পবিত্র কুরআন শরীফ উনার
মধ্যে ব্যবহৃত মীলাদ শব্দ মুবারক :
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন-
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : “আর (হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম) উনার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন
তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, আর যেদিন তিনি
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর যেদিন উনাকে পুনরুত্থিত করা হবে জীবিত অবস্থায়।”
সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
অনুরূপভাবে হযরত ঈসা
রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিজের বক্তব্য মুবারক উল্লেখ করে পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَالسَّلَامُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : “আমার প্রতি সালাম (অবারিত শান্তি) যেদিন আমি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ
করি, যেদিন আমি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করবো এবং যেদিন আমি
জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা
মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
সুতরাং মূল অক্ষরে وُلِدْتُّ শব্দ মুবারক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই
ব্যবহৃত হয়েছে; যার অর্থ বিলাদত শরীফ গ্রহণ বা যমীনে তাশরীফ
মুবারক গ্রহণ। সাধারণ বাংলায় যাকে বলা জন্মগ্রহণ করা। এ শব্দ মুবারক প্রমাণ করে
মীলাদের মূল অস্তিত্ব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই বিদ্যমান।
এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন-
لَـمْ يَلِدْ وَّلَـمْ يُوْلَدْ
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি কারো থেকে বিলাদত শরীফ লাভ করেননি বা জন্মগ্রহণ
করেননি এবং কাউকে জন্ম দেননি।” (পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ :
পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য
বিলাদত শরীফ গ্রহণ করা বা কাউকে জন্ম দেয়া উনার শান মুবারক উনার খিলাফ। তথাপি
এখানে يُوْلَدْ ও يَلِدْ শব্দ মুবারক দ্বারা বিলাদত শরীফ বা জন্মগ্রহণ বুঝানো হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
وَوَالِدٍ وَّمَا وَلَدَ
অর্থ : “শপথ জনকের এবং যা জন্ম দেয়।” (পবিত্র সূরা বালাদ
শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার
মধ্যেও وَلَدَ ও وَالِدٍ শব্দ মুবারক দ্বারা বিলাদত শরীফ বিষয়ে বুঝানো হয়েছে।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত মীলাদ অর্থে ব্যবহৃত শব্দ মুবারক এক নজরে ছক আকারে দেখানো হলো-
ক্রম পবিত্র আয়াত শরীফ শব্দ
মুবারক
১ وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا وُلِدَ
২ وَالسَّلَامُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا وُلِدتُّ
৩ لَـمْ يَلِدْ وَلَـمْ يُوْلَدْ يَلِدْ ও يُوْلَدْ
৪ وَوَالِدٍ وَمَا وَلَدَ وَالِدٍ ও وَلَدَ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে ব্যবহৃত মীলাদ শব্দ মুবারক :
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنِ حَضْرَتْ الـمُطَّلِبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَـخْرَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدّهٖ قَالَ وُلِدْتُّ اَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ وَسَاَلَ حَضْرَتْ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامَ قُبَاثَ بْنَ اَشْيَمَ اَخَا بَنِيْ يَعْمَرَ بْنِ لَيْثٍ اَاَنْتَ اَكْبَرُ اَمْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْبَرُ مِنّي وَاَنَا اَقْدَمُ مِنْهُ فِي الْمِيْلَادِ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ.
অর্থ : “হযরত মুত্তালিব ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে কাইস ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা হতে এবং উনার পিতা উনার দাদা হতে
বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “হাতীর বছরে” পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন,
আমিও সেই হাতীর বছরেই পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি। সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কুবাস বিন আশিয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাকে প্রশ্ন করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড় না আপনি বড়?
তিনি উত্তরে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার থেকে বড়,
আর আমি উনার পূর্বে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি।” (তিরমিযী শরীফ, হযরত আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা
রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৭৯ হিঃ), আস সুনান, প্রকাশনা- বৈরুত, দারু ইহ্য়ায়িত তুরাসিল আরাবী,
হাদীছ শরীফ নং ৩৬১৯)
আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بِـهٰذَا الْـحَدِيْثِ زَادَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْـخَمِيْسِ قَالَ فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْاٰنُ.
অর্থ : “হযরত আবূ ক্বাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও
ইয়াওমুল খ¦মীস রোযা রাখার ব্যাপারে
জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র
বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা
পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ
নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮, সুনানে কুবরা লি বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮২১৭, ইবনে খুজাইমা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১১৭, মুসনাদে
আবি আওয়ানা : হাদীছ শরীফ নং ২৯২৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ
শরীফ নং ২২৬০৩)
আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مَوْلُودٍ اِلَّا يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক
শিশু তার স্বভাবের উপর জন্মলাভ করে।” (মুসলিম শরীফ, কিতাবুল ক্বদর : বাবু মা’না কুল্লি মাওলুদিন ইউলাদু ‘আলাল ফিতরাতি ওয়া হুকমি মাওতি আত্বফালিল কুফফারি ওয়া আত্বফালিল মুসলিমীন :
হাদীছ শরীফ নং ২৬৫৮)
সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে “মাওলুদ” শব্দটি ব্যবহৃত
হয়েছে। এমনকি পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের হযরত ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা
স্ব স্ব কিতাবে মীলাদ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। যেমন-
১. বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত
আবূ ঈসা মুহম্মদ ইবনু ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি (হিজরী ২৭৯) তিনি উনার
বিখ্যাত কিতাব জামে তিরমিযী শরীফ উনার ২য় খ-ের ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম রচনা করে
নাম দিয়েছেন-
بَابُ مَا جَاءَ فِىْ مِيْلَادِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থাৎ যা রসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ সম্পর্কে এসেছে। এখানে তিনি ‘মীলাদুন নবী’ শব্দটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত
শরীফ সংক্রান্ত বিষয় বুঝাতে ব্যবহার করেছেন।
২. ইমাম হযরত বায়হাক্বী
রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৪৫৮ হিজরী) তিনি উনার বিখ্যাত সীরাত সংক্রান্ত পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার কিতাব “দালায়িলুন নুবুওওয়াত” নামক কিতাবের ১ম খ-ের ৪৯ পৃষ্ঠায়
اَبْوَابُ مِيْلَادِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
শীর্ষক একটি অধ্যায় এনেছেন, যেখানে স্পষ্ট ‘মীলাদে রসূল’ শব্দটি
উল্লেখ করেছেন।
যেখানে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার বৃত্তান্ত (জীবন বৃত্তান্ত মুবারক) মুবারক
আলোচনা করেছেন।
সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হযরত ইমাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিম উনাদের স্পষ্ট দলীল দ্বারাই মীলাদ ও মীলাদুন নবী শব্দ মুবারক উনার প্রমাণ
পাওয়া গেলো। সুবহানাল্লাহ। অর্থাৎ “মীলাদুন নবী” শব্দ মুবারক উনার শরয়ী সুস্পষ্ট ভিত্তি বিদ্যমান।
যেহেতু “মীলাদুন নবী” শব্দ মুবারক উনার সুস্পষ্ট শরয়ী ভিত্তি
বিদ্যমান। আর এই শব্দ মুবারক দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বিষয়টি বুঝানো হয়।
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে
বান্দা-বান্দিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি প্রকাশ করতে আদেশ মুবারক করেছেন।
সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক গ্রহণ উপলক্ষ্যে খুশি মুবারক প্রকাশ করাকেই
বলা হয় “ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”
বা “ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম”। অর্থাৎ “ঈদে
মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উনার
শরয়ী ভিত্তি অবশ্যই রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!