সবাই বলে পহেলা বৈশাখ একটা সার্বজনীন উৎসব। ধর্ম যার যার আর উৎসব সবার। তাদের যুক্তি কতটূকু ঠিক। এমন উৎসব কি আমরা পালন করতে পারি যা আমাদের ধর্মের বিরুদ্ধে যায়? এমন উৎসব আমরা পালন করতে পারি না যা আমাদের ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে যায়।
আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়।
পহেলা বৈশাখে মুসলমানদের কোনো উৎসব নেই; বরং হিন্দু ও উপজাতিদের বিভিন্ন রকম পূজা রয়েছে। এই পহেলা বৈশাখে রয়েছে -
-
(১) হিন্দুদের ঘটপূজা,
(২) গণেশ পূজা,
(৩) সিদ্ধেশ্বরী পূজা,
(৪) ঘোড়ামেলা,
(৫) চড়ক বা শিবের উপাসনা,
(৬) গম্ভীরা পূজা,
(৭) কুমীরের পূজা,
(৮) চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা,
(৯) অগ্নিনৃত্য,
(১০) ত্রিপুরাদের বৈশুখ,
(১১) মারমাদের সাংগ্রাই ও পানিউৎসব,
(১২) চাকমাদের বিজু উৎসব
(১৩) হিন্দু ও বৌদ্ধদের উল্কিপূজা,
(১৪) মজুসি তথা অগ্নিপূজকদের নওরোজ।
-
তাহলে এখানে পরিষ্কার করে দেখা যাচ্ছে যে, পহেলা বৈশাখে মুশরিকদের অনেক পূজা থাকলেও মুসলমানদের কোনো উৎসব নেই। তাহলে কি করে ইহা সার্বজনীন হতে পারে?
ইসলাম ধর্মে অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব পালন করা নিষেধ, হারাম। অন্য ধর্মের সংস্কৃতি, পোষাক থেকে শুরু করে উপাসনা পর্যন্ত সবই ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ।
পক্ষান্তরে পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল ধর্মের সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। ইহা এমন একটি দিবস, যে দিবস যদি কোন কাফির পালন করে তাহলে সেও এর বদলা পরকালেই পাবেই পাবে। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল আবু লাহাব।
আমরা সবাই কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী আবু লাহাব এর নাম সবাই জানি । দীর্ঘ এক যুগ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেওয়ার কোশেশ করেছিল । যার সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ পাক সুরা লাহাব শরীফ নাযিল করেছিলেন । অথচ সেই আবু লাহাব জাহান্নামে থেকেও প্রতি সোমবার শরিফে বিশেষ ব্যবস্থায় আযাব লাঘব হয় ।কিভাবে সম্ভব হল ?
যেটা হাদিস শরিফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে -"হযরত ইমাম সুহাইলি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে , হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন , আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর স্বপ্নে দেখি যে সে অত্যন্ত দুরবস্থায় রয়েছে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার সাথে কিরুপ ব্যবহার করা হয়েছে ?
আবু লাহাব বলল , হে ভাই হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনাদের কাছ থাকে বিদায় নেওয়ার পর আমি কোন সুখ শান্তির মুখ দেখিনি । তবে হা প্রতি সোমবার শরিফ যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাগব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি । হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন আবু লাহাবের এ শান্তির কারন হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরিফ সোমবার শরিফ এর সুসংবাদ নিয়ে আবু লাহাবের বাদি হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি যখন আবু লাহাব কে জানালেন তখন আবু লাহাব বিলাদত শরিফ এর খুশির সংবাদ শুনে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে তৎক্ষনাত আযাদ করে দেয় "। সুবহানাল্লাহ ।
- ফতহুল বারী, ৯ম খন্ড , ১১৮ পৃষ্ঠা ,
- উমদাতুল কারী ২০ খন্ড ৯৫ পৃষ্ঠা
অনুরুপভাবে বুখারি শরিফ মুল ২য় খন্ড ,৭৬৪ পৃষ্ঠায় হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মারফত উক্ত হাদিস শরিফ বর্ননা করা হয়েছে ।আরো উল্লেখ রয়েছে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম খন্ড ৩৩২ পৃষ্ঠা, মাছাবাতা বিস সুন্নাহ১ম/৮৩ পৃষ্ঠা
আবু লাহাব যে খুশি প্রকাশ করেছিল তা নবি -রাসুল হওয়ার কারনে করেনি করেছিল তার ভ্রাতিষ্পুত্র হওয়ার কারনে ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে আবু লাহাব কাফির হয়েও জাহান্নামে বিশেষ ব্যবস্থায় জান্নাতি নিয়ামত পাচ্ছে । তাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মতের কোন মুসলমান যদি খুশি প্রকাশ করে তাহলে তার প্রতি আল্লাহ পাক কতটুকু রহম করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।
এমনকি যদি কাফিরেরাও খুশি প্রকাশ করে তারাও আবু লাহাবের মত জাহান্নামে থেকেও জান্নাতি নিয়ামত লাভে ধন্য হবে। অর্থাৎ পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই একমাত্র সার্বজনীন উৎসব। যে উৎসব পালন সকল ধর্মের লোকের জন্য রয়েছে পরকালে নিশ্চিত পুরষ্কার।