কারণ, মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেছেন, “তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ কর।” (সূরা নমল/৬৪)
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ-সুন্নাহ্ শরীফ-এর দলীল সম্মত কথা হলো, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন বা আমল করা অবশ্যই ঠিক।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ইতায়াত করো এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল-আমর তাঁদেরকে ইতায়াত করো। অতঃএব যখন কোন বিষয়ে উলিল-আমরগণের মাঝে ইখতিলাফ দেখতে পাবে তখন (সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য) তোমরা আল্লাহ্ পাক ও রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যে উলিল-আমরের কুরআন-সুন্নাহর দলীল বেশী হবে তাঁরটিই গ্রহণ করো।” (সূরা নিসা/৫৯)
উল্লেখ থাকে যে, মহান আল্লাহ্ পাক হক্ব-নাহক্ব দু’টি বিষয়ই মানুষের মাঝে বর্ণনা করে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, “আমি দু’টি পথই জানিয়ে দিয়েছি।” (সূরা বালাদ/১০)
হক্বতালাশীগণ নাহক্বের বিরোধীতা করেন, আর নাহক্ব পন্থীরা হক্বের বিরোধীতা করে। এমনিভাবে প্রায় প্রতিটি বিষয়, প্রতিটি আমলের ক্ষেত্রেই হক্ব ও নাহক্ব পন্থীদের মধ্যে ইখতিলাফ বা মতবিরোধ রয়েছে। তবে ইখতিলাফ বা মতভেদ দু’ ধরণের হয়ে থাকে।
(১) শুধু হক্বের জন্য হক্ব তালাশীগণের ইখতিলাফ।
যেমন, ঈমানের শর্ত হিসেবে কেউ উল্লেখ করেছেন,
تصديق بالجنان
অর্থাৎ- “অন্তরের সত্যায়ন।” ও
اقرار باللسان
অর্থাৎ- “মৌখিক স্বীকৃতি।”
আবার কেউ উল্লিখিত দু’টি শর্তের সাথে তৃতীয় শর্ত হিসেবে عمل بالاركانঅর্থাৎ- “ফরযসমূহ আমল করা” উল্লেখ করেছেন।
অনুরূপ নামায, রোযা, হজ্ব যাকাত ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি বিষয় বা আমলের ক্ষেত্রে তার মাসয়ালা-মাসায়েল, হুকুম-আহকাম বর্ণনার ব্যাপারে ইখতিলাফ পরিলক্ষিত হয়।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اختلاف العلماء رحملة
অর্থাৎ- “হক্কানী-রব্বানী আলিমগণের ইখতিলাফ রহমতের কারণ।”
যেমন, হক্কানী আলিমগণ ইখতিলাফ করে হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী ৪টি মাযহাবকেই হক্ব বলে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং এর উপরই উম্মতের ইজমা হয়েছে।
(২) হক্ব ও নাহক্বের মধ্যে হক্বতালাশীগণের সাথে নাহক্ব পন্থীদের ইখতিলাফ বা মতবিরোধ।
মহান আল্লাহ্ পাক এক, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী, মীলাদ-ক্বিয়াম সুন্নতে উম্মত মুস্তাহসান এবং তা পালনে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা’রিফত ও সন্তুষ্টি হাছিল হয় এসব হক্বতালাশীগণের আক্বীদা ও আমল।
কিন্তু নাহক্ব বা বাতিলপন্থীদের আক্বীদা ও আমল হচ্ছে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনজন (নাউযুবিল্লাহ্) অর্থাৎ তারা ত্রিত্ববাদ বা তিন খোদায় বিশ্বাসী, তাদের কারো আক্বীদা হলো “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী বা রসূল নন।” আবার কারো কারো আক্বীদা ও আমল হচ্ছে, “মীলাদ-ক্বিয়াম বিদয়াত, হারাম, শিরক ইত্যাদি।”
এখন প্রশ্ন, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় যদি পালন করা ঠিক না হয় তাহলে কি মহান আল্লাহ্ পাক, রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ইসলাম সব বাদ দিতে হবে?
কাজেই যেখানে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইখতিলাফ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন যে, “যেখানে ইখতিলাফ হবে সেখানে যে উলিল-আমরের কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত দলীল বেশী হবে তাঁরটিই গ্রহণ করতে হবে। তাই বলার অপেক্ষা রাখেনা, যে ব্যক্তি বলবে মতভেদপূর্ণ বা ইখতিলাফি বিষয় পালন করা ঠিক নয়, সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মুরতাদ ও কাফির হয়ে যাবে।
ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের বর্ণনা মতে, কোন মুসলমান নামধারী আলিম ও জাহিল নামধারী ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ্ তায়ালার রহমতের পরিবর্তে গযব ও লা’নত এটা বুঝার জন্য নিম্নোক্ত আলামত বা লক্ষণগুলো পর্যায়ক্রমে তার মধ্যে প্রকাশ পায়।
প্রথমতঃ সে ইবাদত-বন্দেগীতে অলস হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়তঃ কোন মেয়ে লোক অথবা আমরাদের (ক্বারীবুল বুলুগ) তথা অল্প বয়স্ক বালকদের প্রতি আসক্তি হয়ে যাবে।
তৃতীয়তঃ ওলী আল্লাহগণের বিরোধীতা করবে।
চতুর্থতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানের খিলাফ মন্তব্য করবে।
পঞ্চমতঃ খোদ আল্লাহ্ পাক-এর শানের খিলাফ আক্বীদা ও মত পোষণ করবে।
কাজেই আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের বর্ণনা মতে, উক্ত লা’নতের তৃতীয় স্তর অতিক্রম করে চতুর্থ স্তরে উপনীত হয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছীফত, ফযীলত-মর্তবা বর্ণনা করা হয় এমন বিষয় ও আমল সম্পর্কে তার বিরূপ চিন্তা, বক্তব্য ও মন্তব্যেই তা প্রমাণ করে; যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফ-এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, “কোন বিষয় মতভেদ থাকলে তা পালন করা যাবেনা।” এ বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরী। সঠিক বক্তব্য হচ্ছে এই যে, “কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাকবে তখন যেই মতটি অত্যাধিক সহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য হবে তা আমল করতে হবে।” মতভেদ আছে বলে মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলের উক্তি বৈ কিছু নয়। এ বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফ-এর সম্পূর্ণ বিপরীত ও কুফরীর শামীল।