ইবাদত অর্থ গোলামি করা, আমল করা, কাজ করা। আল্লাহ তায়ালা ও প্রিয় নাবী কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم)-এঁর কথামতো কা’জ করাকে ইবাদাত বলে।
যেমন- আমরা মানুষের সাথে কথা বলার সময় মিথ্যা কথা বলি না। কেননা, আল্লাহ মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। এমনকি লেখাপড়া, খাওয়া-পরা, চলাফেরা, ঘুমানো সবই ইবাদত।
এছাড়াও ইবাদত আছে। যেমন- সালাম দেওয়া, বাবা-মায়ের কথামতো চলা, জীবে দয়া করা, রোগীর সেবা করা, ইয়াতিম-মিসকিনকে সাহায্য করা, সত্য কথা বলা, সর্বোতভাবে জনস্বার্থে কাজ করা, সর্বপ্রকার আমলে সালেহ্ বা সৎকাজের প্রচেষ্টা করা, অসৎকাজকে রোধ করা ইত্যাদি।
🌠 আল্লাহর নির্দেশের আওতায় হলে সঙ্গ, সঙ্গীর সাথে অবস্থানও ইবাদত।
যেমন, আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
অর্থাৎ : “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্কে ভয় করো এবং যারা সত্যবাদী (কথা ও কাজে) তাদের সঙ্গে থাকো।”
[সূরা তাওবাহ্, (৯): আয়াত শরীফ ১১৯।]
হাদীস থেকে আরেকটি দৃষ্টান্ত :
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إنك لن تنفق نفقة تبتغي بها وجه الله إلا أجرت عليها حتى ما تجعل في فم امرأتك) .أخرجه البخاري)
অর্থাৎ : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : তুমি যা কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন (আমলে সালেহ) এর নিয়্যতে খরচ করবে অবশ্যই তার পুরস্কার পাবে। এমনকি, তুমি যা কিছু তোমার স্ত্রীর মুখে দিয়েছ তারও সওয়াব পাবে।[বর্ণনায় : বুখারী]
🌠 আখেরাতে প্রতিটি কর্মের হিসাব নেয়া হবে। ভালোকাজ হলে তা আল্লাহর ইবাদত, আল্লাহরই দাসত্ব।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ وَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ شَرّٗا يَرَهُۥ ٨ ﴾ [الزلزلة: ٧، ٨]
অর্থাৎ : ‘অতএব, কেউ অণু পরিমাণ ভালোকাজ করলে তা সে দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও সে দেখবে’।
[সূরা আয-যিলযাল, আয়াত : ৭-৮।]
অর্থাৎ, তোমরা যে পুণ্যকর্ম সম্পাদন করেছ তা সামনে আসবে, আর যে মন্দ কাজ করেছ তাও সামনে উপস্থিত পাবে।
🌠 মানুষ সৃষ্টিই হয়েছে আল্লাহর ইবাদাতের জন্যে।
আল্লাহ রাববুল আলামীন ঘোষণা করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
অর্থাৎ : ‘আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা কেবল আমারই ইবাদত করবে’।
[সুরা যারিয়াত (৫১): আয়াত শরীফ ৫৬।]
আল্লাহর ইবাদাতকারী আল্লাহর 'আবদ'। 'আবদ' দ্বারা আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধের আজ্ঞাবহ, তাঁর দাসত্ব-স্বীকারকারী কাউকে উদ্দেশ্য করা হয় তবে এ দাসত্বের আওতায় শুধু মুমিনগণ পড়ে, কাফেরেরা নয়। কেননা মুমিনরাই হলো আল্লাহ্র প্রকৃত দাস। যারা একমাত্র তাঁকে তাদের প্রতিপালক হিসেবে মানে এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত (দাসত্ব) করে। তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে না।
ইবাদতের এ পরিচয়ের আওতায় শাহাদাতাইন (কালিমা ও রিসালাতের দুইটি সাক্ষ্যবাণী), সালাত, হজ্ব, সিয়াম, জিহাদ, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ, আল্লাহ্র প্রতি ঈমান, ফেরেশতা-রাসূল-শেষ বিচারের দিনের প্রতি ঈমান...ইত্যাদি সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
যেমনঃ
إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
অর্থাৎ : ‘আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছু বিশ্বজাহানের রব আল্লাহর জন্য’।
[সুরা আন‘আম (৬): আয়াত শরীফ ১৬২।]
কাজেই আল্লাহর বান্দাহ প্রতিনিয়ত নিজেকে পর্যবেক্ষণ করে তার যাপিত সময়ে নিয়োজিত সকল কর্ম, প্রতিমুহূর্তের ক্রিয়াকলাপ আল্লাহর ইবাদাতের আওতায় হচ্ছে কি না। যাতে পরবর্তীতে মহান আল্লাহর দরবারে আল্লাহর ইবাদাত বা দাসত্ব বিরোধী হওয়ার কারণে জবাবদিহি করতে না হয়। জবাবদিহির জন্যে উপস্থিত হতে না হয়।
যেমন আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেনঃ
فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ
عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থাৎ : সুতরাং আপনার রবের শপথ, আমি অবশ্যই তাদের সকলকে প্রশ্ন করবো সে সম্পর্কে, যা কিছু তারা করতো।
[সুরা হিজর (১৫): ৯২-৯৩।]
🌠 বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপকে আল্লাহর ইবাদাত কিনা যেমন মূল্যায়ণ করা হবে, অনুরুপে ইবাদাত কিনা মূল্যায়ণ করা হবে মনের অবস্থাকেও।
অপর আয়াতে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমানঃ
لِّلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَإِن تُبْدُوا مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللَّهُ ۖ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থাৎ : আল্লাহরই, যা কিছু আসমানসমূহে রয়েছে, এবং যা কিছু যমীনে রয়েছে। আর যদি তোমরা প্রকাশ করো যা কিছু তোমাদের অন্তরে রয়েছে কিংবা গোপন করো, আল্লাহ তোমাদের থেকে সেটার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন আর যাকে ইচ্ছা করবেন শাস্তি দেবেন; এবং আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর উপর শক্তিমান।
[কোরআনুল কারিম; সুরা বাকারাহ (০২): আয়াত শরীফ ২৮৪।]
কাজেই আল্লাহর ইবাদাতের ক্ষেত্র হচ্ছে সমগ্র জীবন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাতের সীমা-পরিসীমা। মৃত্যুর মুহূর্তটিও আল্লাহর একজন আব্দের জন্যে আল্লাহর ইবাদাতবিহীন অতিবাহিত হতে পারে না, হয় না।
তাই ইরশাদ হয়েছেঃ
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
অর্থাৎ : আর মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত আপন রবের ইবাদতের মধ্যে থাকুন!
[কোরআনুল কারিম; সুরা হিজর (১৫): ৯৯।]
🌠 মুসলিমের প্রতিটি বাচনভঙ্গিও ইবাদতরুপে পরিগনিত হয়।
তা এ কারণে যে একজন মুসলিমের প্রতিটি কাজই ইবাদত – ইসলাম গ্রহণের পরে বা একজন ঈমানদার ইসলামের উপর অবিচল থাকার মাধ্যমে সর্বদা আব্দুল্লাহ্ বা আল্লাহর বান্দার পরিচয়ে থাকে, আল্লাহর দাসত্ব বা গোলামীর উপর থাকে। তার খাওয়া, ঘুমানো, হাসি-কান্না ইত্যাদি সবই ইবাদত। কারো মনের বিষণ্ণতা দূর করা কিংবা ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তার সাথে খেলা করাও ইবাদত। এমনকি সমাজের খারাপ ও দুষ্ট ছেলেদের সাথে যদি এই নিয়তে চলাফেরা কর হয় যে, তাদের সাথে চলাফেরা করে তাদের খারাপ স্বভাবগুলো দূর করবো এবং তাদেরকে ভালো দিকে আহ্বান করবো তাহলে খারাপ ও দুষ্ট ছেলেদের সাথে চলাফেরা করেও নেকী লাভ হবে।
একটি হাদিসে এসেছে, হযরত বুরায়দা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘মানুষের ৩৬০ টি অস্থি-সন্ধি আছে। তাকে অবশ্যই প্রতিটির জন্যে সাদাকাহ দিতে হবে।’ তারা (সাহাবীরা) বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী, এটা কার পক্ষে সম্ভব?’ তারা মনে করেছিলেন যে, এটা অর্থনৈতিক সাদাকাহ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, ‘মসজিদের কোন নোংরা জিনিসের ওপরে কেউ যদি মাটি চাপা দেয় তাহলে সেটাও সাদাকাহ, মানুষের চলাচলের পথ থেকে বাধা সরানোও সাদাকাহ।’
[বর্ণনাঃ আবু দাউদ ও ইবনে খুজায়মা।]
অপর একটি হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“প্রত্যেহ যখন সূর্য উঠে মানুষের (শরীরের) প্রত্যেক গ্রন্থির সাদকাহ্ দেয়া অবশ্য কর্তব্য।
- দু’জন মানুষের মাঝে ইনসাফ দেয়া হচ্ছে সাদকাহ্,
- কোন আরোহীকে তার বাহনের উপর আরোহন করতে বা তার উপর বোঝা উঠাতে সাহায্য করা হচ্ছে সাদকাহ্,
- ভাল কথা হচ্ছে সাদকাহ্,
- সালাতের জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ হচ্ছে সাদকাহ্ এবং
- কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে সাদকাহ্।”
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারী; হাদীস ২৯৮৯, মুসলিম; হাদীস ১০০৯।]
এ রকম তথ্য আরো বহু হাদিসে আছে।
অন্ধ, বোবা, দুর্বলের ও দুস্থের প্রতি দয়া প্রদর্শনের উপদেশ রয়েছে এবং এসব কাজকে সাদাকাহ ও ইবদাহ বলে গণ্য করা হয়েছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে মুসলমান সর্বদা পুণ্য কাজের উৎস হিসেবে বিরাজমান। এভাবে অন্যেরও উপকার করা হচ্ছে আবার নিজের মধ্যেও সদগুণের বিকাশ ঘটছে, সেই সাথে অসৎবৃত্তি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা থেকে নিরাপদ থাকা হচ্ছে।
একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি রহমতপ্রাপ্ত যাকে আল্লাহ সৎকর্মের চাবি এবং অসৎকর্মের তালা বানিয়েছেন।’
[বর্ণনাঃ ইবনে মাজা।]
কাজেই নামায-রোযাই ইবাদত নয়। আল্লাহর হুকুমমতো করলে সব কাজই ইবাদত।
অবশ্য একটু পার্থক্য আছে।
নামায-রোযা-যাকাত-হজ্জ হলো বুনিয়াদী (Foundational) ইবাদত। এসব ইবাদতের দ্বারা আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয় (to be practised); যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়। ঐ চারটি ইবাদত অন্য সব কাজকে ইবাদত বানিয়ে দেয়।
🌠 বুনিয়াদী চারটি ইবাদাতঃ
নামাজঃ
কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
অর্থাৎ : নিশ্চয়, আমি হলাম ‘আল্লাহ্’, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং তুমি আমার বন্দেগী করো এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম রাখো।
[কোরআনুল কারিম; সুরা ত্ব-হা (২০): আয়াত শরীফ ১৪।]
মানবের দৈনন্দিন বাস্তব জীবনে নামাযের ব্যবহারিক কার্যকরী ফলাফল তথা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
অর্থাৎ : হে মাহবূব! পাঠ করুন যে কিতাব আপনার প্রতি ওহী করা হয়েছে এবং নামায ক্বায়েম করুন! নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং নিশ্চয় আল্লাহর স্মরণ সর্বাপেক্ষা বড় এবং আল্লাহ্ জানেন যা তোমরা করো।
[কোরআনুল কারিম; সুরা আল আনকাবুত (২৯): আয়াত শরীফ ৪৫।]
তাহলে নামায হলো আল্লাহর এমন ইবাদাত যা দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয়; যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়।
রোজাঃ
স্মরণীয়, ‘তাক্বওয়া’ হচ্ছে সমস্ত আমল-ইবাদাতের মূল। তাই আল্লাহ পাক তিনি তাক্বওয়া হাছিল করার জন্য বান্দাদের আদেশ করেছেন-
تزودوا فان خير الزاد التقوى
অর্থ: “তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।
[কোরআনুল কারিম; সূরা বাক্বারা শরীফ (০২): আয়াত শরীফ ১৯৭।]
‘তাক্বওয়া’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহ ভীতি। অর্থাৎ আল্লাহ পাককে ভয় করে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ হতে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার নাম তাক্বওয়া।
এই তাক্বওয়া অর্জনের জন্যেই বুনিয়াদী ইবাদাত রোজার বিধান বা রোজা ফরজ হওয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমানঃ
يايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون .
অর্থাৎ : “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে; যেরূপ ফরয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর। এর মাধ্যমে অবশ্যই তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করতে পারবে।”
[কোরআনুল কারিম; সূরা বাক্বারা (০২): আয়াত শরীফ ১৮৩।]
তাহলে নামাযের ন্যায় দেখা যাচ্ছে রোজাও হলো আল্লাহর এমন ইবাদাত যা দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয়; যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়।
যাকাতঃ
যাকাত অর্থ হচ্ছে যা পরিশুদ্ধ করে। ইসলামে যাকাত হচ্ছে এক প্রকার আর্থিক ইবাদাত। এটি শরীয়ী নির্ধারিত নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর আর্থিক সাদাকাহর একটি ফরজ ইবাদাত। যা ধনীদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ থকে ধনীরা দরিদ্র মুসলমানকে সাদাকাহ (পূণ্যময় কাজ) হিসেবে দিতে হয়।
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাতই শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়।
উল্লেখ্য, নিসাব পরিমাণ হলেই যাকাত কোনো ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হয় এবং তখন তার উপর 'যাকাত' নামক ফরয বর্তায়; অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরয।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার।
কুরআনে নামাজের পরেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে উল্লেখিত হয়েছে এই যাকাত।
এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۱۱۰
অর্থাৎ : ‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন।
[কোরআনুল কারিম; সূরা বাকারা (০২): আয়াত শরীফ ১১০।]
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۵۶
অর্থাৎ : ‘তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’
[কোরআনুল কারিম; সূরা নূর : আয়াত শরীফ ৫৬।]
সূরা নিসার ১৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য ‘আজরুন আযীম’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوةَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۠۱۶۲
অর্থাৎ : ‘এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’
অন্য আয়াতে যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ۱۰۳
অর্থাৎ : ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’
[কোরআনুল কারিম; সূরা তাওবা : আয়াত শরীফ ১০৩।]
এছাড়া কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, সালাত ও যাকাতের পাবন্দী ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রশ্নই অবান্তর। কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে, যেখানে খাঁটি মু’মিনের গুণ ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে সেখানে সালাত-যাকাতের কথা এসেছে অপরিহার্যভাবে।
কুরআনের দৃষ্টিতে প্রকৃত পুণ্যশীলদের পরিচয় যেখানে দেওয়া হয়েছে সেখানে সালাত-যাকাতের উল্লেখ এসেছে। অর্থাৎ প্রকৃত পুণ্যশীলদের গুণাবলী অর্জনের জন্যে যাকাত প্রদানের ঐকান্তিক ইচ্ছা লালণ করতে হবে।
ইরশাদ হয়েছেঃ
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
অর্থাৎ : কোন মৌলিক পূণ্য (good deeds) এ নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে হাঁ, মৌলিক পূণ্য হলো এ যে, ঈমান আনবে আল্লাহ, ক্বিয়ামত-দিবস, ফিরিশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের উপর; আল্লাহর প্রেমে আপন প্রিয় সম্পদ দান করবে আত্মীয়-স্বজন, এতিমগণ, মিসকীনগণ, মুসাফির ও সাহায্য প্রার্থীদেরকে আর গর্দানসমূহ মুক্তকরণে; এবং নামায কায়েম রাখবে ও যাকাত প্রদান করবে। আর আপন প্রতিশ্রুতি পূরণকারীরা যখন অঙ্গীকার করে এবং ধৈর্যধারণকারীরা বিপদে, সংকটে এবং জিহাদের সময়। এরাই হচ্ছে- ঐসব লোক, যারা আপন কথা সত্য প্রমাণ করেছে এবং এরাই হচ্ছে খোদাভীরু।
[কোরআনুল কারিম; সূরা বাকারা (০২): আয়াত শরীফ ১৭৭।]
মুমিনের বন্ধু কারা-এই প্রশ্নের উত্তরেও সালাত-যাকাতের প্রসঙ্গ শামিল রয়েছে।
যেমনঃ
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
অর্থাৎ : নিশ্চয় তোমাদের বন্ধু তো, আল্লাহ্ এবং তার রসূল ও ঈমানদারগণ যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহরই সামনে বিনত হয়।
[কোরআনুল কারিম; সূরা মায়েদা (০৫): আয়াত ৫৫।]
‘সৎকর্মপরায়ণদের বৈশিষ্ট্য ও কর্মের তালিকায় সালাত-যাকাতের প্রসঙ্গ অনিবার্য।
ইরশাদ হয়েছেঃ
هُدًى وَرَحْمَةً لِّلْمُحْسِنِينَ
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
أُولَٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থাৎ : পথ নির্দেশনা ও দয়া সৎকর্মপরায়ণদের জন্য। তারা ওই সব লোক, যারা নামায ক্বায়েম রাখে ও যাকাত প্রদান করে এবং আখিরাতের উপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে; তারাই আপন রবের হিদায়তের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।
[কোরআনুল কারিম; সূরা লুকমান (৩১): আয়াত শরীফ ৩-৫।]
মসজিদ আবাদকারীদের পরিচয় জানতে চাইলেও সালাত-যাকাত তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
যেমনঃ
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ ۖ فَعَسَىٰ أُولَٰئِكَ أَن يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ
অর্থাৎ : আল্লাহর মসজিদসমূহের তারাই আবাদ করে, যারা আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান আনে, নামায কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না; সুতরাং এটাই সন্নিকটে যে, এসব লোক সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তুর্ভুক্ত হবে।
[কোরআনুল কারিম; সূরা তাওবা (০৯): ১৮।]
কুরআন মজীদ কাদের জন্য হেদায়েত ও শুভসংবাদ দাতা-এর উত্তর পেতে চাইলেও সালাত-যাকাত অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমানঃ
هُدًى وَبُشْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
অর্থাৎ : হিদায়ত ও সুসংবাদ ঈমানদারদের জন্য। তারা ওই সব লোক, যারা নামায ক্বায়েম রাখে ও যাকাত প্রদান করে এবং যারা আখিরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।
[কোরআনুল কারিম; সূরা নামল : ৩।]
ভূপৃষ্ঠে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভের পরও মুমিনদের অবস্থা কী তা জানতে চাইলে সালাত-যাকাতই অগ্রগণ্য।
ইরশাদ হয়েছেঃ
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ ۗ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
অর্থাৎ : ওই সব লোক যে, যদি আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করি, তবে তারা নামায ক্বায়েম রাখবে, যাকাত দেবে, সৎকর্মের নির্দেশ দেবে এবং অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখবে; এবং আল্লাহরই জন্য সমস্ত কর্মের পরিণাম।
[কোরআনুল কারিম; সূরা হজ্জ্ব (২২): আয়াত শরীফ ৪১।]
বিধর্মী কখন মুসলিম ভ্রাতৃত্বে শামিল হয়- এ প্রশ্নের উত্তরে তাওবার সঙ্গে সালাত-যাকাতও উল্লেখিত।
ইরশাদ হয়েছেঃ
فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ ۗ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
অর্থাৎ : অতঃপর যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম রাখে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই; এবং আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি জ্ঞানীদের জন্য।
[কোরআনুল কারিম; সূরা তাওবা (০৯): ১১।]
দ্বীনের মৌলিক পরিচয় পেতে চাইলে সালাত-যাকাত ছাড়া পরিচয় দান অসম্ভব।
ইরশাদ হয়েছেঃ
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
অর্থাৎ : এবং ওই সব লোককে তো এ আদেশই দেওয়া হয়েছে যেন তারা আল্লাহর ইবাদত করে শুধু তারই বিশ্বাস রেখে এক তরফা হয়ে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দেয়। আর এটা হচ্ছে সরল দ্বীন।
[কোরআনুল কারিম; সুরা বাইয়্যিনাহ (৯৮): আয়াত শরীফ ৫।]
অতএব সামর্থ্যবানদের ক্ষেত্রে সম্পদ থেকে পুণ্যশীলতা চর্চার জন্যে দরিদ্রদের প্রতি যাকাত নামক অার্থিক সাদাকাহ প্রদান আল্লাহর এমন ইবাদাত যা দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর রাহে অার্থিক সাদাকাহ্-খায়রাতের মাধ্যমে আল্লাহর দাসত্ব করার অভ্যাস করানো হয়; যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়।
হজ্জ্বঃ
হজ্জ বা হজ্জ্ব (আরবি ভাষায়: حج হজ্জ্ব) ইসলাম ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত বা ধর্মীয় উপাসনা। এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ।
শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্ব সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক।
ইসলামে হজ্জের গুরুত্বঃ
হাদিসে নবী কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেনঃ "শয়তান আরাফার দিন হতে অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না, কেননা ওই দিন আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন।"
তিনি (صلى الله عليه و آله و سلم) আরো ইরশাদ ফরমানঃ "একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ্জ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেস্ত ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।"
হজ্জ ক্ববুল হওয়ার যে শর্ত সে শর্তের সম্পূর্ণই হচ্ছে সৎকাজ সম্পাদনে নিরন্তর থাকা। পাপকাজ থেকে সম্পূর্ণরুপে বিরত হয়ে যাওয়া।
যেমনঃ
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم مَنْ حَجَّ هَذَا الْبَيْتَ، فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ-
অর্থাৎ : "যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ্জ করে এবং অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ্জ থেকে এমতাবস্থায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে। অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রূপই হয়ে যায়।"
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারী হা/১৫২১; মুসলিম হা/৩২৯১।]
🌠 মুমিনের জীবনের দীনদারী ও দুনিয়াদারী আলাদা আলাদা নয়। গোটা জীবনই দীনদারী ও ইবাদত।
বান্দাহ্ সকল কাজের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তি কামনা করবে।
ইরশাদ হচ্ছেঃ
وَسَيُجَنَّبُهَا الْأَتْقَى
الَّذِي يُؤْتِي مَالَهُ يَتَزَكَّىٰ
وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُ مِن نِّعْمَةٍ تُجْزَىٰ
إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلَىٰ
وَلَسَوْفَ يَرْضَىٰ
অর্থাৎ : “আর সে আগুন থেকে রক্ষা পাবে; যে পরম মুত্তাকী। যে স্বীয় সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে। তার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদান হিসেবে নয়। বরং তার মহান প্রতিপালকের সন্তোষ লাভের প্রত্যাশায় এবং সেতো অচিরেই সন্তোষ লাভ করবে।”
[কোর'আনুল কারিম; সূরা লাইল, (৯২): আয়াত শরীফ ১৭-২১]
সুতরাং একনিষ্ঠতা (ইখলাস) এবং বিশ্বস্ততা থাকতে হবে। এ গুণদুটি প্রকাশ পাবে একজন মুমিনের আল্লাহ্র আদেশ পালন, তাঁর নিষেধ থেকে বিরত থাকা, তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা, অক্ষমতা ও অলসতা ত্যাগ করা এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে সংযম অবলম্বন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে।
মানুষের জীবন আল্লাহর দাসত্বের অধীন না হলে শয়তানের দাসত্বের অধীন হতে বাধ্য।
“আল্লাহ্র দাসত্ব” ভালোবাসা, ভয়, আশা ইত্যাদিকে শামিল করে।
সুতরাং বান্দা তার রবকে ভালোবাসবে, তাঁর শাস্তিকে ভয় করবে, তাঁর সওয়াব ও করুণার প্রত্যাশায় থাকবে। এই তিনটি আল্লাহর দাসত্বের মৌলিক উপাদান।
যেমনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ۩
অর্থাৎ : হে ঈমানদারগণ! রুকূ ও সাজদা কর এবং আপন রবের বন্দেগী কর আর সৎকর্ম (আমলে সালেহ) কর এ আশায় যে, তোমরা সাফল্য লাভ করবে।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা হাজ্জ (২২): আয়াত ৭৭।]
🌠 আল্লাহর ইবাদাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরহেজগারিতা অর্জন। আর পরহেজগারিতা হচ্ছে আল্লাহকে সন্তুষ্টকরণ।
যেমনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থাৎ : হে মানবকুল! (তোমরা) স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদত করো, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন; এ আশা করে যে, তোমাদের পরহেযগারী অর্জিত হবে।
[কোরআনুল কারিম; সুরা বাকারাহ : আয়াত ২১।]
🌠 ঈমানদার ব্যক্তি সর্বদা সৎকাজে ব্রতী হয়ে আল্লাহর নিকট থেকে কল্যাণকর প্রতিদানের জন্যে মনোনিত হন।
وَأَمَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُ جَزَاءً الْحُسْنَىٰ ۖ وَسَنَقُولُ لَهُ مِنْ أَمْرِنَا يُسْرًا
অর্থাৎ : এবং যে ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ (আমলে সালেহ) করেছে, তবে তার প্রতিদান কল্যাণই রয়েছে এবং অবিলম্বে আমি তাকে সহজ কাজ বাতলিয়ে দেবো।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা কাহাফ (১৮) : আয়াত ৮৮।]
🌠 প্রত্যেকেই তার ক্ষমতা অনুসারে আল্লাহর ইবাদাত, আল্লাহর গোলামীর মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারে।
যেমনঃ
لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ ۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ ۚ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا ۚ سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
অর্থাৎ : বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় (আমলে সালেহ) করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় (আমলে সালেহ) করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টকর পরিস্থিতির পর সহজতা এনে দেবেন।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা তালাক (৬৫): আয়াত ৭।]
🌠 সৎ কাজের (আমলে সালেহর) নির্দেশ, আর অসৎকর্মের নিষেধ আল্লাহর অন্যতম ইবাদাত।
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
অর্থাৎ : হে আমার পুত্র! নামায ক্বায়েম রাখ এবং সৎ কাজে (আমলে সালেহ) নির্দেশ দাও আর অসৎকর্মে নিষেধ কর এবং যে বিপদাপদ তোমার উপর আপতিত হয় সেটার উপর ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয় এগুলো সাহসিকতার কাজ।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা লোকমান (৩১): আয়াত ১৭।]
🌠 দাম্ভিকতা, আত্মম্ভরীতামুক্ত জীবন-যাপনও আল্লাহর ইবাদাত।
কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছেঃ
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
অর্থাৎ : আর মানুষের প্রতি তোমার মুখ ঘুরিয়ে নিও না এবং পৃথিবীতে মহোল্লাসে চলাফেরা করোনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ কোন দাম্ভিক আত্মম্ভরীকে পছন্দ করেন না।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা লোকমান (৩১): আয়াত ১৮।]
🌠 মু'মিনের চলাফেরাও আল্লাহর ইবাদাত।
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ ۚ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ
অর্থাৎ : আর পদচারণায়/চলাফেরায় মধ্যবর্তিতা/ মধ্যপন্থা (اقْصِدْ) অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে সমস্ত আওয়াজের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কর্কশ হচ্ছে গাধারই স্বর।
[ক্বুরআ'ন শরীফ, সুরা লোকমান (৩১): আয়াত ১৯।]
🌠 পরহেজগারিতা অর্জনের জন্যে আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থাৎ : হে মানবকুল! (তোমরা) স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদত করো, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন; যেন তোমাদের পরহেযগারী অর্জিত হয়।
[কোরআনুল কারিম; সুরা বাকারাহ : আয়াত ২১।]
🌠 আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদনকৃত যেকোন কাজ আল্লাহরই ইবাদাত।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :
إن الله لا يقبل من العمل إلا ما كان خالصا وابتغى به وجهه.
)أخرجه النسائي (3140) وصححه الألباني في سنن النسائي (2/659
অর্থাৎ : আল্লাহ তাআলা শুধু সে আমলই গ্রহণ করেন, যা ইখলাছের সাথে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
[গ্রন্থ সূত্র : বর্ণনায় নাসায়ী (শরীফ)।]
🌠 আল্লাহ্ স্বীয় বান্দাদের সকল কর্ম পর্যবেক্ষণ করেন। বান্দার কর্ম যখন আল্লাহরই জন্যে হয় তথা আল্লাহর দাসত্বস্বরুপ হয়, আল্লাহ্ তখন বান্দার কৃতকর্মকে খুবই গুরত্ব দিয়ে থাকেন এবং পরবর্তীতে প্রতিদানের জন্যে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। বলাবাহুল্য, তারাই মুসলমান যাদের সকল কর্মই আল্লাহরই জন্যে হয়।
لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
অর্থাৎ : তোমরা কখনো পূণ্য পর্যন্ত পৌছবেনা যতক্ষণ আল্লাহর পথে আপন প্রিয়বস্তু ব্যয় করবে না এবং তোমরা যা কিছু ব্যয় করো তা আল্লাহর জানা আছে।
[কোরআনুল কারিম; সুরা আলে ইমরান (০৩): আয়াত শরীফ ৯২।]
আরো বলেছেন,
﴿وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا﴾ [النساء: 36]
অর্থাৎ : আর তোমরা কেবল আল্লাহরই ইবাদত করো এবং তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না।
[কোরআনুল কারিম; সূরা নিসা : ৩৬।]
🌠 আল্লাহর ভয়ে দিনাতিপাত করা আল্লাহরই ইবাদাত। মু'মিন যখন মৃত্যুবরণ করে সে আল্লাহর ইবাদাতে রতই থাকে, কাজেই সে তখনও অনুগত বা মুসলিমই থাকে।
আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
অর্থাৎ : হে ঈমানদারর! আল্লাহকে ভয় করো যেমনিভাবে তাঁকে ভয় করা অপরিহার্য এবং কখনো মৃত্যুবরণ করো না, কিন্তু মুসলমান (হয়ে)।
[কোরআনুল কারিম; সুরা আলে ইমরান (০৩): আয়াত শরীফ ১০২।]
🌠 নিচের হাদীস পাক থেকে ইসলামের মূল শিক্ষা, মূল লক্ষ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ হয়। কেননা ইসলাম হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবতা-সমতা প্রতিষ্ঠার নাম, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র-বিশ্বে শৃঙ্খলা বিধানের নাম। নিছক আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকলাপের নাম ইসলাম নয়। সেকারণে শেষ বিচারের দিনের শেষ মুহুর্তটিও ইসলামের মূল লক্ষ্য-আদর্শকে সমুন্নত করে।
সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস আছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা করেছেন-
أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ؟
তোমরা কি জানো তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিঃস্ব কে?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ.
আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ব্যক্তি সে, যার অর্থ-সম্পদ নেই।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বললেন-
إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلَاةٍ، وَصِيَامٍ، وَزَكَاةٍ، وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا، وَقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ، أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ.
‘আমার উম্মতের নিঃস্ব ঐ লোক, যে কিয়ামতের দিন সালাত-সিয়াম-যাকাত নিয়ে আগমন করবে কিন্তু কাউকে সে গালি দিয়েছিল, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল, কারো সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল, কারো রক্ত ঝরিয়েছিল। তো একে তার নেক আমল দিয়ে দেওয়া হবে, ওকেও তার নেক আমল দিয়ে দেওয়া হবে। যখন নেক আমলগুলো শেষ হবে তখন ঐসকল লোকের গুনাহ এই ব্যক্তির কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হবে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (এ হচ্ছে আমার উম্মতের সবচেয়ে মিসকীন, সবচেয়ে রিক্তহস্ত।)
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮১।]
আরেকটি সহীহ হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম জানিয়েছেন, যখন জান্নাত-জাহান্নামের ফায়সালা হবে, জান্নাতীগণ জান্নাতে যাবে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে যাবে এর আগে একটা ব্যাপার ঘটবে।
সেই ব্যাপার হল, কোনো জান্নাতী এই অবস্থায় জান্নাতে যেতে পারবে না যে, কোনো একজন জাহান্নামীর তার কাছে কোনো পাওনা আছে।
🌠 আল্লাহ মুমিনের কোনো আমল বিনষ্ট করেন না। বস্তুতঃ মু'মিন ব্যক্তি সৎকর্ম ব্যতিত কর্মই করে না। মু'মিনের কর্মসমূহ ইবাদাত ব্যতিত কিছুই নয়। কাজেই মু'মিন ব্যক্তির কৃতকর্মের প্রতিদান প্রদানের জন্যে তা আমাদের মা'বুদ অবিলম্বে লিপিবদ্ধ করে রাখেন।
যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ
فَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِ وَإِنَّا لَهُ كَاتِبُونَ
অর্থাৎ : অতঃপর যে মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, তার প্রচেষ্টা অস্বীকৃত হবে না এবং আমি তা লিপিবদ্ধ করে রাখি।
[কোরআনুল কারিম; সুরা আল আম্বিয়া : আয়াত শরীফ ৯৪।]
আল্লাহ্র দাস হওয়া বান্দার জন্য সম্মানজনক; অপমানকর নয়।
কবি বলেছেন,
আপনার সম্বোধন ‘হে আমার বান্দারা’ এর অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে এবং আহমাদকে আমার নবী মনোনীত করাতে আমার মর্যাদা আরো বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন আমি আকাশের নক্ষত্রকে পায়ের নীচে মাড়িয়ে চলেছি।
মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে তার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমাদের নবীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
_____________
▆ সামান্য কাজও সামান্য নয়; আল্লাহর ইবাদাতের পরিচয়।