দু’ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই এ কথা যারা বলে তারা জাহিল


অজপাড়া গায়ের বৃদ্ধ হাবীবুজ্জামান ক্ষেপে উঠেছে। সারাজীবন নিজ গ্রামের গন্ডীর বাইরে তার যাওয়া হয়নি। ছেলের পুনঃপুনঃ আমন্ত্রণে অবশেষে তাকে শহরে যেতে হয়েছিল। সেখানে জনৈক আলিমের ওয়াজে শোনা ‘ক্ষমা করা মহান আল্লাহ্ পাক-এর সুন্নত, মহান আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সুন্নত, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সুন্নত’ এই বক্তব্য বৃদ্ধ হাবীবুজ্জামানকে রীতিমত ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। শহরে এটে উঠতে না পেরে স্বগ্রামে গিয়ে সে রীতিমত হট্টগোল পাকিয়ে তুলেছে। “হেই মিঞারা বুঝলেননি, শহরের আলিমরা আলিম না। হেরা গোমরাহ্, হেরা বেদাতী, কুফুরী আরম্ভ করিচ্ছে। সারাজীবন আমরা হুনলাম সুন্নত, সুন্নত আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত। আর হেরা এখন নতুন বেদাতী শুরু করিচ্ছে। বলিচ্ছে, আল্লাহ্ পাক-এর সুন্নত, ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সুন্নত, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সুন্নত।


তয় মিয়ারা, আল্লাহ্ পাক কি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত মানুষ, যে আল্লাহ্ পাক-এর আবার সুন্নত অইব? আর ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ কি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল? যে তাগোর আবার সুন্নত অইব?

বৃদ্ধ হাবীবুজ্জামান অভিজ্ঞতার সুরে মজলিসকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে ফের ফরমায়, “সারাজীবন হুনলাম আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত। অহন নতুন সুন্নত। ওই মিঞারা আপনারা সাবধান হয়া যান। এগুলো গোমরাহ আলিম। সুন্নত শুধু আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত। আর নতুন কোন সুন্নত বলা কুফরী, বেদাতী।”

পাঠক! অজপাড়া গায়ের মূর্খ বৃদ্ধ হাবীবুজ্জামানের এই বক্তব্য বেঠিক হলেও তার জন্য বেমানান নয়। অজপাড়া গায়ে থেকে নিম মোল্লার কাছে সে মহান আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের কথা শুনেছে। কিন্তু মহান আল্লাহ্ পাক-এর সুন্নতের কথা, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহিমগণের সুন্নতের কথা উক্ত নিম মোল্লার জ্ঞানের পরিধিতেও ছিলনা তার ওয়াজের প্রসঙ্গেও আনেনি। আর উক্ত নিম মোল্লার ছোহবতে সারাজীবন কাটিয়ে বৃদ্ধ হাবীবুজ্জামানেরও তাই বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে, সুন্নত বলতে কেবল রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতই বুঝায়। অন্য কারো সুন্নত যে বিদয়াতী নয় বরং এটি তার নিজেরই জিহালতি তা সে আদৌ ঠাওর করতে পারেনি।

কিন্তু পাঠক! দুঃখজনক কথা হলো, অজ পাড়াগায়ের মূর্খ বৃদ্ধ হাবীবুজ্জামানের মত নয়, ওহাবী, খারিজী, জামাতী, ইলিয়াসী তাবলীগ জামাত, দেওবন্দী গংরা বলে “ইসলামের ইতিহাসে এই দু’ঈদ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা) ব্যতীত তৃতীয় কোন ঈদ বা ঈদ-ই-মীলাদুন্নবী নামে কোন উৎসবের অস্তিত্ব পূর্বে কখনো ছিলনা বর্তমানেও সংযোজনের সুযোগ নেই।”

তখন মন্তব্য করতে হয়, অজপাড়া গায়ের মূর্খ হাবীবুজ্জামানের “আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত ছাড়া অন্য কোন সুন্নত নেই” এ মূর্খতা মূলক মন্তব্যের চেয়েও তাদের বক্তব্য অনেক বেশী জিহালতী সূচক ও হঠকারীতামূলক, প্রতারণাযুক্ত।

কারণ দেওবন্দীরা চল্লিশ বছর ধরে পবিত্র বুখারী শরীফ পড়ানোর দাবীদার। অথচ এই পবিত্র বুখারী শরীফেই কি উল্লেখ নেই হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “একদা এক ইহুদী এসে তাঁকে বলেছিল, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনাদের কুরআন শরীফে একটি আয়াত শরীফ আছে, যদি তা আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো তবে আমরা তা নাযিল হওয়ার দিনকে ঈদ স্বরূপ পালন করতাম।” তিনি বললেন, “তা কোন আয়াত?” সে বললো,
اليوم اكملت لكم دينكم و اتصمت عليكم
نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا.
অর্থঃ- “তোমাদের জন্য আজ তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের দ্বীন ইসলামকে পছন্দ করলাম।” (সূরা মায়েদার/৩নং আয়াত শরীফ)
হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “যে দিনে এবং যে স্থানে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছিল তা আমি জানি। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমুয়ার দিনে আরাফার ময়দানে দাঁড়ানো থাকা অবস্থায় এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়।”

“খাইরুল জারী শরহে বুখারী” কিতাবে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছিলেন যে, আমরাও সে দিনকে ঈদ স্বরূপ গ্রহণ করে থাকি।” হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। এটা হতে কোন বিশেষ আনন্দ উৎসবের দিনকে স্থায়ী ঈদ হিসেবে গ্রহণ করার বিধান পাওয়া যায়।

অতঃএব, বলতে হয় দু’ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই এ কথা বলে মূলতঃ খারিজী, ওয়াবী, জামাতী, ইলিয়াসী তাবলীগ জামাত, দেওবন্দী গং জাহিল বৃদ্ধ হাবীবুজ্জামানের জিহালতির কাতারে নয় বরং তাদের জিহালতির পিতা আবু জাহিলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর আবু জাহিলের ত্ববকায় সমাসীন বলেই তাদের অন্তরে আবু লাহাবের মুহব্বত টুইটুম্বর।

সে কারণেই খোদায়ী ঈদ, মুত্তালিবী ঈদ, সকল ঈদের ঈদকে তারা লাহাবী ঈদ বলে নিজেদের শয়তানের দোসর হিসেবে প্রতীয়মান করেছে। (নাউযুবিল্লাহ্)