কুরআন শরীফে ঈদে মিলাদুননবী




আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ- সূরা ইবরাহীম-এর নম্বর আয়াত পাক- ইরশাদ ফরমান-

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللّهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ

অর্থ: “আমি হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে আমার নিদর্শনাবলীসহ উনার ক্বওমের নিকট প্রেরণ করেছিলাম যে, আপনি আপনার ক্বওমকে অন্ধকার তথা গোমরাহী থেকে আলো বা হিদায়েতের পথে আনয়ন করেন এবং তাদেরকে আল্লাহ পাক উনার (নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশেষ বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার) দিনসমূহ স্মরণ করান। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল শোকরগোযার বান্দাদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।


এই আয়াত শরীফ থেকেও সকলের বুঝা উচিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও তামাম আলমের জন্য সমস্ত নাজ, নিয়ামত, রহমত, বরকত এবং দ্বীন ইসলাম নিয়ে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ এনেছেন। অতএব এটা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, সেই মহান বিলাদত শরীফ-এর দিন-তারিখ আল্লাহ পাক উনারই পছন্দনীয় মনোনীত একটি বিশেষ দিন। আর বিশেষ হওয়ার কারণেই উম্মাহর ধৈর্যশীল শোকরগোযারগণ এই দিনকে বিশেষ খুশির সাথে স্মরণ করেন।

সূরা ইবরাহীম-এর - নম্বর আয়াত শরীফ-এর ভাষ্য দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত- উম্মতগণের জন্য তাদের নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষ নিয়ামত, ঘটনা, দিনসমূহের স্মরণে শোকরগোযারী করত বিশেষভাবে খুশি প্রকাশ করা অপরিহার্য দায়িত্ব-কর্তব্য।

আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ- সূরা রাফ-এর ৭৪ নম্বর আয়াত পাক- ইরশাদ ফরমান-

فَاذْكُرُواْ آلاء اللّهِ وَلاَ تَعْثَوْا فِي الأَرْضِ مُفْسِدِينَ

অর্থ: “অতএব, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ-নিয়ামতকে তোমরা স্মরণ করো এবং পৃথিবীতে অনর্থক ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করো না।

উম্মত দাবিদার প্রত্যেকের জন্য একথা জানা ফরয-ওয়াজিব যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে বড় কোনো নিয়ামত, বড় কোনো অনুগ্রহ তামাম মাখলুকাতের জন্য আর কিছুই হতে পারে না। তাই উনার স্মরণে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ গোটা উম্মাহ খুশি তথা ঈদ উদযাপন করবে এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই ঈমানের দাবি। এতে খুশি প্রকাশ করতে আল্লাহ পাক তিনি কোথাও নিষেধ করেননি। এতে বাধা দিয়ে, নিষেধ করে পৃথিবীতে অনর্থক ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা কোনো ঈমানদার মুসলমানের কাজ হতে পারে না।

আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ- সূরা আলে ইমরান-এর ১৬৪ নম্বর আয়াত পাক- ইরশাদ ফরমান-

لَقَدْ مَنَّ اللّهُ عَلَى الْمُؤمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُّبِينٍ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক মুমিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন যিনি তাদেরকে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফসমূহ তিলাওয়াত করে শোনান এবং তাদের অন্তরসমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও পূর্বে তারা প্রকাশ্য গোমরাহীর মধ্যে ছিলো।

অতএব, হে কায়িনাতবাসী! আপনারা সকলেই জেনে রাখুন যে, যিনি আমাদের মাঝে বিশেষ অনুগ্রহ-দয়া রহমতস্বরূপ তাশরীফ এনেছেন উনার আগমন উপলক্ষে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ আমরা ঈমানদার বান্দারা কেনো ঈদ তথা খুশি প্রকাশ করবো না? যারা বেঈমান নাফরমান গোমরাহ ইবলিসের অনুসারী তারাই কেবল এতে খুশি প্রকাশ করে না।

আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ- সূরা আদ্ব দ্বুহা-এর ১১ নম্বর আয়াত পাক- ইরশাদ ফরমান-

وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ

অর্থ: “আপনার রব উনার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।

হে কায়িনাতবাসী ঈমানদার মুমিন-মুসলমান! আবারো বলছি, তামাম মাখলুকাতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নাজ-নিয়ামত হলেন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার সুমহান শান প্রকাশ করতে বান্দা উম্মাহ এমনকি সারা কায়িনাত সর্বাবস্থায় ব্যতিব্যস্ত থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। আর এজন্যই উনার উম্মাহ ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ বিশেষ ঈদ তথা খুশি উপলক্ষে উনার আজিমুশ শান নাজ-নিয়ামত বর্ণনা করে মজলিস-মাহফিলের আয়োজন করেন।