উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা। (৩)

উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা। (৩)

আসমাউর রিজালসমূহের কিতাব থেকে নফসানিয়াত অনুযায়ী বক্তব্য উল্লেখ করে ওহাবী সালাফীরা যেভাবে মানুষকে ধোঁকা দেয়:
برد بن سنان وثقه ابن معين ، والنساءي ، وضعفه ابن المديني قال ابو حاتم : ليس بالمتين. وقال مرة: كان صدوقا قدرياوقال ابو زرعة : لا بأس به وقال ابو داود، يرمي بلقدر
অর্থ: হযরত বুরাদ ইবনে সিনান রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার সর্ম্পকে ইমাম ইবনে মুঈন ও হযরত নাসাঈ  রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, তিনি ছিক্বাহ। হযরত ইবনে মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি দুর্বল। হযরত আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মজবুত নন । হযরত মুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি সত্যবাদী এবং শক্তিশালী। ইমাম আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার কোন সমস্যা নাই। ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, দূরে নিক্ষেপ করতে হবে। (মিযানুল ইতিদাল ২/১১: রাবী নং ১১৪৭)
হযরত বুরাদ ইবনে সিনান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাপারে হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা দুজন উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। অপরদিকে হযরত ইবনে মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, দুর্বল। অর্থাৎ কেউ জারাহ করেছেন, আবার কেই তা’দীল করেছেন। এখানে মতপার্থক্য দেখা গেলো।
بشير بن ثابت
وثقه ابن حبان
وقال ابو حاتم : مجهول
অর্থ: হযরত বশির ইবনে সাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। হযরত ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন ‘মাজহুল’ বা অপরিচিত। (মিযানুল ইতিদাল ২/২৪: রাবী নং ১১৮৯)
এখানেও আমারা দুজন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রিজাল বিশারদের মধ্যে ইখতেলাফ দেখতে পেলাম। একজনের কাছে হযরত বশির ইবনে ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিক্বাহ বা বিশ্বস্ত আবার অন্য একজন ইমামের কাছে সেই রাবীই মজহুল বা অপরিচিত।
بشير بن المهاجر
وثقه ابن معين وغيره
وقال النسائى : ليس به باس
وقال احمد: منكر الحديث يجيء بالعجب وقال ابو حاتم: لا يحتج به
وقال ابن عدي : فيه بعض الضعف
অর্থ: হযরত বশির ইবনে মুহাজির রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও অন্য ইমামগন উনারা ছিক্বাহ বলেছেন। হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আশ্চর্যজনক ভাবে মুনকার বর্ণনা করেন। আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উনার সম্পর্কে আপত্তি নেই। হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার সামান্য দুর্বলতা আছে। (মিযানুল ইতিদাল ২/৪৩: ১২৪৫)
এখানে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও হযরত আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা দুজন এই রাবী সর্ম্পকে জারাহ করেছেন। অন্যরা তা’দীল বা প্রশংসা করেছেন।
بكر بن بكار
قال النسائى : ليس بثقة
وقال ابو معين : ليس بشىء 
وقال ابو عاصم النبيل : ثقة
وقال ابن حبان : ثقة، ربما يخطىء. وقال ابو حاتم : ليس بالقوى
অর্থ: হযরত বকর ইবনে বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি। ইমাম হযরত নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি ছিক্বাহ নন। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি, তার ব্যাপারে কোন আপত্তি নাই। হযরত আবু আছিম আন নাবিল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিশ্বস্ত। হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি তিনি বলেন, ছিক্বাহ, সম্ভবত তিনি তা নন। ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি শক্তিশালী নন। (মিযানুল ইতিদাল ২/৫৮-৫৯: ১২৭৭)
এখানেও ইমাম উনাদের জারাহ ও তা’দীল নিয়ে মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। কেউ ছিক্বাহ বলেছেন, কেউ শক্তিশালী নন বলেছেন।
حريث بن السائب البصرى
وثقه ابن معين
وقال ابو حاتم: ما به باس
وقال زكريا الساجي : ضعيف
অর্থ: হযরত হারিছ বিন সায়িব আল বাছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। হযরত আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সমস্যাযুক্ত। হযরত যাকারিয়া আস সাজী তিনি বলেন, তিনি দ্বয়ীফ বা দুর্বল। (মিযানুল ইতিদাল ২/২১৭: ১৭৯০)
উক্ত রাবী সর্ম্পকেও ইমামগণ উনাদের পক্ষে বিপক্ষে মত রয়েছে। এরকম ভাবে তাহযিবুল কামাল, তাহযীবুত তাহযীব, তাকরীবুত তাহযীব সহ অনেক আসমাউর রিজাল উনার কিতাবে মতপার্থক্য বর্ণিত আছে। এখানে দেখানোর যে বিষয় সেটা হলো, কোন একজন রাবী সর্ম্পকে একেক ইমাম উনার একেক মতামত থাকে কেউ 
জারাহ করেন, কেউ তা’দীল। ওহাবী সালাফীরা কোন হাদীছ শরীফ উনাকে মওজু অথবা দ্বয়ীফ প্রমাণ করতে শুধুমাত্র যে রাবী সর্ম্পকে জারাহ বা আপত্তি করা হয়েছে তার বর্ণনাটা পেশ করে। তারা বলে অমুক ইমাম এই রাবীকে জারাহ করেছে তাই এটা গ্রহনযোগ্য নয়, কিন্তু কেউ যে প্রশংসাও করেছেন সে কথা ভুলেও উল্লেখ করে না। আর সাধারন মানুষও যেহেতু উছুল জানে না সেই সাথে রিজালের কিতাব জীবনে চোখেও দেখেনি তাই তারাও সেটা মেনে নিয়ে গোমরাহ হয়। নাউযুবিল্লাহ!
বিস্তারিত

স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফযিলত বর্ননা করেছেন

স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফযিলত বর্ননা করেছেন
১) হাদীছ শরীফ মধ্যে আরো ইরশাদ হয়েছে, 
قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ وَهُوَ لَيْلَةُ اثْنَـىْ عَشَرَ مِنْ رَّبِيْع الْاَوَّلِ بِاتِّـخَاذِهٖ فِيْهَا طَعَامًا كُنْتُ لَهٗ شَفِيْعًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ اِكْرَامًا فَكَاَنَّـمَا اَنْفَقَ جَبَلًا مِّنْ ذَهَبٍ اَحْمَرَ فِـى الْيَتَامٰى فِـىْ سَبِيْلِ اللهِ
অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি খাদ্য খাওয়ানের মাধ্যমে আমার বিলাদত শরীফ ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ রাত (ও দিবস) উনাকে সম্মান করবেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াতকারী হবো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার বিলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে এক দিরহাম খরচ করবেন, সে ব্যক্তি ইয়াতীমদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমান লাল স্বর্ণ দান করার ফযীলত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! ( নে’মতে কুবরা উর্দূ ১১ পৃষ্ঠা)

২) হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ হয়েছে,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ كُنْتُ شَفِيْعًا لَّهٗ يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ فَكَاَنَّـمَا اَنْفَقَ جَبَلًا مِّنْ ذَهَبٍ فِـىْ سَبِيْلِ اللهِ تَعَالـٰى
অর্থ: “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার বিলাদত শরীফ (ঈদে মীলাদে হাবীবিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে সম্মান করবেন, ক্বিয়ামতের দিন আমি তার জন্য শাফায়াতকারী হবো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার বিলাদত শরীফ পালন উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করবেন, সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করার ফযীলত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!” )নাফহাতুল আম্বরিয়া ৮ পৃষ্ঠা, মাদারিজুস সউদ ১৫ পৃ., তালহীনুছ ছাননাজ ৫ পৃষ্ঠা)
বিস্তারিত

উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা। (২)

উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা। (২)

সাইয়্যিদুল, মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ حَدَّثَ بِحَدِيثٍ وَهُوَ يَرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذِبِينَ
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে (ছহীহ বিচার-বিশ্লেষনন ছাড়াই) অভিমত পোষণ করে যে, এই হাদীছ শরীফখানা মওজু বা মিথ্যা সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদীদের অর্ন্তভূক্ত। (মুসনাদে আহমদ ৪/২৫৫: হাদীছ নং ১৮২৬৬, শরহুস সুন্নহ ১/২৬৬: হাদীছ ১২৩, মুসনাদে আবু যায়িদ ১/৩০৬: হাদীছ ২০৬৭,  শুয়াবুল ঈমান-মুকাদ্দিমা ১/৮৪, তাফসিরে ইবনে কাছীর ২/৩৬৬)

অপর এক বর্ণনায় এসেছে-
بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ ، وَلاَ حَرَجَ ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
অর্থ: আমার পক্ষ হতে লোকদের নিকট পৌঁছাতে থাক, যদিও তা একটি মাত্র বাক্য হয়। আর বণী ইসরাঈল হতে শোনা কথা বর্ণনা করতে পারো, তাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নেয়। (বুখারী শরীফ ৩৪৬১, তিরমিযী শরীফ ২৬৬৯, মুসনাদে আহমদ ৬৮৮৮, মুসনাদে বাযযার ৮৭৬৩, মু’জামুল কবীর তাবরানী ১৫২৫, সুনানে দারিমী ৫৪২)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা থেকে বোঝা গেলো যে, বণী ইসরাঈল বা ইহুদী সম্প্রদায়ও যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবত নিয়ে কিছু বলে তা অস্বীকার করা যাবে না বরং কেউ যদি মিথ্যা ঘটনা বানিয়ে নিয়ে আসে তার শাস্তির জন্য জাহান্নাম রয়েছে। তাই ওহাবীদের প্ররোচনায় কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ দেখলেই তার বিরোধিতা করা যাবেনা, বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার উলামায়ে কিরাম কি ফায়ছালা দিয়েছেন , কোন আমল চলে আসছে সেটার উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।
ইলমে হাদীছ শরীফ উনাকে মূলত দ্ইুভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয়। ১) রিওয়াহ সংশ্লিষ্ট ইলিম যা সনদ অবিচ্ছিন্ন ও বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণনা, রাবীদের অবস্থা, স্মরনশক্তি, যোগ্যতা ইত্যাদি ২) দিরায়াহ বা নিয়ম কানুন মূলনীতি ভাবার্থ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ইলিম।
হাফিযে হাদীছ হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব “তাদরীবুর রাবীতে” বর্ণিত আছে, ইলমে হাদীছ শরীফ উনার ৭৩ টা শাখা আছে। প্রত্যেকটা শাখায় রয়েছে আরো অসংখ্য প্রকারভেদ। আর ইমাম হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দ্বয়ীফ সনদের প্রকারভেদই করেছেন ৪৯ প্রকার। সূতরাং এই শাস্ত্র কতটা ব্যাপক আর জটিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে জারাহ এবং তা’দীল সংশ্লিষ্ট জ্ঞান, যা অনেক সুক্ষ্ম ও স্পর্শকাতর। জারাহ (جرح) হচ্ছে রবীর সমালোচনা করা, দোষ প্রকাশ করা, ত্রুটি অন্বেষন করা। আর তা’দীল (تعديل) হচ্ছে প্রশংসা করা, নির্ভরযোগ্যতা প্রকাশ করা, বিশ্বস্ততার প্রমাণ দেয়া ইত্যাদি।  বক্ষ্যমান আলোচনায় জারাহ ওয়াত তা’দীল সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষন ও সেই সাথে ওহাবী সালাফীরা যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ধোঁকাবাজী করে তার নমুনা ও সেই ধোঁকাবাজীর রহস্য উন্মোচন করা হবে ইনাশআল্লাহ।

বিস্তারিত

রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিল একটি বিরল ঘটনা

রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিল একটি বিরল ঘটনা

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الاِثْنَيْنِ فَقَالَ فِيْهِ وُلِدْتُ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ‏.‏
অর্থ: “হযরত আবূ ক্বাতাদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ রোযা মুবারক রাখার ব্যাপারে সুওয়াল মুবারক করা হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ওই দিন আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং ওই দিন আমার উপর (পবিত্র কুরআন শরীফ) নাযিল হয়েছে।” (মুসলমি শরীফ: কিতাবুছ ছিয়াম: বাবু যিকরি ইখতিলাফি ‘আলা মূসা ইবনে ত্বলহা ফীল খাবারি ফী ছিয়ামি ছালাছাতি আইয়্যামিন মিনাশ শাহ্রি: হাদীছ শরীফ নং ২৬৪০)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ রোযা মুবারক রাখতেন।
এখন আরবী মাসের হিসাব অনুযায়ী,বছরে ৫০ সপ্তাহ হয়ে থাকে। তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি বছরের প্রত্যেক সপ্তাহে রোযা মুবারক রাখতেন? এ প্রশ্নের উত্তরে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنْ حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَ السَّلَامَ قَالَتْ أَرْبَعٌ لَـمْ يَكُنْ يَدَعُهُنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صِيَامَ عَاشُورَاءَ وَالْعَشْرَ وَثَلَاثَةَ اَيَّامٍ مِنْ كُلّ شَهْرٍ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْغَدَاةِ.‏
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো- পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযা, পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ উনার ১০ দিনের রোযা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোযা ও পবিত্র ফজর নামাযের পূর্বের দু’রাকয়াত নামায।” (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুছ ছিয়াম: বাবু কাইফা ইয়াছূমু ছালাছাতা আইয়্যামিন মিন কুল্লি শাহ্রিন ওয়া যিকরিখ তিরাফিন নাক্বিলীনা লিলখ¦াবারি ফী যালিক; আহমদ শরীফ; হাকিম শরীফ)
সুতরাং অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক মাসেই তিন দিন রোযা মুবারক রাখতেন, যা সারাবছরে কখনোই ছাড়তেন না। যেহেতু প্রত্যেক মাসেই তিন দিন রোযা মুবারক রাখতেন, তাই উক্ত তিন দিনের মধ্যে কখনো কখনো ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ পড়ে যেত আবার কখনো কখনো ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বাদ পড়ে যেত। অর্থাৎ বছরের প্রত্যেক সপ্তাহের ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ রোযার দিন পড়তো না।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক মাসেই তিন দিন যে রোযা মুবারক রাখতেন, উক্ত তিন দিনের মধ্যে কখনো কখনো ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ পড়ে যেত আবার কখনো কখনো ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বাদ পড়ে যেত। কেননা এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ هُنَيْدَةَ الْـخُزَاعِيَّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهَا قَالَ دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ عَلَيْهَا السَّلَامَ سَـمِعْتُهَا تَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ أَوَّلَ اثْنَيْنِ مِنَ الشَّهْرِ ثُـمَّ الْـخَمِيسَ ثُـمَّ الْـخَمِيسَ الَّذِيْ يَلِيْهِ.
অর্থ: “হযরত হুনাইদা খুজায়িয়্যা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার থেকে শুনেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা মুবারক রাখতেন। মাসের প্রথম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ, তারপর ইয়াওমুল খ্বমীস এবং তার পরবর্তী ইয়াওমুল খ্বমীস।” (নাসায়ী শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : বাবু কাইফা ইয়াছূমু ছালাছাতা আইয়্যামিন মিং কুল্লি শাহরিন ওয়া যিকরিখতিলাফিন নাক্বিলীনা লিল খাবারি ফী যালিক : হাদীছ শরীফ নং ২৪১৫)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَصُوْمُ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ مِنْ اَوَّلِ الشَّهْرِ وَالْـخَمِيْسَ الَّذِيْ يَلِيْهِ ثُـمَّ الْـخَمِيْسَ الَّذِيْ يَلِيْهِ.
অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা মুবারক রাখতেন। মাসের প্রথম সপ্তাহে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ, তার পরবর্তী সপ্তাহে ইয়াওমুল খ্বমীস এবং তার পরবর্তী সপ্তাহে ইয়াওমুল খ্বমীস।” (নাসায়ী শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : বাবু কাইফা ইয়াছূমু ছালাছাতা আইয়্যামিন মিং কুল্লি শাহরিন ওয়া যিকরিখতিলাফিন নাক্বিলীনা লিল খাবারি ফী যালিক : হাদীছ শরীফ নং ২৪১৪)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنْ حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَ السَّلَامَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُوْمُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ يَوْمَ الْـخَمِيْسِ وَيَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَمِنَ الْـجُمُعَةِ الثَّانِيَةِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ.‏
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাসে তিন দিন রোযা মুবারক রাখতেন। মাসের প্রথম ইয়াওমুল খ্বমীস, তারপর ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ এবং তার পরবতী ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।” (নাসায়ী শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : বাবু ছাওমিন নাবিয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : হাদীছ শরীফ নং ২৩৬৬)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنْ حَضْرَتْ اُمِّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُوْمُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ الاِثْنَيْنِ وَالْـخَمِيْسَ مِنْ هٰذِهِ الْـجُمُعَةِ وَالاِثْنَيْنِ مِنَ الْمُقْبِلَةِ.‏
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাসে তিন দিন রোযা মুবারক রাখতেন। (প্রথম সপ্তাহে) ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ্বমীস এবং পরবর্তী সপ্তাহে শুধু ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।” (নাসায়ী শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : বাবু ছাওমিন নাবিয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : হাদীছ শরীফ নং ২৩৬৫)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنْ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَ السَّلَامَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُوْمُ مِنَ الشَّهْرِ السَّبْتَ وَالاَحَدَ وَالاِثْنَيْنِ وَمِنَ الشَّهْرِ الاٰخَرِ الثُّلَاثَاءَ وَالاَرْبِعَاءَ وَالْـخَمِيسَ‏.‏ 
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোনো মাসে ইয়াওমুস সাব্ত, ইয়াওমুল আহাদ ও  ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ আবার কোনো মাসে ইয়াওমুছ ছুলাছা, ইয়াওমুল আরবিয়া ও ইয়াওমুল খমীস রোযা মুবারক রাখতেন।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : বাবু মা-জায়া ফী ছাওমি ইয়ামুল ইছনাইন ওয়া খ্বমীস : হাদীছ শরীফ নং ৭৪৬)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক মাসেই তিন দিন যে রোযা মুবারক রাখতেন, উক্ত তিন দিনের রোযা মুবারক সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে রোযা মুবারক রাখার পদ্ধতি নিচের সারণীতে দেখানো হলো-

সপ্তাহ ১ম পদ্ধতি ২য় পদ্ধতি ৩য় পদ্ধতি ৪র্থ পদ্ধতি ৫ম পদ্ধতি ফলাফল
১ম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ
ও ইয়াওমুল খ্বমীস ইয়াওমুল খ্বমীস ইয়াওমুস সাব্ত ইয়াওমুছ ছুলাছা ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম পদ্ধতিতে রোযা রাখলে ১ম সপ্তাহে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ কোন রোযা পড়ে না।
২য় ইয়াওমুল খ্বমীস ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ ইয়াওমুল আহাদ ইয়াওমুল আরবিয়া ১ম, ৪র্থ ও ৫ম পদ্ধতিতে রোযা রাখলে ২য় সপ্তাহে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ কোন রোযা পড়ে না।
৩য় ইয়াওমুল খ্বমীস - ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ ইয়াওমুল খ্বমীস ১ম, ২য় ও ৫ম পদ্ধতিতে রোযা রাখলে ৩য় সপ্তাহে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ কোন রোযা পড়ে না।
৪র্থ - - - - ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম কোন পদ্ধতিতেই ৪র্থ সপ্তাহে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ কোন রোযা পড়ে না।

সুতরাং মাসে তিন দিন রোযা মুবারক রাখার পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে যা দেখা গেল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মাসে ১ম পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন সে মাসের ১ম সপ্তাহ ছাড়া বাকি ৩ সপ্তাহে কোন ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ রোযা পড়েনি। যে মাসে ৫ম পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন সে মাসের কোন সপ্তাহেই ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ রোযা পড়েনি। যে মাসে ২য় পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন সে মাসের ৩য় ও ৪র্থ সপ্তাহে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ কোন রোযা পড়েনি। অনুরূপভাবে যে মাসে ৩য় পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন সে মাসের ১ম ও ৪র্থ সপ্তাহে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ কোন রোযা পড়েনি। আর ৪র্থ পদ্ধতিতে ৩য় সপ্তাহ ছাড়া অন্য ৩ সপ্তাহে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ কোন রোযা পড়েনি।
প্রত্যেক সপ্তাহে বার যেহেতু ৭টি, তাই কোন একটি মাস শুরু হওয়ার ক্ষেত্রেও ৭টি পদ্ধতি অনুসারেই হবে। নিচের সারণীতে তা তুলে ধরা হলো- 


সপ্তাহ তারিখ মাস শুরু হওয়ার বার
১ম ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস
জুমুয়া সাবত আহাদ
ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস জুমুয়া সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ
আরবিয়া খ্বমীস জুমুয়া সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা
খ্বমীস জুমুয়া সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া
জুমুয়া সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস
সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস জুমুয়া
আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস জুমুয়া সাবত
২য় ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস জুমুয়া সাবত আহাদ
ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস জুমুয়া সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ
১০ আরবিয়া খ্বমীস জুমুয়া সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা
১১ খ্বমীস জুমুয়া সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া
১২ জুমুয়া সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস
১৩ সাবত আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস জুমুয়া
১৪ আহাদ ইছনাইনিল আযীম শরীফ ছুলাছা আরবিয়া খ্বমীস জুমুয়া সাবত


উপরের সারণী হতে দেখা যাচ্ছে যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হওয়ার সুযোগ তখনই হয় যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউওয়াল শরীফ মাস ইয়াওমুল খ্বমীস দিয়ে শুরু হয়।
এখন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ১ম, ৪র্থ ও ৫ম পদ্ধতিতে রোযা মুবারক রাখলেও এই ৩টি পদ্ধতিতে যেহেতু ২য় সপ্তাহে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ কোন রোযা পড়ে না। তাই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ রোযা হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। শুধুমাত্র রোযা মুবারক রাখার ক্ষেত্রে ২য় ও ৩য় পদ্ধতি অবলম্বন করলেই কেবল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ রোযা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তাও যদি মাসটি ইয়াওমুল খ্বমীস দিয়ে শুরু হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হওয়ার এবং সে দিন রোযা হওয়ার সম্ভাবনার সাথে ২টি শর্ত সম্পর্কিত-
১. যদি মাসটি ইয়াওমুল খ্বমীস দিয়ে শুরু হয়।
২. যদি ২য় বা ৩য় পদ্ধতি অবলম্বনে রোযা রাখা হয়।
এই ২টি শর্ত একত্রে পূরণ না হলে কখনোই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ রোযা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাহলে প্রমাণিত হলো যে, যেহেতু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউওয়াল শরীফ মাস ইয়াওমুল খ্বমীস দিয়ে শুরু হলে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউওয়াল শরীফ মাস উনার মধ্যে ২য় সপ্তাহের ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ রোযা হয় এই পদ্ধতিতে রোযা রাখলেই কেবলমাত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষ্যে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা রাখতেন উক্ত রোযা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়া ছিল একটি বিরল ঘটনা।

তাহলে যারা বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষ্যে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ রাখতেন রোযা, আর আপনারা করেন ঈদ এবং তিনি নির্ধারণ করলেন বার আর আপনারা নির্ধারণ করেন তারিখ। তাদের বক্তব্যে জবাবে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষ্যে তারিখ নির্ধারণ করে ঈদ উদযাপনে যেমন কোন বাধা নেই, ঠিক তেমনি বার নির্ধারণ করে রোযা পালনের মধ্যেও রয়েছে এক মহান সুন্নত।

বিস্তারিত

যারা বলে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল খায়রুল কুরুনে ছিলো না তারা গন্ডমূর্খ, ইলিমশূন্য।

যারা বলে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর আমল খায়রুল কুরুনে ছিলো না তারা গন্ডমূর্খ, ইলিমশূন্য।
খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করার জন্য এক ব্যক্তি ওলী আল্লাহ হিসাবে আখ্যায়িত হলেন। সুবহানাল্লাহ। আল্লামা সাইয়্যিদ আবু বকর মক্কী আদ দিময়াতী আশ শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত: ১৩০২ হিজরী) উনার বিখ্যাত “ইয়নাতুল ত্বলেবীন” কিতাবে বর্ণনা করেন,

أنه كان في زمان أمير المؤمنين هارون الرشيد شاب في البصرة مسرف على نفسه وكان أهل البلد ينظرون إليه بعين التحقير لاجل أفعاله الخبيثة، غير أنه كان إذا قدم شهر ربيع الاول غسل ثيابه وتعطر وتجمل وعمل وليمة واستقرأ فيها مولد النبي ودام على هذا الحال زمانا طويلا، ثم لما مات سمع أهل البلد هاتفا يقول: احضروا يا أهل البصرة واشهدوا جنازة ولي من أولياء الله فإنه عزيز عندي، فحضر أهل البلد جنازته ودفنوه، فرأوه في المنام وهو يرفل في حلل سندس واستبرق، فقيل له بم نلت هذه الفضيلة ؟ قال بتعظيم مولد النبي صلى الله عليه وسلم

অর্থ: বর্ণিত রয়েছে, খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় (১৪৮-১৯৩ হিজরী) 

বছরা শহরের এক যুবক সে নফসের অনুসরন করে চলতো। শহরের লোকেরা নিন্দনীয় আমলের  জন্য তাকে নিন্দার চোখে দেখতো। তবে যখন পবিত্র রবিউল আউয়াল শরীফ মাস আসতো, এই যুবক কাপড় ধৌত  করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতেন। সেই সাথে ভালো খাবারের ব্যবস্থাও করতেন। এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাসে এ আমল লম্বা সময়ব্যাপী করতেন। অতপর যখন তিনি ইন্তেকাল করেন তখন শহরবাসীগণ গায়েবী আহ্বান শুনতে পান। সেখানে বলা হচ্ছিলো, হে বসরাবাসী! আপনারা আল্লাহ পাক উনার ওলীদের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত একজন ওলীর জানাজায় শরীক হন। নিশ্চয়ই তিনি আমার কাছে খুবই প্রিয়। অতপর শহরবাসী উনার জানাজায় উপস্থিত হলেন এবং দাফন সম্পন্ন করলেন। উনারা (শহরবাসী) স্বপ্নে দেখলেন, উক্ত যুবক কারুকার্যপূর্ণ রেশমী কাপড় পরিহিত অবস্থায় ঘোরাফেরা করছেন। উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এ ফযিলত আপনি কি করে লাভ করলেন? তিনি বললেন, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে তাযীম করার কারনে।” (ইয়নাতুল ত্বলেবীন ৩য় খন্ড ৬১৩ পৃষ্ঠা ; প্রকাশনা: দারুল হাদীছ , কাহেরা, মিশর)
উল্লেখ্য যে খলীফা হারুনুর রশীদের যামানা ছিলো খায়রুল কুরুনে। উপরোক্ত ঘটনায় বোঝা যায় সে সময় পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের রীতি ছিলো। তাই এক ব্যক্তি তার আমল কিছুটা মন্দ হলেও পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে তাযীম করাকে মহান আল্লাহ পাক তার মর্যাদার কারণ হিসাবে প্রকাশ করলেন। এবং সম্মানিত ওলী আল্লাহ হিসাবে গ্রহন করলেন। সুবহানাল্লাহ।
সুতরাং উপরোক্ত ঘটনা ও সময়কাল থেকে জ্ঞানী মাত্রই যা বোঝার কথা সেটা হলো, উক্ত ঘটনা খায়রুল কুরনের। আর মীলাদ শরীফ নতুন কোন আমল নয়। বরং পবিত্র ইসলাম উনার প্রথম থেকেই এ আমল চলে আসছে। আর সে কারনে সম্মানিত খায়রুল কুরুনে মীলাদ শরীফ উনার ফযীলত সংশ্লিষ্ট অনেক ক্বওল শরীফ কিতাবে পাওয়া যায়। যেমন সে সময়কার বিখ্যাত ফক্বীহ, শাফেয়ী মাযহাব উনার ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই বলেন,
قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবীল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো, খাদ্য তৈরি করলো, জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক সম্মানিত হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণ উনাদের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ। (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা, মাদরেজুজ সউদ ১৫ পৃষ্ঠা, নাফহতুল আম্বারিয়া ৮ পৃষ্ঠা, ইয়নাতুল ত্বলেবীন ৩য় খন্ড ৬১৩ পৃষ্ঠা)
সুতরাং যারা বলে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবীল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল খায়রুল কুরুনে ছিলো না তারা গন্ডমূর্খ, ইলিমশূন্য। 
বিস্তারিত

সোমবার রাখতে ছাহাবী উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

হাদীছ শরীফে রয়েছে স্বয়ং আখেরী রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতে সাহাবীদের আদেশ করেছেন।

বিখ্যাত ইমাম ইবনে আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “উসদুল গবা ফি মা’রিফাতিস সাহাবা” যা দারু কুতুব আল ইলমিয়া থেকে প্রকাশিত এর ১ম খন্ড ১২৭ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,

حَدَّثَنَ حَضْرَتْ مَكْحُوْلْ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِبِلَالٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ لَا يُغَادِرَنَّكَ صِيَامُ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ، فاِنّـِي وُلِدْتُّ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ، وَاُوْحِيَ اِلَيَّ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ، وَهَاجَرْتُ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ
অর্থ: হযরত মাকহুল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্নিত, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, হে বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু! আপনি কখনো সোমবার রোজা রাখা পরিত্যাগ করবেন না। কারন আমি সোমবার বিলাদত শরীফ গ্রহন করেছি। এদিন ওহী মুবারক নাযিল হয়, এ দিন হিজরত করি।”

সূতরাং দেখা গেলো স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের দিবসটি পালন করতে বলতেন। আর বিদয়াতিরা বলে ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন বিদয়াত।



বিস্তারিত

উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা। (১)

উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা। (১)
বর্তমান সময়ে ইহুদী ফান্ড দ্বারা পরিচালিত ওহাবী, সালাফী, লা’মাযহাবী ফেরকার লোকেরা সমাজে ইচ্ছামত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে জাল, মওজু, দ্বয়ীফ বলে অপপ্রচার করছে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের মতবাদের বিপক্ষে মনে হলেই সেটাকে তারা জাল বলছে। আর এ জন্য তারা উছুলে হাদীছ শরীফ উনার বিভিন্ন অপব্যাখ্যার আশ্রয়ও গ্রহন করতে কার্পণ্য করছে না। শত শত বছর ধরে উম্মত যে হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করে আসছে কেউ কোন আপত্তি করে নাই অথচ হাল যামানায় এসব ওহাবীরা হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে জাল! জাল! বলে চিৎকার শুরু করেছে।
তাদের ধারণা পবিত্র বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ ছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্যান্য কিতাবে অনেক জাল বর্ণনা রয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের জানা দরকার একজন মুহাদ্দিছ যখন উনার কিতাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তিনি সবসময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন যাতে কিতাব খানা নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ থাকে। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বর্ণিত আছে, ‘খলীফা হারুনুর রশিদ (১৪৮-১৯৩ হিজরী) উনার দরবারে একজন মুরতাদকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো সে বদকার তখন বললো, 
أَيْنَ أَنْتَ مِنْ أَلْفِ حَدِيْثٍ وَضَعْتُهَا؟
আমাকে মেরে ফেলবেন ভালো কথা, কিন্তু যে এক হাজার জাল হাদীছ লোক সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছি সেগুলো কি করবেন? তখন খলীফা হারুনুর রশিদ বললেন, 
فَأَيْنَ أَنْتَ يَا عَدُوَّ اللهِ مِنْ أَبِي إِسْحَاقَ الفَزَارِيِّ، وَابْنِ المُبَارَكِ يَتَخَلَّلاَنِهَا، فَيُخْرِجَانِهَا حَرفاً حَرفاً 
হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন! আমাদের নিকট হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবু ইসহাক ফাযারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা কি জন্য আছেন? উনারা প্রতিটি জাল শব্দকে ছাকনী দিয়ে  ছেঁকে বেছে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবেন। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৬/৭১, মা’রিফাতু উলুমিল হাদীছ ৩৬ পৃষ্ঠা)
এ ঘটনা থেকেই বোঝা গেলো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইমামগন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে যাচাই বাছাই করে অনুপ্রবেশকৃত মিথ্যা বর্ণনা কর্তন করে বিশুদ্ধ বর্ণনা আমাদের জন্য কিতাব আকারে সাজিয়ে রেখে গেছেন, এবং কিতাবের ভূমিকায় লিখে গেছেন এই কিতাবে কোন মওজু বর্ণনা নেই। এরপরও সনদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিচার বিশ্লেষণ হয়েছে, গবেষণা হয়েছে। আর তার উদ্দেশ্য সর্ম্পকেও মুহাদ্দিছীনে কিরামগন স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন,
كان الإسناد لئلا يدخل في الدين ما ليس منه، لا ليخرج ما ثبت من عمل أهل الإسناد
‘সনদ-তো এজন্য যে, শরীয়ত-বহির্ভূত জিনিস যেন সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে অনুপ্রবেশ না করে। ইমামগণ উনাদের মাধ্যমে প্রমাণিত জিনিসকে সম্মানিত শরীয়ত হতে বের করার জন্যে সনদ নয়।’ (আজভিবাহ ২৩৮)
হযরত ইবনে মুহাররায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
على بن المدينى يقول ليس ينبغى لأحد ان يكذب بالحديث اذا جاءه عن النبى صلى الله عليه وان كان مرسلا فإن جماعة كانوا يدفعون حديث الزهرى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احتجم فى يوم السبت او الأربعاء فأصابه وضح فلا يلومن الا نفسه فكانوا يفعلونه فبلوا منهم عثمان البتى فأصابه الوضح ومنهم عبد الوارث يعنى ابن سعيد التنورى فأصابه الوضح ومنهم ابو داود فأصابه الوضح ومنهم عبد الرحمن فأصابه
অর্থ: আমি হযরত আলী বিন মাদিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনেছি যে, কারো জন্য উচিত নয় যে, সে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে সম্বন্ধযুক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করবে বা মিথ্যা বলবে। হোক তা মুরসাল। একবার কতিপয় লোক ইমাম হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আরবিয়া বা বুধবারে শিংগা লাগানো সম্পর্কীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করে আরবিয়া বা বুধবারে শিংগা লাগালে মারাত্মক মুছীবতে গ্রেপ্তার হয়। যাদের মধ্যে হযরত উসমান আল্ বাত্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল ওয়ারিস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে সা’দ তানবুরী রহতুল্লাহি আলাইহি, আবু সাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা প্রমুখ ছিলেন। (মা’রিফাতু রিজাল লি ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন ২য় খন্ড ১৯০ পৃষ্ঠা)
আর এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
من حدث عني بحديث يرئ انه كذب فهو احد الكاذبين
অর্থ: যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হতে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করলো এবং ধারনা পোষন করলো যে, তা মিথ্যা তাহলে সে মিথ্যাবাদীদের অন্যতম ব্যক্তি। (মুসলিম শরীফ ১/৭, উমদাতুল ক্বারী ৩/২৬৮,  মিশকাত- কিতাবুল ইলম- প্রথম পরিচ্ছেদ- হাদীস ১৮৮)
সুতরাং বোঝা গেলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত করে কেউ কিছু বর্ণনা করলে সেটা ওহাবীদের মত বিনা জ্ঞানে মওযু বা জাল বলে অস্বীকার করলে সে নিজেই মিথ্যাবাদী বলে প্রতিপন্ন হবে। 
বিস্তারিত

খায়রুল কুরুনে ঈদে মিলাদে হাবিবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলিল

খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় মীলাদ শরীফ পাঠ করার জন্য এক ব্যক্তি ওলী আল্লাহ হিসাবে আখ্যায়িত হলেন। সুবহানাল্লাহ।
আল্লামা সাইয়্যিদ আবু বকর মক্কী আদ দিময়াতী আশ শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৩০২ হিজরী) উনার বিখ্যাত কিতাব “ইয়নাতুল ত্বলেবীনে” বর্ণনা করেন,
أنه كان في زمان أمير المؤمنين هارون الرشيد شاب في البصرة مسرف على نفسه وكان أهل البلد ينظرون إليه بعين التحقير لاجل أفعاله الخبيثة، غير أنه كان إذا قدم شهر ربيع الاول غسل ثيابه وتعطر وتجمل وعمل وليمة واستقرأ فيها مولد النبي ودام على هذا الحال زمانا طويلا، ثم لما مات سمع أهل البلد هاتفا يقول: احضروا يا أهل البصرة واشهدوا جنازة ولي من أولياء الله فإنه عزيز عندي، فحضر أهل البلد جنازته ودفنوه، فرأوه في المنام وهو يرفل في حلل سندس واستبرق، فقيل له بم نلت هذه الفضيلة ؟ قال بتعظيم مولد النبي

খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় (১৪৮-১৯৩ হিজরী) বসরাতে এক যুবক ছিলেন যার আমল ভালো ছিলো না। এবং দেশের মানুষও উনাকে ভালো জানতো না। তবে যখন পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস আসতো তখন তিনি কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করেন, ভালো খাবার ব্যবস্থা করতেন এবং মীলাদ শরীফ পাঠ করতেন। অতপর যখন তিনি ইন্তেকাল করলেন, তখন দেশের জনগণ একটি গায়েবী আওয়াজ শুনতে পেলেন: হে বসরার লোকজন! আসো একজন আল্লাহ পাকের ওলীর দাফন করো। তিনি আমার কাছে প্রিয়। শহরের মানুষ উনার জানাযা পড়লেন ও দাফন করলেন। এবং তারা উনাকে স্বপ্নে দেখলেন এবং উনার মর্যাদা দেখলেন। সে ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হলো কিভাবে আপনি এ মর্যাদা অর্জন করলেন? তিনি বলেন পবিত্র মীলাদ শরীফকে সম্মান করার কারনে। (ইয়নাতুল ত্বলেবীন ৩ খন্ড ৩৬৫ পৃষ্ঠা)

খলীফা হারুনুর রশীদের যামানা ছিলো খায়রুল কুরুনে। উপরোক্ত ঘটনায় বোঝা যায় সে সময় পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের রীতি ছিলো। তাই এক ব্যক্তি তার আমল কিছুটা মন্দ হলেও মীলাদ শরীফ পাঠকে আল্লাহ পাক তার মর্যাদার কারন হিসাবে প্রকাশ করলেন। এবং ওলী আল্লাহ হিসাবে গ্রহন করলেন। সুবহানাল্লাহ।

সূতরাং উপরোক্ত ঘটনা ও সময়কাল থেকে জ্ঞানী মাত্রই যা বোঝার বুঝে যাওয়ার কথা। ধন্যবাদ।

বিস্তারিত

শামসুল হক ফরীদপুরীর মিলাদের পক্ষে রায়

দেওবন্দ সিলসিলার অন্যতম মুরুব্বী, আশরাফ আলী থানবীর অন্যতম খলীফা হচ্ছে শামসুল হক ফরীদপুরী। শামসুল হক ফরীদপুরীর গ্রন্থাবলী নিয়ে রচিত এই বই। এ বইয়ের ২য় খন্ডে ফরীদপুরী সাহেবের “অছিয়তনামা” সংযুক্ত আছে। সেখানে তার একটা বানী হচ্ছে “ উহার একটি শব্দও আল্লাহ ইশারা না পাইয়া লিখি নাই”।
তো আসুন দেখা যাক ফরীদপুরী সাহেব “অছিয়তনামা” অধ্যায়ে আল্লাহ পাকের ইশারায় কি লিখেছেন-
“রসূলের ইশকে মত্ত হইয়া খাড়া হইয়া বা বসিয়া জগল বা কাছিদা পড়াকে , মওলুদ শরীফ পড়া বা পড়ানোকে আমি শুধু জায়িযই মনে করি না বরং অত্যান্ত জরুরী মনে করি। কেননা এই উসিলায় সাধারন লোকে হযরতের জন্মবৃত্তান্ত, জীবনবৃত্তান্ত, সত্য ধর্মের জন্য কষ্ট সহ্যের বৃত্তান্ত এবং রসূলের অন্যান্য গুনাবলি, কার্যাবলী ও সানা সিফত মোযেজাত জানিয়া, রসূলের পরিচয় পাইয়া রসূলকে এবং রসূলের তরীকাকে প্রনাধিক ভালোবাসিতে শিখিবে।” (শামসুল হক ফরীদপুরীর গ্রন্থাবলী ৩৮২)
শামসুল হক ফরীদপুরীর উক্ত ফতোয়া শুনিয়া কওমী দেওবন্দী ভ্রাতাগন কি বলিবেন? আপনারা কি উহাকে বিদয়াত বলিয়া অস্বীকার করিবেন? নাকি আপনাদের মুরুব্বীকে বিদয়াতী জ্ঞান করিবেন?



বিস্তারিত

ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন উনারা উট জবাই,গম বিতরন করেছেন

আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা ছালিছ উর্দূ তরজমাতি মা’য়া ইতেরাযাত কে তাহক্বিক্বী জওয়াবাত আওর তাফছিলী হালাতে মছান্নিফ কে সাত বা’নামে নে’য়মাতে কুবরা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিতাবের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
يَوْمَ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَبَحَ حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرٍ الصّـِدّيْقُ عَلَيْهِ السَّلَامَ مِائَةَ نَاقَةٍ وَتَصَدَّقَ بِـهَا
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ১০০ উট যবেহ করতেন এবং তা বিলিয়ে দিতেন।”
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে-
تَصَدَّقُ حَضْرَتْ اَبُوْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِـىْ ذٰلِكَ بِثَلَاثَةِ اَقْرَاصِ مِنْ شَعِيْرِ
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৩ গামলা গম বিলিয়ে দিতেন।”
অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জবাই করেছেন, দান-ছদক্বাও করেছেন। 
সুতরাং দেখা গেল যে, মিষ্টি খাওয়া, গরু জবাই করা বা খুশি প্রকাশ করা প্রত্যেকটিই ইসলামী শরীয়ত সিদ্ধ আমল।
বিস্তারিত

তিনি রাখলেন রোযা আর আপনারা করেন ঈদ, আপনারা খান মিষ্টি, গরু জবাই করেন, মিছিল করেন!!!

কিছুদিন পূর্বে ফকেহানী ফেরকার অনুসারী হারামে মশগূল এক বিদ‘য়াতী, বদচরিত্র, নামধারী এক মুফতে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে আলোচনায় বলেছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বার হিসেবে বিলাদত শরীফ পালন করেছেন আর আপনারা পালন করেন তারিখ হিসেবে। তিনি রাখলেন রোযা আর আপনারা করেন ঈদ, আপনারা খান মিষ্টি, গরু জবাই করেন, মিছিল করেন।
তার এই বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে যে, এই নামধারী মুফতে বিলাদত শরীফ পালনকে স্বীকার করে নিয়েছে। যেহেতু বিলাদত শরীফ পালনকে অস্বীকার করা মানে হাদীছ শরীফ অস্বীকার করা, তাই স্বীকার না করে উপায় কী?

বিলাদত শরীফ পালন করতে হবে, তাই বিলাদত শরীফ পালনের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইছনাইনিল আযীম রোযা রাখলেন। এর দ্বারা এটা নির্দিষ্ট করে দেননি যে, বার হিসেবেই পালন করতে হবে এবং রোযাই রাখতে হবে। তারিখ হিসেবে পালন করা যাবে না এবং রোযা ছাড়া অন্য কোন আমল করা যাবে না, এর স্বপক্ষে কোন দলীল কী এই বিদ‘য়াতী মুফতে দেখাতে পারবে?
যেহেতু হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ স্মরণ করে শুকরানা স্বরূপ ইছনাইনিল আযীম রোযা রেখেছেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উক্ত সুন্নত মুবারক পালনার্থে ইছনাইনিল আযীম রোযা রেখেছেন। আর তাই রাজারবাগ দরবার শরীফেও ইছনাইনিল আযীম রোযা রাখা হয়। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু প্রতি ইছনাইনিল আযীম রোযা রাখেননি। 
আবার যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইছনাইনিল আযীম রোযা রেখেছেন কিন্তু পবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ উদযাপন করতে নিষেধ করেননি ও রোযা ছাড়া অন্য কোন আমল করতে নিষেধ করেননি। তাই এ ব্যাপারে কাদিয়ানীদের মতো নতুন কোন শরীয়ত জারী করার অধিকার কারো নেই।
এছাড়াও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস (পবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ)ও উদযাপন করেছেন। 
যেমন আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা ছালিছ উর্দূ তরজমাতি মা’য়া ইতেরাযাত কে তাহক্বিক্বী জওয়াবাত আওর তাফছিলী হালাতে মছান্নিফ কে সাত বা’নামে নে’য়মাতে কুবরা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিতাবের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
يَوْمَ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَبَحَ حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرٍ الصّـِدّيْقُ عَلَيْهِ السَّلَامَ مِائَةَ نَاقَةٍ وَتَصَدَّقَ بِـهَا
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ১০০ উট যবেহ করতেন এবং তা বিলিয়ে দিতেন।”
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে-
تَصَدَّقُ حَضْرَتْ اَبُوْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِـىْ ذٰلِكَ بِثَلَاثَةِ اَقْرَاصِ مِنْ شَعِيْرِ
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৩ গামলা গম বিলিয়ে দিতেন।”
অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জবাই করেছেন, দান-ছদক্বাও করেছেন। 
সুতরাং দেখা গেল যে, মিষ্টি খাওয়া, গরু জবাই করা বা খুশি প্রকাশ করা প্রত্যেকটিই ইসলামী শরীয়ত সিদ্ধ আমল।
উক্ত মুর্খ মুফতের বক্তব্যে যেটা বুঝা যাচ্ছে রোযা হচ্ছে ঈদের বিপরীত বা রোযা ঈদের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু ইসলামী শরীয়ত কি এভাবেই বিষয়টি ফায়সালা করে দিয়েছে? বরং ইসলামী শরীয়ত বছরে ৫ দিন রোযা রাখা নিষিদ্ধ করেছে। এখন যে কেউ চাইলে এই ৫ দিন বাদ দিয়ে সারা বছরই রোযা রাখতে পারে? তখন কি উক্ত ব্যক্তি উক্ত সময়ে খুশি প্রকাশ বা ঈদ করতে পারবে না? ইসলামী শরীয়ত কি এতে বাধা প্রদান করে?
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ هٰذَا يَوْمُ عِيْدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ فَمَنْ جَاءَ اِلَى الْـجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَاِنْ كَانَ طِيْبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسّوَاكِ‏.‏
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দিনকে মুসলমান উনাদের জন্য পবিত্র ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি পবিত্র জুমুআর নামায আদায় করতে আসবে, তিনি যেন গোসল করেন এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগান। আর মিসওয়াক করাও কর্তব্য।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৯৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৭৩৫৫)
এখন জুমুয়ার দিন ঈদের দিন হওয়ার কারণে, অন্য কোন কারণে নয়, শুধুমাত্র ঈদের দিন হওয়ার কারণে ইসলামী শরীয়তে জুমুয়ার দিনে কি রোযা রাখা নিষিদ্ধ?
আবার শরীয়ত মুতাবিক আশূরার রোযা রাখার বিধান রয়েছে। এখন যদি আশূরার দিনটি জুমুয়ার দিন হয় তাহলে আশূরার রোযা রাখার কারণে কি জুমুয়ার ঈদের বিধান বাতিল হয়ে যাবে?
আরাফা দিন ঈদের দিন আবার আরাফা দিবসের রোযা পিছনের এক বছরের এবং সামনের এক বছরের গুনাহখতা ক্ষমা হওয়ার কারণ।
এখন আরাফা দিন ঈদের দিন হওয়ার কারণে কি আরাফা দিবসের রোযা রাখা বারণ হবে?
নাকি আরাফা দিবসের রোযা রাখার কারণে আরাফা দিন ঈদের দিন হওয়া বাতিল হবে?
এর উত্তর মূর্খ বিদ‘য়াতী মুফতের কাছে আছে কি?
বিস্তারিত

“নবীজী বিলাদত শরীফ উপলক্ষে রেখেছেন রোজা , আপনারা করেন ঈদ”!!!

 “নবীজী বিলাদত শরীফ উপলক্ষে রেখেছেন রোজা , আপনারা করেন ঈদ”!!!
ওহাবী বিদয়াতীদের একজন আপত্তি করেছে, “নবীজী বিলাদ!!
তাদের এ কথা শুনে মনে হয় রোজা রাখা মনে হয় খুব দুঃখের বিষয়, শোকের বিষয়। তাই সেদিন ঈদ করা যাবেনা। নাউযুবিল্লাহ! তাদের কাছে কেন জানি ঈদ ও রোজা সাংঘর্ষিক মনে হয়। মূলত রোজা রাখা কোন দুঃখের বিষয় নয় বরং রোজা রাখাও ঈদ বা খুশির অংশ। হাদীছ শরীফ থেকে আমরা জানি পবিত্র আরাফার দিন হচ্ছে ঈদের দিন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَ وَيَوْمَ النَّحْرِ وَأَيَّامَ التَّشْرِيقِ عِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ
অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আরাফার দিন, নহর বা কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থ্যাৎ ১১, ১২ ও ১৩ ই জিলহজ্জ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। (দলীল: নাসাঈ শরীফ কিতাবুল হজ্জ : হাদীস নম্বার ৩০০৪, আবু দাউদ – কিতাবুছ সিয়াম : হাদীস ২৪১৯, তিরমিযী শরীফ- কিতাবুছ ছিয়াম: হাদীস ৭৭৩)
আর আরাফা হচ্ছে ৯ যিলহজ্জ শরীফ। যেদিন রোজা রাখার অনেক ফযিলত হাদীছ শরীফে আছে। যিলহজ্জ মাসে প্রথম ১০ দিন রোজা রাখার ফযীলতও হাদীছ শরীফে আছে। সূতরাং রোজা ও ঈদ সাংঘর্ষিক কোন আমল নয়। আরাফার দিনে রোজা রাখার মাধ্যমে ঈদ পালন হচ্ছে।
সবাই জানে জুমুয়ার দিন হচ্ছে ঈদের দিন। উল্লেখ্য যে রমজান মাসের জুমার দিনসমূহে যে রোজা রাখা হয় বিদয়াতিদের বক্তব্য মোতাবেক সেদিন কি ঈদের দিন বাদ যাবে? নাকি সেদিন কি রোজা রাখা বন্ধ রাখতে হবে?
অনুরুপভাবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন যদি সোমবার হয় তাহলে কি সেদিন ঈদ বাদ দিয়ে রোজা রাখতে হবে?
হাদিস শরীফে ৫ দিন রোজার রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। উক্ত পাঁচদিনের কোনদিন যদি সোমবার পড়ে; সেদিন কি বিদয়াতিরা রোজা রাখবে? রোজা রাখলে শরীয়তে কি সেটা গ্রহণযোগ্য হবে? বিদয়াতিরা এসব প্রশ্নের কি জবাব দেবে?
নবীজী রাখলেন রোজা আপনারা করেন ঈদ- এ বিষয়ে বলতে হয়, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের দিন ঈদ পালন আমরা নতুন করছি না। বরং মুসলিম জাহানের সবাই ঈদ পালন করে আসছেন। বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘মাওয়াহিবু লাদুন্যিয়াহ’ কিতাবে ১ম খন্ড ৭৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
ولا زال أهل الإسلام يحتفلون بشهر مولده عليه السلام، ويعملون الولائم، ويتصدقون في لياليه بأنواع الصدقات، ويظهرون السرور، ويزيدون في المبرات، ويعتنون بقراءة مولده الكريم، ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم. ومما جرب من خواصه أنه أمان في ذلك العام، وبشرى عاجلة بنيل البغية والمرام، فرحم الله امرءا اتخذ ليالي شهر مولده المبارك أعيادا، ليكون أشد علة على من في قلبه مرض وإعياء داء".
অর্থ: সব সময়ই মুসলমানগন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত শরীফ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এ উপলক্ষ্যে দাওয়াতের ব্যবস্থা করে এবং রবিউল আউয়াল মাসের রাতগুলোতে সকলে সাধ্যানুযায়ী দান সদকাহ করে। খুশি প্রকাশের পাশা পাশি অধিকহারে নেক আমল ও মীলাদ শরীফ উদযাপন করে। এভাবে প্রত্যেক মুসলামান মীলাদ শরীফ উনার বরকত সমূহের ফয়েজ ও প্রেরনা লাভ করে। পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলের পরীলক্ষিত উপকারীতার মধ্যে একটি এই যে , যে বছর পবিত্র মীলাদ শরীফ উদযাপন করা হয় সে বছর শান্তি কায়েম থাকে। তাছাড়া নেক মকছুদ এবং অন্তরের আকাঙ্খা দ্রুত পূর্ণ হওয়ার খোশ খবর প্রদান করে। সূতরাং আল্লাহ পাক সে ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাস উনার রাত গুলোকে ঈদ হিসাবে উদযাপন করে, তার কঠিন রোগকে বাড়িয়ে তুলেছে, যার অন্তরে রোগ দানা বেধেঁ রয়েছে।”
“হাদায়েকুল আনোয়ার” ৫৩ পৃষ্ঠায় আরো বর্নিত আছে
فحقيقٌ بيومٍ كانَ فيه وجودُ المصطفى صلى الله عليه وسلم أَنْ يُتَّخذَ عيدًا، وخَليقٌ بوقتٍ أَسفرتْ فيه غُرَّتُهُ أن يُعقَد طالِعًا سعيدًا،
অর্থ: এ দিনের প্রকৃত অবস্থান হলো , যেহেতু এদিন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ হয়েছে তাই এ দিন ঈদ উদযাপন করাই হচ্ছে প্রকৃত দাবী। এদিনের এক শুভক্ষনেই তো সেই আলোকিত মহা উজ্জল চেহারা মুবারক পৃথিবী দর্শন করেছে তবে কেন ঈদ হবে না?
সূতরাং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোজ রেখেছেন আর উম্মত হয়ে আপনারা ঈদ করছেন এমন অহেতুক কথা যারা বলে তারা মূলত মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।
বিস্তারিত

সোমবার রোজা রাখা নিয়ে বিদয়াতীদের মিথ্যাচারের জবাব

এক বিদয়াতি খারেজী বলেছে, সোমবার রোজা রাখা শুধু হুজুর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাছ। কোন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের সোমবার রোজা রাখতে আদেশও করেননি আর কোন সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারও নাকি সোমবার রোজা রাখেননি।
আসুন আমরা সামগ্রিকভাবে বিষয়গুলো দলীল দ্বারা পর্যালোচনা করি। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে,
عَنْ اَبِىْ قَتَادَةَ الاَنْصَارِىِّ رضى الله عنه قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَقْبَلَ عَلَيْهِ عُمَرُ عليه السلام فَقَالَ يَا نَبِىَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَوْمُ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ؟ قَالَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ اَمُوْتُ فِيهِ. 
অর্থ: হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছুহবত মুবারকে ছিলাম, এমন সময় সেখানে হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন এবং আরজ করলেন, হে মহান আল্লাাহ তায়ালার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সোমবার রাখা কেমন? জাওয়াবে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: আমি এ দিন মুবারকে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছি এবং এ দিন মুবারকে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করব। । সুবহানাল্লাাহ। (ছহীহ ইবনি খুযাইমাহ ৩/২৯৮ কিতাবুছ ছিয়াম : হাদীছ ২১১৭)
এ হাদীছ শরীফ থেকে আমরা জানতে পারলাম সোমবার রোজা রাখার গুরুত্ব একারনেরই বেশি কারন এ বারে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহন করেছেন।
এরপর সে বলেছে, তিনি সোমবার রোজার নির্দেশ দেননি এবং সাহাবারা সোমাবরে রোজা রাখেন নি। তার এ বক্তব্য দ্বারা প্রমানিত হয় সে ডাহা মিথ্যাবাদী জালিয়াত । কেননা হাদিসে আছে স্পষ্ট উল্লেখ আছে হুযুর পাক ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন,
أُمِّ سَلَمَةَ فَسَأَلْتُهَا عَنِ الصِّيَامِ فَقَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَأْمُرُنِى أَنْ أَصُومَ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ أَوَّلُهَا الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ
অর্থ: হযরত উম্মে সালমা আলাইহিস সালাম বর্ননা করেন, হুযুর পাক ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখতে যার প্রথম দিন সোমবার অথবা বৃহস্পতিবার হয়। (আব দাউদ শরীফ ২৪৫৪, শুয়াবুল ঈমান ৩৫৭১, মুসনাদে আবী ইয়ালা ৬৯৮২, নাসাঈ শরীফ, মিশকাত শরীফ কিতাবুছ ছাওম ১৯৬২ নং হাদীছ)
এখানে দেখা গেলো, সোমবার রোজা রাখাতে আদেশ করার হাদীছ শরীফও রয়েছে।

এরপর সে বলেছে, সোমবার কোন সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম নাকি সোমবার রোজাও রাখেননি। নাউডুবিল্লাহ। অথচ সহীহ হাদীছ শরীফে সোমবার রোজা রাখার বিষয়ে সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের আমল দেখা যায়। হাদীছ শরীফের বিখ্যাত কিতাব “ইবনে আবী শায়বায়” একটা বাব আছে যার নাম-
- مَا ذُكِرَ فِي صَوْمِ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ.
এখানে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে, যেখানে অনেক হাদীছ শরীফ আছে যেখানে দেখা যায় হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন সোমবার রোজা রাখতেন।

حَدَّثَنَا عُثْمَانَ بْنُ مَطَر ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ ، عَنْ أَبِي عُقْبَةَ ، قَالَ : كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يَصُومُ الاِثْنَيْن وَالْخَمِيسَ.
অর্থ: হযরত আবু উকবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি ইয়ামুল ইছনাইন (সোমবার) ও ইয়াওমুল খমীছ রোজা রাখতেন। (ইবনে আবী শায়বা ৯৩২১)
حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الأَحْمَرِِ ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ ؛ أَنَّ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيزِ كَانَ يَصُومُ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ.
অর্থ: হযরত ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত, হযরত উমর আব্দুল আযীয রহতুল্লাহি আলাইহি তিনি সোমবার ও ইয়াওমুল খমীছ রোজা রাখতেন। (ইবনে আবী শায়বা ৯৩২৪)

حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ دُكَيْنٍ ، عَنْ قَيْسٍ ، عَنْ عَاصِمٍ ، عَنْ زِرٍّ ، عَنْ عَبْدِ اللهِ ؛ أَنَّهُ كَانَ يَصُومُ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবসে মাসুদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি সোমবার ও ইয়াওমুল খমীছ রোজা রাখতেন। (ইবনে আবী শায়বা ৯৩২৮)

حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ ، عَنْ سَعِيدٍ ، عَنْ قَتَادَةَ ، عَنْ خِلاَسٍ ؛ أَنَّ عَلِيًّا كَانَ يَصُومُ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ.
নিশ্চয়ই হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি সোমবার ও ইয়াওমুল খমীছ রোজা রাখতেন। (ইবনে আবী শায়বা ৯৩৩০)

এ বিষয়ে সহীহ ইবনে খুযায়মাতেও এমন অনেক দলীল আছে। অথচ সেই জাহিল বলেছে সোমবার রোজা রাখা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাছ। অন্য কেউ নাকি রাখেননি। যে এমন মনগড়া আপত্তি করে প্রমাণ করলো সে একটা মিথ্যা অপবাদ দানকারী।

উপরোক্ত আলোচনা দারা প্রমাণিত হয় যে, নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রতি মিথ্যারোপ আরোপ করেছে। 
من كذب علي فليتبوأ مقعده من النار
“যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তার আবাসস্থল হবে জাহান্নাম।” (ইবনে আবী শায়বা - কিতাবুল আদব- হাদীছ ৩৬১৭)
বিস্তারিত

সুরা ইবরাহীম শরীফ উনার দ্বারা ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমানিত

সুরা ইবরাহীম শরীফ উনার দ্বারা ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমানিত
কিছুদিন পূর্বে ফকেহানী ফেরকার অনুসারী হারামে মশগূল এক বিদ‘য়াতী, বদচরিত্র, নামধারী মুফতি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে আলোচনায় বলে যে, পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত সূরা ইবরাহীম-এর ৫ নং আয়াত শরীফে বর্ণিত ঘটনা শুধুমাত্র হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমের জন্য খাছ। এই ঘটনাটি থেকে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনভাবেই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলীল উপস্থাপন করতে পারেন না।
এ বক্তব্য তার ইলমের দৌড়কে সুস্পষ্ট করে দিয়েছে।
কেননা সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫ নং আয়াত শরীফে বর্ণিত ঘটনা শুধুমাত্র হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমের জন্য যদি খাছ হয় তাহলে পবিত্র কুরআন শরীফে এই আয়াত শরীফ নাযিলের প্রয়োজনীয়তাই কি ছিল? পবিত্র কুরআন শরীফে তো পূর্ববর্তী ক্বওমের বর্ণনা সম্বলিত এমন অনেক আয়াত শরীফ রয়েছে। সে ঘটনাগুলো কি শুধুমাত্র তিলাওয়াত করা জন্যই নাযিল হয়েছে? নাকি উক্ত ঘটনা থেকে উপদেশ গ্রহণের জন্য নাযিল হয়েছে?
পূর্ববর্তী ক্বওমের বর্ণনা সম্বলিত আয়াত শরীফগুলো যে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক উপদেশ গ্রহণের জন্য নাযিল হয়ে সেটা পবিত্র কুরআন শরীফেই বলে দেয়া হয়েছে।
যেমন- সূরা ইউসূফ : ১১১, সূরা হূদ : ১২০
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ ۗ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَىٰ وَلَـٰكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থ: উনাদের কাহিনীতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ, রহমত ও হিদায়াত। (সূরা ইঊসুফ : ১১১)
وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ ۚ وَجَاءَكَ فِي هَـٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
অর্থ: আর আমি রসূলগণের সব বৃত্তান্তই আপনাকে বলছি, যা দ্বারা আপনার অন্তর মজবুত করছি। আর এভাবে আপনার নিকট মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য নসীহত ও স্মরণীয় বিষয়বস্তু এসেছে। (সূরা হূদ : ১২০)
এই আয়াত শরীফের (সূরা হূদ : ১২০) তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-
وهذه الحكمة في قصص الأولين علينا لنعتبر بها. (تفسير البحر المحيط تفسير رقم الاية ۱۲۰ من سورة هود شريف اسم المؤلف: محمد بن يوسف بن على ابو حيان النحوى الاندلسى رحمة الله عليه تاريخ الوفاة ۷۴۵ هجرى)

অর্থ: “পূর্ববর্তীদের ঘটনাসমূহে আমাদের জন্য এই হিকমত রয়েছে যে, আমাদের জন্য পূর্ববর্তী ঘটনাসমূহ হতে উপদেশ গ্রহণ করা দায়িত্ব-কর্তব্য।” (তাফসীরুল বাহরুর মুহীত)
এছাড়াও সূরা আহযাব শরীফ উনার ৫৬ নং আয়াত শরীফের তাফসীরে মুফাসসির হযরত মুহম্মদ ইবনে আলী ছাবূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত: ৬০৪ হিজরী, ওফাত: ৬৮০ হিজরী) তিনি বর্ণনা করেন-
اقول: كل ما ورد فى القران من خطاب للنبى او الرسول فانما يقصد به محمد عليه الصلاة والسلام خاتم الانبياء والمرسلين صلوات الله عليهم اجمعين. (روائع البيان فى تفسير ايات الاحكام تفسير رقم الاية ۵۶ من سورة الاحزاب شريف المؤلف: محمد بن على بن محمود بن احمد الصابونى الحافظ جمال الدين المحمودى الدمشقى المعروف بابن الصابونى سنة الولادة ۶۰۴ هجرى وسنة الوفاة ۶۸۰ هجرى)
অর্থ: “(হযরত মুহম্মদ ইবনে আলী ছাবূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) আমি বলি: পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মোধন করে যা কিছু বর্ণিত আছে, তা দ্বারা মূলতঃ খাতামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (রওয়ায়িউল বায়ান ফী তাফসীরি আয়াতিল আহকাম)
সুতরাং দেখা গেল যে, সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫ নং আয়াত শরীফে বর্ণিত ঘটনা শুধুমাত্র হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমের জন্য খাছ নয়।
এখন আসা যাক, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমের ঘটনাটি থেকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলীল উপস্থাপন করা যায় কিনা?
সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫ নং আয়াত শরীফে বর্ণিত-
ذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللهِ
এর তাফসীরে হযরতুল আল্লামা ক্বাযী মুহম্মদ ছানাউল্লাহ উছমানী হানাফী মাতুরীদী মাযহারী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত: ১১৪৩ হিজরী, ওফাত: ১২২৫ হিজরী) ‘তাফসীরুল মাযহারী’ ৫ম খণ্ড ১১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
(وذكرهم بايام الله) قال ابن عباس رضى الله تعالى عنه وابى بن كعب رضى الله عنه ومجاهد رحمة الله عليه وقتادة رحمة الله عليه بنعم الله
অর্থ: “(মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ‘ايام الله’ র অর্থ করেছেন ‘মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতসমূহ, হিসেবে।”
খাতিমাতুল মুহাক্কিক্বীন, উমদাতুল মুদাক্কিক্বীন, মুফতীয়ে বাগদাদ, আল্লামা আবুল ফদ্বল শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমূদ আলূসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত: ১২৭০ হিজরী) উনার লেখা ‘রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী’ কিতাবে ‘সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফের তাফসীরে উল্লেখ আছে-
(وذكرهم بايام الله) اى بنعمائه وبلائه كما روى عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما، وحاصل الـمعنى بالترغيب والترهيب والوعد والوعيد. وعن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ايضا والربيع رحمة الله عليه ومقاتل رحمة الله عليه وابن زيد رحمة الله عليه الـمراد بايام الله وقائعه سبحانه ونقماته فى الامم الخالية، ومن ذلك ايام العرب لحروبـها وملاحمها كيوم ذى قار ويوم الفجار ويوم قضة وغيرهما. واستظهره الزمخشرى رحمة الله عليه للغلبة العرفية وان العرب استعملته للوقائع، وانشد الطبرسى لذلك قول عمرو بن كلثوم:
وايام لنا غرر طوال: عصينا الـملك فيها ان ندينا
وانشده الشهاب للمعنى السابق، وانشد لهذا قوله: وايامنا مشهورة فى عدونا.
واخرج النسائى عبد الله بن احمد رحمة الله عليه فى زوائد الـمسند والبيهقى فى شعب الايـمان وغيرهم عن ابى بن كعب رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه فسر الايام فى الاية بنعم الله تعالى والائه، وروى ذلك ابن الـمنذر رحمة الله عليه عن ابن عباس رضى الله عنه ومجاهد رحمة الله عليه، وانت تعلم انه ان صح الحديث فعليه الفتاوى.
অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতসমূহ ও উনার কর্তৃক নাযিলকৃত বালা-মুছীবত সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন। যা বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি। মূল মর্মার্থ হলো- আপনি তাদেরকে উপদেশ, ভীতি প্রদর্শন দ্বারা এবং কৃত অঙ্গিকার ও শাস্তির অঙ্গিকারের কথা স্মরণ করিয়ে নছীহত মুবারক করুন। ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, হযরত রবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনু যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, ايام الله দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- মহান আল্লাহ সুবহানাহু উনার পক্ষ থেকে বান্দাদের প্রতি বিশেষ স্বরণীয় ঘটনাসমূহ এবং পূর্ববর্তী জাতিদের শাস্তি, প্রতিশোধ, ঘাত প্রতিঘাত ইত্যাদি অবস্থাদী। এ ছাড়াও এর দ্বারা আরবদের যুদ্ধ বিগ্রহ, হত্যা খুন-খারাবীর ইতিহাস যেমন: ‘ইয়াওমুল যী কার,’ ‘ইয়াওমুল ফুজ্জার, ‘ইয়াওমে ক্বাদ্বাহ’ ও এ ছাড়া অন্যান্য বিশেষ ঘটনাবহুল দিবসকে স্মরণ করতে বলা হয়েছে। আল্লামা যামাখশারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রাধান্যপ্রাপ্ত মর্মার্থের ব্যাপারে মত প্রকাশ করে বলেন, আরবরা ايام الله উনার অর্থ করে থাকেন- ঘটনা ও ইতিহাস হিসেবে। যেমনটি ত্ববারাসী তিনি আমর বিন কুলছূম-এর কবিতা আবৃতি করে উদাহরণ পেশ করেন।
(কবিতা) : ‘ঘটনাবহুল দুর্যোগময় সময়গুলো আমাদের জন্য লম্বা হয়েছে।’
এই একই অর্থে কবিতা আবৃতি করেছেন আল্লামা শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি। যেমনটি তিনি বলেন: (কবিতা): ‘আমাদের মুসলমানগণের বিজয়ের ঘটনাবহুল দিনগুলো আমাদের শত্রুদের কাছে আতঙ্কের।’
হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘নাসায়ী শরীফ-এ’, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘যাওয়ায়িদুল মুসনাদ’ কিতাবে, হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘শুয়াবুল ঈমান’ কিতাবে এবং অন্যান্যগণ হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ايام শব্দের তাফসীরে ইরশাদ করেন তা হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক বান্দার প্রতি প্রদত্ত নিয়ামত, দয়া, দান, অনুগ্রহ, কল্যানসমূহ। যা হযরত ইবনুল মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন।”
অন্যান্য তাফসীরেও ذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللهِ মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক বান্দার প্রতি প্রদত্ত নিয়ামত, দয়া, দান, অনুগ্রহ, কল্যানসমূহ বুঝানো হয়েছে।
এছাড়াও সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫ নং আয়াত শরীফের শেষাংশে إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ এর ব্যাখ্যায় তাফসীরুল কুরতুবী তে উল্লেখ আছে,
(إِنَّ فِي ذلِكَ) أي في التذكير بأيام الله (لَآياتٍ) أي دلالات. (لِكُلِّ صَبَّارٍ) أي كثير الصبر على طاعة الله وعن معاصيه. (شَكُورٍ) لنعم الله. وقال قتادة: هو العبد، إذا أعطي شكر، وإذا ابتلي صبر. وروى عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أنه قال:" الإيمان نصفان نصف صبر ونصف شكر- ثم تلا هذه الآية-" إِنَّ فِي ذلِكَ لَآياتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ". ونحوه عن الشعبي موقوفا. وتواري الحسن البصري عن الحجاج سبع سنين، فلما بلغه موته قال: اللهم قد أمته فأمت سنته، وسجد شكرا، وقرا:" إِنَّ فِي ذلِكَ لَآياتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ". وإنما خص بالآيات كل صبار شكور، لأنه يعتبر بها ولا يغفل عنها، كما قال:" إِنَّما أَنْتَ مُنْذِرُ مَنْ يَخْشاها" «2» [النازعات: 45] وإن كان منذرا للجميع. (الجامع لاحكام القران للقرطبي اى تفسير القرطبي المؤلف: ابو عبد الله محمد بن احمد بن ابي بكر بن فرح الانصاري الخزرجي شمس الدين القرطبي رحمة الله عليه المتوفى ۶۷۱ هجري سورة ابراهيم شريف رقم الاية ۵)
অর্থ : “(নিশ্চয়ই এতে রয়েছে) বিশেষ দিনসমূহ আলোচনা বা পালন করার মধ্যে রয়েছে (উপদেশসমূহ) নিদর্শনাবলী (প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল) মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আনুগত্য করণ ও গুনাহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে অসীম ধৈর্য্যধারণকারী (ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য) মহান আল্লাহ তায়ালা উনার থেকে প্রদত্ত নিয়ামত প্রাপ্তির জন্য। হযরত ক্বতাদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: তিনি এমন বান্দা, যখন উনাকে কিছু নিয়ামত দেয়া হয় তখন শুকরিয়া আদায় করে, আর তার উপর বিপদ আসে তখন ধৈর্যধারণ করে। নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: পবিত্র ঈমান উনার দুইটি দিক আছে। অর্ধেক হলো ধৈর্য্য ধারণ করা, আর অপর অর্ধেক হলো শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। অতঃপর তিনি অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনাকে তিলাওয়াত করেন ‘এতে নিদর্শন মুবারক ও উপদেশ রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্য্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য’। অনুরূপ বর্ণনা হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকেও মাওকূফ সূত্রে বর্ণিত আছে। হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হিজায অঞ্চলে সাত বছর নিরিবিলি অবস্থান করেছিলেন। যখন উনার মাউতের সময় হলো তখন তিনি প্রার্থনা করছিলেন এভাবে যে: আয় মহান আল্লাহ তায়ালা! আমি তো ইন্তিকাল বরণ করছি, তাই আমার মউত সুন্নত উনার তরীকায় হয়। এবং তিনি দুয়া’র মধ্যেই অত্র আয়াত শরীফ পাঠ করছিলেন ‘এতে নিদর্শন মুবারক ও উপদেশ রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্য্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য’। নিশ্চয়ই পবিত্র অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যেক ছবরকারী ও শুকরগুজার বান্দাহ উনাদেরকে খাছ করা হয়েছে। যাতে ব্যক্তি এ (বিশেষ বিশেষ দিন রাত পালন করার মাধ্যমে ছবর ও শুক্র আদায় করা) থেকে নছীহত অর্জন করে, আর এ থেকে গাফিল বা অমনোযোগী না হয়। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পবিত্র সূরাতুন নাযিয়াত উনার ৪৫ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন: নিশ্চয়ই আপনি ভীতিপ্রদর্শনকারী উনাদের জন্য, যাঁরা আপনাকে ভয় করে থাকে। যদিও তিনি সর্বশ্রেণী ব্যক্তিদেরকে ভীতিপ্রর্দনকারী।” (আল্ জামি’ লি আহকামিল কুরআন লিল্ কুরতুবী)
হযরতুল আল্লামা ক্বাযী মুহম্মদ ছানাউল্লাহ উছমানী হানাফী মাতুরীদী মাযহারী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত: ১১৪৩ হিজরী, ওফাত: ১২২৫ হিজরী) ‘তাফসীরুল মাযহারী’ ৫ম খণ্ড ১১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
(ان فى ذلك) الوقائع (لايات) على وجود الصانع وعلمه وقدرته حكمته ووحدته (لكل صبار) يصبر كثيرا على البلاء والطاعة عن الـمعصية. (شكور) يشكر كثيرا على نعمائه والـمراد به لكل مؤمن.
অর্থ “(নিশ্চয়ই এতে রয়েছে) অতীতের ঘটনাসমূহে রয়েছে (উপদেশসমূহ) ওই সকল ঘটনাবলীর মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহ পাক উনার এককত্ব ও শক্তিমত্তার আশ্চর্য নিদর্শন ও হিকমত। (প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল) যারা বালা-মুছীবতের সময় ছবর করেন (ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য) যাঁরা নিয়ামতসমূহ পাওয়ার কারণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উনার দ্বারা উদ্দেশ্য প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানগণ।”
সুতরাং অতীতের ঘটনাসমূহের মধ্যে প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানগণের জন্য উপদেশ রয়েছে। আলাদাভাবে শুধুমাত্র বনী ইসরাঈলের জন্য নয়। কোন তাফসীরকারক বলেননি যে, শুধুমাত্র বনী ইসরাঈলই উপদেশ গ্রহণ করবে পরবর্তীতে যারা আসবেন উনারা উক্ত ঘটনা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারবেন না।
সর্বোপরি, সূরা ইবরাহীম শরীফ শুরুই হয়েছে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মোধন করে। প্রথম আয়াত শরীফ যখন বর্ণনা হয়েছে তখন সেখানে ‘ক্বওম’ শব্দের পরিবর্তে ‘নাস’ মানবমন্ডলী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
সুতরাং সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫ নং আয়াত শরীফ দ্বারা শুধুমাত্র বনী ইসরাঈলকেই খাছ করা হয়নি বরং পরবর্তী উম্মত- উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্যও উপদেশ গ্রহণের বিষয় রয়েছে। 
পূর্ববর্তীদের ঘটনা পরবর্তীদের জন্য ইবরত নছীহতের এই বিষয়টা জাহিলরা জানে না। যা প্রকৃতপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা ইউসূফ শরীফ, ১১১ নং আয়াত শরীফ, সূরা হূদ শরীফ, ১২০ নং আয়াত শরীফ অস্বীকার করার নামান্তর।
যেহেতু সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫ নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ দিন সমূহ স্মরণ করতে বলেছেন এবং এর তাফসীরে তাফসীরকারকগণ মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত নিয়ামত সমূহ স্মরণের কথা বলেছেন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমগ্র জাহানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। তাই উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে পবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত প্রাপ্তির দিবস। যা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য উদযাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয।
সুতরাং সূরা ইবরাহীম-এর ৫ নং আয়াত শরীফে বর্ণিত ঘটনাটি থেকে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত দৃঢ়ভাবেই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলীল উপস্থাপন করতে পারেন।
মূলত তাফসীরের উছূল সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ হওয়ার কারণেই উক্ত নামধারী মুফতি এ ধরনের মূর্খতা সূচক বক্তব্য প্রদান করেছে। অথচ অথচ বর্ণিত আছে, ছহাবী হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেছেন:
اشار ابو الدرداء رضى الله عنه حيث قال: لا يكون الرجل فقيها حتى يحمل الاية الواحدة على محامل متعددة. (الفوز الكبير الباب الثانى الفصل الثالث المؤلف: الامام حضرت احمد بن عبد الرحيم المعروف: شاه ولى الله المحدث الدهلوى الحنفى الماتريدى رحمة الله عليه الولادة ۱۱۱۴ هجرى والوفاة ۱۱۷۶ هجرى)
অর্থ: একই পবিত্র আয়াত শরীফ বহুসংখ্যক স্থানে প্রয়োগ করতে সক্ষম না হলে কেউ ফকীহ হতে পারবে না। (আল-ফাওযুল কবীর অধ্যায়: ২য় পরিচ্ছেদ: ৩য় লেখক: ইমাম হযরত আহমদ বিন আব্দুল রহীম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ১১১৪ হিজরী ওয়াফাত: ১১৭৪ হিজরী, ইবনে সা’দ, ইবনে আসাকীর)

এছাড়াও বনী ইসরাঈলের আশুরার দিনে রোযা রাখার হাদীছ শরীফ দ্বারা ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলীল উপস্থাপন করেছেন।
যেমন হাভী লিল ফতওয়াতে উল্লেখ আছে-
وقد سئل شيخ الإسلام حافظ العصر أبو الفضل أحمد بن حجر عن عمل المولد فأجاب بما نصه : أصل عمل المولد بدعة لم تنقل عن أحد من السلف الصالح من القرون الثلاثة ولكنها مع ذلك قد اشتملت على محاسن وضدها ، فمن تحرى في عملها المحاسن وتجنب ضدها كان بدعة حسنة وإلا فلا ، قال : وقد ظهر لي تخريجها على أصل ثابت وهو ما ثبت في الصحيحين من أن النبي صلى الله عليه وسلّم قدم المدينة فوجد اليهود يصومون يوم عاشوراء فسألهم فقالوا هو يوم أغرق الله فيه فرعون ونجى موسى فنحن نصومه شكراً لله تعالى ، فيستفاد منه فعل الشكر لله على ما من به في يوم معين من إسداء نعمة أو دفع نقمة ، ويعاد ذلك في نظير ذلك اليوم من كل سنة ، والشكر لله يحصل بأنواع العبادة كالسجود والصيام والصدقة والتلاوة ، وأي نعمة أعظم من النعمة ببروز هذا النبي نبي الرحمة في ذلك اليوم ، وعلى هذا فينبغي أن يتحرى اليوم بعينه حتى يطابق قصة موسى في يوم عاشوراء ، ومن لم يلاحظ ذلك لا يبالي بعمل المولد في أي يوم من الشهر ، بل توسع قوم فنقلوه إلى يوم من السنة وفيه ما فيه ، فهذا ما يتعلق بأصل عمله . (الحاوى للفتاوى فى الفقه وعلوم التفسير والحديث والاصول والنحو والاعراب وسائر الفنون كتاب الصداق باب الوليمة ۲۴- حسن المقصد فى عمل المولد الجزء ۱ الصفحة ۱۹۶ دار الكتب العلمية بيروت لبنان وقت النشر: ۱۴۰۸ هجرى مع ۱۹۸۸ عيسائى)
অর্থ: শাইখুল ইসলাম, হাফিযুল আছর, আবুল ফযল আহমদ বিন হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মাওলূদ শরীফ উনার আমল ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো। নছ উনার ভিত্তিতে তিনি জাওয়াবে বলেন: মাওলূদ শরীফ উনার আমল করা বিদয়াত। কারণ, প্রথম তিন যুগের সলফে ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই এ ব্যাপারে কোনো বর্ণনা করেননি। তবে এতে কিছু ভালো ও মন্দ কাজের মিশ্রণ আছে। সুতরাং যদি মন্দ ছেড়ে ভালো এর উপর আমল করা হয়, তবে এটা বিদয়াতে হাসানাহ্ হবে। নতুবা হাসানাহ্ হবে না। তিনি বলেন- আমার মতে অনুষ্ঠানের আমল বা মূল আছে বা বুখারী/মুসলিম শরীফে আছে যে, নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় তাশরীফ নিলেন তখন দেখতে পেলেন যে, ইয়াহূদীরা আশূরার দিন রোযা রাখে। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাস করলেন, তোমরা কেন রোজা রাখছো? তারা উত্তরে বললো: ঐ দিন মহান আল্লাহ তায়ালা ফিরাঊনকে ডুবিয়ে ছিলেন এবং হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে নাজাত দিয়েছিলেন। তাই আমরা এর শুকরিয়া স্বরূপ রোজা রাখি। আর এ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার শুকরিয়া স্বরূপ ২ দিন রোজা রাখার প্রচলন করেছিলেন। আর এটা প্রতি বছর করতেন। আর মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া বিভিন্নভাবে হয়, যেমন- সিজদাহ্ করে, রোযা, ছদাক্বা ও তিলাওয়াত দ্বারা। সুতরাং বলা হয়- নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবির্ভাব একটা বড় নিয়ামত এর চেয়ে বড় কোনো নিয়ামত পৃথিবীতে নেই। সুতরাং বলা যায়- উচিৎ হলো একটি নির্দিষ্ট দিন বের করা যেখানে আশূরার মতো হয়। আর এটাকে একটি আছল বলা হয়। (আল-হাবী লিল ফাতাওয়া ফিল্ ফিক্হ ওয়া উলূমিত তাফসীর ওয়াল্ হাদীছ ওয়াল্ উছূল ওয়ান্ নাহ্ব ওয়াল্ ই’রাব ওয়া সায়িরিল ফুনূন অধ্যায়: আছ-ছিদাক পরিচ্ছেদ: ওয়ালীমাহ্ প্রসঙ্গ: হুসনুল মাকছিদ ফী আমালিল মাওলিদ ১ম খ- ১৯৬ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্ বইরূত নেবানন প্রকাশকাল: ১৪০৮ হিজরী মোতাবেক ১৯৮৮ হিজরী)
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমের ঘটনা থেকে অবশ্যই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলীল উপস্থাপন করা যাবে।
বিস্তারিত

নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে জাল বলার আগে পড়ে নিন


সমাজে এক শ্রেনীর মানুষ তৈরী হয়েছে তারা তাদের মতবাদের বিরুদ্ধে মনে হলেই হাদীছ শরীফকে জাল বলে দেয়। কোন কিছু আগ পিছ চিন্তাও করে না। অথচ হাদীছ শরীফ নিয়ে কথা বলার মত যোগ্যতাও এদের নাই।
অথচ এ বিষয়ে মুহাদ্দিছীনেগন কি বলেছেন দেখুন, “ ইসলামীক ফাউন্ডেশনের রেজাল শাস্ত্র ও জাল হাদীসের ইতিবৃত্ত বইয়ের ২২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, বলাবাহুল্য; যে হাদিসের ব্যপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে এটা জাল বা মউযু তবে এটা মউযু হওয়ার উল্লেখ না করে বর্নণা করা হারাম।
অবশ্যই জাল হাদিস হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে বিষেশজ্ঞ মুহাদ্দিছগনের নিকট মতানৈক্য রয়েছে, সেসব হাদিসকে জাল বলে সরাসরি উল্লেখ না করাই বাঞ্চনীয়। একারনেই মুহাদ্দিসগন সতর্কতাবসত ‘এটা জাল হাদীছ’ এ কথা না বলে لم اقف علي اصل لم اجد له اصلا “আমি এর কোনো সুত্র পাইনি, আমি এর সুত্র সম্পর্কে অবহিত নই’ পৃভূত শব্দ প্রয়োগ করতেন। 
এ প্রসঙ্গে মুল্লা আলী কারী রহমাতুল্লাহি বলেন, যে হাদিস জাল হওয়ার মতানৈক্য রয়েছে আমি আমার মওজুয়াতুল কবীর গ্রন্থে উল্লেখ করিনি। কেননা এমন সম্ভাবনা রয়েছে হাদিসটি একটি সুত্রে মউজু এবং অন্য সুত্রে সহীহ। প্রকৃতপক্ষে এর সনদের প্রতি হাদিসবেত্তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। অন্যথায় সনদের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই । কেননা যে সনদকে সনদের ভিত্তিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে আসলে যক্তির বিচারে তা যইফ এবং মউযুর হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। অপরপক্ষে যে হাদিসটা মউদ্বু বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সহীহ মরফু হাদীছ হওয়া বিচিত্র নয়।”
অর্থাৎ নিজের নফসানিয়াত অনুসরন করে সনদ না পেলেই জাল বলা যাবে না। জাল হওয়ার ব্যাপারে অকাট্য দলীল থাকতে হবে। যারা আজ নি’য়মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে বর্ণিত হাদীছ শরীফ সমূহকে জাল বলার অপচেষ্ট করে তারা কি কোন গ্রহনযোগ্য ইমাম হতে উক্ত হাদীছ শরীফ গুলো জাল এ মর্মে দলীল দিতে পারবে? কষ্মিনকালেও পারবে না। তাহলে কোন সাহসে তারা জাল বলছে?
বরং এ হাদীছ শরীফকে গ্রহন করে নিজ নিজ কিতাবে বর্ণনা করেছেন অনেক বড় বড় ইমাম ও মুহাদ্দিছগন।
সনদের গুরুত্ব আমরাও অস্বীকার করি না। কিন্তু সনদ হজফ করে কোন মুতাবার ইমাম যদি হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন সেটা জাল এ কথা কি সে প্রমাণ করতে পারবে? সনদ হজফ বা উল্লেখ না করে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা নতুন কিছু? এটা জাল পদ্মতি হয় তাহলে এমন তোহমত পৃথিবীর অনেক ইমাম , ফক্বীহ, মুস্তাহিদ উনাদের দিকে যাবে। নাউযুবিল্লাহ।
মূলত যেটা জানার বিষয় সেটা হচ্ছে যিনি হাদীছ শরীফ বর্ননা করছেন তিনি গ্রহনযোগ্য কিনা? অর্থাৎ নি’য়মাতুল কুবরা কিতাবের মুছান্নিফ হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিন কেমন? উনার গ্রহনযোগ্যতা, নির্ভরযোগ্যতা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারী কেমন সেটা দেখতে হবে।


এ প্রসঙ্গে সহীহ মুসলিম শরীফ উনার মুকাদ্দিমা বর্নিত আছে,
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِىُّ أَخْبَرَنَا عِيسَى - وَهُوَ ابْنُ يُونُسَ - حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِىُّ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مُوسَى قَالَ لَقِيتُ طَاوُسًا فَقُلْتُ حَدَّثَنِى فُلاَنٌ كَيْتَ وَكَيْتَ. قَالَ إِنْ كَانَ صَاحِبُكَ مَلِيًّا فَخُذْ عَنْهُ
সুলাইমান ইবনে মুসা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি তাউস রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললাম, অমুক ব্যাক্তি আমাকে এরুপ এরুপ হাদিস শুনিয়েছে। তিনি বললেন যদি তোমার সাথী নির্ভরযোগ্য হয় তাহলে তার থেকে হাদিস গ্রহণ কর।
অর্থাৎ বর্ননাকারী যদি নির্ভযোগ্য হয় তবে উনার কাছ থেকে হাদীছ শরীফ গ্রহন করা যাবে এটাও একটা উছুল। অথচ এ ছোকরা সে বিষয়ে কোন কথাই বলে নি।

আরো একটা উছুল রয়েছে, কোন একজন মুজতাহিদ শ্রেনীর ইমাম উনার কোন কিতাবে যদি হাদীছ শরীফ থেকে দলীল দেন তখন বুঝতে হবে সেই হাদীছ শরীফ খানার  ভিত্তি আছে। কারন না জেনে না বুঝে তিনিতো একটা দলীল দিবেন না। বরং সবকিছুর মানদন্ডে বিচার করে তিনি উনার কিতাবে সে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন।

বিখ্যাত উছূলে হাদীছ শরীফের কিতাব “মীযানুল আখবার” কিতাবের ৩৬ পৃষ্ঠায় বর্নিত আছে,
 فاذا استدل المجتهد بحديث كان تصحيحا له وكذا الحديث المتلقي بالقبول محكوم بالصحة وان لم يكن له اسناد صحيح
অর্থ: অনন্তর যখন কোনো মুজতাহিদ কোনো হাদীছ যারা দলীল গ্রহন করেন তখন তা উনার ধারনায় ছহীহ হাদীস হবে। অনুরুপভাবে হাদীছবিদনের সাধারণভাবে গৃহিত হাদিসও ছহীহ হাদীছ বলে ধর্তব্য হবে, যদিও তা সনদ অশুদ্ধ হয়।”
সূতরাং আমরা দেখতে পেলাম বিখ্যাত হাদীছবিদ হযরত ইবহে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি উনার বিখ্যাত কিতাব ‘নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’  কিতাবে খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে চার খানা হাদীছ শরীফ বর্ননা করে এটাই প্রমাণ করলেন, হাদীছ শরীফ গুলো উনার কাছে গ্রহনযোগ্য।

এখন জানা দরকার আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে বর্ণিত হাদীছ শরীফে সনদ সর্ম্পকে পরবর্তী ইমামগন কি বলেছেন:
বিখ্যাত ইসলামী গবেষক, বিশিষ্ঠ কাজী, বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, অসংখ্যা কিতাবে মুছান্নিফ হযরত ইউসুফ আন নাবেহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আলোড়নসৃষ্টিকারী কিতাব “জাওয়াহেরুল বিহার” কিতাবের ৩য় খন্ডের ৩৪৯-৩৫০ পৃষ্ঠায় লিখা আছে,
(ومن جواهره رضي الله عنه) هذا المولد النبوي الشريف، وهو من أجمع المولد وأصحها.
অর্থ: মশহুর ও মহানতম ইমাম হযরত শিহাবুদ্দিন হ্জাার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জাওহার (মণিমুক্তা) সমূহের অন্যতম বিষয় হচ্ছে নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার বিষয়।
উক্ত মীলাদ শরীফ সংক্রান্ত সকলের সংগ্রহিত বিষয়সমূহকে সর্বাধিক ছহীহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
كما جمعت ذالك في كتاب سمتيه النعمة الكبري علي العالم* يمولد سيد ولد ادم) باسانيده التي نقلها أئمة السنن والحديث الموصوفون بلحفظ الاتقان، والجلالة والبرهان في القديم والحديث مما هو سالم من وضع الوضاعين، وانتحال الملحدين والمفترين لا كأكثر المولد التي بأيدي الناس فان فيها كثيرا من الموضوع الكذب المختلق المصنوع، لكن في ذالك الكتاب بسط لا يتم معه قراءته في مجلس واحد، فاختصرته هنا بحذف أسانيده وغرائبه واقتصرت منه علي ما بسنده منابع، أو عاضد روما للتسهيل علي المادحين، وقصدأ لحيازتهم معرفة تلك المزايا، والكرامات لينتظموا بذالك في سلك المحبين.
অর্থ: যেমন মীলাদ শরীফ সংক্রান্ত বর্ণনা সমূহ তিনি সনদ সহকারে একখানা কিতাবে একত্রিত করেন তিনি উক্ত কিতাবখানার নাম দিয়েছেন আন নিয়ামুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদে বিলদে আদাম)
যেই সনদগুলো সুনান ও হাদীছ শরীফের ইমামগণ নকল করেছেন। যেই ইমামগন উনারা আগের হোন বা সাম্প্রতিক হোন উনারা সকলেই প্রখর স্বরণ শক্তি সম্পন্ন দক্ষ ও মর্যাদাসম্পন্ন দলীলনির্ভরসম্পন্ন ইত্যাদী গুণে ভুষিত। আর উনাদের বর্ণণাসমূহ বানোয়াটী বর্ণনা থেকে মুক্ত। এবং ধর্মত্যাগী বা নাস্তিক ও মিথ্যাবাদীদের বর্ণনা থেকেও মুক্ত। আর উক্ত ইমামগণের বর্ণণাসমূহ ঐ সকল বর্ণনার মতোও নয় যা মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে বর্ণিত আছে। কেননা মানুষের মাঝে যেগুলো ব্যাপকভাবে বর্ণিত আছে তার অধিকাংশগুলোই বানোয়াট, মিথ্যা, সৃষ্ট, তৈরীকৃত। তবে বিলাদত শরীফ সংক্রান্ত ঐ কিতাবগুলোতে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। যা একটি মজলিসে পাঠ করে শেষ করা যাবেনা। তাই আমি এ কিতাবথেকে সনদগুলো এবং দুর্বোধ্য বিষয়গুলো বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত করলাম। এমনকি সনদ কর্তৃক উৎস ও সমর্থিত বিষয়গুলো থেকে আরো সংক্ষিপ্ত করলাম। এই উদ্দেশ্যে যে, যাতে করে ছানা ছিফত বর্ননা বর্ণকারীদের জন্য সহজ হয়। এবং উনাদের প্রত্যাশা পূরণের হয়। পবিত্র মিলাদ শরীফ উনার বৈশিষ্টসমূহ বুজুর্গীসমূহ জেনে মুহিব্বীনগনের তরীক্বা অনুযায়ী মিলাদ শরীফের আয়োজন করে।”
অর্থাৎ উক্ত কিতাব থেকে আমরা জানতে পারলাম “নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত হাদীছ শরীফে সনদ আছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযফ করেছেন। কারন হচ্ছে যেহেতু নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাব খানা হাদীছ শরীফের কিতাব নয় বরং এটা হচ্ছে মীলাদ শরীফ উনার কিতাব তাই। আর মীলাদ শরীফের উনার কিতাবে প্রতিটা বর্ণনায় সনদ সহ বর্ণনা শ্রবন করা শ্রোতার জন্য কষ্টকর। আর সেটা কিতাবের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণও নয় তাই সনদ বাদ দিয়ে বর্ননা করেছেন। সনদ বাদ দিয়ে বর্ণনা নতুন কোন বিষয় নয় বরং ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেও সনদ হযফ করে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন উনারই বুখারী শরীফে। বিখ্যাত ফিকাহের কিতাব ‘হেদায়া’তেও হাদীছ শরীফ সনদ ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে। সনদ উল্লেখ করে বর্ননা না করাতেই কি তা জাল বলা যাবে?

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও আলেমে দ্বীন হযরত আব্দুল আউয়াল জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং বিরোধীতাকারীদের মুরুব্বী আনোয়ার শহ কাশ্মীরী তার ‘ফয়জুল বারী’ কিতাবের মুকাদ্দিমায় উপমহাদেশের অন্যতম মুহাদ্দিছ হিসাবে উল্লেখ করছেন তিনি উনার “নাফহাতুল আম্বরিয়া” ৮ পৃষ্ঠায় নি’মাতুল কুবরা আলাল আলম কিতাবের চার খানা হাদীছ শরীফ  উল্লেখ করে বলেন,
فلا يحفى على المتاملين ان هذا الحديث مماما كاتب على مخرجه وماثبت اساده فمثل هذا عندا لمحدثين ليس بشى فان الاعتناء بالحديث يكون بالرواة الثقاث فان لم يعرفواولامخرج الحديث فلا يعتبر عندهم ولعل الله يحدث بعد ذلك امرا
অর্থ: হাদীছ শরীফ বিশারদগণ উনাদের নিকট এটা ষ্পষ্ট যে, নিশ্চয় এমন হাদীছ সমূহ যার উৎপত্তিস্থল প্রকাশিত হয়নি।  এবং তার সনদও প্রমাণিত নেই। এই উদাহরণ মুহাদ্দিছিনদের নিকট কোন বিষয় নয়। কেননা হাদীছের ক্ষেত্রে লক্ষনীয় হচ্ছে রাবী ছেক্বাহ হওয়া। আর উনারা যদি অপরিচিত হন এবং হাদীছের উৎপত্তিস্থলও যদি না পাওয়া যায়, তাহলে মুহাদ্দিছিনদের নিকট তা গ্রহণযোগ্য হবে না। হাদীছ শরীফে উল্লেখিত বর্ণনা থাকার পরেও মহান আল্লাহ পাক তিনি এ বিষয়ে আদেশ মুবারক প্রদান করেছেন। ”
উপরোক্ত কিতাব থেকে আমরা জানতে পারলাম হাদীছ শরীফের সনদ উল্লেখ না থাকলেও মুহাদ্দিছগন যদি হাদীছ শরীফ গ্রহন করেন তাহলেও তা গ্রহনযোগ্য। কেননা উনারা সহীহ বলেই উক্ত হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তাই বাহ্যিক ভাবে সনদ দেখা না গেলেও জাল বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।

সনদ বাদ দিয়ে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা এটা নতুন কিছু না। বরং পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত মুহাদ্দিছগন সনদ বাদ দিয়ে হাদীছ বর্ননা করেছেন তাদের হাদীছ শরীফের কিতাবেই।
মিশকাত শরীফের মুকাদ্দিমা: আদ দিরারুল মুনতাকাতু আলা মুকাদ্দামাশ শায়েখ: ৫১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
 معلق :
والسقوط إما أن يكون من أول السند ويسمى معلقا (২) وهذا الإسقاط تعليقا والساقط قد يكون واحدا وقد يكون أكثر وقد يحذف تمام السند كما هو عادة المصنفين يقولون قال رسول الله صلى الله عليه و سلم
অর্থ: আর এ বাদ পড়া যদি সনদের প্রথম হতে হয়, তবে তাকে মুয়ালআক বলা হয়। আর এ বাদ পড়াকে তালীক বলে। আর বাদ পড়া বর্ণণাকারী কখোনো একজন হয়, আবার কখোনো কখোনো অধিক হয়ে থাকে। আবার কোনো কনো সময় সমস্ত সনদটিকে বিলুপ করা হয়। যেমন গ্রন্থকারগনের অভ্যাস, তারা বলে থাকে قال رسول الله صلى الله عليه و سلم
 (ছহীহ বুখারী শরীফে অসংখ্য তালীক রয়েছে। কবে এ তালীকের হুকুম হলো ইত্তিছাল। কেননা তিনি এ কিকাবে বিশুদ্ধ হাদীছ গুহণ করাকেই নীতি হিসাবে অপরিহার্য করে নিয়েছেন। তবে এটা মুসনাদের পর্যায়ের তখন পর্যন্ত হবে না, যখন পর্যন্ত উনার কিতাবে অন্য স্থানে এটাকে মুসনাদ হিসাবে বর্নণা না করে থাকেন। তবে এই তালীকাতগুলির মধ্যে এভাবে পার্থক্য করা যায় যে তিনি যাকে দৃঢ়তা ও দৃঢ়বিশ্বাসের শব্দ (মারুফের ছিগাহ) দারা বর্ণণা করেছেন। যেমন, তার কথায় অমুক বলেছেন বা অমুক উল্লেখ করেছেন। এটা দারা বুঝায় য়ে এ হাদিসটির সনদ ইমাম বুখারীর নিকট প্রমাণিক। তবে তা নিঃশন্দেহে ছহীহ হবে। যদি দূর্বর ও মাজহুল (অজ্ঞতামূলক) শব্দ দারা বর্ণণা করে থাকেন যেমন বলা হয়েছে, বলা যায়, বর্ণণা করা হয়েছে কবে এগুলির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে উনার কথা আছে। উনার নিকট দ্বন্দ রয়েছ কিন্তু তনি যখন স্বীয় গ্রন্থে এগুলোকে বর্ণণা করেছেন তখন বুঝতে হবে এর মুল উনার নিকট সুপওমাণিত। এজন্য মুহাদ্দিসগণ বলেছেন ইমাম বুখারীর তালীকাত মুত্তাসিল ও সহীহ।”

সনদ বাদ দিয়ে উল্লেখ করা বা তালিক করা এটা অনেক মুহাদ্দিছ গনের আদত। উনারা সনদ সর্ম্পকে সুনিশ্চিত এবং পরিপূর্ণ ভাবে জানেন বলেই সনদ উল্লেখ না করে মূল বর্ননাকারীর নাম ব্যবহার করেছেন। যেমন হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সরাসরি খুলাফয়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম উল্লেখ করে বর্ননা করেছেন।
একটা উদাহরন দেয়া যায়, “আল হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের ১৭২পৃষ্ঠার বাবুল ঈদাইন এর ৬নং হাশিয়ায় হাদীছ শরীফ উল্লেখ রয়েছে:
 لكل مؤمن في كل شهر اربعة اعياد او خمسة اعياد
অর্থ: প্রত্যেক মুমিনের জন্য প্রতি মাসে চারটি / পাচটি ঈদ রয়েছে।
“ফতহুল কাদির মায়াল কিফায়া” কিতাবে ২য় খন্ডের ৩৯ পৃষ্ঠায় বাবু ছালাতিল ঈদাইন এ উল্লেখ আছে
 لكل مؤمن في شهر اربعة اعياد او خمسة اعياد
অর্থ: প্রত্যেক মুমিনের জন্য মাসে চারটি / পাচটি ঈদ রয়েছে।

“হাশিয়াতুত তহতাবী”-ইমাম তাহতাবীর লেখা কিতাবে ৫২৭পৃষ্ঠায় বাবু আহকামু ঈদাইন এ অধ্যায়ের হাদিসটি উল্লেখ করা হয়োছে।

এটার কোন সনদ পাওয়া যায় না। উনারাও কেউ কিতাবে সনদ উল্লেখ করেন নাই। তবে সবাই গ্রহনযোগ্য বলে মেনে নিয়েছেন বলেই স্ব স্ব কিতাবে দলীল হিসাবে উল্লেখও করেছেন। কেউ জাল বলেননি।  হিদায়ার হাশিয়ায় দেওবন্দীদের মুরুব্বী আব্দুল হাই লখনবীও এ হাদীছ এনেছে।
বিদয়াতি ওহাবীরা কি এ হাদীছ শরীফ জাল বলে উড়িয়ে দিবে??

বিখ্যাত ওলী আল্লাহ, হাজার বছরের মুজাদ্দিদ , হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “মাকতুবাত শরীফ” একাধিক স্থানে لِـىْ مَعَ اللهِ وَقْتٌ لَا يَسْعَنِىْ فِيْهِ مَلَكٌ مَّقَرَبٌ وَلَا نَبِىُّ مُّرْسَل  এ হাদিছটা এনেছেন,যার কোনো সনদ বাহ্যিকভাবে পাওয়া যায় না। এখন কি জাল বলে ছুড়ে ফেলে দিবেন? উনার মত বুজুর্গকে জালিয়াত বলবে? নাউযুবিল্লাহ।
এই ওহাবীদের মুরুব্বী ওয়াহীদুয যামান তার “লুগাতুল হাদীছ” নামক কিতাবে ২য় খন্ড ৬৭পৃষ্ঠায় একখানা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছে,
السخي حبيب الله ولو كان فاسقا والبخيل عدو  الله ولو كان عابدا
দানশীল ব্যাক্তি আল্লাহ পাক উনার বন্ধু যদিও তিনি গুনাহগার হন। আর কৃপণ ব্যাক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন যদিও সে ইবাদতগুজারী হয়।(লুগাতুল হাদীছ ২য় খন্ড ৬৭পৃষ্ঠা,লেখক: হযরত আল্লামা ওয়াহীদুয যামান প্রকাশনা: কুতুবখানা মারকাযে ইলম ও ওয়া আদব আরামবাগ, করাচী, পাকিস্তান)

উক্ত হাদীছ শরীফখানা লুগাতুল হাদীছ কিতাবে উল্লেখ করলেও অন্যান্য কিতাবসমূহেগ উক্ত হাদীছকে ভিত্তিহীন. বাতিল, উ’পত্তিহীন ইত্যাদী দোষে দুষিত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সনদ উল্লেখ না থাকার পরও এ হাদীছ শরীফ অনেক কিতাবে দলীল হিসাবে এসেছে।

তাবলিগীদের “ফাযায়েলে আমলের” ফাজায়েলে নামাযে ৮৯পৃষ্ঠায় একটা হাদীছ শরীফ আছে,
وفي الحديث : "من ترك صلاة حتى مضى وقتها ثم قضى عذب في النار حقباً" والحقب ثمانون سنة كل سنة ثلاثمائة وستون يوماً كل يوم ألف سنة مما تعدون يعني ترك الصلاة إلى وقت القضاء إثم لو عاقب الله به يكون جزاءه هكذا ولكن الله يتكرم بأن لا يجازي به إذا تاب عنه كذا في "مشكاة الأنوار" وفي الحديث : "خمسة لا تطفأ نيرانهم ولا تموت ديدانهم ولا يخفف عنهم
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নামায তরক করলো, এমনকি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল, অতঃপর সে ব্যক্তি তার ক্বাযা আদায় করলো, সে জাহান্নামে এক হুক্বা শাস্তি ভোগ করবে। আর এক হুক্বা হচ্ছে ৮০ বছর এবং এক বছর হচ্ছে ৩৬০ দিন, প্রতিটি দিন হচ্ছে- হাজার বছরের সমান।” (মাজালিসুল আবরার, আল্ মানাসিক, তাফসীরে রুহুল বয়ান ২/২২০)       

অথচ এ হাদীছ শরীফের কোন সনদ পাওয়া যায় না। কিন্তু হাজার হাজার জায়গায় তাবলিগীরা ফাযায়েলে আমলে এই হাদীছ শরীফ পড়ছে। ওয়াযও করছে। মাওলানা যাকারিয়া এই হাদীছকে যদি হাদীছ বলে না মানলে এটা কিতাবে আনার যৌক্তিকতা কি?
এছাড়া ফাযায়েলে আমলে এমন আরো অনেক হাদীছ শরীফ আনা হয়েছে যার সনদ বাহ্যিক ভাবে ভাবে পাওয়া যায় না। কোন কোন নির্ভরযোগ্য ইমাম উনাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন বলেই গ্রহনযোগ্য বিধায় ফাযায়েলে আমলে যাকারিয়া সাহেব এনেছেন।
দেওবন্দীদের অন্যতম মুরুব্বী যারা তাকে শায়খুল হাদীছ বলে থাকে। হামিদিয়া লাইব্রেরীর থেকে প্রকাশিত তাদের শায়খুল হাদীছ আজিজুল হক বোখারী শরীফের টীকা বুখারীর ২য় পৃষ্ঠায় “সর্বপ্রথম সৃষ্টি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” অধ্যায়ে লিখেছে:
“অলিকুল শিরোমণি শায়েখ মুহিউদ্দিন ইবনে আরাবী শায়েখে আকবরী রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক এলহামে প্রাপ্ত এবং পূর্বাপর ওলী ও সূফী তথা আধ্যাতিকতায় ধৈন্য মহানগণ কর্তৃক গৃহিত আল্লাহ তায়ালার বানীতে উল্লেখ আছে- كنت كنز مكفيا فاحببت...
অর্থ: আমার সত্তা (জানিবার কেহ না জানায়) অজানা ছিল; আমার ইচ্ছা হইল(আমার গুণাবলির মাধ্যমে আমাকে প্রকাশ করা) আমাকে জানান। সেমতে আমি সৃষ্টি করি জগত।”
এই হাদীছে কুদসী শরীফের সমর্থন দিতে আজিজুল হক  কুরআন শরীফের আয়ত সমর্থন হিসাবে দলীল দিয়ে বলেছেন,
এই বানীর মর্ম কোরআনের একটি আয়াত দারাও সমর্থিত আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
জিন এবং ইনসান এই দুটি জাতিকে আমি একমাত্র আমার ইবাদত বন্দেগী করার জন্য সুষ্টি করেছে।”
সনদ বিহীন একটা হাদীছে কুদসীকে সমর্থন দিতে আজিজুল হক কুরআন শরীফের দলীল দিয়েও আলোচনায় আনলো। এর ব্যাখ্যা কি?

এরপর  হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বর্নিত নুর মুবারকের বর্ননার হাদীছ খানা বর্ণনা করে। আমরা যে সনদখানা জুয উল মাফকুদের বরাতে উল্লেখ করি সেটাতো বর্তমান দেওবন্দীরা মানে না। তাহলে তাদের মুরুব্বীর মুরুব্বী আজিজুল হক কিসের ভিত্তিতে সে হাদীছ শরীফ খানা উল্লেখ করলো? তাদের আশরাফ আলী থানবী একাধিক কিতাবে কোন ভিত্তিতে সে হাদীছ শরীফ খানা আনলো?
তাদের মুরুব্বী মুফতী শফী মা’রেফুল কুরআনে কিসের ভিত্তিতে আনলো?
তাদের ৬০ বছর দেওবন্দ মাদ্রসায় দরস দেয়া ক্বারী তৈয়ব কোন ভিত্তিতে তার কিতাবে আনলো? 

সনদ বর্নিত না থাকলেই যাদি হাদীছ শরীফ গায়রে সহীহ হয়ে যায় তাহলে এই কিতাব ও তার দলীলের ফয়সালা কি? কওমীদের অন্যতম মুরুব্বী মাসিক মদীনার সম্পাদক মুহিউদ্দীন খান তার কিতাবে কি লিখেছে দেখেন-
প্রথমে কিতাবে বর্ণিত ঘটনাবলীর গ্রহনযোগ্য সর্ম্পকে মাহিউদ্দীন নিজেই লিখেছে,
“স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”-মাহিউদ্দিন খান রচিত এ কিতাবের মুকাদ্দিমায় বলেছে: “একারণে রসুলুল্রাহর সাক্ষাত লাভ সম্পর্কিত প্রাপ্ত ঘটনাবলি সম্পর্কে আমাকে পূর্ণ সচেতনতা অবলম্বন ও যথেষ্ট যাচাইবাছাই করতে হয়েছে। মনে সামান্য সন্দেহের উদ্রেগ হয়েছে এমন কোনো ঘটনা আমি পাঠকের নিকট পৌছানোর দুঃসাহস সচেতনভাবেই করিনি।”

স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-মাহিউদ্দিন রচিত-১৪পৃষ্ঠায় :
“অপরদিকে স্বপ্নেপ্রাপ্ত নির্দেশ যদি শরীয়তের অনূকূলে হয় তবে সেগুলো মান্য করা উত্তম। বিশিষ্ট মুহাদ্দিছগন অনেকেই হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট থেকে ইলমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশ পেয়েছেন বলে বিশুদ্ধ বর্ণণা রয়েছে। বিশেষ কোনো একখানা হাদিস সম্পকের্ং হয়তো তারা সন্দেহে পতিত হয়েছেন। সাক্ষাত লাভের সময় তারা জিজ্ঞাসা করেছেন হাদিসখানা শুদ্ধ কিনা। জিজ্ঞাসার জবাবে হযরত নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম শুদ্ধ সম্পর্কিত মীমাংসা বলে দিয়েছেন। একই প্রক্রিয়ায়ং জাগ্রত অবস্থাতেও অনেকে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে অনেক অমূল্য জ্ঞান লাভ করেছেন বলে প্রচুর বর্ণনা রয়েছে।
একই বইয়ের ৬৮পৃষ্ঠা: শায়খ আবুল মাওয়াহেব সাজ্জালী রহিমাহুল্লাহ বলেন আমি একবার স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাত লাভ করলাম এবং দুটি হাদিসের শুদ্ধাশুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। হাদিস দুটি হলো-
ক) এমন ভাবে আল্লাহর যিকির কর যেন মানুষ তোমাকে পাগল বলে।
খ) ইবনে হিব্বানের বর্ণনায় রয়েছে আল্লাহর যিকির এত অধিক পরিমানে কর যেন লোকে তোমাকে পাগল সাব্যস্ত করে।
রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন দুটি বর্নণায় ঠিক। আমি দুবার এই একই বিষয়বস্তু দুভাবে বলেছি, দুটি বক্তব্যই আমার।” 
উক্ত বইয়ের ৫৫ পৃষ্ঠায়; প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়েখ রাজিউদ্দিন হাসান সাকানী কুতুবুদ্দিন আইবেকের শাসনামলে আবগানিস্থান থেকে আগমন করেন এবং বাদাউনে বসতি স্থাপান করেন। ‘মাশায়েকুল আনোয়ার’ নামক বহুল প্রচলিত হাদিসগ্রন্থখানা তার সংকলিত। ২২৪৬খানা হাদিস এ কিতাবে সংকলিত হয়েছে। হযরত নিযামুদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহ বলেন; কিতাব সংকলেন সময় কোনো হাদিস সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিলে হযরত শায়েখ স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাত লাভ করতেন। রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং সংশ্লিষ্ট হাদিসের শুদ্ধাশুদ্ধ বলে দিতেন। ”

উক্ত কিতাবের ৬০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, “ইমাম ইয়াফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘শায়খ আবুল হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পৌত্রগণ উনাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি আমাকে বলেন, আমার দাদা তিনি হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ইহয়াউল উলুম’ কিতাবখানা হাদীছ শরীফ-এর খেলাফ বলে মনে করতেন। একবার তিনি উনার নিকট রক্ষিত ‘ইহয়াউল উলুম’-এর একটি কপি জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। সে দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। জুমুয়ার রাতেই তিনি স্বপ্নে দেখলেনঃ রসূলে মকবুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসে আছেন। সঙ্গে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম এবং হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম সহ অনেকেই রয়েছেন। সে মজলিসে হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উপস্থিত। আমার দাদাকে দেখতে পেয়ে হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একখানা ‘ইহয়াউল উলুম’ কিতাব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাত মুবারক তুলে দিয়ে আরজ করলেন, “ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ ব্যক্তি আমার কিতাবখানাকে হাদীছ শরীফ-এর খেলাফ বলে আখ্যায়িত করে এর একটি কপি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আপনি ফায়ছালা দিন, যদি আমার এ কিতাবে হাদীছ শরীফ বিরোধী কিছু থেকে থাকে, তবে আমি আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা চাইব। আর যদি আপনার বিবেচনায় আমার এই কিতাব ঠিক হয়ে থাকে, তবে আমি এ ব্যক্তির এহেন শত্রুতামূলক আচরণের বিচার চাই।”
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিতাবখানা আগাগোড়া নেড়েচেড়ে ও পড়ে দেখলেন এবং রায় দিলেন, “বেশ ভাল হয়েছে। এর মধ্যে হাদীছ শরীফ-এর খেলাফ কোন কিছু নেই। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার দাদার জামা খুললেন এবং উনার পিঠে পাঁচ ঘা বেত মারলেন। অতঃপর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি অগ্রসর হয়ে আরয করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ ব্যক্তি হাদীছ শরীফ-এর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত মুহব্বতের কারণেই ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবের প্রতি বিরূপ হয়েছে; ব্যক্তিগত কোন শত্রুতার কারণে নয়। সুতরাং সে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য।” হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার এ বক্তব্য শোনার পর ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার দাদার অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন। .......।”
ফুরফুরা শরীফের ইতিবৃত্ত-ইসলামীক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত মুবারক আলী রাহমানী লিখিত-৭৬-৭৭পৃষ্ঠায়: শামসুল উলামা আল্লামা পীর গোলাম সালমানী আব্বাসী ফুরফুরাবী থেকে আল্লামা পীর রুহুল আমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন; এক সময় কলিকাতায় বিবি সালেটের মসজিদে হযরত সূফী সাহেবের খিদমতে কলিকাতা মাদ্রাসা আলীয়ার মুদাররিস হযরত মাওলানা সায়াদাত হোসেন বসেছিলেন। হযরত সুফী সাহেব একটি হাদীছ বর্নণা কতেছিলেন। তৎশ্রবণে মাওলানা সাহেব বললেন হুযুর এ হাদীছটি সহীহ নয়। সুফী সাহেব বলেন না মাওলানা ‘সহীহ হাদীছ’। এমতাবস্থায় হঠাৎ তিনি অচৈতন্য হয়ে যান। হযরত সুফী সাহেব মাওলানা গোলাম সালমানীকে বলেন-বাবা, তুমি মাওলানার মাথায় পানি ঢেলে দাও। সেবা যতেœর পর চৈতন্য লাভ করে তিনি বলেন-হ্যা সুফী সাহেব হাদীছটি সহীহ। মাওলানা সাহেব চলে যাওয়ার পর হযরত সুফী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন-তিনি একটি হাদীছ সম্পর্কে অস্বীকার করেছিলেন, এজন্য ইস্তিসরাকের ফায়েজ নিক্ষেপ করে নবীজির যিয়ারত করে দিলাম। নবীজি বললেন হে সায়াদাত হোসেন ইহা আমার সহীহ হাদিছ। ”

বাহ্যিক ভাবেই সনদ না পেলেই সেটাকে জাল বলা যাবে না। বরং জাল বলার জন্য শর্ত এমন না। এই ধোঁকাবাজরা মানুষ ধোঁকা দিতে মনগড়া উছুল বলে বেড়ায়। তারা যে উছূল বলে এসব কি বিখ্যাত  মুহাদ্দিছ ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি জানতেন না? যদি জানতেন তবে কি জেনে শুনে জাল হাদীছ বর্ননা করেছেন? নাউযুবিল্লাহ।

বরং উনার কাছে সহীহ সনদ ছিলো বলেই তিনি বর্ণনা করেছেন। মীলাদ শরীফের কিতাব বলে সনদ উল্লেখ করেন নাই।তাই যারা সনদ নাই বলে হাদীছ শরীফ গুলো উড়িয়ে দিতে চায় তারা মূলত মিথ্যাবাদী, প্রতারক, ধোঁকাবাজ। সেই সাথে ইমাম মুহাদ্দিস উনাদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দানকারী।
বিস্তারিত