সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর, সকল ঈদের সেরা ঈদ মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফে (আগের দিন মাগরিব থেকে পরের দিন মাগরিব পর্যন্ত)মু’মিন গণের করণীয় আমল সমূহ-
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি ?
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সুরা দুহা শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
অর্থ- মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ হতে প্রাপ্ত নেয়ামত মুবারক প্রকাশ করুন, বর্ণনা করুন এবং খুব চর্চা করুন।”
এখন আপনিই বলুন যে, আমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বড় নিয়ামত মুবারক আর কি হতে পারেন? যা পাওয়ার জন্য আমরা উনার আলোচনা করবো, উনার ছানা-ছিফত করবো এবং চর্চা করবো?
অথচ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সব থেকে বড় নিয়ামত ও রহমত একথা তো খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেনঃ-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থ- আমি আপনাকে (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্ত কায়েনাতের জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। অর্থাৎ, সৃষ্টি মুবারক করেছি। (সূরা আম্বিয়া শরিফ উনার ১০৭ নং আয়াত শরীফ)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিঁনি আমাদের জন্য খাস রহমত মুবারক। আর এই রহমত মুবারক পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ করার কথাতো মহান আল্লাহ পাক তিনিই পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
হে মানবজাতি, তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নসীহতকারী, অন্তরের শিফা দানকারী এবং মু’মিন মুসলমানদের জন্য রহমত মুবারক ও হিদায়েত মুবারক দানকারী তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। সুতরাং হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!!! আপনি বলে দিন, তোমরা (উম্মতরা) এই সম্মানিত ফযল ও রহমত লাভ করার কারনে খুশি প্রকাশ করো, যা তোমাদের সঞ্চিত সমস্ত আমল থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম হবে। (সূরা ইউনূস শরীফঃ ৫৭, ৫৮ নং আয়াত শরীফ) সুবহানাল্লাহ!
মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ব্যাপারে উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার হুকুম যেই ভাষায় প্রয়োগ করা হয়েছে ,পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অন্য কোথাও এমনিভাবে জোর তাগিদের সাথে কোন হুকুম আসেনি। আপনি যদি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ গবেষণাকারী হন তাহলে বুঝতে পারবেন এই পবিত্র আয়াত শরীফে মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনে কমপক্ষে ১০ টি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যথা-
১ ) قُلْ - قُلْ (কুল ) শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে কোন কথা শুরু করা হলে ,ইহাই এক প্রকারের জোর তাগিদ । যার উদ্দেশ্য এই যে আপাদ-মস্তক নিমগ্ন হয়ে যাও ।
২ ) بِفَضْلِ اللّهِ অর্থ- মহান আল্লাহ পাক উনার ফজল মুবারক উনার কারণে। প্রশ্ন তৈরি হয় , মহান আল্লাহ পাক উনার ফজল মুবারক কি ? এই ফজল মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। কারণ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক না রাখলে আমরা কুরআন শরীফ পেতামনা । এই ফযল মুবারকও তাগিদ ।
৩ ) وَبِرَحْمَتِهِ অর্থ- মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক উনার কারণে । প্রশ্ন হল রহমত মুবারক উনার কারণ কি ? রহমত মুবারক কে ? ইহাও ৩য় তাগিদ ।
৪ ) بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ অর্থ- ফযল ও রহমত একত্রীকরন । ফজল মুবারক পরে রহমত মুবারক উল্লেখ করাও তাগিদ ।
৫ ) فَبِذَلِكَ অর্থ- উহা। এখানে ذَلِكَ শব্দের পরে ফা-কে এজাফত বা সংযুক্ত করা হয়েছে। 'ফা' - আরবী কাওয়ায়েদ অনুযায়ি তাগিদের জন্য ব্যবহৃত হয় বা তাগিদের জন্য আসে।
৬ ) بِذَلِكَ - ফজল মুবারক ও রহমত মুবারক رَحْمَتِهِ এর উল্লেখ করার পরে ইশারায়ে বায়িদ নেওয়াও তাগিদের অন্তর্ভুক্ত ।
৭ ) فَلْيَفْرَحُو - 'ফালইয়াফরাহু ' শব্দের সাথে 'ফা ' হরফ এজাফত করা হয়েছে ,যার ফলে তাগিদ করা হয়েছে ।
৮ ) فَلْيَفْرَحُو - ইয়াফরাহু শব্দের সাথে 'লাম'ও তাগীদের জন্য হয়ে থাকে ।
৯ ) هُوَ خَيْرٌ - এখানে 'হুয়া ' তাগিদের জন্য এসেছে ।
১০ ) مِّمَّا يَجْمَعُونَ - ইহাও তাগীদের কালাম ।
বর্ণিত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ১০খানা তাগিদের সাথে যে হুকুম প্রদান করেছেন ইহা এই যে, فَلْيَفْرَحُو - 'ফালইয়াফরাহু ' - খুশি পালন কর অর্থাৎ ঈদ পালন কর । কেননা فَبِذَلِكَ - ফাবিজালিকা ' শব্দ দ্বারা যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা বলা হয়েছে ,তিনি আগমন করেছেন।