বিশ্বখ্যাত ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
وقد سئل شيخ الإسلام حافظ العصر ابو الفضل ابن حجر عن عمل المولد فأجاب بما نصه : قال وقد ظهر لي تخريجها على أصل ثابت وهو ثبت في الصحيحين من – ان النبي صلى الله عليه وسلم قدم المدينة فوجد اليهود يصومون يوم عاشوراء فسالهم فقالوا: هو يوم أغرق الله فيه فرعون ونجى موسى فنحن نصومه شكرا لله تعالى فيستفاد منه فعل الشكر لله تعالى على ما من به في يوم معين من اسداء نعمة أو دفع نقمة ويعاد ذلك في نظير ذلك اليوم من كل سنة والشكر لله تعالى يحصل العبادات كالسجود والصيام و الصدقة والتلاوة وأي نعمة أعظم من النعمة بيروز هذا النبي صلى الله عليه وسلم الذي هو بني الرحمة في ذلك اليوم له
অর্থাৎ ‘শাইখুল ইসলাম, হাফিযুল আছর, আবুল ফদল ইবনু হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপনের ভিত্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপনের মূল ভিত্তি আমার নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে, যা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরিফে রয়েছে। সেই ভিত্তিটা হল-
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শরিফ আগমন করলেন। তিনি সেখানে ইয়াহুদিদেরকে আশুরার দিনে রোযা রাখতে দেখে তাদেরকে এ রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর তারা বলল, এ দিনে আল্লাহ তায়ালা ফিরয়াউনকে ডুবিয়ে মেরেছেন আর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কে মুক্তি দিয়েছেন। এ কারণে আমরা আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে রোযা রাখছি।’
এ হাদিছ শরিফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহর রহমত পাবার কারণে বা কোন বিপদ থেকে মুক্তি লাভের পর আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা বৈধ। প্রতি বছর সেই একই দিনে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা যাবে আর আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া জ্ঞাপন বিভিন্ন রকম ইবাদতের মাধ্যমে করা যায় যেমন নামায, রোযা, সদকা এবং কুরআন তিলাওয়াত। আমাদের জন্য যেদিন নবি করিম রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগমণ করেছেন সেদিনের চেয়ে বড় নিয়ামত আর কী হতে পারে?
উল্লিখিত বর্ণনা থেকে বুঝা লে যে, প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ইমাম ইবনু হাজর আসকালানী আলাইহির রাহমাহ আশুরার হাদিছকে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপনের গ্রহণযোগ্য ভিত্তি বলেছেন এবং তা প্রতি বছর পালনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করা শরিয়ত সম্মত একটি সৎকাজ।
হযরত আউস বিন আউস রাদ্বিয়অল্লাহু তায়অলা আনহু বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- أن من أفضل اياكم يوم الجمعة فيه خلق آدم অর্থাৎ ‘তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে শুক্রবার শ্রেষ্ঠতর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’
হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন-أن يوم الجمعة يوم عيد অর্থাৎ ‘নিশ্চয় শুক্রবার হল ঈদের দিন।’
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন-
أن هذا يوم عيد جعله الله للمسلمين فمن جاء إلى الجمعة فليغسل وإن كان طيب فليمس منه وعليكم بالسواك
অর্থাৎ ‘নিশ্চয় এ দিন ( শুক্রবার) ঈদের দিন, যাকে আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’
যে ব্যক্তি জুমার নামায পড়তে আসে, সে যেন গোসল করে আসে আর তার কাছে যদি সুগন্ধি থাকে, তাহলে সে যেন তা থেকে কিছু শরীরে লাগিয়ে আসে। তোমাদের ওপর মিসওয়াক করা আবশ্যক।’
উল্লিখিত হাদিছসমূহ থেকে বুঝা গেল যে, শুক্রবার হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার কারণে সেদিনকে উত্তম দিন এবং ঈদের দিন বলা হয়েছে। সুতরাং যেদিন সৃষ্টি জগতের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নবীর আগমন হয়েছে, সেদিনকে কেন ঈদের দিন হিসেবে মানা যাবে না?