শরীয়তে ঈদ কয়টি ? শরীয়তে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা এ দু’টি ঈদ ছাড়াও আরো ঈদের অস্তিত্ব রয়েছে।



মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-

ﻗﺎﻝ ﻋﺴﻰ ﺑﻦ ﻣﺮﻳﻢ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﺍﻧﺰﻝ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻣﺎﺋﺪﺓ ﻣﻦ

ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺗﻜﻮﻥ ﻟﻨﺎ ﻋﻴﺪﺍ ﻻﻭﻟﻨﺎ ﻭﺍﺧﺮﻧﺎ .


  • অর্থঃ- হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিভবলেন, হে আল্লাহ পাক আপনি আমাদের জন্য আসমান

 থেকে খাদ্যসহ খাঞ্চা নাজিল করুন। যাতে সে দিনটি আমাদের জন্য এবং আমাদের পরবর্তীদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারিত হয়। (সূরা মায়িদা-১১৪)


অর্থাৎ এ আয়াত শরীফ-এ ইহুদীদের খাদ্যের খাঞ্চা নাজিলের দিনকে তাদের জন্য ও পরবর্তী তথা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।


এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ﻋﻦ ﻋﺒﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﺴﺒﺎﻕ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻣﺮﺳﻼ

ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻰ

ﺟﻤﻌﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺍﻥ ﻫﺬﺍ ﻳﻮﻡ

ﺟﻌﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻴﺪﺍ .


  • অর্থঃ “হযরত ওবায়েদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুয়ার দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।” (ইবনে মাযাহ, মুয়াত্তা মালিক, মিশকাত)


হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-

ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻧﻪ ﻗﺮﺃ ﺍﻟﻴﻮﻡ

ﺍﻛﻤﻠﺖ ﻟﻜﻢ ﺩﻳﻨﻜﻢ ﺍﻻﻳﺔ ﻭﻋﻨﺪﻩ ﻳﻬﻮﺩﻯ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻮﻧﺰﻟﺖ

ﻫﺬﻩ ﺍﻻﻳﺔ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻻﺗﺨﺬﻧﺎﻫﺎ ﻋﻴﺪﺍ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ

ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻓﺎﻧﻬﺎ ﻧﺰﻟﺖ ﻓﻰ ﻳﻮﻡ ﻋﻴﺪﻳﻦ

ﻓﻰ ﻳﻮﻡ ﺟﻤﻌﺔ ﻭﻳﻮﻡ ﻋﺮﻓﺔ .


  • অর্থঃ “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা


ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻛﻤﻠﺖ ﻟﻜﻢ ﺩﻳﻨﻜﻢ ﺍﻻﻳﺔ . “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম” এ আয়াত শরীফটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো, “যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে “ঈদ” বলে ঘোষণা করতাম।” এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন এক সাথে দু’ঈদ ছিল- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন।” (তিরমিযী)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ জুমার দিন ও আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ই যিলহজ্বকে ঈদের দিন বলা হয়েছে।

অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান-

ﻟﻜﻞ ﻣﺆﻣﻦ ﻓﻰ ﻛﻞ ﺷﻬﺮ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﺍﻋﻴﺎﺩ ﺍﻭﺧﻤﺴﺔ ﺍﻋﻴﺎﺩ .


  • অর্থঃ মু’মিন মুসলমানদের প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারটি অথবা পাঁচটি সোমবার হয়ে থাকে। তাকেও ঈদের দিন বলা হয়েছে। (কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খ- বাবু ছলাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া)


অন্য হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

ﻟﻠﺼﺎﺋﻢ ﻓﺮﺣﺘﺎﻥ ﻓﺮﺣﺔ ﻋﻨﺪ ﻓﻄﺮﻩ ﻭﻓﺮﺣﺔ ﻋﻨﺪ ﻟﻘﺎﺀ

ﺭﺑﻪ .


  • অর্থঃ রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ বা খুশি। একটি হলো তার প্রতিদিনের ইফতারের সময় আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতের সময়। উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা জানা গেল যে, শুক্রবার দিন, সোমবার দিন এবং আরাফার দিনটি হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদ তথা খুশির দিন। অর্থাৎ ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিতর এই দুই ঈদ যেভাবে হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা প্রমাণিত ঠিক সেভাবেই তৃতীয় ঈদ হিসেবে জুমুয়ার দিন আর চতুর্থ ঈদ হিসেবে সোমবার শরীফ এবং পঞ্চম ঈদ হিসাবে আরাফার দিন হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। 
  • সুতরাং ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক বছরে প্রায় ১৭৭/১৮০টি ঈদ রয়েছে। আর তা হচ্ছে বছরে ৫২টি শুক্রবার + ৫২টি সোমবার শরীফ + রমাদ্বান শরীফ-এ ৩০টি +


বাকী ১১ মাসের প্রতিমাসে ৩টি করে (১১ী৩)=

৩৩টি + জিলহজ্বের ১ম ৯ দিনে ৯টি + মুহাররম

মাসে ২টি + ২৭ শে রজব ১টি + ১৫ই শা’বান ১টি

অর্থাৎ (৫২+৫২+৩০+৩৩+৯+২+১+১)= ১৮০টি ঈদ রয়েছে।

যা সবগুলোই হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।

অতএব, যারা বলে শরীয়তে দুই ঈদ ব্যতীত তৃতীয় ঈদের কোন অস্তিত্ব নেই তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কুরআন সুন্নাহর খিলাফ ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণিত হলো।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট