খাঞ্জা পাঠানো ঈদ হলে নবিজির আগমন দিবস ঈদ হবেনা কেন ?



আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা ইউনূস-এর ৫৮ নম্বর আয়াত পাক-এ ইরশাদ ফরমান-

قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون .

অর্র্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন। সে কারণে তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।”


উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত হিদায়েত, রহমত. ফজল, করম, মেহেরবানী এবং দ্বীন ইসলাম সবকিছুই বান্দা তথা উম্মাহর তরে নিয়ে এসেছেন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাহলে বুঝা গেলো আল্লাহ পাক প্রদত্ত সমস্ত নাজ-নিয়ামতের জামে বা মূল হলেন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। তাহলে উনাকে যে আমরা পেলাম, উনি যে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনলেন সেদিন কেনো আমরা কায়িনাতবাসী সন্তুষ্টিচিত্তে শোকরগোযার করে ঈদ তথা খুশি প্রকাশ করবো না? বরং সেদিন ঈদ পালন তথা খুশি প্রকাশ করাই হবে সমস্ত আমলের মধ্যে সর্বোত্তম। যারা বিদয়াতী ফিতনাবাজ নেক আমল থেকে সর্বাবস্থায় গাফিল তাদের দ্বারা কস্মিনকালেও কোনো সর্বোত্তম আমল কায়িম হতে পারে না।

মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা ফাতহ-এর ৮-৯ নম্বর আয়াত পাক-এ ইরশাদ ফরমান-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا , لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا

অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারীরূপে। অতএব, তোমরা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনো এবং উনার খিদমত করো, তা’যীম-তাকরীম করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে উনার ছানা-ছিফত প্রশংসা করতে থাকো।”

হে ঈমানদার বান্দা-উম্মাহ! বর্ণিত আয়াত শরীফ-এ পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে আমরা যাতে উনার যথাযথ তা’যীম-তাকরীম, সম্মানসহ সদা-সর্বদা উনারই ছানা-ছিফত বর্ণনা করতে থাকি। এখন এই আয়াত শরীফ-এর আদেশ মুতাবিক যদি উম্মাহরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে-সম্মানে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করতঃ তা’লীমী মাহফিল মজলিসের আয়োজন করে, সেটা কোন দলীলের ভিত্তিতে নাজায়িয প্রমাণ করা যাবে? আল্লাহ পাক তিনি যা হালাল করেছেন সেটাকে হারাম-বিদয়াত বলে কোনো ঈমানদার কি কখনো খোদাদ্রোহী ফিরআউনের ক্বায়িম-মাক্বাম হতে চায়?

আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা মায়িদা-এর ১১৪ নম্বর আয়াত পাক-এ ইরশাদ ফরমান-

قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ

অর্থ: “হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম দোয়া করেন, হে বারে ইলাহী! আপনি আসমান হতে আমার উম্মতের প্রতি খাদ্যভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন। তা আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ বা খুশির কারণ হবে এবং তা আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হয়ে থাকবে।”

হে জিন-ইনসান! পেঁচার মতো আন্দা আর বোবা শয়তান থাকা কি কভু জায়িয হবে? আল্লাহ পাক তিনি আসমান হতে একটি খাদ্যভর্তি খাঞ্চা নাযিল করার মতো একটি নিয়ামত দিলে সেটি যদি পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলের জন্যই ঈদ তথা খুশির কারণ হতে পারে। তাহলে যিনি আল্লাহ পাক উনার সবচাইতে মাহবুব, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি উম্মতের শাফায়াতের কা-ারী, তামাম নিয়ামতের জামে তিনি যেদিন তাশরীফ আনলেন সেদিনটা, সেই তারিখটা, সেই বারটাকে কেনো উম্মাহ-বান্দা তথা সারা কায়িনাতবাসী ঈদ হিসেবে উদযাপন করবে না? বরং এতে যদি ঈদ খুশি আনন্দ শোকরগোযার করা না হয় তবে কি পরিণতি হবে সেটাও খুব সুন্দর ভাষায় আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন।

আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ সূরা মায়িদা-এর ১১৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ ফরমান-

قَالَ اللّهُ إِنِّي مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ فَمَن يَكْفُرْ بَعْدُ مِنكُمْ فَإِنِّي أُعَذِّبُهُ عَذَابًا لاَّ أُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ

অর্থ: “আল্লাহ পাক তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে তাকে এমন কঠিন শাস্তি দিবো যে শাস্তি বিশ্বজগতের আর কাউকে দিবো না।”

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় আর কিছু লিখার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।