পবিত্র মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা


কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আগমন তথা বিলাদত শরীফ উনার মহিমান্বিত দিনটিই হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম ঈদের দিন; যে দিনটি সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদুল ঈদিল আ’যম ও সাইয়্যিদুল ঈদিল আকবার হিসেবে পরিচিত।


স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার মহিমান্বিত দিনটি শুধু মানুষ ও জিন জাতির জন্যেই নয়  বরং তামাম সৃষ্টির জন্যেই ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশের দিন। এ খুশি প্রকাশের আমলটি নফল কোন আমলের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং এ আমলটি যত প্রকার আমল রয়েছে- ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব ইত্যাদি সর্বপ্রকার আমল থেকে শ্রেষ্ঠতম এবং এ শ্রেষ্ঠতম আমলটি ক্বিতয়ী দলীলের দ্বারা অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দলীল-আদিল্লাহ’র দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
যেমন প্রথমতঃ সূরা ইউনুস শরীফ উনার ৫৭ ও ৫৮নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لـما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مـما يجمعون.
অর্থ: হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন উপদেশ দানকারী, তোমাদের অন্তরের আরোগ্য দানকারী, হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত দানকারী। (অতএব হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (স্বীয় উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় ফদ্বল ও রহমত স্বরূপ অর্থাৎ অপার দয়া ও অনুগ্রহ হিসেবে উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন; সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশের আমলটি তাদের সমস্ত নেক আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।
জানা আবশ্যক যে, উক্ত সূরা ইউনুস শরীফ উনার ৫৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে موعظة-شفاء-هدى-رحمة প্রতিটি শব্দ মুবারকই হচ্ছে ইসমে মাছদার অর্থাৎ ক্রিয়ামূল বা ক্রিয়া বিশেষ্য। যা ইসমে ফায়িল (কর্তৃবাচ্য) অথবা ইসমে মাফউল (কর্মবাচ্য) হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এখানে ইসমে ফায়িল বা কর্তৃবাচ্য অর্থেও ব্যবহার করাটাই সমধিক ছহীহ। যদিও কেউ কেউ ইসমে মাফউল বা কর্মবাচ্য অর্থেও গ্রহণ করেছেন। ইসমে ফায়িল অর্থ গ্রহণে উক্ত শব্দসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। আর ইসমে মাফউল অর্থ গ্রহণে উক্ত শব্দসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন শরীফ। কিন্তু উভয় আয়াত শরীফ উনার অর্থ পর্যালোচনা করলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করাটাই বেশি যথোপযুক্ত। যেমন পরবর্তী ৫৮নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে فضل الله এবং رحمته অর্থাৎ رحمة الله দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। যা তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরে মুহাররারুল ওয়াজীয, তাফসীরুল মানার, তাফসীরে বয়ানুল মায়ানী, তাফসীরে মাফাতীহুল গইব, তাফসীরে কবীর ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وذكرهم بايام الله ان فى ذلك لايات لكل صبار شكور.
অর্থ:  (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদেরকে (উম্মতদেরকে) মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিনসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ছবরকারী এবং শোকরগোযার ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।
আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ايام الله ‘আইয়্যামুল্লাহ’ শব্দ মুবারক দু’অর্থে ব্যবহৃত হয়। এক- বদর, উহুদ, খন্দক, হুনাইন ইত্যাদি জিহাদের ঘটনাবলী অথবা পূর্ববতী উম্মতের উপর শাস্তি নাযিল হওয়ার ঘটনাবলী। এসব ঘটনায় বিরাট জাতির ভাগ্য ওলট-পালট হয়ে গেছে এবং তারা পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় ‘আইয়্যামুল্লাহ’ স্মরণ করানোর উদ্দেশ্যে হচ্ছে, এসব জাতির কুফরের অশুভ পরিণতির ভয় প্রদর্শন করা এবং হুঁশিয়ার করা। দুই- ‘আইয়্যামুল্লাহ’ উনার অপর অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত ও অনুগ্রহ। এগুলো স্মরণ করানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সৎ মানুষকে যখন কোন অনুগ্রহদাতা উনার অনুগ্রহ স্মরণ করানো হয়। তখন সে বিরোধিতা ও অবাধ্যতা করতে লজ্জাবোধ করে উপরন্তু নিয়ামত লাভের জন্য শুকরিয়া আদায় করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সৃষ্টিকুলের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত ও রহমত তথা অনুগ্রহ হচ্ছেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, উনাকে লাভ করার কারণে কায়িনাতের সকলের জন্য খুশি প্রকাশ করা অপরিহার্য কর্তব্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেছেন-
واذكروا نعمت الله عليكم
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নিয়ামত পাওয়ার কারণে উক্ত নিয়ামত উনার স্মরণ করো বা শুকরিয়া আদায় করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩১)
মোট কথা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় উম্মত দুনিয়াবী এবং উখরবী যত নিয়ামত রয়েছে সমস্ত নিয়ামতের অধিকারী হয়েছে এবং হবে, সর্বোপরি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত মা’রিফাত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের মূল উসীলাও হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তোমাদের নিকট দুটি নিয়ামত রেখে যাচ্ছি। উক্ত নিয়ামত দুটিকে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবেনা। (এক) মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব এবং (দুই) আমার আহলু বাইত ও আওলাদ আলাইহিমুস সালাম।
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিশারদ ও বিশেষজ্ঞগণ উনারা বলেছেন, যদিও কিতাবুল্লাহ উনার সহজ সরল ভাষা ও বর্ণনার জন্য সহজেই বোধগম্য এবং বাস্তবায়নযোগ্য তথাপি যমীনে সর্বদাই এমনসব ব্যক্তির প্রয়োজন থাকবে যাঁরা উনার রহস্যসমূহ উদঘাটন করতে পারেন এবং উনার ইলমি ও আমলি ব্যাখ্যা দিতে পারেন; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে এমন ব্যক্তিদেরকে হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে তালাশ করা উচিত।