হিন্দু ও বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থের মতো খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থেও পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে। এমনকি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক নেয়ার ভবিষ্যদ্বাণী শ্রবণে খ্রিষ্টানরা তৎক্ষণাতই উনাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল প্রার্থনা করেছে।
যেমন বার্নাবাসের গসপেলে বর্ণিত আছে-
Then said the priest : `How shall the Messiah be called, and what sign shall reveal His comming?’
Jesus answered : `The name of Messiah is admirable, for God himself gave him the name when he had created his soul, and placed it in celestial splendour. God said : “wait Mohammed; for thy sake I will to create paradise, the world and a great multitude of creatures, whereof I make thee a present, insomuch that whoso shall bless thee shall be blessed, and whoso shall curse thee shall be accursed. When I shall send thee into the world I shall send thee as my messenger of salvation, and thy world shall be ture, insomuch that heaven and earth shall fail, but thy faith shall never fail.” Mohammed is his blessed name.
Then the crowd lifted up their voices, saying : `O, God send us thy messenger. O Mohammed, come quickly for the salvation of the world.’
- The Gospel of Baranabas : P 123-124
অর্থ : “তারপর পুরোহিত বললো : ‘শান্তির দূত কি নামে অভিহিত হবেন এবং উনার আগমনের কি চিহ্ন প্রতিভাত হবে?’
যিশু উত্তরে বললেন : ‘শান্তির দূতের নাম প্রশংসিত হবে। কারণ, মহান আল্লাহ যখন উনার আত্মা সৃষ্টি করেন ও স্বর্গীয় দীপ্তিতে সংস্থাপন করেন তখন স্বয়ং মহান আল্লাহ উনার নাম রাখেন। মহান আল্লাহ বলেন : “অপেক্ষা করুন, মুহম্মদ! আপনার সৌজন্যে আমি স্বর্গ-মর্ত এবং অসংখ্য জীব সৃষ্টি করবো, আমি আপনাকে এমনি গৌরবম-িত করেছি, যে ব্যক্তি আপনাকে আশীর্বাদ করবেন তিনি আশীর্বাদপুষ্ট হবেন এবং যে ব্যক্তি আপনাকে অভিশাপ দিবে, সে অভিশপ্ত হবে। যখন আমি আপনাকে মর্তে প্রেরণ করবো তখন মুক্তির দূত হিসেবেই পাঠাবো। স্বর্গ-মর্ত অসত্য হলেও আপনি সত্যপথে দৃঢ় থাকবেন এবং কখনোও আপনার বিশ্বাস টলবে না।” মুহম্মদ সে-ই প্রশংসিত নাম।’
তখন জনতা উচ্চস্বরে বললো : ‘হে আল্লাহ! আপনার দূত আমাদের জন্য পাঠান। হে মুহম্মদ! মর্তের মুক্তির জন্য শীঘ্র আসুন!’”
উপরের উদ্ধৃতি থেকে দেখা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার খবরে খ্রিষ্টানরা খুশি প্রকাশ করেছে এবং খুশি হয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শীঘ্রই পাওয়ার আরজু পেশ করেছে।
তাহলে এ কথা কি করে বলা যায় যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খ্রিষ্টানদের ক্রিসমাস থেকে এসেছে। নাঊযুবিল্লাহ! যেখানে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়ে গসপেলেই বর্ণিত রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনকে খ্রিষ্টানরাও মুবারকবাদ জানিয়েছে। এমনকি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শীঘ্রই পাওয়ার আরজু পেশ করেছে।
আবার ‘ক্রিসমাস’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ১০৩৮ ঈসায়ী সালের একটি রচনা থেকে। ‘ক্রিসমাট ট্রি’ শব্দটি পাওয়া যায় ১৮৩৫ ঈসায়ী সালের একটি রচনা থেকে। ১৭শ’ সাল থেকে মুসলমান উনাদের দেখাদেখি কিছু খ্রিস্টান নিজেদের নবীর বিষয়টি চালু করতে চাইলেও গোড়া খ্রিস্টানরা এর কট্টর বিরোধী ছিলো। তাই খ্রিস্টানদের মধ্যে এ দিবসটি তখন পালন করা হয়নি। তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে খ্রিস্টানরা ক্রিসমাসকে দিবস হিসেবে পালন শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে। ১৯শ’ সালের আগে খ্রিস্টানরা ক্রিসমাসকে বড় উৎসব হিসেবে বড় অনুষ্ঠান করে পালন করেছে এমন ইতিহাস কেউ দেখাতে পারবে না।
যদিও খ্রিষ্টানরা যিশুর জন্মদিবসকে ‘ক্রিসমাস ডে’ হিসেবে পালন করে, তবে ক্রিসমাসের দিবস নিয়ে খ্রিস্টানরাই সন্দিহান। কেউ পালন করে ২৫শে ডিসেম্বর, কেউ ৬ই জানুয়ারি, কেউবা ৭ই জানুয়ারি, কেউবা ১৯শে জানুয়ারি ক্রিসমাস পালন করে থাকে। তবে জাতীয় স্বার্থে তারা বিষয়টি এখন একদিনেই (২৫শে ডিসেম্বর) প্রচার করে থাকে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বর্ণযুগে মুসলমান উনাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি দেখে খ্রিস্টানরা অনেক আচার-আচরণ, কার্যবিধি গ্রহণ করেছিলো। মুসলমান উনারা উনাদের নবীজি, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্ম দিবস বা পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস পালন উপলক্ষ্যে আনন্দ-খুশি করে, সবাইকে খাদ্য খাওয়ায়- এ সংস্কৃতি বা কালচারটি খ্রিস্টানরাও আয়ত্ব করার চেষ্টা করে। এ শিক্ষা থেকেই তারা কথিত ক্রিসমাস পালন শুরু করে।
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খ্রিস্টানদের থেকে নয়, বরং খ্রিস্টানরাই মুসলমান উনাদের দেখে ক্রিসমাস চালু করেছে।