন্ত আযাবের মধ্যে আছি; তবে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা আলাইহাস সালাম উনাকে মুক্তি দেয়ার কারণে (সেদিন তথা সোমবার) আমাকে সুমিষ্ট পানি পান করানো হয়।’

ইমাম ইবনু হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ,  ইমাম সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি  থেকে বর্ণনা করেন-
إن العباس : قال لما مات ابو لهب رأيته في منامي بعد حول في شر حال فقال ما لقيت بعدكم راحة إلا أن العذاب يخفف عني كل يوم اثنين قال ذلك أن النبي صلى الله عليه وسلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها
  • অর্থাৎ ‘হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখেছি যে, সে খুব খারাপ অবস্থায় আছে। অতঃপর সে বলল; তোমাদের ছেড়ে আসার পর আমি কোন শান্তি পাইনি; তবে প্রতি সোমবার আমার শাস্তি কিছুটা কমানো হয়। কারণ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন আর আবু লাহাবের দাসী হযরত সুয়াইবা আলাইহাস সালাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত গ্রহণের সুসংবাদ আবু লাহাবকে দিলে সে তাকে (আনন্দিত হয়ে) স্বাধীন করে দিয়েছে।’

উল্লিখিত হাদিছ থেকে কয়েকটি বিষয় বুঝা যায়-

  1. আবু লাহাব হল প্রথম সারির কাফির, যার নিন্দায় আল্লাহ তায়ালা সূরা লাহাব অবতীর্ণ করেছেন। এতদসত্ত্বেও সে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত ভাতিজা হিসেবে খুশি হয়ে তার দাসী  স্বাধীন করে দেয়ার কারণে কবরে তার শাস্তি প্রতি সোমবার কমানো হয়। ভাতিজা হিসেবে সে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত ওপর খুশি হবার কারণে যদি তার শাস্তি কমানো হয়, তাহলে মুমিনরা যদি আল্লাহর রাসূল যিনি সবচেয়ে বড় নিয়ামত তাঁর ওপর খুশি হয়, তাহলে উত্তম প্রতিদানের পরিমাণ কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
  2. কাফেরদের কোন সৎকাজের প্রতিদান পরকালে দেয়া হবে না। কারণ তাদের ঈমান নেই। এরপরও আবু লাহাবকে সৎকাজের প্রতিদান কিভাবে দেয়া হল তার উত্তরে ইমাম কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন-

العمل الصالح والخير الذي يتعلق بالرسول صلى الله عليه وسلم مخصوصا في ذلك كما أن ابا طالب ايضا ينتفع بتخفيف العذاب
  • অর্থ- ‘কাফেরদের সৎকাজ যেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র সাথে সম্পৃক্ত, সেগুলোর প্রতিদান দেয়া হয় যেমন আবু তালিব (রাসূলুল্লাহর খেদমতের কারণে) কম শাস্তি ভোগের মাধ্যমে উপকৃত হয়।’

একজন কাফেরের যদি এ প্রতিদান হয়, তাহলে একজন মুমিনকে কী প্রতিদান দেয়া হবে তা সহজেই বুঝা যায়।

  3. হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত ওপর খুশি হয়েছে আবু লাহাব। এ খুশি হওয়াটা অন্তরের বিষয়, যা প্রকাশের জন্য সে তার দাসীকে স্বাধীন করে দিয়েছে। মুমিনরাও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত ওপর খুশি হয়ে বিভিন্ন সৎকাজ যেমন কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে রাসূলুল্লাহর জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা, খানাপিনা খাওয়ানো, দান-সদকাহ প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করেন।
৪. যে কাজের মাধ্যমে পরকালে উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়, সে কাজ বিদয়াতে সাইয়্যিাহ বা মন্দ বিদয়াত কিংবা অবৈধ হতে পারে না; কারণ অবৈধ কাজে সওয়াব কিংবা উত্তম প্রতিদান নেই। একজন প্রথম সারির কাফের ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করে যেহেতু (পরকালে) উত্তম প্রতিদান পাচ্ছে, সেহেতু ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন নিঃসন্দেহে একটি উত্তম ও সওয়াবের কাজ।

এ হাদিছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনুয জাযরী আলাইহির রাহমাহ বলেন-
فاذا كان ابو لهب الكافر الذي نزل القرآن بذمه جوزى في النار بفرحة ليلة مولد النبي صلى الله عليه وسلم فما حال المسلم الموحد م أمة محمد صلى الله عليه وسلم بنشره مولده وبذل ما تصل اليه قدرته في محبته صلى الله عليه وسلم لعمري إنما يكون جزاء من الله الكريم أن يدخله بفضله جنات النعيم
  • অর্থাৎ ‘কাফের আবু লাহাব যার নিন্দায় কুরআনের একটি সূরা (সুরা লাহাব) অবতীর্ন হয়েছে সে যদি ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপনের কারণে কম শাস্তি ভোগ করে, তাহলে উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে সে মুসলিম ব্যক্তির কী প্রতিদান হতে পারে যে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করে এবং এ উপলে রাসূলূল্লাহর প্রেমে তার সামর্থ অনুযায়ী খরচ করে? আমার জীবনের কসম করে বলছি- দয়াময় আল্লাহর প থেকে তার প্রতিদান হল, আল্লাহ তাকে ‘জান্নাতুন নয়ীমে’ প্রবেশ করাবেন।’

উপরিউক্ত হাদিছ সম্পর্কে প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন-
  • “এ হাদিছ ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপনকারী এবং এর জন্য সম্পদ ব্যায়কারীদের প্রমাণ। আবু লাহাব যার নিন্দায় কুরআনের একটি সূরা (লাহাব) অবতীর্ণ হয়েছে সে যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্মের ওপর খুশি হয়ে তার দাসী (ছুয়াইবা) কে স্বাধীন করে দেয়ার কারণে শাস্তি কম ভোগ করে, তাহলে সে মুসলিমের কী অবস্থা হবে যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত ভালবাসা নিয়ে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করে এবং ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপনে সম্পদ ব্যায় করে? তবে মন্দ বিদয়াত যেমন নাচ, গান, হারাম বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা উচিত; কেননা এগুলোর কারণে (মিলাদুন্নবি উদযাপনের) বরকত পাওয়া যাবে না।”


আল্লামা আব্দুল হাই লাকনভী বলেন-
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্মের ওপর খুশি হবার কারণে আবু লাহাবের মত কাফেরের যখন শাস্তি কমে গেল, তাহলে রাসূলূল্লাহর উম্মতের মধ্যে যে রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি উদযাপন করবে এবং তার প্রেমে ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপনে সামর্থ অনুযায়ী খরচ করবে সে কেন সুউচ্চ মর্যদা পাবে না?’

উপরিউক্ত হাদিছসমূহ থেকে প্রমাণিত হল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্ম উপলে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করা শুধু বৈধ নয়; বরং অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহর সুন্নাত। কারণ তিনি নিজেও আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে ছাগল জবাই করে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করেছেন এবং প্রতি সোমবার রোযা রাখতেন। (চলবে)