ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খরচ করার ফযীলত

সাধারণভাবে খরচ করার ফযীলত
সাধারণভাবে দান করার ফযীলত সম্পকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন :-
مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أمْثَالِهَا –
(অর্থ : যে ব্যক্তি একটি নেকী করবে তাকে এর বিনিময়ে কমপক্ষে দশটি ছওয়াব দেয়া হবে। (সুরা আনয়াম-১৬০) অর্থাৎ আমভাবে এক টাকা দান করলে দশ টাকার ফযীলত পাওয়া যায় ।

মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করার ফযীলত
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় উনার জন্য খরচ করার ফযীলত সম্পর্কে তিনি কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন :-
مثل الذين ينفقون أموالهم فى سبيل الله كمثل حبة أنبتت سبع سنابل فى كل سنبلة مئة حبة –
والله يضاعف لمن يشاء والله واسع عليم –

(অর্থ : মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় যারা খরচ করে তাদের মেছাল হচ্ছে, যেমন, একটি বীজ থেকে সাতটি শীষযুক্ত গাছ উৎপন্ন হলো। প্রতিটি শীষে একশটি করে বীজ বা দানা উৎপন্ন হলো অর্থাৎ সাতটি শীষে ৭০০টি বীজ বা দানা উৎপন্ন হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা এর চেয়ে বহুগুণ বেশী দিযে থাকেন। আল্লাহ পাক তিনি প্রশস্তকারী ও অধিক জ্ঞানী (সুরা বাক্বারাহ-২৬১)।
এ আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করার ফযীলত হচ্ছে সাধারণভাবে একে সাতশত গুণ । তবে নিয়ত বা খুলুছিয়তের কারণে কম-বেশী হতে পারে ।

সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খরচ করার ফযীলত
মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন :-
والله و رسوله أحق أن يرضوه إن كانوا مؤمنين –
(অর্থ : যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তারা যেন আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করে । কেননা উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সমধিক হকদার। (সুরা তাওবাহ-৬২)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন :-
أحِبُّوْنِىْ لِحُبِّ اللهِ
(অর্থ : তোমরা আল্লাহ পাক উনার মহব্বত হাছিল করার জন্য আমাকে মহব্বত কর) (তিরমিযি, মিশকাত)।
উল্লেখিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক মু’মিন মুসলমানের জন্য আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট ও মহব্বত করা ফরযে আইন । আরো প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ পাক উনাকে মহব্বত করতে হলে প্রথমে উনার হাবীব হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহব্বত ও সন্তুষ্ট করতে হবে।
অন্য হাদীছ শরীফে হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:-
لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده و ولده و الناس أجمعين –
(অর্থ : তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশী মহব্বত না করবে (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)।
এই হাদীছ শরীফের বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জীবনী মুবারকে । উনারা উনাদের সবকিছু থেকে বেশী মহব্বত করেছেন হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে । উনারা উনার খেদমতে উনাদের সর্বস্ব কুরবানী করে দিয়েছেন, অত:পর নিজেদের জীবনও দিয়ে দিয়েছেন ।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন :-
لَا تَسُبُّوْا اَصْحَابِىْ فَلَوْ أنَّ اَحَدَكُمْ أنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أحَدِهِم وَ لَا نَصِيْفَهُ – ْ
(অর্থ : তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদেরকে গালি দিও না । কেননা যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক-উনার রাস্তায় দান করে, তবুও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনাদের এক মূদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলতও অর্জন করতে পারবে না) । (বুখারী শরীফ)

কাজেই দেখা যায়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য হাদিয়া মুবারক করে বেমেছাল ফযীলত হাছিল করেছেন। পরবর্তী উম্মত যদি সেই ফযীলতের অনুরূপ ফযীলত হাছিল করতে চায় তাহলে তাদের কর্তব্য হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করে সর্বোচ্চ তওফীক অনুযায়ী ব্যয় করা । মূলত: সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খরচ করার প্রতিদান হচ্ছে নিশ্চিতরূপে জান্নাত লাভ । সুবহানাল্লাহ
মীলাদ শরীফ মাহফিলের জন্য খরচ করার ব্যাপারে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ মীলাদ শরীফের কিতাব — আল্লামা ইবনে হাজার হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রণীত “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম” এ খুলাফায়ে রাশেদীন উনাদের ক্বওল শরীফ এইরূপ বর্ণিত রয়েছে :-
ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ -উনার মজলিস করা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ,সুন্নতে খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা হযরত শিহাবুদ্দীন ইবনে হাজার হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব “আননি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম”-এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قال حضرت صديق اكبر عليه السلام من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.
অর্থ: “হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে অর্থাৎ উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হবে।” সুবহানাল্লাহ!
وقال حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلام.
অর্থ: “হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাহফিলকে অর্থাৎ যে ব্যক্তি খুশির সাথে বা খুশি প্রকাশ করে (বিলাদত শরীফ দিবসকে) বিশেষ মর্যাদা দিলো সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!
وقال حضرت ذوالنورین عليه السلام من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين.
অর্থ: “হযরত যূননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলো সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!
দেখুন - https://goo.gl/XaGZXd