আবু লাহাবের ঈদে মিলাদুননবি নিয়ে ইমাম মুজতাহিদগনের কি অভিমত ?

আল্লামা ইমাম শিহাব উদ্দিন আহমদ কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি “মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া” নামক কিতাবে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুগ্ধপান শীর্ষক অধ্যায়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন- 
“আবু লাহাবের আযাদকৃত দাসী সুয়াইবাহ তাকে (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুধ পান করিয়েছেন। যাকে আবু লাহাব তখনই আযাদ করেছিলো তখন তিনি তাকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের শুভ সংবাদ শুনিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, একদা আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখা গিয়েছিলো। (হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এক বছর পর স্বপ্ন দেখেছিলেন) তখন তাকে বলা হলো “তোমার কি অবস্থা?” সে বলল, দোজখেই আছি। তবে প্রতি সোমবার রাতে আমার শাস্তি কিছুটা শিথিল করা হয়; আর আমি আমার এ আঙ্গুল দুটির মধ্যখানে চুষে পানি পানের সুযোগ পাই। আর তখন সে তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে ইশারা করলো। আর বলল, আমার শাস্তির শিথিলতা এ জন্য যে, সুয়াইবা যখন আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদতের সুসংবাদ দিয়েছিলো, তখন তাকে আমি আযাদ করে দিয়েছিলাম এবং সে হুযুরকে দুগ্ধপান করিয়েছে”।


তিনি আরো বলেন-
“এতদভিত্তিতে, আল্লামা মোহাদ্দিস ইবনে জাযরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন ঐ আবু লাহাব কাফির, যার তিরস্কারে কোরআনের সূরা নাযিল হয়েছে। মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ আনন্দ প্রকাশের কারণে জাহান্নামে পুরস্কৃত হয়েছে। এখন উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐ একত্ববাদী মুসলমানের কি অবস্থা? যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদতে খুশি হয় এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভালবাসায় তার সাধ্যনুযায়ী খরচ করে। তিনি জবাবে বলেন- আমার জীবনের শপথ! নিশ্চয়ই পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে আপন ব্যাপক করুণায় নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন”।
[শরহে জুরকানী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৫৮-২৬২]
আবু লাহাবের উক্ত ঘটনা সর্বশ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ পবিত্র বোখারী শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। 
হাদীসটি নিম্নরুপ:
হযরত ওরওয়া ইবনে যোবাইয়ের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সুয়াইবাহ আবু লাহাবের দাসী ছিলেন। আবু লাহাব হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদতের সুসংবাদে দেওয়ার কারণে (আনন্দিত হয়ে) সুয়াইবাহকে আযাদ করে দিয়েছিলো। অতঃপর সুয়াইবাহ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দুধ পান করিয়েছিলেন। এরপর যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করল, তকন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্টদের কেউ [হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমার অবস্থা কেমন?” আবু লাহাব তদুত্তরে বললো, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি, কেবল আমি যে (আল্লাহর হাবীবের জন্ম সংবাদ বা মীলাদ শরীফের খুশিতে) সুয়াইবাহকে (তর্জনী ও মধ্যমা দুটি আঙ্গুলের ইশারায়) আযাদ করেছিলাম, ঐ কারণে (প্রতি সোমবার আঙ্গুল দু’টির মধ্যে কিছু পানি জমে থাকে) আমি ওই পানি চুষে থাকি ও প্রতি সোমবার আযাবকে হাল্কা বোধ করে থাকি”।
[বুখারী শরীফ : ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৭৬৪]
বোখারী শরীফে উক্ত পৃষ্ঠায়ই শেষের দিকে এ হাদীসের পাদটিকায় বর্ণিত আছে :
“সুয়াইবাহ আবু লাহাবকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সুসংবাদ দেওয়ার কারণে আবু লাহাব তাকে আযাদ করে দিয়েছিলো। অতঃপর এ আযাদ করাটা (পরকালে) আবু লাহাবের উপকারে এসেছে। এ কাজ তার উপকারে আসার অর্থ হলো- তার এ কর্ম হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতে অবশিষ্ট ছিল। অন্যান্য কাজের ন্যায় বিনষ্ট হয়ে যায়নি”।