পবিত্র
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধী সম্প্রদায়ের নেতারা
বলে থাকে ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহা ছাড়া আর কোনো ঈদ নেই। তারা নিজেদের এই মনগড়া
মন্তব্য প্রমাণের জন্য এই হাদীসটি উল্লেখ করে- "সাহাবী আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আসলেন তখন দেখলেন
বছরের দুটি দিনে মদীনাবাসীরা আনন্দ-ফুর্তি করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ দিন দুটো কি? তারা বলল যে আমরা ইসলামপূর্ব মুর্খতার যুগে এ দুদিন আনন্দ-ফুর্তি করতাম। রাসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ 'আল্লাহ তাআলা এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটো দিন তোমাদের দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আজহা ও
ঈদুল ফিতর'।" ( আবু দাউদ)
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, ভালমত
লক্ষ করুন এখানে ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহা কে দুটি ঈদের দিন হিসেবে বলা হয়েছে কিন্তু
কোথাও কি বলা হয়েছে এই দুটি দিন ছাড়া আর কোনো ঈদ নেই? উত্তর হল
না। যার কারণেই পবিত্র কুর’আন ও আরও অসংখ্য হাদীসে আরও অনেক
দিনকে ঈদ এর দিন হিসেবে উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কুর’আনেঃ-
সূরা মায়িদাহ এর ১১৪ নং আয়াতটির যারা আরবী পড়তে পারেন তারা আরবী পাঠের দিকে নজর
দিন ভালমত।
দেখবেন
আরবীতেই ঈদ বলা হয়েছে আল্লাহ এর নিয়ামত লাভের দিনকে।
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ
السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
- “ঈসা ইবন মারিয়ম আলাইহিস সালাম বললেন- হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন। এ দিন আমাদের জন্য আনন্দোৎসব (ঈদ) হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্যও তা হবে ঈদের দিন। আপনার পক্ষ থেকে এটি হবে একটি কুদরতি নিদর্শন”। [সূরা মায়িদাহ ১১৪]
খুব
সহজেই বুঝা যায়, আল্লাহ এর নিয়ামত লাভের দিনকেও ঈদের দিন
হিসেবে উদযাপন করা যায়। আর হযরত মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে
দুনিয়াতে রহমত হিসেবে প্রেরণ করা তো আরও বড় নিয়ামত। সেটা ঈদের দিন হবে নাই বা কেন? ? ? এছাড়াও লাইলাতুল বরাত ও লাইলাতুল কদরকেও ঈদের দিন হিসেবে বলা হয়েছে।
হযরত
আব্দুল কাদীর জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
“ফেরেশতাদের জন্য লাইলাতুল বারাত ও লাইলাতুল
ক্বদর দুটি ঈদের দিন”। [গুনিয়াতুত তালেবীন (উর্দু) পৃঃ ৩৬৫]
হাদীস
গ্রন্থসমূহেঃ-
১.
জুম্মার দিনকে ঈদের দিন বলা - হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় এ দিন (জুমুআর দিন) আল্লাহ তা’আলা
মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি জুমুয়া পড়তে
আসবে সে যেন গোসল করে ও সুগন্ধি থাকলে উহা লাগায় এবং তোমাদের উপর মিসওয়াক করা
আবশ্যক।
- · ইবন মাজাহ পৃঃ ৭৮
অনেক
হাদীসে এই দিনটিকে ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহা থেকেও শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা
হয়েছে।
দেখুনঃ-
- · ইবন মাজাহ পৃঃ ৭৭ ও
- · মিশকার শারীফ পৃঃ ১২০]
২.
আরাফার দিন (৯ই জিলহজ্ব) ঈদের দিন - অনেক রেওয়াতে ৯ই জিলহজ্ব অর্থাৎ আরাফার দিনটিকেও ঈদের দিন হিসেবে গণ্য করা
হয়েছে।
[দেখুনঃ –
- · মিশকাত শারীফ পৃঃ ১২১ ও
- · তিরমিযী শারীফ পৃঃ ১৩৪]
এখন
প্রশ্ন যারা সারা দিন কুর’আন-সহীহ হাদীস ইত্যাদি
চিত্তাকর্ষক কথা বলে লাফালাফি করেন তারা কি জীবনেও উপরের কুর’আনের আয়াতের এবং হাদীসগুলোর আরবী পাঠ পড়ে নি? নাকি না
পড়েই নিজেদের পছন্দমত কিছু সংখ্যক কুর'আনের আয়াত ও হাদীস পড়েই ফতওয়া
দিয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে?