সুরা ইউনুসের অনুগ্রহ ও রহমত বলতে কি কোরআন শরীফ বুঝায় নাকি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে

এক শ্রেণীর লোকেরা ফতওয়া দেয় মিলাদুন্নবী  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  পালন করা ‘শিরক’-‘বিদ’আত’-‘বিধর্মীদের নীতি’ ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব জানতে ইচ্ছা করে এদের মত ফতওয়াবাজেরা এই ক্ষেত্রে কি ফতওয়া দিবে! ! ! 
মীলাদুন্নবী বা রাসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর দুনিয়ায় আগমনের ঈদ বা আনন্দ উৎসব করার দলীল পবিত্র কুর’আনের এই আয়াতটি
 قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَ بِرَحْمَتِهِ فَبِذَالِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَا خَىْرٌ مِمَّا ىَجْمَعُوْنَ 
  • অর্থাৎ- "হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর “অনুগ্রহ” ও “রহমত” প্রাপ্তিতে তাঁদের মুমিনদের খুশি উদযাপন করা উচিত এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট"। [সুরা ঈউনূছ,আয়াত ৫৮] 
এখন এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা দেখব তাফসীরে কি বলা আছে ?
১. এই আয়াতের ব্যাখ্যা ৯ম শতাব্দী মুজাদ্দিদ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘আদ্দুররুল মনসূর’ এ উল্লেখ করেন, 
  • "হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, এখানে আল্লাহ এর “অনুগ্রহ” দ্বারা ইলমে দ্বীন এবং “রহমত” দ্বারা নবী কারীম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, হে হাবীব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতি রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি"। (আদ্দুররুল মনসূর পৃঃ ৩৩০ )

২. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলুসি রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর স্বীয় তাফসীরগ্রন্থে উল্লেখ করেন, 
  • "হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই ‘অনুগ্রহ’ হল ইলমে দ্বীন এবং ‘রহমত’ হল নবী কারীম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । (তাফসীর রুহুল মা’আনী ১১তম খন্ড, পৃঃ ১৮৩ ) 

সুতরাং আলোচ্য আয়াত এবং তাফসীরের মাধ্যমে বুঝা গেল, মিলাদুন্নবী বা রাসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর দুনিয়ায় শুভাগমনের কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজে আমাদের আনন্দ উৎসব করার আদেশ দিয়েছেন। আর মিলাদুন্নবী বা রাসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর আগমন উপলক্ষে আনন্দ-উতসব বা খুশী উদযাপন করার নামই হল পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । 

একটি সম্প্রদায় আলোচ্য আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যায় আল্লাহ এর অনুগ্রহ ও রহমত বলতে শুধু ইসলাম ও কুরআনকেই বুঝাতে চায়। তাদের প্রতি অনুরোধ রইল তাঁরা যেন উক্ত তাফসীর গ্রন্থসমূহ ভালভাবে অধ্যায়ন করে। তারপরও তাদের শুভবুদ্ধির উদয়ের জন্য রাসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  যে আল্লাহ এর রহমত ও করুণাস্বরূপ সেই বিষয়ে কুর’আনের কিছু আয়াত ও ব্যাখ্যা পেশ করলামঃ- 
১. وما ارسلنك إلا رحمة للعالمين 
  • "হে রাসূল, নিশ্চই আমি আপনাকে জগতসমুহের রহমত করেই প্রেরণ করেছি"। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭) 

২. "আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, 
  • "যদি তোমাদের উপর আল্লাহ এর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকত তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হতে"। [সূরা আল-বাকারা ৮৪] 
এই আয়াতের ব্যাখ্যা তাফসীর মা’রেফুল কুর’আনের ৮৪ পৃষ্ঠায় বলে আছে, "আর হাদীসের বর্ণনার ভিত্তিতে আযাব অবতীর্ণ না হওয়াটা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরই বরকত। কাজেই কোনো কোনো তাফসীরকারক হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাবকেই অর্থাৎ মিলাদুন্নবী হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেই আল্লাহ এর রহমত ও করুণা বলে বিশ্লেষণ করেছেন"।
৩. 
  • "আল্লাহ মুমিনদের উপর অবশ্যই এ অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের নিজেদের মধ্য হতে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন। তিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন ও তাদেরকে পবিত্র করেন। তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন"। [সূরা আল-ইমরান ১৬৪] 

৪. "যারা আল্লাহ এর নিয়ামতকে কুফরী বশত পরিবর্তন করেছে"। [সূরা ইব্রাহীম ২৮] 

  • এ আয়াতের ব্যাখ্যা বুখারী শারীফের ২য় খন্ডের ৫৬৬ পৃষ্ঠায় আছে, হযরত ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যারা আল্লাহ এর নিয়ামত পরিবর্তন করেছে আলাহ এর কসম তারা হল কুরাইশ গোত্রের কাফিরগণ। হযরত আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যারা আল্লাহ এর নিয়ামত পরিবর্তন করেছে তারা হল কুরাইশ। আর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  হলেন আল্লাহ এর নিয়ামত।"
এর মাধ্যমে ষ্পষ্টভাবে প্রমাণীত যে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ এর রহমত, অনুগ্রহ, করুণা ইত্যাদি। সুতরাং যারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আল্লাহ এর রহমত বা অনুগ্রহ স্বীকার করতে চান না, তারা নিঃসন্দেহে গোমরায় নিমজ্জিত। আমরা পবিত্র কুর’আন ও ইসলামকেও আল্লাহ এর রহমত ও অনুগ্রহ হিসেবে স্বীকার করি। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুর’আন ও ইসলাম সবই আল্লাহ তা’আলার রহমত, অনুগ্রহ ও নিয়ামত। আর এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । তাই পবিত্র কুর’আন এর মাধ্যমে মিলাদুন্নাবী হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন প্রমাণীত হল নিঃসন্দেহে।