ওরস মাহ্ফিল; যাতে ওয়াজ মাহ্ফিল, মীলাদ মাহ্ফিল ও যিকির আয্কার করা হয় তা শরীয়তসম্মত কিনা?

ওরস মাহ্ফিল; যাতে ওয়াজ মাহ্ফিল, মীলাদ মাহ্ফিল ও যিকির আয্কার করা হয় তা শরীয়তসম্মত কিনা?
জওয়াবঃ ওরস আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ওলীমা বা বিবাহের খানা, জিয়ারত, বিবাহের দাওয়াত, বাসর যাপন ইত্যাদি। পারিভাষিক ও রূপক অর্থ হলো- কোন আওলিয়া-ই-কিরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের ইন্তেকালের দিন ফাতিহা পাঠ উপলক্ষ্যে যে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং সেই উপলক্ষ্যেই যদি ওয়াজ মাহ্ফিল, মীলাদ-মাহ্ফিল, যিকির-আযকারের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তা অবশ্যই শরীয়তসম্মত হবে। তবে তাতে কিছু শর্ত-শারায়েতও রয়েছে। যেমন- বেপর্দা-বেহায়াপনা, গান-বাজনা, মেলা ইত্যাদি শরীয়তের খেলাফ কোন কাজ যেন করা না হয়। পূর্ববর্তী যামানায় ওরস শব্দ ব্যবহার করাকে ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ দোষণীয় মনে করেননি। কিন্তু পরবর্তী যামানায় যেহেতু ওরসের নাম দিয়ে বেপর্দা, বেহায়াপনা, গান-বাজনা, মেলা ইত্যাদি বেশরা কাজ শুরু হয়ে যায় তাই পরবর্তী হক্কানী-রব্বানী আলেমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নেক বা দ্বীনী কাজে ওরস শব্দ ব্যবহার না করে ‘ঈসালে সাওয়াব’ বা সাওয়াব রেসানী শব্দ ব্যবহার করতে হবে। এর দলীল স্বরূপ নিম্নের আয়াত শরীফ উল্লেখ করা হয়।
আল্লাহ্ পাক কোরআন শরীফে বলেন,
يا ايها الذين امنوا لا تقولوا راعنا وقولوا انظرنا واسمعوا وللكفرين عذاب اليم.
অর্থঃ॥ “হে ঈমানদারগণ তোমরা ‘রঈনা’ বলোনা ‘উনজুরনা’ বল এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক), আর কাফেরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।”
এ আয়াত শরীফের শানে নুযুলে বলা হয়, ইহুদীরা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেবার জন্য ‘রঈনা’ শব্দ ব্যবহার করত যার একাধিক অর্থ। 
একটি অর্থ হলো “আমাদের দিকে লক্ষ্য” করুন যা ভাল অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর খারাপ অর্থে হে মূর্খ, হে মেষ শাবক। আর হিব্রু ভাষায় এটি একটি বদ্দোয়া।
ইহুদীরা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘রঈনা’ বলে সম্বোধন করত। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। অপরদিকে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গণ ‘রঈনা’ শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে তখন ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এতে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কষ্ট পেতেন। তবুও তিনি কিছু বলতেন না। কেননা আল্লাহ্র রসূল হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না।
যেমন কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
وما ينطق عن الهوى ان هو الاوحى يوحى.
অর্থঃ॥ “তিনি (হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজের থেকে মনগড়া কোন কথা বলেন না।” (সুরা নজম/ ৩,৪)
এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্ পাক কোরআন শরীফের আয়াত নাযিল করে ‘রঈনা’ শব্দের বদলে ‘উনজুরনা’ শব্দ ব্যবহার করতে বললেন। কারণ ‘রঈনা’ শব্দ ভাল খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হলেও ‘উনজুরনা’ শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহৃত হত।
তাই যে সকল শব্দ ভাল মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়, সে সকল শব্দ ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে উপরোক্ত আয়াত মোতাবেক যেসব শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহৃত হয় তাই ব্যবহার করতে হবে।
বিস্তারিত

“ওহাবী ফির্কার লোকেরাই পবিত্র মীলাদ শরীফের আলোচনা বিদয়াত ও নাজায়িয বলে।”- দেওবন্দ মুরব্বি


দেওবন্দীদের অন্যতম মুরুব্বী হুসাইন আহমদ মাদনীর স্বীকারোক্তি “ওহাবী ফির্কার লোকেরাই পবিত্র মীলাদ শরীফের আলোচনা বিদয়াত ও নাজায়িয বলে।”
হুসাইন আহমদ মাদনীর তার কিতাবে পবিত্র মীলাদ শরীফের বিষয়ে বলেছে,
“ওহাবী ফের্কা লোকেরাই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মের আলোচনা খারাপ ও বিদয়াত বলে (নাউযুবিল্লাহ) , এমনকি আওলিয়া কিরামের স্মরন ও আলোচনাকেও বিদয়াত বলে। তবে আকাবীররা (দেওবন্দী) গ্রহনযোগ্য পদ্মতিতে যদি বিলাদত শরীফ আলোচনা হয় তবে সবাই বরকত হাসিছের মাধ্যম বলে মনে করে। (সিহাবুস সাকিব পৃষ্ঠা ২৪৬)
সূতরাং যা প্রমাণ হলো ,
১) ওহাবী বাতিল ফির্কার লোকেরা মীলাদ শরীফের আলোচনা বিদয়াত ও নাজায়িয বলে।
২) দেওবন্দীদের মুরুব্বীরা পবিত্র মীলাদ শরীফের বিপক্ষে ছিলো না।
৩) দেওবন্দী মুরুব্বীরা পবিত্র মীলাদ শরীফের অালোচনা বরকত লাভের কারন মনে করতো।
প্রশ্ন হলো,
বর্তমান যারা নিজেদের দেওবন্দী পরিচয় দিয়ে পবিত্র মীলাদ শরীফের বিরোধী করে তারা কারা?
এরাই কি ঘাপটি মেরে থাকা ওহাবী? যারা নিজেদের দেওবন্দ সিলসিলার নাম ভাঙ্গিয়ে সমাজে চলাফেরা করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা বাতিল ওহাবী।

বিস্তারিত

পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ’ কেন বলা হয় তার দলীল।


আমরা জানি মুসলমানদের জন্য অন্যতম দুই দিন হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এ দুই দিন ঈদের দিনও বটে। এ দুই ঈদ ছাড়াও আরো ঈদ আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা ঈদের দিন হলো পবিত্র জুমুয়ার দিন। হাদীছ শরীফে আছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ هٰذَا يَوْمُ عِيْدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ فَمَنْ جَاءَ اِلَى الْـجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَاِنْ كَانَ طِيْبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسّوَاكِ‏.‏
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দিনকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআর নামায আদায় করতে আসবে, তিনি যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও কর্তব্য।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৯৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৭৩৫৫)
এ ছাড়া হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুআর দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআর দিন হচ্ছে এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)
জানা দরকার এ দিনের বৈশিষ্ঠ কি। কেন এ দিন ঈদের দিন হলো-
হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَوْسِ بْنِ اَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِنَّ مِنْ اَفْضَلِ اَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ فِيْهِ خُلِقَ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ قُبِضَ.‏ 
অর্থ : “হযরত আউস ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে পবিত্র জুমুআর দিন। এ দিনে আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি পবিত্র বিছালী শরীফ গ্রহন করেছেন।” (নাসায়ী শরীফ শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া : হাদীছ শরীফ নং ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ : কিতাবুল জুমুয়া, হাদীছ শরীফ নং ৮৫৫, তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৯১, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮৯৫৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৭০৫, আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছলাত, হাদীছ শরীফ নং ১০৪৭, ইবনে খুজায়মা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩২)
এ হাদীছ শরীফ থেকে আমরা জানতে পারলাম আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি ও আগমনের কারনে জুমুয়ার দিন ঈদের দিন।
এখানেই শেষ নয়, ‘জুমুয়ার দিন’ দিন শুধু ঈদের দিনই নয় বরং অন্যান্য দিনের চাইতেও শ্রেষ্ঠ দিন বা হাদীছ শরীফের ভাষায় ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ ।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ سَيّدُ الاَيَّامِ وَاَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ وَهُوَ اَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ مِنْ يَّوْمِ الاَضْحٰى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيْهِ خَـمْسُ خِلَالٍ خَلَقَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَهْبَطَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلَى الْأَرْضِ وَفِيْهِ تَوَفَّى اللهُ حَضْرْتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ سَاعَةٌ لَا يَسْأَلُ اللهَ فِيْهَا الْعَبْدُ شَيْئًا اِلَّا اَعْطَاهُ مَا لَـمْ يَسْأَلْ حَرَامًا وَفِيْهِ تَقُوْمُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُّقَرَّبٍ وَلَا سَـمَاءٍ وَلَا اَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَـحْرٍ اِلَّا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ‏.
অর্থ : “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র জুমআ শরীফের দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ (সাইয়্যিদুল আইয়াম) এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এদিনটি পবিত্র ঈদুল আদ্বহার দিন ও পবিত্র ঈদুল ফিতরে দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাকের নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।
এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে- (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহন করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৩৭, আল্ মু’জামুল কবীর লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫১১, বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৯৭৩)
অর্থাৎ দেখা গেলো জুমুয়ার দিন শুধু ঈদের দিনই নয় বরং ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ বা অন্যান সাধারন দিন সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। কারন সমূহের অন্যতম হচ্ছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, আগমন ও বিছাল। 
তাহলে যিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনারও রসূল, সাইয়্যিদুল মুসরালিন, ইমামুল মুরসালিম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিনটা কি হবে? 
সেটা কি গুরুত্ব পাবে না? সেট কি শ্রেষ্ঠ দিন হবে না? 
হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার আগমনের জন্য জুমুয়ার দিন যদি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বড় ঈদের দিন হয়, হাদীছ শরীফের ভাষায় ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ হয় তাহলে সৃষ্টি জগতের সবার রসূল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উনার আগমন বা বিলাদত শরীফের দিন ও তারিখ কি “সাইয়্যিদুল আইয়াদ” বা শ্রেষ্ঠ ঈদ হবে না?
বিস্তারিত

পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরোধীরা কত ষড়যন্ত্র করে নিজের চোখেই দেখুন।

মিশর দারু মিরাছুন নাববিয়্যাহ প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি রচিত “আদাবুল মুফাররাদ” কিতাব থেকে জন্ম দিবস উপলক্ষে দাওয়াত শীর্ষক পরিচ্ছদ সহ একটা হাদীছ শরীফই বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। (চিত্রে লক্ষ্য করুন) ৩৪৯ পৃষ্ঠায় ১২৫১, ১২৫২ নং হাদীছ শরীফ এর পরই পরের পৃষ্ঠায় ৩৫০ পৃষ্ঠায় এক লাফে ১২৫৪ নং হাদীছ শরীফে চলে গেছে। মাঝ খান থেকে ১২৫৩ নম্বর হাদীছ শরীফ গায়েব করে দিয়েছে। সেই হাদীছ শরীফে স্পষ্ট অাছে এক জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি নফল রোজা ভেঙ্গে মীলাদ অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, খুশি প্রকাশ করেছেন, খাবার খেয়েছেন। কতবড় জালিয়াত এই ওহাবীগুলো দেখেন। চোর চুরি করলে আলামত রেখে আসে, তারাও চুরি করে বাদ দিয়েছে বটে কিন্তু হাদীছের সিরিয়াল নম্বর ঠিক করতে পারে নাই। তাই বিরাট এক ধরা খেয়ে গেছে। কিতাব কাট ছাট করা ইহুদীদের অভ্যাস। আর এই ওহাবী এবং মীলাদ শরীফ বিরোধীরা ইহুদীপন্থী সেটা তাদের কারচুপীর মাধ্যমে প্রকাশ করলো। 
সর্বশেষ ছবি যেটা দেয়া হলো সেটাতে খেয়াল করুন আলোচ্য হাদীছ শরীফ খানা বাব সহ আছে। যেখানে বিলাদত শরীফের দাওয়াত সংশ্লিষ্ঠ হাদীছ শরীফ আছে। 





হাদীছ শরীফ গুলো অর্থ সহ দেখতে ভিজিট করুন- https://goo.gl/C28rYC
অতএব প্রমাণিত হলো কোন শ্রেনীর মানুষ পবিত্র মীলাদ শরীফ বিরোধীতা করে। এরাই ইহুদীদের মত কিতাব কারচুপীকারী, প্রতারক, মিথ্যাবাদী। এরাইতো মীলাদ শরীফের পক্ষের অসংখ্য হাদীছ গায়েব করে দিয়েছে। কিতাব গায়েব করে দিয়েছে। সনদ গায়েব করে দিয়েছে। মিথ্যা পন্ডুলিপী রচনা করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এদের থেকে সাবধান...........।
বিস্তারিত

হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি জন্মঅনুষ্ঠান বা মীলাদ শরীফ পালন করার হাদীছ বর্ণনা করেছেন

পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী অস্বীকারকারীরা বলে হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি কি এই অনুষ্ঠান পালন করার কথা কোন হাদীছ শরীফে এনেছেন? আর জন্মদিন পালন করা খৃষ্টানদের কালচার। আপনারা কেন তা পালন করেন?
মজার কথা হলো আমীরুল মু’মিনিন ফিল হাদীছ হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মীলাদ শরীফ পালন করা পক্ষে উনার কিতাবে দুইটি বাব রচনা করে দুইখানা হাদীছ শরীফ এনেছেন। উক্ত হাদীছ শরীফে স্পষ্ট ভাবেই আমরা দেখতে পাই জন্মগ্রহন উপলক্ষে দাওয়াত দেয়া, অনুষ্ঠান করা, খাদ্য খাওয়ানো সবই সুন্নতের অর্ন্তভূক্ত। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবের নাম হচ্ছে “আল-আদাবুল মুফরাদ”।

ইমাম হযরত বুখারী রহতুল্লাহি আলাইহি রচিত আদাবুল মুফাররাদ কিতাব


বিশ্ব বিখ্যাত এই কিতাবের ৬০২ নং বাব যার নাম হচ্ছে 
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – (শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত) এই অধ্যায়ের অধীনে একটা হাদীছ শরীফ এনেছেন। উক্ত হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রোযা ভঙ্গ করে শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াতের খানা খেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,



আদাবুল মুফাররাদ কিতাবে ৬০২ নং বাবের শিরোনাম ও হাদীছ শরীফ


عَنْ حَضْرَتْ بِلَالِ بْنِ كَعْبٍ الْعَكِّيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ زُرْنَا حَضْرَتْ يَـحْيَى بْنَ حَسَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـي قَرْيَتِهِ اَنَا وَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ بْنُ اَدْهَمَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ قَرِيرٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ مُوسَى بْنُ يَسَارٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَجَاءَنَا بِطَعَامٍ، فَاَمْسَكَ حَضْرَتْ مُوسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ حَضْرَتْ يَـحْيَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَمَّنَا فِـي هٰذَا الْمَسْجِدِ رَجُلٌ مِنْ بَنِي كِنَانَةَ مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَنَّى حَضْرَتْ اَبَا قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً، يَصُوْمُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، فَوُلِدَ لِاَبِـيْ غُلَامٌ، فَدَعَاهُ فِـي الْيَوْمِ الَّذِيْ يَصُوْمُ فِيْهِ فَاَفْطَرَ، فَقَامَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَكَنَسَهُ بِكِسَائِهِ، وَاَفْطَرَ حَضْرَتْ مُوْسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَضْرَتْ اَبُو عَبْدِ اللهِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَبُو قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اسْـمُهُ جَنْدَرَةُ بْنُ خَيْشَنَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ.

অর্থ : “হযরত বিলাল ইবনে কা’বিল ‘আক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি, হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল আযীয ইবনে কুদাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মূসা ইবনে ইয়াসার ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাসতিনী রহমতুল্লাহি আলাইহির সাথে উনার গ্রামে গিয়ে সাক্ষাত করলেন। হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাস্তিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাদের জন্য খাবার আনলেন। হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি রোযাদার হওয়ায় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিনানা গোত্রীয় একজন ছাহাবী, যাঁর উপনাম হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চল্লিশ বছর যাবত এই মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি এক দিন রোযা রাখেন এবং এক দিন বিরতি দেন। আমার একজন ভাই জন্মগ্রহণ করলে আমার পিতা উনাকে দাওয়াত দেন। সেটি ছিল উনার রোযা রাখার দিন। তিনি রোযা ভাঙ্গলেন। হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে উনার চাদরখানা হাদিয়া দেন এবং হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহিও রোযা ভাঙ্গেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ছাহাবী হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক হযরত জানদারা ইবনে খায়শানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (আদাবুল মুফরাদ ৪৬০ পৃষ্ঠা: বাবুদ্ দা’ওয়াতি ফীল বিলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৩)
এই হাদীছ শরীফ থেকে আমরা দেখতে পেলাম একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নফল রোজা ভঙ্গ করেও জন্মদিন অনুষ্ঠানের হাজির হয়েছেন খাবারও খেয়েছেন। বিরোধীতাকারীরা কি এখন উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বিদয়াতি বলবে? নাউযুবিল্লাহ।
হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত কিতাবের ৬০৪ নং বাব যার নাম হচ্ছে 
بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ - সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা) এখানে আরো একটি সহীহ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। 

আদাবুল মুফাররাদ কিতাবে ৬০৪ নং বাবের শিরোনাম ও হাদীছ শরীফ

আর এই হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, এক দুইজন নয় বরং একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দাওয়াতে এসে খাওয়া দাওয়া  করেছেন এবং শিশুর জন্য দোয়া করেছেন,

عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ بْنَ قُرَّةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَقُوْلُ لَمَّا وُلِدَ لِـي اِيَاسٌ دَعَوْتُ نَفَرًا مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَطْعَمْتُهُمْ فَدَعَوْا فَقُلْتُ‏‏ اِنَّكُمْ قَدْ دَعَوْتُـمْ فَبَارَكَ اللهُ لَكُمْ فِيْمَا دَعَوْتُـمْ وَاِنّـيْ اِنْ اَدْعُوْ بِدُعَاءٍ فَاَمّنُوْا قَالَ‏ فَدَعَوْتُ لَهُ بِدُعَاءٍ كَثِيْرٍ فِـيْ دِينِهِ وَعَقْلِهِ وَكَذَا قَالَ‏‏ فَاِنّـيْ لَاَتَعَرَّفُ فِيْهِ دُعَاءَ يَوْمِئِذٍ‏.‏
অর্থ : “হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উনার আওলাদ ইয়াস জন্মগ্রহণ করলে তিনি হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে দাওয়াত করে খাবার পরিবেশন করেন। উনারা দোয়া মুবারক করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনারা দোয়া মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক আপনাদের দোয়া মুবারকের উসীলায় আপনাদের বরকত দান করুন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন বললেন, তিনিও কতগুলো দোয়া করবেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যেন আমীন বলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি উনার আওলাদের দ্বীনদারি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের জন্য অনেক দোয়া করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি সেদিনের দোয়ার প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।” (আদাবুল মুফরাদ ৪৬১ পৃষ্ঠা  : বাবুদ্ দু‘য়ায়ি ফীল বিলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৫) 


উক্ত হাদীছ শরীফ থেকেও আমরা দেখতে পেলাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন জামায়াত বদ্ধ ভাবে জন্ম অনুষ্ঠানে যেতেন এবং দোয়া পাঠ করতেন, পরিশেষে খাবার খেতেন। আর এটাই খাছ সুন্নতী ত্বরীকা। যারা আজ বিরোধীতা করতে করতে বিদয়াত শিরিক ফতোয়া দিচ্ছে, খৃষ্টানদের কালচার বলছে তারা কি জানে এটা কতবড় বেয়াদবি? তারা পক্ষান্তরে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের বিরোধীয় লিপ্ত হয়ে বেঈমান হয়ে পড়ছে। সেইসাথে সাধারন মানুষকেও বিভ্রান্ত করছে। সূতরাং আমরা যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে অনুষ্ঠান করি, খুশি প্রকাশ করি, খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করি সেটা অবশ্যই সুন্নতের অর্ন্তভূক্ত। যা উপরোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ হয়। আল্লাহ পাক সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।
বিস্তারিত

নেক কাজে আহবান করলেই নেকী পাওয়া যাবে

নেক কাজে আহবান করলেই নেকী পাওয়া যাবে
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে পথ প্রদর্শন করে, যে ব্যক্তি তার পথ অনুসরণ করবে, তার সওয়াবে কমতি করা ছাড়াই তার সমপরিমাণ সওয়াব পথ প্রদর্শনকারী পাবে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে, এর দ্বারা যে ব্যক্তি গোনাহে লিপ্ত হবে, তার গোনাহের মাঝে কম করা ছাড়াই এর সমপরিমাণ গোনাহ আহবানকারী পাবে।"
.
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯১৬০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৭৪}
বিস্তারিত

মুসলমানের জিন্দেগীটাই ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট

মুসলমানের জিন্দেগীটাই ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট

ইবাদত অর্থ গোলামি করা, আমল করা, কাজ করা। আল্লাহ তায়ালা ও প্রিয় নাবী কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم)-এঁর কথামতো কা’জ করাকে ইবাদাত বলে।
যেমন- আমরা মানুষের সাথে কথা বলার সময় মিথ্যা কথা বলি না। কেননা, আল্লাহ মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। এমনকি লেখাপড়া, খাওয়া-পরা, চলাফেরা, ঘুমানো সবই ইবাদত। 
এছাড়াও ইবাদত আছে। যেমন- সালাম দেওয়া, বাবা-মায়ের কথামতো চলা, জীবে দয়া করা, রোগীর সেবা করা, ইয়াতিম-মিসকিনকে সাহায্য করা, সত্য কথা বলা, সর্বোতভাবে জনস্বার্থে কাজ করা, সর্বপ্রকার আমলে সালেহ্ বা সৎকাজের প্রচেষ্টা করা, অসৎকাজকে রোধ করা ইত্যাদি।

🌠 আল্লাহর নির্দেশের আওতায় হলে সঙ্গ, সঙ্গীর সাথে অবস্থানও ইবাদত।
যেমন, আল্লাহ্‌ পাক ইরশাদ করেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ 
অর্থাৎ : “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্‌কে ভয় করো এবং যারা সত্যবাদী (কথা ও কাজে) তাদের সঙ্গে থাকো।”
[সূরা তাওবাহ্, (৯): আয়াত শরীফ ১১৯।]
হাদীস থেকে আরেকটি দৃষ্টান্ত :
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنك لن تنفق نفقة تبتغي بها وجه الله إلا أجرت عليها حتى ما تجعل في فم امرأتك) .أخرجه البخاري)
অর্থাৎ : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : তুমি যা কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন (আমলে সালেহ) এর নিয়্যতে খরচ করবে অবশ্যই তার পুরস্কার পাবে। এমনকি, তুমি যা কিছু তোমার স্ত্রীর মুখে দিয়েছ তারও সওয়াব পাবে।[বর্ণনায় : বুখারী]

🌠 আখেরাতে প্রতিটি কর্মের হিসাব নেয়া হবে। ভালোকাজ হলে তা আল্লাহর ইবাদত, আল্লাহরই দাসত্ব।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, 
﴿ فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ وَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ شَرّٗا يَرَهُۥ ٨ ﴾ [الزلزلة: ٧، ٨] 
অর্থাৎ : ‘অতএব, কেউ অণু পরিমাণ ভালোকাজ করলে তা সে দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও সে দেখবে’।
[সূরা আয-যিলযাল, আয়াত : ৭-৮।]
অর্থাৎ, তোমরা যে পুণ্যকর্ম সম্পাদন করেছ তা সামনে আসবে, আর যে মন্দ কাজ করেছ তাও সামনে উপস্থিত পাবে।

🌠 মানুষ সৃষ্টিই হয়েছে আল্লাহর ইবাদাতের জন্যে।
আল্লাহ রাববুল আলামীন ঘোষণা করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
অর্থাৎ : ‘আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা কেবল আমারই ইবাদত করবে’।
[সুরা যারিয়াত (৫১): আয়াত শরীফ ৫৬।]
আল্লাহর ইবাদাতকারী আল্লাহর 'আবদ'। 'আবদ' দ্বারা আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধের আজ্ঞাবহ, তাঁর দাসত্ব-স্বীকারকারী কাউকে উদ্দেশ্য করা হয় তবে এ দাসত্বের আওতায় শুধু মুমিনগণ পড়ে, কাফেরেরা নয়। কেননা মুমিনরাই হলো আল্লাহ্‌র প্রকৃত দাস। যারা একমাত্র তাঁকে তাদের প্রতিপালক হিসেবে মানে এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত (দাসত্ব) করে। তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে না।
ইবাদতের এ পরিচয়ের আওতায় শাহাদাতাইন (কালিমা ও রিসালাতের দুইটি সাক্ষ্যবাণী), সালাত, হজ্ব, সিয়াম, জিহাদ, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান, ফেরেশতা-রাসূল-শেষ বিচারের দিনের প্রতি ঈমান...ইত্যাদি সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
যেমনঃ
إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ 
অর্থাৎ : ‘আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছু বিশ্বজাহানের রব আল্লাহর জন্য’।
[সুরা আন‘আম (৬): আয়াত শরীফ ১৬২।]
কাজেই আল্লাহর বান্দাহ প্রতিনিয়ত নিজেকে পর্যবেক্ষণ করে তার যাপিত সময়ে নিয়োজিত সকল কর্ম, প্রতিমুহূর্তের ক্রিয়াকলাপ আল্লাহর ইবাদাতের আওতায় হচ্ছে কি না। যাতে পরবর্তীতে মহান আল্লাহর দরবারে আল্লাহর ইবাদাত বা দাসত্ব বিরোধী হওয়ার কারণে জবাবদিহি করতে না হয়। জবাবদিহির জন্যে উপস্থিত হতে না হয়।
যেমন আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেনঃ
فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ 
عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ 
অর্থাৎ : সুতরাং আপনার রবের শপথ, আমি অবশ্যই তাদের সকলকে প্রশ্ন করবো সে সম্পর্কে, যা কিছু তারা করতো।
[সুরা হিজর (১৫): ৯২-৯৩।]

🌠 বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপকে আল্লাহর ইবাদাত কিনা যেমন মূল্যায়ণ করা হবে, অনুরুপে ইবাদাত কিনা মূল্যায়ণ করা হবে মনের অবস্থাকেও।
অপর আয়াতে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমানঃ
لِّلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَإِن تُبْدُوا مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللَّهُ ۖ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ 
অর্থাৎ : আল্লাহরই, যা কিছু আসমানসমূহে রয়েছে, এবং যা কিছু যমীনে রয়েছে। আর যদি তোমরা প্রকাশ করো যা কিছু তোমাদের অন্তরে রয়েছে কিংবা গোপন করো, আল্লাহ তোমাদের থেকে সেটার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন আর যাকে ইচ্ছা করবেন শাস্তি দেবেন; এবং আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর উপর শক্তিমান।
[কোরআনুল কারিম; সুরা বাকারাহ (০২): আয়াত শরীফ ২৮৪।]
কাজেই আল্লাহর ইবাদাতের ক্ষেত্র হচ্ছে সমগ্র জীবন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাতের সীমা-পরিসীমা। মৃত্যুর মুহূর্তটিও আল্লাহর একজন আব্দের জন্যে আল্লাহর ইবাদাতবিহীন অতিবাহিত হতে পারে না, হয় না।
তাই ইরশাদ হয়েছেঃ
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ 
অর্থাৎ : আর মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত আপন রবের ইবাদতের মধ্যে থাকুন! 
[কোরআনুল কারিম; সুরা হিজর (১৫): ৯৯।]

🌠 মুসলিমের প্রতিটি বাচনভঙ্গিও ইবাদতরুপে পরিগনিত হয়।
তা এ কারণে যে একজন মুসলিমের প্রতিটি কাজই ইবাদত – ইসলাম গ্রহণের পরে বা একজন ঈমানদার ইসলামের উপর অবিচল থাকার মাধ্যমে সর্বদা আব্দুল্লাহ্ বা আল্লাহর বান্দার পরিচয়ে থাকে, আল্লাহর দাসত্ব বা গোলামীর উপর থাকে। তার খাওয়া, ঘুমানো, হাসি-কান্না ইত্যাদি সবই ইবাদত। কারো মনের বিষণ্ণতা দূর করা কিংবা ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তার সাথে খেলা করাও ইবাদত। এমনকি সমাজের খারাপ ও দুষ্ট ছেলেদের সাথে যদি এই নিয়তে চলাফেরা কর হয় যে, তাদের সাথে চলাফেরা করে তাদের খারাপ স্বভাবগুলো দূর করবো এবং তাদেরকে ভালো দিকে আহ্বান করবো তাহলে খারাপ ও দুষ্ট ছেলেদের সাথে চলাফেরা করেও নেকী লাভ হবে।

একটি হাদিসে এসেছে, হযরত বুরায়দা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘মানুষের ৩৬০ টি অস্থি-সন্ধি আছে। তাকে অবশ্যই প্রতিটির জন্যে সাদাকাহ দিতে হবে।’ তারা (সাহাবীরা) বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী, এটা কার পক্ষে সম্ভব?’ তারা মনে করেছিলেন যে, এটা অর্থনৈতিক সাদাকাহ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, ‘মসজিদের কোন নোংরা জিনিসের ওপরে কেউ যদি মাটি চাপা দেয় তাহলে সেটাও সাদাকাহ, মানুষের চলাচলের পথ থেকে বাধা সরানোও সাদাকাহ।’
[বর্ণনাঃ আবু দাউদ ও ইবনে খুজায়মা।]

অপর একটি হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“প্রত্যেহ যখন সূর্য উঠে মানুষের (শরীরের) প্রত্যেক গ্রন্থির সাদকাহ্ দেয়া অবশ্য কর্তব্য।
- দু’জন মানুষের মাঝে ইনসাফ দেয়া হচ্ছে সাদকাহ্,
- কোন আরোহীকে তার বাহনের উপর আরোহন করতে বা তার উপর বোঝা উঠাতে সাহায্য করা হচ্ছে সাদকাহ্,
- ভাল কথা হচ্ছে সাদকাহ্,
- সালাতের জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ হচ্ছে সাদকাহ্ এবং
- কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে সাদকাহ্।”
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারী; হাদীস ২৯৮৯, মুসলিম; হাদীস ১০০৯।]

এ রকম তথ্য আরো বহু হাদিসে আছে।
অন্ধ, বোবা, দুর্বলের ও দুস্থের প্রতি দয়া প্রদর্শনের উপদেশ রয়েছে এবং এসব কাজকে সাদাকাহ ও ইবদাহ বলে গণ্য করা হয়েছে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে মুসলমান সর্বদা পুণ্য কাজের উৎস হিসেবে বিরাজমান। এভাবে অন্যেরও উপকার করা হচ্ছে আবার নিজের মধ্যেও সদগুণের বিকাশ ঘটছে, সেই সাথে অসৎবৃত্তি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা থেকে নিরাপদ থাকা হচ্ছে।

একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি রহমতপ্রাপ্ত যাকে আল্লাহ সৎকর্মের চাবি এবং অসৎকর্মের তালা বানিয়েছেন।’
[বর্ণনাঃ ইবনে মাজা।]
কাজেই নামায-রোযাই ইবাদত নয়। আল্লাহর হুকুমমতো করলে সব কাজই ইবাদত।
অবশ্য একটু পার্থক্য আছে।

নামায-রোযা-যাকাত-হজ্জ হলো বুনিয়াদী (Foundational) ইবাদত। এসব ইবাদতের দ্বারা আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয় (to be practised); যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়। ঐ চারটি ইবাদত অন্য সব কাজকে ইবাদত বানিয়ে দেয়।

🌠 বুনিয়াদী চারটি ইবাদাতঃ
নামাজঃ
কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي 
অর্থাৎ : নিশ্চয়, আমি হলাম ‘আল্লাহ্’, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং তুমি আমার বন্দেগী করো এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম রাখো। 
[কোরআনুল কারিম; সুরা ত্ব-হা (২০): আয়াত শরীফ ১৪।]
মানবের দৈনন্দিন বাস্তব জীবনে নামাযের ব্যবহারিক কার্যকরী ফলাফল তথা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ 
অর্থাৎ : হে মাহবূব! পাঠ করুন যে কিতাব আপনার প্রতি ওহী করা হয়েছে এবং নামায ক্বায়েম করুন! নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং নিশ্চয় আল্লাহর স্মরণ সর্বাপেক্ষা বড় এবং আল্লাহ্ জানেন যা তোমরা করো।
[কোরআনুল কারিম; সুরা আল আনকাবুত (২৯): আয়াত শরীফ ৪৫।]
তাহলে নামায হলো আল্লাহর এমন ইবাদাত যা দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয়; যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়।

রোজাঃ
স্মরণীয়, ‘তাক্বওয়া’ হচ্ছে সমস্ত আমল-ইবাদাতের মূল। তাই আল্লাহ পাক তিনি তাক্বওয়া হাছিল করার জন্য বান্দাদের আদেশ করেছেন-
تزودوا فان خير الزاد التقوى
অর্থ: “তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।
[কোরআনুল কারিম; সূরা বাক্বারা শরীফ (০২): আয়াত শরীফ ১৯৭।]
‘তাক্বওয়া’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহ ভীতি। অর্থাৎ আল্লাহ পাককে ভয় করে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ হতে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার নাম তাক্বওয়া।
এই তাক্বওয়া অর্জনের জন্যেই বুনিয়াদী ইবাদাত রোজার বিধান বা রোজা ফরজ হওয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমানঃ
يايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون .
অর্থাৎ : “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে; যেরূপ ফরয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর। এর মাধ্যমে অবশ্যই তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করতে পারবে।”
[কোরআনুল কারিম; সূরা বাক্বারা (০২): আয়াত শরীফ ১৮৩।]
তাহলে নামাযের ন্যায় দেখা যাচ্ছে রোজাও হলো আল্লাহর এমন ইবাদাত যা দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয়; যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়।

যাকাতঃ
যাকাত অর্থ হচ্ছে যা পরিশুদ্ধ করে। ইসলামে যাকাত হচ্ছে এক প্রকার আর্থিক ইবাদাত। এটি শরীয়ী নির্ধারিত নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর আর্থিক সাদাকাহর একটি ফরজ ইবাদাত। যা ধনীদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ থকে ধনীরা দরিদ্র মুসলমানকে সাদাকাহ (পূণ্যময় কাজ) হিসেবে দিতে হয়।
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাতই শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়।
উল্লেখ্য, নিসাব পরিমাণ হলেই যাকাত কোনো ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হয় এবং তখন তার উপর 'যাকাত' নামক ফরয বর্তায়; অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরয।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার।
কুরআনে নামাজের পরেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে উল্লেখিত হয়েছে এই যাকাত।
এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۝۱۱۰
অর্থাৎ : ‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন।
[কোরআনুল কারিম; সূরা বাকারা (০২): আয়াত শরীফ ১১০।]
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۝۵۶
অর্থাৎ : ‘তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’
[কোরআনুল কারিম; সূরা নূর : আয়াত শরীফ ৫৬।]
সূরা নিসার ১৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য ‘আজরুন আযীম’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوةَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۠۝۱۶۲
অর্থাৎ : ‘এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’
অন্য আয়াতে যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ۝۱۰۳
অর্থাৎ : ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’
[কোরআনুল কারিম; সূরা তাওবা : আয়াত শরীফ ১০৩।]
এছাড়া কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, সালাত ও যাকাতের পাবন্দী ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রশ্নই অবান্তর। কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে, যেখানে খাঁটি মু’মিনের গুণ ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে সেখানে সালাত-যাকাতের কথা এসেছে অপরিহার্যভাবে।
কুরআনের দৃষ্টিতে প্রকৃত পুণ্যশীলদের পরিচয় যেখানে দেওয়া হয়েছে সেখানে সালাত-যাকাতের উল্লেখ এসেছে। অর্থাৎ প্রকৃত পুণ্যশীলদের গুণাবলী অর্জনের জন্যে যাকাত প্রদানের ঐকান্তিক ইচ্ছা লালণ করতে হবে।
ইরশাদ হয়েছেঃ
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ 
অর্থাৎ : কোন মৌলিক পূণ্য (good deeds) এ নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে হাঁ, মৌলিক পূণ্য হলো এ যে, ঈমান আনবে আল্লাহ, ক্বিয়ামত-দিবস, ফিরিশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের উপর; আল্লাহর প্রেমে আপন প্রিয় সম্পদ দান করবে আত্মীয়-স্বজন, এতিমগণ, মিসকীনগণ, মুসাফির ও সাহায্য প্রার্থীদেরকে আর গর্দানসমূহ মুক্তকরণে; এবং নামায কায়েম রাখবে ও যাকাত প্রদান করবে। আর আপন প্রতিশ্রুতি পূরণকারীরা যখন অঙ্গীকার করে এবং ধৈর্যধারণকারীরা বিপদে, সংকটে এবং জিহাদের সময়। এরাই হচ্ছে- ঐসব লোক, যারা আপন কথা সত্য প্রমাণ করেছে এবং এরাই হচ্ছে খোদাভীরু। 
[কোরআনুল কারিম; সূরা বাকারা (০২): আয়াত শরীফ ১৭৭।]
মুমিনের বন্ধু কারা-এই প্রশ্নের উত্তরেও সালাত-যাকাতের প্রসঙ্গ শামিল রয়েছে।
যেমনঃ
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ 
অর্থাৎ : নিশ্চয় তোমাদের বন্ধু তো, আল্লাহ্ এবং তার রসূল ও ঈমানদারগণ যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহরই সামনে বিনত হয়। 
[কোরআনুল কারিম; সূরা মায়েদা (০৫): আয়াত ৫৫।]
‘সৎকর্মপরায়ণদের বৈশিষ্ট্য ও কর্মের তালিকায় সালাত-যাকাতের প্রসঙ্গ অনিবার্য।
ইরশাদ হয়েছেঃ
هُدًى وَرَحْمَةً لِّلْمُحْسِنِينَ 
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ 
أُولَٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ 
অর্থাৎ : পথ নির্দেশনা ও দয়া সৎকর্মপরায়ণদের জন্য। তারা ওই সব লোক, যারা নামায ক্বায়েম রাখে ও যাকাত প্রদান করে এবং আখিরাতের উপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে; তারাই আপন রবের হিদায়তের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।
[কোরআনুল কারিম; সূরা লুকমান (৩১): আয়াত শরীফ ৩-৫।]
মসজিদ আবাদকারীদের পরিচয় জানতে চাইলেও সালাত-যাকাত তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
যেমনঃ
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ ۖ فَعَسَىٰ أُولَٰئِكَ أَن يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ 
অর্থাৎ : আল্লাহর মসজিদসমূহের তারাই আবাদ করে, যারা আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান আনে, নামায কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না; সুতরাং এটাই সন্নিকটে যে, এসব লোক সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তুর্ভুক্ত হবে। 
[কোরআনুল কারিম; সূরা তাওবা (০৯): ১৮।]
কুরআন মজীদ কাদের জন্য হেদায়েত ও শুভসংবাদ দাতা-এর উত্তর পেতে চাইলেও সালাত-যাকাত অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমানঃ
هُدًى وَبُشْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ 
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ 
অর্থাৎ : হিদায়ত ও সুসংবাদ ঈমানদারদের জন্য। তারা ওই সব লোক, যারা নামায ক্বায়েম রাখে ও যাকাত প্রদান করে এবং যারা আখিরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।
[কোরআনুল কারিম; সূরা নামল : ৩।]
ভূপৃষ্ঠে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভের পরও মুমিনদের অবস্থা কী তা জানতে চাইলে সালাত-যাকাতই অগ্রগণ্য।
ইরশাদ হয়েছেঃ
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ ۗ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ 
অর্থাৎ : ওই সব লোক যে, যদি আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করি, তবে তারা নামায ক্বায়েম রাখবে, যাকাত দেবে, সৎকর্মের নির্দেশ দেবে এবং অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখবে; এবং আল্লাহরই জন্য সমস্ত কর্মের পরিণাম। 
[কোরআনুল কারিম; সূরা হজ্জ্ব (২২): আয়াত শরীফ ৪১।]
বিধর্মী কখন মুসলিম ভ্রাতৃত্বে শামিল হয়- এ প্রশ্নের উত্তরে তাওবার সঙ্গে সালাত-যাকাতও উল্লেখিত।
ইরশাদ হয়েছেঃ
فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ ۗ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ 
অর্থাৎ : অতঃপর যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম রাখে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই; এবং আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি জ্ঞানীদের জন্য।
[কোরআনুল কারিম; সূরা তাওবা (০৯): ১১।]
দ্বীনের মৌলিক পরিচয় পেতে চাইলে সালাত-যাকাত ছাড়া পরিচয় দান অসম্ভব।
ইরশাদ হয়েছেঃ
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ 
অর্থাৎ : এবং ওই সব লোককে তো এ আদেশই দেওয়া হয়েছে যেন তারা আল্লাহর ইবাদত করে শুধু তারই বিশ্বাস রেখে এক তরফা হয়ে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দেয়। আর এটা হচ্ছে সরল দ্বীন। 
[কোরআনুল কারিম; সুরা বাইয়্যিনাহ (৯৮): আয়াত শরীফ ৫।]
অতএব সামর্থ্যবানদের ক্ষেত্রে সম্পদ থেকে পুণ্যশীলতা চর্চার জন্যে দরিদ্রদের প্রতি যাকাত নামক অার্থিক সাদাকাহ প্রদান আল্লাহর এমন ইবাদাত যা দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর রাহে অার্থিক সাদাকাহ্-খায়রাতের মাধ্যমে আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয়; যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়।

হজ্জ্বঃ
হজ্জ বা হজ্জ্ব (আরবি ভাষায়: حج‎ হজ্জ্ব) ইসলাম ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত বা ধর্মীয় উপাসনা। এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ।
শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্ব সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক।

ইসলামে হজ্জের গুরুত্বঃ
হাদিসে নবী কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেনঃ "শয়তান আরাফার দিন হতে অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না, কেননা ওই দিন আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন।"
তিনি (صلى الله عليه و آله و سلم) আরো ইরশাদ ফরমানঃ "একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ্জ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেস্ত ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।"
হজ্জ ক্ববুল হওয়ার যে শর্ত সে শর্তের সম্পূর্ণই হচ্ছে সৎকাজ সম্পাদনে নিরন্তর থাকা। পাপকাজ থেকে সম্পূর্ণরুপে বিরত হয়ে যাওয়া।
যেমনঃ
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم مَنْ حَجَّ هَذَا الْبَيْتَ، فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ-
অর্থাৎ : "যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ্জ করে এবং অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ্জ থেকে এমতাবস্থায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে। অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রূপই হয়ে যায়।"
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারী হা/১৫২১; মুসলিম হা/৩২৯১।]

🌠 মুমিনের জীবনের দীনদারী ও দুনিয়াদারী আলাদা আলাদা নয়। গোটা জীবনই দীনদারী ও ইবাদত।
বান্দাহ্‌ সকল কাজের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তি কামনা করবে।
ইরশাদ হচ্ছেঃ

وَسَيُجَنَّبُهَا الْأَتْقَى 
الَّذِي يُؤْتِي مَالَهُ يَتَزَكَّىٰ 
وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُ مِن نِّعْمَةٍ تُجْزَىٰ 
إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلَىٰ 
وَلَسَوْفَ يَرْضَىٰ 
অর্থাৎ : “আর সে আগুন থেকে রক্ষা পাবে; যে পরম মুত্তাকী। যে স্বীয় সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে। তার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদান হিসেবে নয়। বরং তার মহান প্রতিপালকের সন্তোষ লাভের প্রত্যাশায় এবং সেতো অচিরেই সন্তোষ লাভ করবে।”
[কোর'আনুল কারিম; সূরা লাইল, (৯২): আয়াত শরীফ ১৭-২১]
সুতরাং একনিষ্ঠতা (ইখলাস) এবং বিশ্বস্ততা থাকতে হবে। এ গুণদুটি প্রকাশ পাবে একজন মুমিনের আল্লাহ্‌র আদেশ পালন, তাঁর নিষেধ থেকে বিরত থাকা, তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা, অক্ষমতা ও অলসতা ত্যাগ করা এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে সংযম অবলম্বন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।
মানুষের জীবন আল্লাহর দাসত্বের অধীন না হলে শয়তানের দাসত্বের অধীন হতে বাধ্য।
“আল্লাহ্‌র দাসত্ব” ভালোবাসা, ভয়, আশা ইত্যাদিকে শামিল করে।
সুতরাং বান্দা তার রবকে ভালোবাসবে, তাঁর শাস্তিকে ভয় করবে, তাঁর সওয়াব ও করুণার প্রত্যাশায় থাকবে। এই তিনটি আল্লাহর দাসত্বের মৌলিক উপাদান।
যেমনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ۩ 
অর্থাৎ : হে ঈমানদারগণ! রুকূ ও সাজদা কর এবং আপন রবের বন্দেগী কর আর সৎকর্ম (আমলে সালেহ) কর এ আশায় যে, তোমরা সাফল্য লাভ করবে। 
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা হাজ্জ (২২): আয়াত ৭৭।]

🌠 আল্লাহর ইবাদাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরহেজগারিতা অর্জন। আর পরহেজগারিতা হচ্ছে আল্লাহকে সন্তুষ্টকরণ।
যেমনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ 
অর্থাৎ : হে মানবকুল! (তোমরা) স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদত করো, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন; এ আশা করে যে, তোমাদের পরহেযগারী অর্জিত হবে।
[কোরআনুল কারিম; সুরা বাকারাহ : আয়াত ২১।]

🌠 ঈমানদার ব্যক্তি সর্বদা সৎকাজে ব্রতী হয়ে আল্লাহর নিকট থেকে কল্যাণকর প্রতিদানের জন্যে মনোনিত হন।
وَأَمَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُ جَزَاءً الْحُسْنَىٰ ۖ وَسَنَقُولُ لَهُ مِنْ أَمْرِنَا يُسْرًا 
অর্থাৎ : এবং যে ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ (আমলে সালেহ) করেছে, তবে তার প্রতিদান কল্যাণই রয়েছে এবং অবিলম্বে আমি তাকে সহজ কাজ বাতলিয়ে দেবো। 
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা কাহাফ (১৮) : আয়াত ৮৮।]

🌠 প্রত্যেকেই তার ক্ষমতা অনুসারে আল্লাহর ইবাদাত, আল্লাহর গোলামীর মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারে।
যেমনঃ
لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ ۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ ۚ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا ۚ سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا 
অর্থাৎ : বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় (আমলে সালেহ) করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় (আমলে সালেহ) করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টকর পরিস্থিতির পর সহজতা এনে দেবেন।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা তালাক (৬৫): আয়াত ৭।]

🌠 সৎ কাজের (আমলে সালেহর) নির্দেশ, আর অসৎকর্মের নিষেধ আল্লাহর অন্যতম ইবাদাত।
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ 
অর্থাৎ : হে আমার পুত্র! নামায ক্বায়েম রাখ এবং সৎ কাজে (আমলে সালেহ) নির্দেশ দাও আর অসৎকর্মে নিষেধ কর এবং যে বিপদাপদ তোমার উপর আপতিত হয় সেটার উপর ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয় এগুলো সাহসিকতার কাজ।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা লোকমান (৩১): আয়াত ১৭।]

🌠 দাম্ভিকতা, আত্মম্ভরীতামুক্ত জীবন-যাপনও আল্লাহর ইবাদাত।
কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ 
অর্থাৎ : আর মানুষের প্রতি তোমার মুখ ঘুরিয়ে নিও না এবং পৃথিবীতে মহোল্লাসে চলাফেরা করোনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ কোন দাম্ভিক আত্মম্ভরীকে পছন্দ করেন না।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা লোকমান (৩১): আয়াত ১৮।]

🌠 মু'মিনের চলাফেরাও আল্লাহর ইবাদাত।
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ ۚ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ 
অর্থাৎ : আর পদচারণায়/চলাফেরায় মধ্যবর্তিতা/ মধ্যপন্থা (اقْصِدْ) অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে সমস্ত আওয়াজের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কর্কশ হচ্ছে গাধারই স্বর।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা লোকমান (৩১): আয়াত ১৯।]

🌠 পরহেজগারিতা অর্জনের জন্যে আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ 
অর্থাৎ : হে মানবকুল! (তোমরা) স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদত করো, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন; যেন তোমাদের পরহেযগারী অর্জিত হয়।
[কোরআনুল কারিম; সুরা বাকারাহ : আয়াত ২১।]

🌠 আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদনকৃত যেকোন কাজ আল্লাহরই ইবাদাত।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :
إن الله لا يقبل من العمل إلا ما كان خالصا وابتغى به وجهه.
)أخرجه النسائي (3140) وصححه الألباني في سنن النسائي (2/659
অর্থাৎ : আল্লাহ তাআলা শুধু সে আমলই গ্রহণ করেন, যা ইখলাছের সাথে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
[গ্রন্থ সূত্র : বর্ণনায় নাসায়ী (শরীফ)।]

🌠 আল্লাহ্ স্বীয় বান্দাদের সকল কর্ম পর্যবেক্ষণ করেন। বান্দার কর্ম যখন আল্লাহরই জন্যে হয় তথা আল্লাহর দাসত্বস্বরুপ হয়, আল্লাহ্ তখন বান্দার কৃতকর্মকে খুবই গুরত্ব দিয়ে থাকেন এবং পরবর্তীতে প্রতিদানের জন্যে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। বলাবাহুল্য, তারাই মুসলমান যাদের সকল কর্মই আল্লাহরই জন্যে হয়।
لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ 
অর্থাৎ : তোমরা কখনো পূণ্য পর্যন্ত পৌছবেনা যতক্ষণ আল্লাহর পথে আপন প্রিয়বস্তু ব্যয় করবে না এবং তোমরা যা কিছু ব্যয় করো তা আল্লাহর জানা আছে।
[কোরআনুল কারিম; সুরা আলে ইমরান (০৩): আয়াত শরীফ ৯২।]
আরো বলেছেন, 
﴿وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا﴾ [النساء: 36]
অর্থাৎ : আর তোমরা কেবল আল্লাহরই ইবাদত করো এবং তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না।
[কোরআনুল কারিম; সূরা নিসা : ৩৬।]

🌠 আল্লাহর ভয়ে দিনাতিপাত করা আল্লাহরই ইবাদাত। মু'মিন যখন মৃত্যুবরণ করে সে আল্লাহর ইবাদাতে রতই থাকে, কাজেই সে তখনও অনুগত বা মুসলিমই থাকে।
আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ 
অর্থাৎ : হে ঈমানদারর! আল্লাহকে ভয় করো যেমনিভাবে তাঁকে ভয় করা অপরিহার্য এবং কখনো মৃত্যুবরণ করো না, কিন্তু মুসলমান (হয়ে)।
[কোরআনুল কারিম; সুরা আলে ইমরান (০৩): আয়াত শরীফ ১০২।]

🌠 নিচের হাদীস পাক থেকে ইসলামের মূল শিক্ষা, মূল লক্ষ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ হয়। কেননা ইসলাম হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবতা-সমতা প্রতিষ্ঠার নাম, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র-বিশ্বে শৃঙ্খলা বিধানের নাম। নিছক আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকলাপের নাম ইসলাম নয়। সেকারণে শেষ বিচারের দিনের শেষ মুহুর্তটিও ইসলামের মূল লক্ষ্য-আদর্শকে সমুন্নত করে।

সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস আছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করেছেন-
أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ؟
তোমরা কি জানো তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিঃস্ব কে?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ.
আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ব্যক্তি সে, যার অর্থ-সম্পদ নেই।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বললেন-
إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَاةٍ، وَصِيَامٍ، وَزَكَاةٍ، وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا، وَقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ، أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ.
‘আমার উম্মতের নিঃস্ব ঐ লোক, যে কিয়ামতের দিন সালাত-সিয়াম-যাকাত নিয়ে আগমন করবে কিন্তু কাউকে সে গালি দিয়েছিল, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল, কারো সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল, কারো রক্ত ঝরিয়েছিল। তো একে তার নেক আমল দিয়ে দেওয়া হবে, ওকেও তার নেক আমল দিয়ে দেওয়া হবে। যখন নেক আমলগুলো শেষ হবে তখন ঐসকল লোকের গুনাহ এই ব্যক্তির কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হবে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (এ হচ্ছে আমার উম্মতের সবচেয়ে মিসকীন, সবচেয়ে রিক্তহস্ত।) 
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮১।]

আরেকটি সহীহ হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম জানিয়েছেন, যখন জান্নাত-জাহান্নামের ফায়সালা হবে, জান্নাতীগণ জান্নাতে যাবে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাবে এর আগে একটা ব্যাপার ঘটবে।
সেই ব্যাপার হল, কোনো জান্নাতী এই অবস্থায় জান্নাতে যেতে পারবে না যে, কোনো একজন জাহান্নামীর তার কাছে কোনো পাওনা আছে।

🌠 আল্লাহ মুমিনের কোনো আমল বিনষ্ট করেন না। বস্তুতঃ মু'মিন ব্যক্তি সৎকর্ম ব্যতিত কর্মই করে না। মু'মিনের কর্মসমূহ ইবাদাত ব্যতিত কিছুই নয়। কাজেই মু'মিন ব্যক্তির কৃতকর্মের প্রতিদান প্রদানের জন্যে তা আমাদের মা'বুদ অবিলম্বে লিপিবদ্ধ করে রাখেন।
যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ
فَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِ وَإِنَّا لَهُ كَاتِبُونَ
অর্থাৎ : অতঃপর যে মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, তার প্রচেষ্টা অস্বীকৃত হবে না এবং আমি তা লিপিবদ্ধ করে রাখি।
[কোরআনুল কারিম; সুরা আল আম্বিয়া : আয়াত শরীফ ৯৪।]
আল্লাহ্‌র দাস হওয়া বান্দার জন্য সম্মানজনক; অপমানকর নয়।
কবি বলেছেন,
আপনার সম্বোধন ‘হে আমার বান্দারা’ এর অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে এবং আহমাদকে আমার নবী মনোনীত করাতে আমার মর্যাদা আরো বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন আমি আকাশের নক্ষত্রকে পায়ের নীচে মাড়িয়ে চলেছি।
মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমাদের নবীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
_____________
▆ সামান্য কাজও সামান্য নয়; আল্লাহর ইবাদাতের পরিচয়।
বিস্তারিত

ইতিহাসে সব অনুষ্ঠানকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে দীর্ঘসময়ব্যাপী আয়োজন কোনটি?

ইতিহাসে সব অনুষ্ঠানকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে দীর্ঘসময়ব্যাপী আয়োজন কোনটি?
ইতিহাসে সব অনুষ্ঠানকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে দীর্ঘসময়ব্যাপী আয়োজন কোনটি? 
যা জানা আবশ্যক, নইলে থাকবে বিরাট আফসোস!!! 
=================================================
কোন কোন আয়োজন হয় ১ দিন, কোনটি ৭দিন, কোনটা হয় ৩০ দিন। কিন্তু সারা বছর এমনকি অনন্তকালব্যাপী আয়োজন কোথাও কি কখনো দেখেছেন? নিশ্চয় বলবেন- ‘অবশ্যই না।’ কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে অনন্তকালব্যাপী এবং বিশেষভাবে ৬৩ দিনব্যাপী আয়োজন চলমান রয়েছে যিনি সর্বকালে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ উনার বিষয়ে । (reference book: the 100: a ranking of the most influential persons in history’)
#তিনি_কে: 
আল্লাহ পাক যার সম্পর্কে বলেন” আমি আপনার আলোচনাকে সমুন্নত করেছি।” (সূরা ইনশিরাহ-৪)। তিনি হচ্ছেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 
আল্লাহ পাক আদেশ করেন, ' হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ কর, যা সমস্ত জমাকৃত বিষয় থেকে শ্রেষ্ঠ (সুরা ইউনুস ৫৮)। এ আদেশ পালনার্থেই খুশি প্রকাশ করার জন্যই এ আয়োজন।
#মুল_উদ্দেশ্যঃ 
আল্লাহ পাক বলেন, “তোমাদের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে সর্বোত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে।” (সূরা আহযাব : ২১)। উনার সম্মানিত আদর্শ জানতে এবং শিখতে এ আয়োজন।
#কতদিনব্যাপী? 
অনন্তকালব্যাপী আর বিশেষ কার্যক্রম ২১ অক্টোবর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ দিনব্যাপী চলমান আছে। যে সম্পর্কে সূরা ফাতহ শরীফ রয়েছে, “তোমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমত করো, সম্মান করো এবং প্রশংসা করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ অনন্তকাল ধরে ”। যা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন বাস্তবায়ন করে আমাদের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন।
#পালন_করলে_কি_পাওয়া_যাবে?
তিনি হলেন রহমতুল্লিল আলামীন। আল্লাহ পাক বলেন “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সারা জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।(আল আম্বিয়াঃ১০৭)। এই আয়োজনে অংশগ্রহন করলে রহমত পাওয়া যাবে, শান্তি পাওয়া যাবে, বিপদ-আপদ, বালা-মুছিবত, মামলা-মোকদ্দমা, রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকা যাবে। যেমন: একবার বিশিষ্ট সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ---“ আমার পুরা সময়টাই আপনার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করবো, আপনার ছানা-ছিফত করবো? তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ”সেক্ষেত্রে আপনার সমস্ত নেক চাহিদা পূর্ণ হবে এবং সমস্ত গুনাহখতাগুলো ক্ষমা হয়ে যাবে।”
#এই_কিংবদন্তী_আয়োজনের_পৃষ্ঠপোষক_ও_উদ্যোক্তা_কে? তিনি নিশ্চয়ই কোন সাধারন ব্যক্তি নন!!!
তিনি হলেন, রাজারবাগ শরীফের সম্মানিত শায়েখ হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম । যিনি নবীজির একজন সম্মানিত বংশধর, । যিনি নিজ উদ্যোগে এই আয়োজন করে যত মেহমান আসছেন সবাইকে বরকতপূর্ণ শাহী তাবারুক খাওয়াচ্ছেন। উনার একটি বিশেষ গুন, তিনি নিজে সমস্ত সুন্নতসমূহ আমল করেন এবং সবাইকে সুন্নত অনুসরণ করতে শিক্ষা দেন। তিনি এমন কোন কাজ করেন না, যা শরীয়ত বিরুদ্ধ। । তিনি গবেষণা, লেখাপড়া ও তালিম-তালক্বিন দিয়ে সমস্ত সময়গুলো ব্যয় করেন। উনার রয়েছে কোটি কোটি টাকার দুষ্প্রাপ্য বইতে সমৃদ্ধ এক বিরাট লাইব্রেরী এবং মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ গবেষণাগার।উনার ইচ্ছা, বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মসজিদ-মাদ্রাসা স্থাপন, ইতিমধ্যে দেশজুড়ে শতাধিক স্থাপন করেছেন এবং সহস্রাধিক মসজিদ-মাদ্রাসার কাজ চলছে। আবু দাউদ শরীফের পবিত্র হাদীস শরীফে আছে- মহান আল্লাহ তায়ালা প্রতি ১০০ বছর পর পর একজন মহান ব্যক্তিত্বকে পাঠাবেন, যিনি মুসলমানদের কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণ করবেন। রাজারবাগ শরীফের সম্মানিত শায়েখ উনার জীবনী দেখলে সেই ১০০ বছরের বিশেষ মনোনিত ব্যক্তিত্বের কথাই স্মরণ হয়। 
শুধু তিনি একাই নন, উনার সম্মানিত আহালিয়াও (জীবনসঙ্গীনি) একজন বড় মাপের আলেমা যিনি হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম হিসেবে পরিচিত। উনিও নবীজির সম্মানিত বংশধর, সুবহানাল্লাহ। বিস্তারিতঃ https://goo.gl/78uoXk
#মহিলাদের_বিশেষ_সুসংবাদ: 
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে “সমগ্র দুনিয়া সম্পদপূর্ণ, আর উত্তম সম্পদ হল নেককার স্ত্রী"(মুসলিম শরীফ)। তাই ঘরে ঘরে রহমত এবং শান্তি পেতে মহিলাদের জন্যও রয়েছে প্রতিদিন বাদ যোহর থেকে খাছ পর্দার সাথে বিশেষ তালীম যেখানে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার তত্ত্বাবধানে অসংখ্য মহিলা কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ শিখছে, ইসলাম সম্পর্কে সঠিক দীক্ষা নিচ্ছে এবং অন্য মহিলাদেরও শিক্ষা দিচ্ছে। বিস্তারিতঃ https://goo.gl/vVfFGa
** সার্বিক সাফল্য, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য এ আয়োজনে অংশগ্রহন করতে সকলেই সাদরে আমন্ত্রিত।
#আর্থিকভাবে_শরীক হতে - https://goo.gl/vSx3mt
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হবে।” বিস্তারিত - https://goo.gl/XaGZXd
#যোগাযোগ:
সুন্নতি মসজিদ, রাজাবাগ শরীফ, সাইয়্যিদুল আ'ইয়াদ শরীফ গেইট, ঢাকা ১২১৭
+৮৮০১৭১১২৩৮৪৪৭, +৮৮০১৭১১২৭২৭৮২, +৮৮০১৭৯৫৬২২৯৩৫
Email: rajarbag.shareef@gmail.com
Website: http://rajarbagshareef.com
গুগল ম্যাপ- https://goo.gl/pGUzMH 
লাইভ শুনাঃ fb.com/dailyalihsan.news , /rajarbagofficial, Youtube : tinyurl.com/SASmahfil

বিস্তারিত

অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ যিনি জারী করলেন তিনি কে?

অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ যিনি জারী করলেন তিনি কে?
কি উনার পরিচয় ? 
============================================== 
সকল নবীদের নবী, রাসূলদের রাসূল, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশাংসা বর্ণনা করে সারা বিশ্বজুড়ে অনেক মাহফিল হয়। 
কোনটি হয় ১ দিন
কোনটি হয় ২ দিন
কোনটি হয় ৭দিন
কোনটা হয় ৩০ দিন।
কিন্তু সারা বছর এমনকি অনন্তকালব্যাপী মাহফিল কোথাও কি কখন দেখেছেন?
সবাই নিশ্চয় বলবেন- ‘অবশ্যই না।’
কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, বছরে ৩৬৫ দিন, এভাবে করে অনন্তকালব্যাপী জারি হয়েছে বিশেষ এক মাহফিল। মাহফিলের স্থান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাজারবাগ শরীফ এলাকায়।
মাহফিলের পৃষ্ঠপোষক, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন সম্মানিত বংশধর, যিনি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত শায়েখ আলাইহিস ছলাতু ওয়াছ সালাম হিসেবে পরিচিত। তিনি এমন একজন বিশেষ ব্যক্তিত্ব, যিনি উনার সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেছেন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসা বর্ণনা করতে। উক্ত মাহফিলে যত মেহমান আসছে সবাইকে বরকতপূর্ণ শাহী তাবারুক খাওয়াচ্ছেন।
ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত শায়েখ আলাইহিস ছলাতু ওয়াছ সালাম, তিনি নিজে সমস্ত সুন্নতসমূহ আমল করেন এবং উনার অনুসারীদেরকেও সুন্নত অনুসরণ করতে শিক্ষা দেন। তিনি এমন কোন কাজ করেন না, যা শরীয়ত বিরুদ্ধ। তিনি গবেষণা, লেখাপড়া ও তালিম-তালক্বিন দিয়ে সমস্ত সময়গুলো ব্যয় করেন । উনার আছে বিরাট লাইব্রেরী, যেখানে তিনি কোটি কোটি টাকার দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহ করেছেন এবং সে সব দুষ্প্রাপ্য বই নিয়ে তৈরী করেছেন গবেষণাগার- মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ গবেষণাগার। একই সাথে তিনি দেশজুড়ে শতাধিক মসজিদ-মাদ্রাসার স্থাপন করেছেন এবং সহস্রাধিক মসজিদ মাদ্রাসার কাজ চলছে। উনার ইচ্ছা, তিনি বিশ্বজুড়ে কয়েক কোটি মসজিদ-মাদ্রাসা স্থাপন করবেন। আবু দাউদ শরীফের পবিত্র হাদীস শরীফে আছে- মহান আল্লাহ তায়ালা প্রতি ১০০ বছর পর পর একজন মহান ব্যক্তিত্বকে পাঠাবেন, যিনি মুসলমানদের কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণ করবেন। রাজারবাগ শরীফের সম্মানিত শায়েখ উনার জীবনী দেখলে সেই ১০০ বছরের বিশেষ মনোনিত ব্যক্তিত্বের কথাই স্মরণ হয়।
শুধু তিনি একাই নন, উনার সম্মানিত আহালিয়াও হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস ছলাতু ওয়াছ সালাম একজন বড় মাপের আলেমা। উনিও হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বংশধর।উনার আমল-আখলাক মহান আল্লাহ তায়ালা মনোনিত বান্দাদের অনুরূপ। উনার তত্ত্বাবধানে অসংখ্য মহিলা কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ শিখছে, ইসলাম সম্পর্কে সঠিক দীক্ষা নিচ্ছে এবং অন্য মহিলাদেরও শিক্ষা দিচ্ছে। তিনিও মহিলাদের নিয়ে জারি করেছেন- ‘অনন্তকালব্যাপী মাহফিল’। সুবহানাল্লাহ।
বিস্তারিত

রবিউল আউওয়ালে ওয়াজ মাহফিলের আবশ্যকতা - আশরাফ আলী থানবি

রবিউল আউওয়ালে ওয়াজ মাহফিলের আবশ্যকতা - আশরাফ আলী থানবি
“ --- এ জন্য আমি কয়েক বছর যাবত এ নিয়ম করে নিয়েছি যে অতিরঞ্জনকারীদের সংশোধনের জন্য রবিউল আউওয়াল মাসের শুরুতে ওয়াজ –মাহফিলের আয়োজন করি এবং তাতে প্রাসঙ্গকিকভাবে ইলমি আলোচনাও করে থাকি।
মোট কথা ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন মুলত শরয়ী হুকুম আহকাম আলোচনার জন্য হবে এবং তাতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র জীবন বৃত্তান্ত এবং তার ফাযায়েল ও আলোচিত হবে। এ পন্থা অবশ্যই শরীয়তসম্মত , বরং মুস্তাহাব সুন্নত”। 
(তথ্য সুত্রঃ
মুল বইঃ ঈদে মিলাদুন্নবী কী শরয়ী হাইসিয়ত, অনুবাদঃ শরিয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী , লিখকঃ আশরাফ আলী থানবী ,পৃঃ ৩১

বিস্তারিত

যে কোন নিয়ামতের ওপর কৃতজ্ঞতা আদায় ও আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে - আশরাফ আলী থানবি

যে কোন নিয়ামতের ওপর কৃতজ্ঞতা আদায় ও আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে - আশরাফ আলী থানবি
“ সন্দেহ নেই যে আল্লাহতায়ালার প্রতিটি নিয়ামত শোকর ও কৃতজ্ঞতার দাবী রাখে। ------- তন্মধ্যেও যদি এমন বিশেষ নিয়ামত হয় যা সমস্ত দীনি ও দুনিয়াবী নিয়ামতের উৎস। এ নিয়ামত হলো হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভ আগমন । কারন জাগতিক সকল নিয়ামতের উৎস ও তিনিই। শুধু মুসলমানদের জন্য নয় বরং সমগ্র বিশজগতের জন্য। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন”  হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি। (সূরা আম্বিয়া ১০৭) 
--------  সুতরাং রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র বিশজগএর জন্য রহমত এবং উনার আগমন সর্বেশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হওয়া প্রমান ও যুক্তির নিরিখে সুপ্রমানিত। যখন রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অস্তিত্ব সকল নিয়ামতের উৎস। আর যে কোন নিয়ামতের উপর কৃতজ্ঞতা আদায় ও আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন” قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ.
অর্থাৎ (হে মুহম্মদ)! আপনি বলে দিন , তারা যেন শুধু আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার উপর আনন্দিত হয়। কারন, তা দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুর থেকে উত্তম”। 
এ আয়াতে আদেশসুচক ক্রিয়াপদ বিদ্যমান। তাতে আনন্দ প্রকাশের নইর্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুতরাং এ আনন্দ প্রকাশের উপর কে নিশেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে? এমন কোণ মুসলমান আছে , যে রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের উপর আনন্দিত হবেনা কিংবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেনা? 
(তথ্য সুত্রঃ 
মুল বইঃ ঈদে মিলাদুন্নবী কী শরয়ী হাইসিয়ত, লিখকঃ আশরাফ আলী থানবী ,অনুবাদঃ মাওলানা আবু তাহের রাহমানীর অনুবাদকৃত ‘শরিয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী’ , পৃঃ ৩৬,৩৭ 

বিস্তারিত

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে মীলাদ শরীফের এই পদ্মতির বর্ণনা পাওয়া যাঃ আশরাফ অালী থানবী


আপনারা যে স্ক্যান করা ছবি দেখতে পাচ্ছেন তা দেওবন্দ সিলসিলার অন্যতম আশরাফ আলী থানবী রচিত “ইছলাহুর রসুম” কিতাবের। 
উক্ত কিতাবে আশরাফ আলী থানবী ৩ প্রকার মিলাদ শরীফের কথা বলেছে। ১ম যে প্রকার সেখানে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের আলোচনা, আর্দশ মুবারক, মুজেজা মুবারক, প্রশংসা মুবারক ইত্যাদি আলোচনা। সেখানে শরীয়তের অাহকাম থেকে আলোচনা ও খারাপ কাজে নিষেধ করার বিষয় থাকবে। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনী মুবারক আলোচনা হবে। এধরনের মীলাদ শরীফকে আশরাফ আলী থানবী জায়িয ও মুস্তাহাব বলেছে। 
এখানে যে বিষয়টা লক্ষনীয় সেটা হচ্ছে আশরাফ আলী থানবী বলেছে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে মীলাদ শরীফের এই পদ্মতির বর্ণনা পাওয়া যায়।” (ইছলাহুর রসুম ১০১ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে তাদের দাবী খায়রুল কুরুনে মীলাদের কোন অস্তিত্ব ছিলো না। কোন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম মীলাদ পালন করেন নাই। অথচ আশরাফ অালী থানবী নিজেই স্বীকার করলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে মীলাদ শরীফের এই পদ্মতির বর্ণনা পাওয়া যায়। 
তাহলে বর্তমানে ঢালাও ভাবে যারা বিদয়াত বলে তারা কোন হিসাবে বিদয়াত বলে? 
আর আমরা যে মীলাদ শরীফ অায়োজন করি সেখানেও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের আলোচনা, আর্দশ মুবারক, মুজেজা মুবারক, প্রশংসা মুবারক ইত্যাদি আলোচনা থাকে। সেখানে শরীয়তের অাহকাম থেকে আলোচনা ও খারাপ কাজে নিষেধ করার বিষয় থাকে। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনী মুবারক আলোচনা হয়, সলাত সালাম পাঠ করা হয়। সূতরাং আশরাফ অালী থানবীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণ হলো, আমরা যা করি তা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে মীলাদ শরীফের সেই পদ্মতি। সুবহানাল্লাহ।
উক্ত কিতাবে আশরাফ অালী থানবী ২য় যে প্রকার মীলাদের কথা বলেছে সেটা হচ্ছে শরীয়তের খিলাপ কাজ হয়, কুরআন সুন্নাহর খেলাপ কাজ হয়, গান বাজনা সেটা পালন করা যাবে না। আমরা সেটা পালন করি না বরং তার প্রতিবাদ করি।
অতএব অামরা যারা কুরআন সুন্নাহ ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদে তর্জ তরীকা অনুযায়ী মীলাদ শরীফ অায়োজন করি তার বিরোধীতা বাদ দিতে হবে। নচেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের আমলের বিরোধীতা হয়ে ঈমান নষ্টের কারন হবে। সূতরাং সাবধান।
বিস্তারিত

মুফতে আমীনির ঈদে মিলাদের দলিল

মুফতে আমীনির ঈদে মিলাদের দলিল

কওমি আলেম, মুফতী ফজলুল হক আমিনীৱ অমূল্য এক বাণী হুবহু তুলে ধৱা হল।
"'মীলাদ' একটি আৱবী শব্দ, যাৱ অর্থ হচ্ছে জন্ম, তাহলে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এৱ অর্থ হচ্ছে ৱাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এৱ পবিত্র জন্ম ৷ এখন যদি কেউ বলে আমি মীলাদুন্নবী মানিনা ৷ তাহলে তাৱ অর্থ দাড়াবে আমি হুজুৱ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এৱ জন্ম মানিনা ৷ তাহলে কি সে মুসমান থাকতে পাৱে??
সুতাৱাং মীলাদুন্নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  কে অস্বীকাৱ কৱা যাবে না ৷ অস্বীকাৱ কৱাৱ কোন পথ নেই ৷ হুজুৱ সাঃ -এৱ উসিলায় বেঁচে আছি ৷ হুজুৱ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এৱ জন্ম যদি না হত কুৱআন অবতীর্ণ হত না ৷হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এৱ জন্মই হচ্ছে সকল বৱকতেৱ উৎস ৷

তথ্য: মাওয়ায়েজে মুজাহিদে মিল্লাত-১ পৃ: ১৬৪।
মুফতী ফজলুল হক আমিনী।
বিস্তারিত

দেওবন্দ মাদ্রসায় ৬০ বছর অধ্যক্ষ ঈদে মিলাদের দলিল

আপনারা কি জানেন দেওবন্দ মাদ্রসায় ৬০ বছর অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব কে পালন করেছে? সকলেই নাম শুনে থাকবেন তার নাম হচ্ছে ক্বারী তৈয়ব। দেওবন্দ মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেনীর মুহাদ্দিসদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার বক্তব্য বা আলোচনা গুলো একত্রে উর্দূতে ১০ খন্ডে প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশে ইসলামী ফাউন্ডেশনও সেগুলো ‘খুতবাতে হাকীমুল ইসলাম’ নামে অনুবাদ করে।
সেই বইয়ের ১৩ পৃষ্ঠায় পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিল ও জন্মবৃত্তান্ত বা তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার বিষয়ে সুন্দর কিছু কথা বলা হয়েছে। সেখানে লেখা আছে,
“রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা ইবাদতের মূল এবং আল্লাহর প্রতি গভীর অানুগত্য ও নৈকট্য লাভের উপায়, সমস্ত কামালত ও বরকতের উৎস। তাই মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্ম্পকে আলোচনা এক বিশেষ নিয়ামত, যা মুসলমানদের দান করা হয়েছে।” (খুতবাতে হাকীমুল ইসলাম ১৩ পৃষ্ঠা। প্রকাশনা: ইসলামী ফাউন্ডেশন)
উপরোক্ত দেওবন্দী আলেমের বক্তব্য আর বর্তমান সময়ের দেওবন্দ নামধারীদের বক্তব্য বিপরীত হয় কেন? বর্তমানে নিজেদের দেওবন্দ সিলসিলার দাবি করে কি করে অনেকে ঢালাও ভাবে পবিত্র মীলাদ মাহফিলের আলোচনাকে হারাম নাজায়িয বলে? 
এদের উদ্দেশ্য কি? মুরুব্বীদের বির্তকিত করে অন্য কারো মনতুষ্টি অর্জন করা। একালের দেওবন্দী ও সেকালের দেওবন্দীদের মধ্যে কারা পার্থক্য সৃষ্টি করছে?

বিস্তারিত

ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা বিশ্বে সবছেয়ে বেশি মানুষ বিশেষ গুরুত্বের সাথ পালন করে থাকে।

ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা বিশ্বে সবছেয়ে বেশি মানুষ বিশেষ গুরুত্বের সাথ পালন করে থাকে।
================================= 
যে সকল দেশে জাতীয় ছুটি- 
আফ্রিকানঃ আলজেরিয়া, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন , কমোরাস, আইভরী কোষ্ট, 
জিবুতী , মিশর, ইরিত্রিয়া, ইথোপিয়া, গাম্বিয়া, গুইনিয়া , লিবিয়া, মালি , মৌরাতানিয়া,মরক্কো , নাইজার, নাইজেরিয়া , সেনেগাল , সিয়েরা লিয়ন, সোমালিয়া, সুদান, তানজেনিয়া, তিউনিশিয়া ,টোগো (৫৪ দেশের ২৫ দেশ ) 
মধ্যপ্রাচ্যঃ 
সউদি আরব , বাহরাইন , ইরান, ইরাক, জর্দান, কুয়েত , লেবানন , ওমান, ফিলিস্তিন , সিরিয়া , দুবাই, ইয়েমেন ( ১৪ দেশের মাঝে ১২ দেশ ) 
এশিয়াঃ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ,ব্রুনেই , ভারত , পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ,মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা , উজবেকিস্তান 
অন্যান্যঃ ফিজি , গুয়ানা
এছাড়াও যেসকল দেশে ছুটি নেই সেসকল দেশেও জাকজমক এবং গুরুত্বের সাথে এ দিবস পালন করা হয়।
বিরোধীতা না করে পালন করুন।
বিস্তারিত

জুমুয়ার দিন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার কারনে ঈদের দিন হলে , তাহলে ১২ রবিউল আউওয়াল শরীফ অবশ্যই ঈদের দিন

জুমুয়ার দিন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার কারনে ঈদের দিন হলে , তাহলে ১২ রবিউল আউওয়াল শরীফ অবশ্যই ঈদের দিন
হাদীস শরীফে বর্নিত আছে —
ان من افضل ايامكم يوم الجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থ : তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে, জুমুয়ার দিন | এদিনে আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এদিনেই তিনি বিছাল বা ইন্তেকাল লাভ করেন !”
দলীল-√ সহীহ নাসায়ী শরীফ -জুমুয়ার অধ্যায় !
অতপর এই জুমুয়ার দিন ঈদের দিন ঘোষনা করে ইরশাদ হয় —
ان هذا يوم جعله الله عيدا
অর্থ :এ জুমুয়ার দিন হচ্ছে এমন একটি দিন, যেদিনকে আল্লাহ পাক ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন !”
দলীল–√ সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ√ মুসনাদে আহমদ শরীফ √ মিশকাত শরীফ – জুমুয়ার অধ্যায়
উক্ত হাদীস শরীফ থেকে প্রমানিত হলো জুমুয়ার দিন আল্লাহ পাক এর নবী এবং রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ এর দিন হওয়ার সত্ত্বেও আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সে দিনটিকে খুশির দিন হিসাবে নিদৃষ্ট করে দিয়েছেন ! এবং স্বয়ং নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে জুমুয়ার দিনকে ঈদের দিন বলে ঘোষনা দিয়েছেন !
তাহলে ১২ রবিউল আউওয়াল শরীফ সোমবার শরীফ যেদিন নবিজি দুনিয়ায় আগমন করেছেন এবং বিদায় গ্রহন করেছেন তা অবশ্যই ঈদের দিন। বরং সকল ঈদের সেরা। যা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং পালন করেছেন।
১. হযরত আবু কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বনর্ণা করেন যে, " হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি সোমবারের দিন কেন রোযা রাখেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন ওই দিন আমার বিলাদত হয় ,এবং ওই দিন-ই আমার উপর ওহী নাযীল হয়"।
১. সহী মুসলিম ,বুক ৬ , রোজা অধ্যায়, ভলি ৭, পৃ ৩২৩, হাদিস নং ২৮০৭২.সুনান আল কুবরা লইল বায়হাকী , ভলিউম ৪, পৃ ২৮৬ ৩. মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, ভলিউম ৪ , পৃ ২৯৬, হাদিস ৭৮৬৫৪.সুনান আবু দাউদ, ভলিউম ৭,পৃ ২৫৫, হাদিস ২৪২৮
হাদীস শরীফে বর্নিত আছে–
عن ابن مسود رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي عليه و سلم حياتي خير لكم و مماتي خير لكم
অর্থ : আমার হায়াত-বিছাল (ইন্তেকাল) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ বা উত্তম বা খায়ের বরকতের কারন !””সুবহানাল্লাহ্ !দলীল-√ কানযুল উম্মাল শরীফ√ শিফা শরীফ ২য় খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা!
বিস্তারিত

হেকায়েতে আউলিয়া বইয়ে আশরাফ আলীর থানবীর মীলাদ শরীফ পাঠ

দেওবন্দ সিলসিলার অন্যতম আশরাফ আলী থানবীর অন্যতম সংকলন কিতাব হচ্ছে “হেকায়াতে আউলিয়া”। এই কিতাবে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ বিষয়ে একখানা ঘটনা আছে যাদ্বারা স্পষ্ট বুঝতে পারবেন মূল দেওবন্দ সিলসিলার লোকেরা মীলাদ শরীফ সর্ম্পকে কি ধারনা রাখতো।
উক্ত কিতাবে কি উল্লেখ আছে নিজেরাই দেখে নিন,
এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, আপনাদের ওখানে কি মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়? তিনি বললেন, প্রতিদিনই পাঠ করা হয়। তিনি কালেমা শরীফ পাঠ করে বললেন, যদি মীলাদ শরীফ না হয়, তাহলে এ কালেমা শরীফ হলো কিভাবে। তিনি বললেন, যদি আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের আলোচনা করলে রহমত বর্ষণ হয়, তাহলে মীলাদ শরীফ পাঠ করলে কি হবে? সুবহানাল্লাহ (হেকায়াতে আউলিয়া ৮৭ পৃষ্ঠা)

বিস্তারিত

ঈদে মিলাদুনবীকে অনুকরন করেই ক্রিসমাস,বৌদ্ধ পুর্নিমা,জন্মাষ্টমী চালু হয়েছে

ঈদে মিলাদুনবীকে অনুকরন করেই ক্রিসমাস,বৌদ্ধ পুর্নিমা,জন্মাষ্টমী চালু হয়েছে
১) ‘ক্রিসমাস’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ১০৩৮ ঈসায়ী সালের একটি রচনা থেকে। ‘ক্রিসমাট ট্রি’ শব্দটি পাওয়া যায় ১৮৩৫ ঈসায়ী সালের একটি রচনা থেকে। ১৭শ’ সাল থেকে মুসলমান উনাদের দেখাদেখি কিছু খ্রিস্টান নিজেদের নবীর বিষয়টি চালু করতে চাইলেও গোড়া খ্রিস্টানরা এর কট্টর বিরোধী ছিলো। তাই খ্রিস্টানদের মধ্যে এ দিবসটি তখন পালন করা হয়নি। তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে খ্রিস্টানরা ক্রিসমাসকে দিবস হিসেবে পালন শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে। ১৯শ’ সালের আগে খ্রিস্টানরা ক্রিসমাসকে বড় উৎসব হিসেবে বড় অনুষ্ঠান করে পালন করেছে এমন ইতিহাস কেউ দেখাতে পারবে না। 
২) বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক মতে, গৌতম বুদ্ধ ৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্ব সালে (দুই হাজার ৫৫৮ বছর আগে) নেপালের লুম্বিনি নামক স্থানে জন্মলাভ করে। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে বৈশাখী পূর্ণিমার অপর নাম দেয়া হয় ‘বৌদ্ধ পূর্ণিমা’।
প্রাপ্ত তথ্য মুতাবিক, বৌদ্ধ পূর্ণিমা প্রায় এক শতাব্দী যাবত বৌদ্ধ ধর্মের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। ১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কাতে বিশ্ব বুদ্ধ সহায়ক সংস্থা (the World Fellowship of Buddhists ) প্রথমবারের মতো বৈশাখী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৪৯ বছর পর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ তথা ইয়াহূদীসংঘ বৈশাখী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
৩) লখক ভুবন মোহন বসাক এবং যদুনাথ বসাকের দুটি বই থেকে জন্মাষ্টমীতে মিছিলের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে ভাসা ভাসা ধারণা পাওয়া যায়। বই দু’টির একটি ১৯১৭ সালে এবং অপরটি ১৯২১ সালে প্রকাশিত হয়। দু’টি বইতে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জন্মাষ্টমী উৎসবে মিছিলের শুরু হয়েছিল ষোড়শ শতকে।
ভুবন মোহনের লেখা বই অনুসারে ইসলাম খাঁর ঢাকা নগরের পত্তনের (১৬১০ সাল) আগে বংশালের কাছে এক সাধু বাস করতো। ১৫৫৫ সালে সে রাধাষ্টমী উপলক্ষ্যে বালক ও ভক্তদের হলুদ পোশাক পরিয়ে একটি মিছিল বের করেছিলো। এর প্রায় ১০-১২ বছর পর সেই সাধু ও বালকদের উৎসাহে রাধাষ্টমীর কীর্তনের পরিবর্তে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে আরো জাঁকজমকপূর্ণ একটি মিছিল বের করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল। সে উদ্যোগেই ১৫৬৫ সালে প্রথম জন্মাষ্টমীর মিছিল ও শোভাযাত্রা বের হয়।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বর্ণযুগে মুসলমান উনাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি দেখে খ্রিস্টান , বৌদ্ধ , হিন্দুরা অনেক আচার-আচরণ, কার্যবিধি গ্রহণ করেছিলো। মুসলমান উনারা উনাদের নবীজি, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্ম দিবস বা পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস পালন উপলক্ষ্যে আনন্দ-খুশি করে, সবাইকে খাদ্য খাওয়ায়- এ সংস্কৃতি বা কালচারটি খ্রিস্টান,বৌদ্ধ,হিন্দুরা আয়ত্ব করার চেষ্টা করে। এ শিক্ষা থেকেই তারা কথিত ক্রিসমাস, বৌদ্ধ পুর্নিমা, জন্মাষ্টমী পালন শুরু করে। 
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুকরণ করেই কাফিরেরা ক্রিসমাস,বৌদ্ধ পুর্নিমা,জন্মাষ্টমী চালু করেছে।
বিস্তারিত

সুরা ইউনুস এর ৫৮ নং আয়াত শরীফে ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করার ১০ টি তাগিদ —-

সুরা ইউনুস এর ৫৮ নং আয়াত শরীফে ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করার ১০ টি তাগিদ —-
قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ.
“বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছ। [সুরা ইউনুস: ৫৮]
ঈদে মিলাদুন্নবি পালনে উপরের বর্নিত আয়াতের হুকুম যেই ভাষায় প্রয়োগ করা হয়েছে ,পবিত্র কোরআনের অন্য কোথাও এমনিভাবে জোর তাগিদের সাথে হুকুম আসেনি ।একটূ ফিকির করলে এই আয়াতে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনে কমপক্ষে ১০ টি তাগিদ রয়েছে –
১ ) قُلْ – قُلْ (কুল ) শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে কোন কথা শুরু করা হলে ,ইহাই এক প্রকারের জোর তাগিদ । যার উদ্ধেশ্য এই যে আপাদ-মস্তক নিমগ্ন হয়ে যাও ।
২ ) بِفَضْلِ اللّهِ আল্লাহর ফজলের কারনে । প্রশ্ন তৈরি হয় , আল্লাহর ফজলের কারন কি ? এই ফজল নবিজি । কারন নবিজি দুনিয়ায় না আসলে আমরা কোরআন পেতামনা । এই ফযল ও তাগিদ ।
৩ ) وَبِرَحْمَتِهِ – আল্লাহর রহমতের কারনে । প্রশ্ন হল রহমতের কারন কি ? রহমত কে ? ইহাও ৩য় তাগিদ ।
৪ ) بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ – ফযল ও রহমত একত্রীকরন । ফজলের পরে রহমতের উল্লেখ করাও তাগিদ ।
৫ ) فَبِذَلِكَ – জালিকা ( ذَلِكَ ) এর পরে ফা-কে এজাফত( সম্মান ) করা হয়েছে। ‘ফা’ – আরবী কাওয়ায়েদ অনুযায়ি তাগিদের জন্য ব্যবহৃত হয় বা তাগিদের জন্য আসে ।
৬ ) بِذَلِكَ – ফজল ও রহমত এর উল্লেখ করার পরে ইশারা বায়িদ লওয়াও তাগিদের অন্তর্ভুক্ত ।
৭ ) فَلْيَفْرَحُو – ‘ফালইয়াফরাহু ‘ শব্দের উপর পুর্ন ‘ফা ‘ হরফ এজাফত করা হয়েছে ,যার ফলে তাগিদ করা হয়েছে ।
৮ ) فَلْيَفْرَحُو – ইয়াফরাহু এর উপর ‘লাম’ ও তাগীদের জন্য হয়ে থাকে ।
৯ ) هُوَ خَيْرٌ – এখানে ‘হুয়া ‘ তাগিদের জন্য এসেছে ।
১০ ) مِّمَّا يَجْمَعُونَ – ইহাও তাগীদের কালাম ।
বর্নিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ১০ তাগিদের সাথে যে হুকুম প্রদান করেছেন ইহা এই যে, فَلْيَفْرَحُو – ‘ফালইয়াফরাহু ‘ – খুশি পালন কর অর্থাৎ ঈদ পালন কর । কেননা فَبِذَلِكَ – ফাবিজালিকা ‘ শব্দ দ্বারা যেই হাবিব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা বলা হয়েছে ,তিনি আগমন করেছেন ।
উপরোক্ত ১০ তাগীদের পরে বিষয়টি এমন চুড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে যে এই খুশি প্রকাশ করা সমস্ত আমল থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ হবার ঘোষনা স্বয়ং আল্লাহ পাক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ ।
এখন এই খুশি প্রকাশ অর্থাৎ ঈদে মিলাদুননবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কেউ পালন না করে ,বিরোধীতা করে তাহলে তার জীবনের কোন আমল কাজে আসবে কি ?
সে কি আল্লার বান্দা ,নবীর উম্মত হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে ?
অতএব বিরোধীতা করার জন্য বিরোধীতা করে ঈদে মিলাদুন্নবীকে ” বিদয়াত ” বলার আগে একবার হলেও চিন্তা করে দেখুন আপনি কার বিরোধীতা করছেন ?
বিস্তারিত

বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থেই ‘পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।

বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থেই ‘পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে মুবারক আগমন বা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়ে বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থে আলোচিত হয়েছে।
যেমন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রামাণ্য ধর্মীয় গ্রন্থ ‘দিঘা নিকায়া’তে বর্ণিত হয়েছে- “মনুষ্যজাতি যখন গৌতমের ধর্ম বিস্মৃত হবে, তখন আরেক বুদ্ধ আসবেন, উনার নাম ‘মৈত্তেয়’ (মৈত্রেয়), যিনি হচ্ছেন শান্তি ও করুণার বুদ্ধ!”
সিংহল হতে প্রাপ্ত কারুসের গসপেলেও উপরোক্ত বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়-
Ananda said to the Blessed One, `Who shall teach us when thou art (are) gone?’
And the Blessed One replied, `I am not first Buddha, who come on the earth, nor shall I be the last. In one time another Buddha will arise in the world, a holy One, a supremly enlightened One, endowed with wisdom in conduct ..... . He will proclaim a religion life, wholly perfect and pure such as I now proclaim ..... .’
Ananda said, `How shall we know him?’
The Blessed One said, `He will be known as maitreya,
- The Gospel of buddha by Carus, P 117-118
অর্থ : “আনন্দ বুদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘আপনার তিরোধানের পর কে আমাদের উপদেশ দিবে?’
বুদ্ধ বললো, ‘আমিই একমাত্র বা শেষ বুদ্ধ নই। যথাসময়ে আরেক বুদ্ধ আসবেন, আমার অপেক্ষাও তিনি পবিত্র এবং অধিকতর আলোকপ্রাপ্ত- তিনি একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা প্রচার করবেন।’
আনন্দ জিজ্ঞাসা করলো, ‘আমরা উনাকে কিভাবে চিনবো?’
বুদ্ধ বললো, ‘উনার নাম হবে মৈত্রেয়।”
এই শান্তি ও করুণার বুদ্ধ (মৈত্রেয়) যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে বলা হয়েছে- “রহমাতুল্লিল ‘আলামীন” অর্থাৎ তিনি সারা আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন।
পক্ষান্তরে, ‘বুদ্ধ’ শব্দের অর্থ ‘বুদ্ধির সঙ্গে যুক্ত’। বুদ্ধ যিনি হবেন তিনি মানুষ হবে অন্য কিছু নয়। আর মৈত্রেয়-এর অর্থ হচ্ছে ‘দয়ার সঙ্গে যুক্ত’।
ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় একথা প্রমাণ করেছে যে, মৈত্রেয়-এর সমস্ত বিশেষত্বই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনী মুবারকে দেখা যায় এবং অন্তিম বুদ্ধ মৈত্রেয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তাহলে আলোচনা হতে বুঝা যাচ্ছে যে, বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থেও অন্তিম বুদ্ধ মৈত্রেয় হিসেবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।
তাছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক মতে, গৌতম বুদ্ধ ৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্ব সালে (দুই হাজার ৫৫৮ বছর আগে) নেপালের লুম্বিনি নামক স্থানে জন্মলাভ করে। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে বৈশাখী পূর্ণিমার অপর নাম দেয়া হয় ‘বৌদ্ধ পূর্ণিমা’।
প্রাপ্ত তথ্য মুতাবিক, বৌদ্ধ পূর্ণিমা প্রায় এক শতাব্দী যাবত বৌদ্ধ ধর্মের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। ১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কাতে বিশ্ব বুদ্ধ সহায়ক সংস্থা (the World Fellowship of Buddhists ) প্রথমবারের মতো বৈশাখী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৪৯ বছর পর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ তথা ইয়াহূদীসংঘ বৈশাখী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, গৌতমের জন্মদিন বা বৌদ্ধ পূর্ণিমা পালনের ইতিহাস এখনো ১০০ বছর পার করতে পারেনি। তাহলে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি করে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হতে উৎপত্তি লাভ করলো! যেখানে ১৯৫০ সালের আগে বৌদ্ধ পূর্ণিমা পালনেরই ইতিহাস নেই। কাজেই কোন মিথ্যাচারিতা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। সত্য তার স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত হবেই।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা অনুসরণে উৎপত্তি লাভ করেনি। বরং বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থেই ‘পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।
বিস্তারিত

হিন্দুদের পুরাণেই ‘পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।

হিন্দুদের পুরাণেই ‘পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে হিন্দু ধর্ম গ্রন্থের উদ্ধৃতি : হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ পুরাণসমূহের মধ্যে ভগবত পুরাণ ও কল্কি পুরাণ সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। এ পুরাণ দুটিতে অন্তিম অবতার (কল্কি)-এর কতিপয় বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখিত আছে। যা অন্তিম অবতার (কল্কি) এবং আখেরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অভিন্নতা প্রমাণ করে।
কল্কি অবতারের জন্মতিথি প্রসঙ্গে পুরাণে বর্ণিত রয়েছে-
দ্বাদশ্যাং শুক্লপক্ষস্য মাধবে মাসি মাধবম।
- কল্কিপুরাণ : ২ আ: ২৫ শ্লোক
অর্থাৎ “অন্তিম অবতার মাধব (বৈশাখ) মাসে শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে জন্মগ্রহণ করবেন”।
এ প্রসঙ্গে এফ. এ. কুরাঈশী প্রণীত The Religion of Humanity গ্রন্থে কল্কিপুরাণের ১২শ অধ্যায় থেকে উদ্ধৃতাংশটি প্রণিধানযোগ্য-
“Jagat-Guru will be born on Vishnu-Bhagat and Somti. His birth will take place on Monday, the 12th of Baisakh at 2 hours after sunrise. His Father will have died before His birth and later His Mother will also die. Jagat-Guru will be married to the princess of Salmal Dweep. At the time of His marriage His Uncle and three Brothers will be present. In a cave `Parsu Ram’ will educate Him. When He will come to `Sambala from Salmal Dweep’ He will start Preaching at which His relatives will turn against Him. Troubles will force Him to fly to Northern hills. But after sometime He will return to the city of Sambala sword in hand and will conquer the whole of the country. Jagat-Guru will have a hoprse on riding which He will fly over the earth and seven heavens.”
অর্থাৎ “‘বিষ্ণুভগত’ ও ‘সুমতি’র ঔরসে জগতগুরু জন্মগ্রহণ করবেন। ১২ই বৈশাখ সোমবার সূর্যোদয়ের দু’ঘন্টা পর তাঁর আবির্ভাব ঘটবে। জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা মারা যাবেন এবং পরে মাতাও ইহধাম ত্যাগ করবেন। ‘সলমাল দ্বীপ’-এর রাজনন্দিনীর সঙ্গে জগত-গুরুর বিয়ে সম্পন্ন হবে। বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর চাচা ও তিন ভাই উপস্থিত থাকবেন। ‘পরশুরাম’ এক গুহায় তাঁকে শিক্ষা দিবেন। ‘সলমাল দ্বীপ’ থেকে ‘সামবালা’ এসে যখন তিনি প্রচার কাজ শুরু করবেন তখন আত্মীয়-স্বজনেরা তাঁর বিরোধিতা করবে। নিপীড়ন-নির্যাতন তাঁকে উত্তর পাহাড়ে যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি তরবারি হাতে ‘সামবালা’ শহরে প্রত্যাবর্তন করবেন এবং সমগ্রদেশজয় করবেন। জগতগুরু অশ্বারোহণ করে পৃথিবী ও সপ্তস্বর্গ পরিভ্রমণ করবেন।”
এ প্রসঙ্গে আরো একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করা যায়-
শম্ভল বিষ্ণুযশসা গৃহে প্রাদুর্ভাবামাহম্।
সুমত্যাং বিষ্ণুযশসা গর্ভমাধব বৈষ্ণবম্ ॥
- কল্কিপুরাণ : ২ আ: ১১ শ্লোক
অর্থাৎ “‘শম্ভল’ শহরস্থ প্রধান পুরোহিত গৃহে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন। তাঁর পিতার নাম হবে ‘বিষ্ণুযশ’ (বিষ্ণুভগত) এবং মাতার নাম হবে ‘সুমতি’ (সৌম্যবতী)।”
উল্লেখিত উদ্ধৃতিসমূহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেকে নিচের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়-
জগতগুরু : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাতি, দেশ, বর্ণ নির্বিশেষে তথা গোটা মানব সমাজের মুক্তিদূত।
বিষ্ণুভগত বা বিষ্ণুযশ : পৌরাণিক পরিভাষায় ‘বিষ্ণু’ অর্থ সৃষ্টিকর্তা এবং ‘ভগত’ বা ‘যশ’ অর্থ দাস। ‘বিষ্ণুভগত’ বা ‘বিষ্ণুযশ’ অর্থ সৃষ্টিকর্তার দাস। বিষ্ণুভগত বা বিষ্ণুযশ শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘আব্দুল্লাহ’, যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক। 
সুমতি : ‘সু’ অর্থ শান্তি ও আত্মতৃপ্তি। আর ‘মতি’ অর্থ আত্মা। তাই ‘সুমতি’ বা সৌম্যবতী অর্থ দাঁড়ায় তৃপ্ত অন্তর। তৃপ্ত অন্তর বা সৌম্যবতীর আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘আমিনা’, যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক।
১২ই বৈশাখ সোমবার : বিক্রমী বর্ষপঞ্জি মতে, বৈশাখকে বসন্তের মাস বলা হয়। মাধব (বৈশাখ) বা বসন্তের আরবী পরিভাষা হচ্ছে ‘রবী’। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের দ্বাদশী তিথিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
সূর্যোদয়ের দু’ঘন্টা পর : ভারতের সূর্যোদয়ের দু’ঘন্টা পর হলে আরব দেশে সে সময়টি হবে দু’ঘন্টা চল্লিশ মিনিট আগে। অর্থাৎ ছুবহি সাদিকের সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। কারণ আরব দেশের ভৌগলিক অবস্থান ৮০ ডিগ্রি দাঘিমা পশ্চিমে আর ভারতের অবস্থান ৪০ ডিগ্রি দাঘিমা পশ্চিমে।
সলমাল দ্বীপ : পুরাণ অনুযায়ী পৃথিবীকে ৬টি দ্বীপ বা অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা-
১. জাম্ব দ্বীপ : ভারত, তিব্বত, বার্মা ইত্যাদি।
২. শাক দ্বীপ : ইউরোপ।
৩. কারুঞ্চ দ্বীপ : বেলুচিস্তান ও আফগানিস্তান।
৪. কাশ দ্বীপ : আফ্রিকা।
৫. শাকলি দ্বীপ : রাশিয়া ও চীন।
৬. সলমাল দ্বীপ : আরব ও এশিয়া মাইনর।
পিতৃ-মাতৃ বিয়োগ : কল্কিপুরাণে বলা হয়েছে, জন্মের পূর্বে অন্তিম অবতারের পিতৃবিয়োগ এবং পরে মাতৃবিয়োগ ঘটবে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বেই উনার সম্মানিত আব্বাজান হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী ৬ বছর বয়স মুবারক-এ উনার সম্মানিত আম্মাজান হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। 
বিবাহ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে প্রথম নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন হয় আরবের বিখ্যাত ধনশালীনী উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার। এ সম্মানিত অনুষ্ঠানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা আবূ তালিব এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ৩ চাচাত ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, হযরত আকিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা উপস্থিত ছিলেন।
পরশুরাম : ‘রাম’ অর্থ সৃষ্টিকর্তা আর ‘পরশু’ অর্থ মহান এবং ঠাকুর। ফেরেশতা হযরত জিরবীল আলাইহিস সালাম মর্যাদার দিক দিয়ে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম। কুঠারের ভাবার্থ এই যে, হযরত জিরবীল আলাইহিস সালাম যে ওহী মুবারক নিয়ে আসতেন তার দ্বারা সমাজের অন্যায়-অবিচার দূরীভুত হয়।
গুহা : ‘গুহা’ মানে হেরা পর্বতের গুহাকে বুঝানো হয়েছে, যেখানে হযরত জিরবীল আলাইহিস সালাম তিনি প্রথমবারের মতো ওহী মুবারক নিয়ে আসেন। 
সামবালা : ‘শম্ভল’ শব্দের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শুধু ভাষা ও উচ্চারণগত দিক দিয়ে পার্থক্য। ‘শম্ভল’ শব্দ ‘শম’ ধাতুর সাথে ‘বন’ প্রত্যয় যোগে নিষ্পন্ন হয়েছে। অতএব ‘শম্ভল’ শব্দের অর্থ ‘শান্তির ঘর’, যার আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘দারুল আমান’। আর পবিত্র মক্কা শরীফ হচ্ছে ‘দারুল আমান’।
অতএব দেখা গেল যে, কল্কি অবতার ও আখেরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার স্থানগত মিল রয়েছে। 
উত্তর পাহাড় : কল্কিপুরাণে বর্ণিত আছে যে, কল্কি অবতার পর্বতের দিকে যাবেন এবং তথায় পরশুরাম কর্তৃক জ্ঞানলাভ করে উত্তর দিকে যাবেন এবং পুনরায় প্রত্যাবর্তন করবেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হেরা পর্বতের গুহায় হযরত জিরবীল আলাইহিস সালাম উনার মারফত আনুষ্ঠানিকভাবে ওহী মুবারক প্রাপ্ত হয়। এর কিছুদিন পরে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক করেন এবং পরে পবিত্র মক্কা শরীফ প্রত্যাবর্তন করেন।
ভগবত পুরাণে ১২ স্কন্ধে ২য় অধ্যায় ১৮শ শ্লোক অনুযায়ী ‘কল্কি অবতার’কে শেষযুগের সর্বশেষ অবতার রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘খাতামান নাবিয়্যিন’ বা আখেরী নবী ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ উনার পরে আর কোন নবী আসবেন না।
ভগবত পুরাণ ও কল্কি পুরাণের অত্র উদ্ধৃতিসমূহ ও তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের নিরিখে দেখা যাচ্ছে যে, হিন্দু ধর্ম গ্রন্থেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমন দিবসের তারিখ, বার, সময় স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনাকে তারা মুবারকবাদ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে হিন্দুদের ভবিষ্য পুরাণে বর্ণিত আছে-
এতস্মিন্নন্তিরে ম্লেচ্ছ আচার্যেন সমন্বিত।
মহামদ ইতিখ্যাতঃ শিষ্যাশাখা সমন্বিত ॥ ৫ ॥
নৃপশ্চৈব মহাদেবং মরুস্থল নিবাসিনম্।
চন্দনাদিভিরভ্যর্চ্য তুষ্টাব মনসা হরম্ ॥ ৬ ॥
নমস্তে গিরিজানাথ মরুস্থল নিবাসিনে।
ত্রিপুরাসুরনাশায় বহুমায়া প্রবর্তিনে ॥ ৭ ॥
ম্লেচ্ছৈর্গপ্তায় শ্রদ্ধায় সচ্চিদানন্দরুপিণে।
ত্বং মাং হি কিংকরং বিদ্ধি শরণার্থমুপাগতম্ ॥ ৮ ॥
- ভবিষ্য পুরাণ : ৩ : ৩ : ৩ : ৫-৮ 
ভাবানুবাদ : “যথাসময়ে ‘মহামদ’ নামে জনৈক মহাপুরুষ আবির্ভূত হবেন যাঁর নিবাস ‘মরুস্থলে’ (আরব দেশে)। সঙ্গে স্বীয় সহচরবৃন্দও থাকবেন।
হে মরুর অধিপতি! হে জগতগুরু! আপনার প্রতি আমাদের স্তুতিবাদ। আপনি জগতের সমুদয় কলুষাদি ধ্বংসের উপায় অবগত আছেন। আপনাকে প্রণতি জানাই।
হে মহাত্মা! আমরা আপনার দাসানুদাস। আমাদেরকে আপনার পদমূলে আশ্রয় প্রদান করুন।” 
“আপনার প্রতি আমাদের স্তুতিবাদ” দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারককে মুবারকবাদ জানানো হয়েছে। অর্থাৎ উনার যমীনে আগমন মুবারক উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করা হচ্ছে। সুতরাং হিন্দু ধর্ম মতেই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
এমনকি পবিত্র সূরা ফাত্হ, ৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফে বর্ণিত لِتُؤْمِنُوا بِاللهِ وَرَسُوْلِه এই আয়াতাংশ “তোমরা (বান্দারা) মহান আল্লাহ পাক উনার উপর এবং উনার রসূল (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার উপর ঈমান আনো” উনার উপরে আমল করার বিষয়ে বর্ণিত রয়েছে এভাবে-
“হে মহাত্মা! আমরা আপনার দাসানুদাস। আমাদেরকে আপনার পদমূলে আশ্রয় প্রদান করুন।”
যে সমস্ত মুসলমান নামধারী বলে থাকে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিন্দুদের জন্মাষ্টমী থেকে এসেছে। নাঊযুবিল্লাহ! তারা যেন চোখ খুলে দেখে নেয় যে, হিন্দুদের পুরাণেই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ করার বিষয়ে বর্ণিত রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনকে হিন্দুরাই মুবারকবাদ জানিয়েছে। এমনকি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাস বা গোলাম হিসেবে তারা নিজেদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছে। উনার মুবারক ক্বদম তলে নিজেদের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করেছে।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই হিন্দুদের জন্মাষ্টমী অনুসরণে উৎপত্তি লাভ করেনি। বরং হিন্দুদের পুরাণেই ‘পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।
বিস্তারিত