বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থেই ‘পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে মুবারক আগমন বা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়ে বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থে আলোচিত হয়েছে।
যেমন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রামাণ্য ধর্মীয় গ্রন্থ ‘দিঘা নিকায়া’তে বর্ণিত হয়েছে- “মনুষ্যজাতি যখন গৌতমের ধর্ম বিস্মৃত হবে, তখন আরেক বুদ্ধ আসবেন, উনার নাম ‘মৈত্তেয়’ (মৈত্রেয়), যিনি হচ্ছেন শান্তি ও করুণার বুদ্ধ!”
সিংহল হতে প্রাপ্ত কারুসের গসপেলেও উপরোক্ত বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়-
Ananda said to the Blessed One, `Who shall teach us when thou art (are) gone?’
And the Blessed One replied, `I am not first Buddha, who come on the earth, nor shall I be the last. In one time another Buddha will arise in the world, a holy One, a supremly enlightened One, endowed with wisdom in conduct ..... . He will proclaim a religion life, wholly perfect and pure such as I now proclaim ..... .’
Ananda said, `How shall we know him?’
The Blessed One said, `He will be known as maitreya,
- The Gospel of buddha by Carus, P 117-118
অর্থ : “আনন্দ বুদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘আপনার তিরোধানের পর কে আমাদের উপদেশ দিবে?’
বুদ্ধ বললো, ‘আমিই একমাত্র বা শেষ বুদ্ধ নই। যথাসময়ে আরেক বুদ্ধ আসবেন, আমার অপেক্ষাও তিনি পবিত্র এবং অধিকতর আলোকপ্রাপ্ত- তিনি একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা প্রচার করবেন।’
আনন্দ জিজ্ঞাসা করলো, ‘আমরা উনাকে কিভাবে চিনবো?’
বুদ্ধ বললো, ‘উনার নাম হবে মৈত্রেয়।”
এই শান্তি ও করুণার বুদ্ধ (মৈত্রেয়) যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে বলা হয়েছে- “রহমাতুল্লিল ‘আলামীন” অর্থাৎ তিনি সারা আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন।
পক্ষান্তরে, ‘বুদ্ধ’ শব্দের অর্থ ‘বুদ্ধির সঙ্গে যুক্ত’। বুদ্ধ যিনি হবেন তিনি মানুষ হবে অন্য কিছু নয়। আর মৈত্রেয়-এর অর্থ হচ্ছে ‘দয়ার সঙ্গে যুক্ত’।
ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় একথা প্রমাণ করেছে যে, মৈত্রেয়-এর সমস্ত বিশেষত্বই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনী মুবারকে দেখা যায় এবং অন্তিম বুদ্ধ মৈত্রেয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তাহলে আলোচনা হতে বুঝা যাচ্ছে যে, বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থেও অন্তিম বুদ্ধ মৈত্রেয় হিসেবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।
তাছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক মতে, গৌতম বুদ্ধ ৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্ব সালে (দুই হাজার ৫৫৮ বছর আগে) নেপালের লুম্বিনি নামক স্থানে জন্মলাভ করে। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে বৈশাখী পূর্ণিমার অপর নাম দেয়া হয় ‘বৌদ্ধ পূর্ণিমা’।
প্রাপ্ত তথ্য মুতাবিক, বৌদ্ধ পূর্ণিমা প্রায় এক শতাব্দী যাবত বৌদ্ধ ধর্মের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। ১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কাতে বিশ্ব বুদ্ধ সহায়ক সংস্থা (the World Fellowship of Buddhists ) প্রথমবারের মতো বৈশাখী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৪৯ বছর পর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ তথা ইয়াহূদীসংঘ বৈশাখী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, গৌতমের জন্মদিন বা বৌদ্ধ পূর্ণিমা পালনের ইতিহাস এখনো ১০০ বছর পার করতে পারেনি। তাহলে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি করে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হতে উৎপত্তি লাভ করলো! যেখানে ১৯৫০ সালের আগে বৌদ্ধ পূর্ণিমা পালনেরই ইতিহাস নেই। কাজেই কোন মিথ্যাচারিতা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। সত্য তার স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত হবেই।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনোই বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা অনুসরণে উৎপত্তি লাভ করেনি। বরং বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থেই ‘পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।