মীলাদ প্রবর্তনের ইতিহাস


মীলাদ মাহফিলের এই সুনির্দিষ্ট তর্জ-তরীকা সর্বপ্রথম কে প্রবর্তন করেন সে সম্পর্কে কিতাবে দু’টি মত পাওয়া যায়।

(১) বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম হাফিয আবূ সামাহ্ “আল বায়িছ আলা ইনকারিল বিদয়ি ওয়াল হাওয়া” নামক কিতাবে লিখেন যে, “যিনি সর্বপ্রথম মাওছেল নামক স্থানে মীলাদ উদ্ভাবন করেন তিনি হলেন হযরত মুল্লা উমর বিন মুহম্মদ রহমতুল্লাতি আলাইহি। তিনি ছিলেন তৎকালীন যুগের বিখ্যাত আল্লামা ও আউলিয়াদের মধ্যে অন্যতম। আরবালের বাদশা এবং অনেক লোক তাঁর অনুসরণ করতঃ মীলাদ অনুষ্ঠান আহবান করতে আরম্ভ করেন। আল্লাহ্ পাক তাঁদের প্রতি রহমত নাযিল করুন।”


শাফেয়ী মাযহাবের বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম আবূ সামাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে “আল বায়িছ” কিতাবে লিখেছেন যে, “তিনি একজন সুপ্রসিদ্ধ ওলী ছিলেন।”

(২) হাফিজুল হুফফায, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, আল্লামা, ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল হাবীলিল ফতওয়া” নামক কিতাবে বর্ণনা করেন, “সর্বপ্রথম যিনি এই প্রকার মীলাদ মাহফিলের প্রবর্তন করেন, তিনি হলেন আরবলের বাদশাহ্ মালিক মুজাফফর আবূ সাইদ বিন জয়নুদ্দীন।” ইমাম সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বাদশাহ্ সম্বন্ধে তাঁর “হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মাওয়ালিদ” কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিছ আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, “তিনি তীক্ষ্ম বুদ্ধি-সম্পন্ন, সাহসী, বীর্যবান, আলিম ও ন্যায় বিচারক ছিলেন। আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রতি রহম করুন তাঁকে সম্মানিত বাসস্থান দান করুন।”

শায়খ হাফিয আবুল খত্তাব ইবনে দাহইয়া বাদশাহর এই মীলাদ অনুষ্ঠান সম্পর্কে এক বৃহৎ কিতাব প্রণয়ন করে তার নাম দিয়েছেন, “অততানবীরু ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর”
ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লেকান হাফিয আবুল খত্তাব ইবনে দাহইয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে “তারীফে ইবনে খাল্লেকানে” লিখেছেন, “তিনি তৎকালীন বিখ্যাত ও নেতৃস্থানীয় আলিম বিদ্বানগণের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি পশ্চিমের কোন এক দেশ হতে আগমন করে শাম ও ইরাক সফর করেন এবং হিজরী ৬০৪ সালে ‘আরবল’ শহরে আগমন করে সেখানেই অবস্থান করেন। তথনকার বাদশাহ্ মালিক মুজাফফরকে মীলাদুন্ নবীর প্রতি যথেষ্ট আগ্রহান্বিত ও যত্নপরায়ণ দেখে তাঁর এই কর্মের সমর্থনে التنوير নামক একটি কিতাব প্রণয়ন করেন।” প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনু জুওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নাতি ‘মিরআতুজ্জামান’ নামক পুস্তকে বলেন, “তাঁর (বাদশাহর) আয়োজিত মীলাদ মাহফিলে শীর্ষস্থানীয় ছূফী ও আলিমগণ উপস্থিত হতেন।”

অনুরূপ বিবরণ বিখ্যাত গ্রন্থ “সীরাতে শামী, সীরাতে হালবীয়া, সীরাতে নববীয়া ও যুরকানী” ইত্যাদিতেও বিদ্যমান আছে।
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, বর্তমানে প্রচলিত তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক যে মীলাদ মাহফিল করা হয় তার প্রবর্তক কোন ফাসিক ব্যক্তি ছিলেন না, বরং এ মীলাদ মাহফিলের প্রবর্তক ছিলেন একজন খালিছ ও কামিল মুসলমান।