“১২ই রবিউল আউয়াল মীলাদুন্ নবী উদযাপনের রীতি মদীনা বাসীদের মধ্যেও চলে এসেছে, খৃষ্টীয় কালচার নয় ।

তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ-সুন্নাহ্ শরীফ-এর খিলাফ ও কুফরী। কারণ ইহুদী-খৃষ্টানরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মদিন কখনোই পালন করেনা। এটা পালন করেন একমাত্র তাঁরাই যারা খালিছ ভাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করেন।

“মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া, যুরক্বানী, সীরাতে হালবিয়া, মাদারিজুন্ নুবুওয়াত” ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর পবিত্র স্থানে উপস্থিত হয়ে মীলাদ শরীফ উদযাপনের নিয়ম প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।”

এবং “তাওয়ারীখে হাবীবে ইলাহ্” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “১২ই রবিউল আউয়াল মীলাদুন্ নবী উদযাপনের রীতি মদীনা বাসীদের মধ্যেও চলে এসেছে।”



“মুহাদ্দিস ইবনুল জূযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “হেরমাইন শরীফাইন (পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ), মিশর, সিরিয়া, সমস্ত আরব দেশ এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মুসলমানদের মধ্যে প্রাচীন যুগ থেকে এ নিয়মই চলে এসেছে যে, রবিউল আউয়ালের চাঁদ দেখলেই তাঁরা মীলাদ শরীফের মাহফিলসমূহ আয়োজন করতেন, খুশী উদযাপন করতেন, গোসল করতেন, উন্নত মানের পোশাক পরিধান করতেন, বিভিন্ন ধরণের সাজসজ্জা করতেন, খুশবু লাগাতেন, এ দিনগুলোতে (রবিউল আউয়াল) খুব খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করতেন, সামর্থ অনুসারে লোকজনের জন্য টাকা-পয়সা ও জিনিষপত্র খরচ করতেন এবং মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের প্রতি পূর্ণাঙ্গ গুরুত্ব দিতেন। এরই মাধ্যম আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে মহান প্রতিদান ও মহা সাফল্যাদি অর্জন করতেন।” (বয়ানুল মীলাদিন্ নবী)

হযরত ইমাম আহমদ ক্বোস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “আল্লাহ্ পাক অসংখ্য রহমত নাযিল করুন ঐ ব্যক্তির উপর, যে মীলাদ-ই-পাক-এর মাস রবিউল আউয়াল-এর রাতগুলোকে এমন খুশীর রাতে পরিণত করে যে, যার অন্তরে শানে রিসালতের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ রয়েছে তার অন্তরের উপর কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যায়।” (আল মাওয়াহিব জুরকানী)

হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
অর্থঃ- “মক্কাবাসীগণ মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি গুরুত্ব ঈদ অপেক্ষাও বেশী দিতেন।” (আল মাওরেদ আর রাবী)

হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “আমি একবার মক্কা মুয়াযযামায় মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরীফের দিনে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্মের স্থানে উপস্থিত ছিলাম। তখন লোকেরা হুযূরে পাক ছল্লাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐসব মু’জিযা বর্ণনা করছিলেন, যেগুলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভাগমনের পূর্বে ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে প্রকাশ পেয়েছিলো। আমি হঠাৎ দেখতে পেলাম সেখানে জ্যোতিসমূহেরই ছড়াছড়ি। তখন আমি গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করলাম ও বুঝতে পারলাম যে, ঐ ‘নূর’ (জ্যোতি) হচ্ছে ঐসব ফেরেশতারই, যাঁদেরকে এমন মাহফিলসমূহের (মীলাদ শরীফ ইত্যাদি) জন্য নিয়োজিত রাখা হয়েছে। অনুরূপভাবে আমি দেখেছি ‘রহমতের নূর’ ও ফেরেশতাদের নূর’ সেখানে মিলিত হয়েছে।” (ফুয়ূযূল হেরমাইন)

এখানে উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ-সুন্নাহ্ শরীফ সম্মত কোন আমল অন্য কোন ধর্মাবলম্বী পালন করলে যে তা মুসলমানের জন্য পালন করা যাবেনা এ আক্বীদা বা বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, অশুদ্ধ ও কুফরী।
যেমন, অনেক বিধর্মী দাঁড়ি রাখে সে জন্য মুসলমান কি দাঁড়ি রাখা ছেড়ে দিবে? কখনোই নয়। বরং মুসলমান যে বিষয়টি পালন করবে সে বিষয়টি শরীয়ত সম্মত হলেই তা পালন করবে। আর শরীয়ত সম্মত না হলে তা পালন করা যাবেনা।

মূলতঃ পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ-এর বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবীজীর (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাদত দিবসকে খুশীর দিন হিসেবে উদযাপন করা মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর ফেরেশতাকুল, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়া-ই-কিরাম সকলেরই সুন্নত। (ইনশাআল্লাহ্ পরবর্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব)
অতএব, এ মহান সুন্নতকে বেদ্বীন ইহুদী-খৃষ্টানদের কালচারের সাথে তুলনা করা সম্পূর্ণ কুফরীর শামিল।